ড. মঞ্জুরে খোদা
দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং এটা একটা নিয়মিত বিষয়। বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে আগাম ভাবনায় সেটা করা সংগত। এটা শুধু নীতিতে নয়, এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও কাঠামো তৈরি করাও জরুরি। কিন্তু সেটা না করে নতুন শিক্ষাক্রম ঘোষণা করাতেই বিপত্তি হয়েছে। শিক্ষানীতির আলোকে ২০২১ সালে যে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে, সেই আলোচনাটা অনেক বড়। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকের প্রতিটি পাঠ্যক্রম নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করার সুযোগ আছে। কিন্তু এখানে মোটাদাগে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি:
১. প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। শিশুদের আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হবে। প্রাথমিকে কোনো পুস্তক থাকবে না। শিক্ষকেরা নিজেরাই তাদের লেখাপড়া তথা কারিকুলাম তৈরি করবেন। এর সবকিছু খারাপ মনে করি না। কিন্তু এখানে একটা বড় আলোচনা ও বিতর্ক হচ্ছে, এই ব্যবস্থা ও পদ্ধতির বাস্তবায়ন এবং কার্যকর করার বাস্তব অবস্থা দেশে বিদ্যমান আছে কি না? জাপানে প্রাথমিক পর্যায়ে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু শিক্ষকের মান ও শিক্ষার পরিবেশের অনেক কিছুই আমাদের দেশে নেই। তাই এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে এখানে একটা বড় সংকট হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
২. শিক্ষাকে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বের করে অনুশীলন ও প্রয়োগনির্ভর শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, এই ধারণা অংশত ঠিক আছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এমন ভাবনা অত্যন্ত বিপজ্জনক। গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন গণিত, বিজ্ঞানের নানা শাখায় গবেষণা ও পরীক্ষার জন্য নামতা, সূত্র, তত্ত্ব মনে রাখা বাঞ্ছনীয়। জাপানের শিক্ষার্থীদের চার থেকে পাঁচ হাজার কানজি (অক্ষর) মাথায় নিয়ে ঘুরতে হয়। এ জন্য জাপানের শিক্ষার্থীদের স্মরণশক্তির প্রতিভা বিশ্বে অনন্য মর্যাদা পেয়েছে।
৩. শিক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোয় এই ধারা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। তবে আমাদের দেশের যে শিক্ষাকাঠামো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, তাতে এই ব্যবস্থা কার্যকর করার আগে অনেক প্রস্তুতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকের মতামত জেনেছি। তাঁদের মন্তব্য, এ জন্য শিক্ষকদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তা ছিল খুবই নিম্নমানের। মাস্টার ট্রেইনারদের অবস্থাও ছিল করুণ।
পরীক্ষা, টেস্ট নাকচ করার ধারণা ঠিক নয়। প্রচলিত পদ্ধতির না হলেও নানা পর্যায়ে ও স্তরে মাস-বছরের লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। সেটা না হলে শিক্ষার্থীরা গণিত, বিজ্ঞান, সমাজ, সাহিত্যের বই পড়বে না। পাঠ এড়ানোর প্রবণতা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তারা কম পড়ে, কম পরিশ্রম করে অধিক ফল পেতে চায়। এ জন্য শিক্ষার ধারাবাহিক মান নির্ধারণে এ পদ্ধতি প্রয়োজন। বিশ্বের সর্বত্রই এ ব্যবস্থা কার্যকর আছে।
৪. বিজ্ঞান শিক্ষায় অধিক গুরুত্বের কথা বলা হলেও, তাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। আগে যে মান-পরিধি ছিল, এখন তাকে আরও নিম্নমানের করা হয়েছে। দেশে এমনিতেই বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই এর পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় থেকে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য বিভাগ তুলে দেওয়া হয়েছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলার আগে যেটা বলতে চাই—নতুন কারিকুলামে বিভাগ বিভাজন না থাকলেও, সমস্যা হতো না, যদি বিজ্ঞানের বই তিন খণ্ডে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের আলাদা করে পূর্ণাঙ্গ পুস্তক হিসেবে থাকত। কিন্তু সেটা নেই। বিজ্ঞান বইয়ের প্রধান দুর্বলতা হচ্ছে, অপ্রতুল গাণিতিক প্রশ্ন। গণিত ছাড়া পদার্থবিজ্ঞান শেখা অসম্ভব। জীববিজ্ঞান ও রসায়নেও একই সংকট। পাঠ্যবইয়ে অনুশীলনী না থাকাটা বেমানান।
৫. ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার ধারণাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই পরিবেশ ও আয়োজন নেই। এ জন্য ব্যাপক অর্থায়ন, প্রস্তুতি, প্রশিক্ষক ও সময়ের প্রয়োজন ছিল। সেটা বিবেচনা করা হয়নি।
৬. প্রযুক্তি শিক্ষায় গুরুত্বের কথা বলা হলেও, মাধ্যমিকে গণিতের পরিসর ও গুরুত্বকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। এখানে একটা বড় বিতর্ক আছে। পদার্থবিজ্ঞানে গাণিতিক দক্ষতা না থাকলে, ভালো প্রযুক্তিবিদ কিংবা পদার্থবিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব নয়।
৭. শিক্ষার লক্ষ্যের স্থানে-চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা সাম্য, মৈত্রীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ধারার শিক্ষার যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা বিলুপ্ত করার কোনো কথা নেই। নতুন শিক্ষানীতিতে মাদ্রাসা শিক্ষার কথা বলা হলেও, সেটা মূলত সরকারনিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিক্ষার ধারা কওমি মাদ্রাসার বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। তারা এই ধারার বাইরেই থেকে যাবে। সে অবস্থা-ব্যবস্থা বজায় রেখে এই নীতি কার্যকর করার বিষয়টি প্রহসন ও রাজনৈতিক বুলিবাগিশ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
৮. কোচিংনির্ভর শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে আনার কথা বলা হয়েছে। কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ হোক, সেটা চাই। কিন্তু তা বন্ধ করতে গণিত-বিজ্ঞানকে অবহেলা করে যেনতেন প্রকারে একটি কারিকুলাম তৈরি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোচিং-বাণিজ্য এভাবে বন্ধ হবে না; বরং মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদানের ব্যবস্থা করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রথম গ্রেডে দিতে হবে।
কোচিং-ব্যবসা কেন রমরমা হচ্ছে? এর কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি। এর প্রধান কারণ ভালো শিক্ষকের সংকট। শিক্ষকেরা দায়িত্ব নিয়ে ক্লাসে পড়ান না। আর যা পড়াচ্ছেন, ছাত্ররা তা বুঝতে পারছে না। তখন শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে যেতে বাধ্য হয়। মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ না দিলে, এই নীতির বাস্তবায়ন হবে না।
৯. ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরনীতি, জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি, বিশেষায়িত, প্রযুক্তি শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ের মধ্য থেকে আবশ্যিক বিষয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দিতে হবে।
১০. যুগ যুগ ধরে আমরা একটি আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ একই ধরনের শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থার দাবি করে আসছি। এমনকি এগুলো আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামে ছাত্রদের ১১ দফা এবং নব্বইয়ের ১০ দফার প্রধান দাবি ছিল। কিন্তু সময়োপযোগিতার কথা বলে এই সময়ে এমন এক শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে, যা কেউ দাবি করেনি। আর না চাইতেই যখন কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন সেখানে দুরভিসন্ধি ব্যাপার থাকার সন্দেহ করাটা অমূলক নয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যেটা ছাত্রদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, সেটা তারা মানছে না।
সদ্য ঘোষিত কারিকুলাম নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বড় ধরনের ধারাবাহিক নির্মোহ বিতর্ক হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে কি এমনটা ঘটেছে? একটি ভালো ব্যবস্থা চালু করার আগে আলাপ-বিতর্ক চালিয়ে যাওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই গিনিপিগে পরিণত করা চলবে না।
‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি সংগঠন। এই সংগঠনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন। বিষয় ছিল ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১: আমরা কেন উদ্বিগ্ন’। অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে ‘ওপরমহলের নির্দেশে’ এই আলোচনার নির্ধারিত স্থান আর সি মজুমদার হলের অনুমতি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কোথায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে চলমান বিতর্কের সামনে থাকবে, এতে যে ভুলত্রুটি, সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা ও অসংগতি আছে, সেগুলো তুলে ধরবে, সরকারকে বাধ্য করবে নীতির সংশোধন করতে—তা না করে নিজেরাই সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াটা কি খুব স্বাভাবিক?
লেখক-গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক ছাত্রনেতা
দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং এটা একটা নিয়মিত বিষয়। বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে আগাম ভাবনায় সেটা করা সংগত। এটা শুধু নীতিতে নয়, এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও কাঠামো তৈরি করাও জরুরি। কিন্তু সেটা না করে নতুন শিক্ষাক্রম ঘোষণা করাতেই বিপত্তি হয়েছে। শিক্ষানীতির আলোকে ২০২১ সালে যে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে, সেই আলোচনাটা অনেক বড়। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকের প্রতিটি পাঠ্যক্রম নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করার সুযোগ আছে। কিন্তু এখানে মোটাদাগে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি:
১. প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। শিশুদের আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হবে। প্রাথমিকে কোনো পুস্তক থাকবে না। শিক্ষকেরা নিজেরাই তাদের লেখাপড়া তথা কারিকুলাম তৈরি করবেন। এর সবকিছু খারাপ মনে করি না। কিন্তু এখানে একটা বড় আলোচনা ও বিতর্ক হচ্ছে, এই ব্যবস্থা ও পদ্ধতির বাস্তবায়ন এবং কার্যকর করার বাস্তব অবস্থা দেশে বিদ্যমান আছে কি না? জাপানে প্রাথমিক পর্যায়ে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু শিক্ষকের মান ও শিক্ষার পরিবেশের অনেক কিছুই আমাদের দেশে নেই। তাই এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে এখানে একটা বড় সংকট হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
২. শিক্ষাকে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বের করে অনুশীলন ও প্রয়োগনির্ভর শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, এই ধারণা অংশত ঠিক আছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এমন ভাবনা অত্যন্ত বিপজ্জনক। গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন গণিত, বিজ্ঞানের নানা শাখায় গবেষণা ও পরীক্ষার জন্য নামতা, সূত্র, তত্ত্ব মনে রাখা বাঞ্ছনীয়। জাপানের শিক্ষার্থীদের চার থেকে পাঁচ হাজার কানজি (অক্ষর) মাথায় নিয়ে ঘুরতে হয়। এ জন্য জাপানের শিক্ষার্থীদের স্মরণশক্তির প্রতিভা বিশ্বে অনন্য মর্যাদা পেয়েছে।
৩. শিক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোয় এই ধারা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। তবে আমাদের দেশের যে শিক্ষাকাঠামো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, তাতে এই ব্যবস্থা কার্যকর করার আগে অনেক প্রস্তুতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকের মতামত জেনেছি। তাঁদের মন্তব্য, এ জন্য শিক্ষকদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তা ছিল খুবই নিম্নমানের। মাস্টার ট্রেইনারদের অবস্থাও ছিল করুণ।
পরীক্ষা, টেস্ট নাকচ করার ধারণা ঠিক নয়। প্রচলিত পদ্ধতির না হলেও নানা পর্যায়ে ও স্তরে মাস-বছরের লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। সেটা না হলে শিক্ষার্থীরা গণিত, বিজ্ঞান, সমাজ, সাহিত্যের বই পড়বে না। পাঠ এড়ানোর প্রবণতা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তারা কম পড়ে, কম পরিশ্রম করে অধিক ফল পেতে চায়। এ জন্য শিক্ষার ধারাবাহিক মান নির্ধারণে এ পদ্ধতি প্রয়োজন। বিশ্বের সর্বত্রই এ ব্যবস্থা কার্যকর আছে।
৪. বিজ্ঞান শিক্ষায় অধিক গুরুত্বের কথা বলা হলেও, তাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। আগে যে মান-পরিধি ছিল, এখন তাকে আরও নিম্নমানের করা হয়েছে। দেশে এমনিতেই বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই এর পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় থেকে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য বিভাগ তুলে দেওয়া হয়েছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলার আগে যেটা বলতে চাই—নতুন কারিকুলামে বিভাগ বিভাজন না থাকলেও, সমস্যা হতো না, যদি বিজ্ঞানের বই তিন খণ্ডে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের আলাদা করে পূর্ণাঙ্গ পুস্তক হিসেবে থাকত। কিন্তু সেটা নেই। বিজ্ঞান বইয়ের প্রধান দুর্বলতা হচ্ছে, অপ্রতুল গাণিতিক প্রশ্ন। গণিত ছাড়া পদার্থবিজ্ঞান শেখা অসম্ভব। জীববিজ্ঞান ও রসায়নেও একই সংকট। পাঠ্যবইয়ে অনুশীলনী না থাকাটা বেমানান।
৫. ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার ধারণাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই পরিবেশ ও আয়োজন নেই। এ জন্য ব্যাপক অর্থায়ন, প্রস্তুতি, প্রশিক্ষক ও সময়ের প্রয়োজন ছিল। সেটা বিবেচনা করা হয়নি।
৬. প্রযুক্তি শিক্ষায় গুরুত্বের কথা বলা হলেও, মাধ্যমিকে গণিতের পরিসর ও গুরুত্বকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। এখানে একটা বড় বিতর্ক আছে। পদার্থবিজ্ঞানে গাণিতিক দক্ষতা না থাকলে, ভালো প্রযুক্তিবিদ কিংবা পদার্থবিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব নয়।
৭. শিক্ষার লক্ষ্যের স্থানে-চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা সাম্য, মৈত্রীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ধারার শিক্ষার যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা বিলুপ্ত করার কোনো কথা নেই। নতুন শিক্ষানীতিতে মাদ্রাসা শিক্ষার কথা বলা হলেও, সেটা মূলত সরকারনিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিক্ষার ধারা কওমি মাদ্রাসার বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। তারা এই ধারার বাইরেই থেকে যাবে। সে অবস্থা-ব্যবস্থা বজায় রেখে এই নীতি কার্যকর করার বিষয়টি প্রহসন ও রাজনৈতিক বুলিবাগিশ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
৮. কোচিংনির্ভর শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে আনার কথা বলা হয়েছে। কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ হোক, সেটা চাই। কিন্তু তা বন্ধ করতে গণিত-বিজ্ঞানকে অবহেলা করে যেনতেন প্রকারে একটি কারিকুলাম তৈরি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোচিং-বাণিজ্য এভাবে বন্ধ হবে না; বরং মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদানের ব্যবস্থা করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রথম গ্রেডে দিতে হবে।
কোচিং-ব্যবসা কেন রমরমা হচ্ছে? এর কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি। এর প্রধান কারণ ভালো শিক্ষকের সংকট। শিক্ষকেরা দায়িত্ব নিয়ে ক্লাসে পড়ান না। আর যা পড়াচ্ছেন, ছাত্ররা তা বুঝতে পারছে না। তখন শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে যেতে বাধ্য হয়। মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ না দিলে, এই নীতির বাস্তবায়ন হবে না।
৯. ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরনীতি, জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি, বিশেষায়িত, প্রযুক্তি শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ের মধ্য থেকে আবশ্যিক বিষয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দিতে হবে।
১০. যুগ যুগ ধরে আমরা একটি আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ একই ধরনের শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থার দাবি করে আসছি। এমনকি এগুলো আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামে ছাত্রদের ১১ দফা এবং নব্বইয়ের ১০ দফার প্রধান দাবি ছিল। কিন্তু সময়োপযোগিতার কথা বলে এই সময়ে এমন এক শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে, যা কেউ দাবি করেনি। আর না চাইতেই যখন কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন সেখানে দুরভিসন্ধি ব্যাপার থাকার সন্দেহ করাটা অমূলক নয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যেটা ছাত্রদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, সেটা তারা মানছে না।
সদ্য ঘোষিত কারিকুলাম নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বড় ধরনের ধারাবাহিক নির্মোহ বিতর্ক হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে কি এমনটা ঘটেছে? একটি ভালো ব্যবস্থা চালু করার আগে আলাপ-বিতর্ক চালিয়ে যাওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই গিনিপিগে পরিণত করা চলবে না।
‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি সংগঠন। এই সংগঠনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন। বিষয় ছিল ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১: আমরা কেন উদ্বিগ্ন’। অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে ‘ওপরমহলের নির্দেশে’ এই আলোচনার নির্ধারিত স্থান আর সি মজুমদার হলের অনুমতি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কোথায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে চলমান বিতর্কের সামনে থাকবে, এতে যে ভুলত্রুটি, সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা ও অসংগতি আছে, সেগুলো তুলে ধরবে, সরকারকে বাধ্য করবে নীতির সংশোধন করতে—তা না করে নিজেরাই সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াটা কি খুব স্বাভাবিক?
লেখক-গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক ছাত্রনেতা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে