অরুণ কর্মকার
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানে বিজয় অর্জনের পর এক মাস পেরিয়ে গেছে। দেশে পরিবর্তনের একটা আবহ ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। এমন একটা তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন টিকিয়ে রাখা জরুরি। এ জন্য এটাকে রাষ্ট্রীয় নীতিনৈতিকতায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি রাজপথে সক্রিয় থেকে অভ্যুত্থানের মূল শক্তি সংঘবদ্ধ ছাত্র-জনতারও দায়িত্ব আছে।
অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক বিজয়কে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য মৌলিক সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের অপরিহার্যতার তত্ত্ব বাস্তবায়নের আয়োজনও শুরু করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নীতি-নৈতিকতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের বহু আকাঙ্ক্ষিত এক জাতীয় স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়ণের লক্ষ্যে যে কাজগুলো শুরু হয়েছে, তার পূর্ণতা পাবে বলেই আপামর দেশবাসী আশা করে এবং অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ওপর ভরসা রাখে।
তবে এর পাশাপাশি জনগণ কিছু অবাঞ্ছিত শঙ্কা থেকে মুক্ত হতে পারছে না। অর্থাৎ, তেমন পরিবেশ এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ বিভাগ এখনো পুরোপুরিভাবে কাজে যোগ দেয়নি। যেসব পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিয়েছেন, তাদের অবস্থাও ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো। ফলে সাধারণভাবে জনগণের মধ্যে একটা নিরাপত্তাহীনতা এখনো রয়েছে বলে অনুমান করা যায়। তিন দিন আগেও খুলনা মহানগরীতে একজন পুলিশ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক তরুণের প্রতি যে ‘মব জাস্টিস’ সংঘটিত হতে পারল, তাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান অবস্থানের প্রমাণ পাওয়া যায়।
শুধু পুলিশ বিভাগ নয়, খুলনার সেই ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র সমন্বয়কেরাও সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ। তার পরও ‘মব জাস্টিস’ ঠেকানো যায়নি। এ ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই জনমনে শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়েছে। আমরা দেখেছি, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যে দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে নির্বাসনে পাঠিয়েছে, সেই শাসনকালেও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেই স্বৈরশাসনের অবসানের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেখানে তো একই
ঘটনা কেউ আশা করে না।
এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ছাত্র সমন্বয়কদের আপাতত ব্যর্থতার কারণও আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। কারণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সারা দেশের সমন্বয়কদের সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের যে নেটওয়ার্কে তাঁরা গড়ে তুলেছেন, তার মাধ্যমে খুলনার ঘটনা জানা ও নিয়ন্ত্রণ করা তো তাঁদের জন্য অসম্ভব হওয়ার কথা নয়। তাহলে কি এই নতুন বাংলাদেশেও আমাদের সেই পুরোনো, বাতিল করে দেওয়া শাসকদের আমলের কোনো কোনো বিশেষ ঘটনাবলি দেখার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে! এটা বড় এক শঙ্কার বিষয়।
কয়েক দিন আগে ঢাকায় একজন গাড়ি ব্যবসায়ী অপহৃত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। বারিধারার অফিস থেকে ওই ব্যবসায়ী সেদিন রাতে কালশী ফ্লাইওভার দিয়ে নিজের গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিলেন। পথে তাঁর গাড়ি থামিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। যাঁরা তাঁকে তুলে নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকে যেমন কয়েকজন ছিলেন, তেমনি সাধারণ পোশাকেও কয়েকজন ছিলেন মর্মে অপহৃত ব্যবসায়ীর নিকটাত্মীয় একজন সেনা কর্মকর্তা থানায় অভিযোগ করেছেন বলেও খবরে প্রকাশ। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই ব্যবসায়ীর কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে বলে জানা যায়নি।
সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়েছে বলে জানা বা শোনা যায়নি। ওই ব্যক্তি কি গুম হয়েছেন? তাহলে কি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাতিল করে দেওয়া আগের আমলের মতোই নতুন বাংলাদেশেও গুমের শঙ্কা থাকবে!
এ রকম শঙ্কা আরও আছে। আছে কিছু অশুভ সংকেতও। তার একটি হচ্ছে জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করতে চাওয়া। যিনি এটি চেয়েছেন, তিনি এক ব্যক্তি হলেও তার একটা বিস্তৃত রাজনৈতিক পরিচয় আছে। সেই পরিচয় জামায়াতে ইসলামীর সূত্রে গাঁথা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী অবশ্য এমন কোনো অভিপ্রায় ব্যক্ত করেনি, বরং বক্তব্য-বিবৃতিতে তাঁদের যে অবস্থান প্রকাশিত হয়েছে, তা প্রায় সব মহলের প্রশংসা পেয়েছে।
তাই জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের অভিপ্রায়ের সঙ্গে জামায়াত একমত কি না, তা এখন বলা যাচ্ছে না। তবে যিনি বা যাঁরা জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন, তাঁরা যে ভবিষ্যতে এ রকম আরও কিছু দাবি তুলতে পারেন, তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
সে ক্ষেত্রে দেশের নতুন বাস্তবতায় একধরনের জাতীয় সংহতি গড়ে ওঠার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা ভেস্তে যাবে। নিশ্চিতভাবে আবার আমাদের যাত্রা শুরু হবে বাতিল করে দেওয়া পথে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দলের আচরণে বা অবস্থানে তেমন সংকেত পাওয়া গেলে তা হবে এ দেশের জন্য আরেকটি অশনিসংকেত।
গত এক মাসে রাজনৈতিক অঙ্গনের তৎপরতাও লক্ষ করার মতো। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকের পর রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কাল নিয়ে আর কিছু বলছে না। তবে দীর্ঘতর অপেক্ষা যে তাঁদের কতটা অস্থির করে তুলতে পারে, তার কিছু আভাস-ইঙ্গিত তাঁদের চলনে-বলনে স্পষ্ট। আরেকটি বিষয় ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার এবং প্রায় সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে দূরে রাখতে চাইবে। ফলে দেশে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ কী রূপ ধারণ করে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে, তার কাছে দেশবাসীর আকাশসমান প্রত্যাশা। রাষ্ট্র সংস্কার হবে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। পুলিশ জনগণের বন্ধু হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃতই জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান হয়ে উঠবে। ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে আদর্শ সম্পর্ক স্থাপিত হবে। আরও অনেক কিছু।
কিন্তু বাস্তবতা এখনো এর চেয়ে অনেক অনেক দূরে। বাস্তবে এখনো আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মানুষ সর্বত্রই নিজের হাতে আইন তুলে নিতে চাইছে। হরেদরে হত্যা মামলা করা অব্যাহত রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে।
চাঁদাবাজি নতুন হাতে চলে গেছে এবং যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে তা চলেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো পূর্ণ শৃঙ্খলা ফেরেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অত্যন্ত ক্ষীণ কণ্ঠে কিছু আদেশ-নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। কিছু কিছু ছাত্রের ইচ্ছামতো শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করানো এখনো বন্ধ হয়নি। বরং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গোপনে হুমকি দিয়ে পদত্যাগ করানোর ঘটনা। প্রশাসনের প্রায় সকল স্তরেও কনুই দিয়ে গুঁতো মারার ঘটনা চলছে।
আমরা অবশ্যই স্বীকার করব যে সব ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল একটা রাষ্ট্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য এক মাস সময় মোটেই যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি আমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর কার্যকালের কথাও স্মরণ করে দেখব।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানে বিজয় অর্জনের পর এক মাস পেরিয়ে গেছে। দেশে পরিবর্তনের একটা আবহ ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। এমন একটা তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন টিকিয়ে রাখা জরুরি। এ জন্য এটাকে রাষ্ট্রীয় নীতিনৈতিকতায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি রাজপথে সক্রিয় থেকে অভ্যুত্থানের মূল শক্তি সংঘবদ্ধ ছাত্র-জনতারও দায়িত্ব আছে।
অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক বিজয়কে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য মৌলিক সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের অপরিহার্যতার তত্ত্ব বাস্তবায়নের আয়োজনও শুরু করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নীতি-নৈতিকতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের বহু আকাঙ্ক্ষিত এক জাতীয় স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়ণের লক্ষ্যে যে কাজগুলো শুরু হয়েছে, তার পূর্ণতা পাবে বলেই আপামর দেশবাসী আশা করে এবং অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ওপর ভরসা রাখে।
তবে এর পাশাপাশি জনগণ কিছু অবাঞ্ছিত শঙ্কা থেকে মুক্ত হতে পারছে না। অর্থাৎ, তেমন পরিবেশ এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ বিভাগ এখনো পুরোপুরিভাবে কাজে যোগ দেয়নি। যেসব পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিয়েছেন, তাদের অবস্থাও ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো। ফলে সাধারণভাবে জনগণের মধ্যে একটা নিরাপত্তাহীনতা এখনো রয়েছে বলে অনুমান করা যায়। তিন দিন আগেও খুলনা মহানগরীতে একজন পুলিশ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক তরুণের প্রতি যে ‘মব জাস্টিস’ সংঘটিত হতে পারল, তাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান অবস্থানের প্রমাণ পাওয়া যায়।
শুধু পুলিশ বিভাগ নয়, খুলনার সেই ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র সমন্বয়কেরাও সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ। তার পরও ‘মব জাস্টিস’ ঠেকানো যায়নি। এ ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই জনমনে শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়েছে। আমরা দেখেছি, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যে দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে নির্বাসনে পাঠিয়েছে, সেই শাসনকালেও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেই স্বৈরশাসনের অবসানের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেখানে তো একই
ঘটনা কেউ আশা করে না।
এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ছাত্র সমন্বয়কদের আপাতত ব্যর্থতার কারণও আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। কারণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সারা দেশের সমন্বয়কদের সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের যে নেটওয়ার্কে তাঁরা গড়ে তুলেছেন, তার মাধ্যমে খুলনার ঘটনা জানা ও নিয়ন্ত্রণ করা তো তাঁদের জন্য অসম্ভব হওয়ার কথা নয়। তাহলে কি এই নতুন বাংলাদেশেও আমাদের সেই পুরোনো, বাতিল করে দেওয়া শাসকদের আমলের কোনো কোনো বিশেষ ঘটনাবলি দেখার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে! এটা বড় এক শঙ্কার বিষয়।
কয়েক দিন আগে ঢাকায় একজন গাড়ি ব্যবসায়ী অপহৃত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। বারিধারার অফিস থেকে ওই ব্যবসায়ী সেদিন রাতে কালশী ফ্লাইওভার দিয়ে নিজের গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিলেন। পথে তাঁর গাড়ি থামিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। যাঁরা তাঁকে তুলে নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকে যেমন কয়েকজন ছিলেন, তেমনি সাধারণ পোশাকেও কয়েকজন ছিলেন মর্মে অপহৃত ব্যবসায়ীর নিকটাত্মীয় একজন সেনা কর্মকর্তা থানায় অভিযোগ করেছেন বলেও খবরে প্রকাশ। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই ব্যবসায়ীর কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে বলে জানা যায়নি।
সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়েছে বলে জানা বা শোনা যায়নি। ওই ব্যক্তি কি গুম হয়েছেন? তাহলে কি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাতিল করে দেওয়া আগের আমলের মতোই নতুন বাংলাদেশেও গুমের শঙ্কা থাকবে!
এ রকম শঙ্কা আরও আছে। আছে কিছু অশুভ সংকেতও। তার একটি হচ্ছে জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করতে চাওয়া। যিনি এটি চেয়েছেন, তিনি এক ব্যক্তি হলেও তার একটা বিস্তৃত রাজনৈতিক পরিচয় আছে। সেই পরিচয় জামায়াতে ইসলামীর সূত্রে গাঁথা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী অবশ্য এমন কোনো অভিপ্রায় ব্যক্ত করেনি, বরং বক্তব্য-বিবৃতিতে তাঁদের যে অবস্থান প্রকাশিত হয়েছে, তা প্রায় সব মহলের প্রশংসা পেয়েছে।
তাই জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের অভিপ্রায়ের সঙ্গে জামায়াত একমত কি না, তা এখন বলা যাচ্ছে না। তবে যিনি বা যাঁরা জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন, তাঁরা যে ভবিষ্যতে এ রকম আরও কিছু দাবি তুলতে পারেন, তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
সে ক্ষেত্রে দেশের নতুন বাস্তবতায় একধরনের জাতীয় সংহতি গড়ে ওঠার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা ভেস্তে যাবে। নিশ্চিতভাবে আবার আমাদের যাত্রা শুরু হবে বাতিল করে দেওয়া পথে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দলের আচরণে বা অবস্থানে তেমন সংকেত পাওয়া গেলে তা হবে এ দেশের জন্য আরেকটি অশনিসংকেত।
গত এক মাসে রাজনৈতিক অঙ্গনের তৎপরতাও লক্ষ করার মতো। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকের পর রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কাল নিয়ে আর কিছু বলছে না। তবে দীর্ঘতর অপেক্ষা যে তাঁদের কতটা অস্থির করে তুলতে পারে, তার কিছু আভাস-ইঙ্গিত তাঁদের চলনে-বলনে স্পষ্ট। আরেকটি বিষয় ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার এবং প্রায় সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে দূরে রাখতে চাইবে। ফলে দেশে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ কী রূপ ধারণ করে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে, তার কাছে দেশবাসীর আকাশসমান প্রত্যাশা। রাষ্ট্র সংস্কার হবে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। পুলিশ জনগণের বন্ধু হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃতই জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান হয়ে উঠবে। ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে আদর্শ সম্পর্ক স্থাপিত হবে। আরও অনেক কিছু।
কিন্তু বাস্তবতা এখনো এর চেয়ে অনেক অনেক দূরে। বাস্তবে এখনো আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মানুষ সর্বত্রই নিজের হাতে আইন তুলে নিতে চাইছে। হরেদরে হত্যা মামলা করা অব্যাহত রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে।
চাঁদাবাজি নতুন হাতে চলে গেছে এবং যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে তা চলেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো পূর্ণ শৃঙ্খলা ফেরেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অত্যন্ত ক্ষীণ কণ্ঠে কিছু আদেশ-নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। কিছু কিছু ছাত্রের ইচ্ছামতো শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করানো এখনো বন্ধ হয়নি। বরং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গোপনে হুমকি দিয়ে পদত্যাগ করানোর ঘটনা। প্রশাসনের প্রায় সকল স্তরেও কনুই দিয়ে গুঁতো মারার ঘটনা চলছে।
আমরা অবশ্যই স্বীকার করব যে সব ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল একটা রাষ্ট্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য এক মাস সময় মোটেই যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি আমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর কার্যকালের কথাও স্মরণ করে দেখব।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে