মৃত্যুঞ্জয় রায়
এ বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস ২৮’ সংক্ষেপে ‘কপ২৮’। সম্মেলনে এবার অংশ নিয়েছেন ১৯৮টি দেশের শীর্ষ নেতারাসহ প্রায় ৭০ হাজার অংশগ্রহণকারী, যার মধ্যে ১৪০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরাও রয়েছেন। অতীতের যেকোনো সময়ে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের চেয়ে এটি বড় সম্মেলন। তাই এই সম্মেলন ঘিরে সারা বিশ্বের নেতাদের কাছে বিশ্বের মানুষের ছিল অনেক প্রত্যাশা। বাংলাদেশের মানুষেরও প্রত্যাশা—বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে সপ্তম অবস্থানে থাকায় এই সম্মেলনে এ দেশের প্রতিনিধিরা কার্যকর ভূমিকা পালন করে এ দেশসহ সারা পৃথিবীর জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল ও প্রযুক্তি সহায়তাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবেন।
সম্মেলনে যাওয়ার আগে ঢাকায় ৩১টি সংগঠন যৌথভাবে ‘কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলন: সরকার ও নাগরিক সমাজের অভিমত’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। সেই সেমিনারে পূর্বের জলবায়ু সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার প্রাক্শিল্পযুগের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটা ক্ষয়ক্ষতি বা লস অ্যান্ড ড্যামেজের জন্য পৃথক তহবিল গঠনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ধনী দেশগুলোর সম্মত হওয়া। জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দলের কাছে বক্তারা কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন।
সুপারিশগুলো ছিল:
১. কার্বন নিঃসারণকারী বড় দেশগুলোকে ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য নিঃসারণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সে বিষয়ে তাদের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে;
২. একটি আলাদা লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল গঠন করতে হবে;
৩. জলবায়ু অর্থায়নের একটি নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যা হবে অনুদাননির্ভর, ঋণনির্ভর নয় এবং
৪. জলবায়ু পরিবর্তনে অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোকে রক্ষায় বিশেষ সহায়তা দিতে হবে।
কপ২৮ সম্মেলনে মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেছেন। এসব দাবির মধ্যেই স্পষ্ট করা হয়েছে কপ২৮ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশা।
দাবিগুলো ছিল: ১. প্যারিস চুক্তির ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সীমাবদ্ধ রাখতে ২০৩০ সালের জন্য কার্বন নিঃসারণ হ্রাসের প্রতিশ্রুতির উচ্চাকাঙ্ক্ষা সাত গুণ বেশি হওয়া দরকার। এ বিষয়ে প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তির লক্ষ্য পূরণের দিকে সম্মিলিতভাবে কোথায় কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে এবং কোথায় হয়নি, তা খতিয়ে দেখতে হবে। কার্যক্রমের অগ্রগতির মূল্যায়নসহ ভবিষ্যতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বৈশ্বিক মজুত থেকে সুনির্দিষ্ট মাইলফলকসহ স্পষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চায় বাংলাদেশ; ২. প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশকে উন্নত দেশগুলোর প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করতে হবে। সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ), স্বল্পোন্নত দেশের তহবিল (এলডিসিএফ), অভিযোজন তহবিল (এএফ) এবং জিইএফ ট্রাস্ট তহবিলকে পর্যাপ্ত অর্থসংস্থান দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে এবং সেই তহবিলের প্রবেশাধিকার দ্রুত ও সহজ করতে হবে; ৩. প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে অভিযোজন ও প্রশমন এবং অনুদানভিত্তিক অর্থায়নের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ ৫০: ৫০ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের প্রস্তাব হলো, এনএপি বা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করা দরকার। কপ-২৬ সম্মেলনে ২০১৯-২০১৫ সময়ের জন্য উন্নত দেশগুলোকে যে ‘কল টু ডাবল অ্যাডাপটেশন ফাইন্যান্স’-এর পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল, তার অধীনে পর্যাপ্ত অর্থসহায়তা প্রদান করতে হবে। কপ২৮ সম্মেলনে নেতারা অভিযোজন তহবিলের জন্য ১৬৯ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৩০০ মিলিয়ন ডলারের প্রায় অর্ধেক।
সম্মেলনের প্রথম দিনেই ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলের বিষয়টি দীর্ঘ আলোচনা ও প্রতীক্ষার পর অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে। এই তহবিলে সংযুক্ত আরব আমিরাত ১০০ মিলিয়ন ডলার, জার্মানি ১০০ মিলিয়ন ডলার, ব্রিটেন ৫১ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১৭.৫ মিলিয়ন ডলার ও জাপান ১০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সম্মেলনের প্রথম পাঁচ দিনে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ৮৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বছরে বাংলাদেশের ক্ষতি ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য ৪০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে এডিবি।
এই বরাদ্দ সবুজ জলবায়ু তহবিলে থাকবে। তবে খুশির খবর শোনালেও এই অর্থের কতটুকু অনুদান আর কতটুকু ঋণ হিসেবে আসবে, তা পরিষ্কার নয়। এমনকি দেশভিত্তিক চাহিদার তুলনায় তা কতটুকু পর্যাপ্ত, সেই বিভাজনও স্পষ্ট নয়। জলবায়ু তহবিলের নামে অনেক ঋণ আসছে, তা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ঋণের ফাঁদ তৈরি করছে কি? যদি বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ঋণ গ্রহণ নিয়ে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনের কাজগুলো করতে হয়, তাহলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে এসব অর্থপ্রাপ্তির অনিশচয়তাও। কেননা, আগের প্রতিশ্রুত অর্থের সবটুকুই এখনো বাংলাদেশ পায়নি। তাই এবারের প্রতিশ্রুত অর্থের কতটুকু পাওয়া যাবে, সেই অনিশ্চয়তাও রয়েছে। কেননা, যারা যতটুকু অর্থসহায়তার আশ্বাস দেয়, তারাই সে কথা পরে রাখে না। সম্মেলন শেষে চলেছে এ নিয়ে দরকষাকষি এবং কোন খাতে কতটুকু অর্থ ব্যয় করতে হবে তার আলোচনা। প্রতিটি দেশেরই এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্টি পরিকল্পনা রয়েছে বা থাকে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়নে এই অর্থ খরচ করা হয়। কাজেই অনিশ্চয়তা থাকলে সেই সব কাজের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয় না।
প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন ও কপ২৮ সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি কাঠামোগত আইনি ব্যবস্থা থাকা দরকার। অনেক চুক্তিতে অনেক দেশ সই করে, কিন্তু বাস্তবে তা মানার ব্যাপারে তাদের সেরূপ কোনো গরজ দেখা যায় না। মানলে ভালো, কিন্তু না মানলে তার কারণে যেসব ক্ষতি হয়, সেই সব ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে বা আদৌ সেই ক্ষতি পোষানোর কোনো সুযোগ আছে কি না, যারা চুক্তি ভঙ্গ করল তাদের তাতে কী হবে, সেই সব বিষয়ে কোনো স্পষ্ট উল্লেখ চুক্তিতে থাকে না। তাই এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষতিসাধনকারী উভয়েরই ভূমিকার একটি আইনগত বিষয়ের বাধ্যবাধকতা থাকা দরকার। জাতিসংঘ এ বিষয়ে না ভাবলে আর ভাববে কে? কে কাকে সাজা দেবে আর ক্ষতি সহায়তা দেবে?
তবে সব প্রত্যাশা ছাপিয়ে বাংলাদেশের জন্য এই সম্মেলন থেকে জলবায়ু অভিযোজন তহবিলের আশ্বাস ছাড়াও অর্জিত হয়েছে আরও একটি অনন্য সাফল্য। জলবায়ুসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অটল প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছেন, সে জন্য তাঁকে প্রদান করা হয়েছে ‘ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘জিসিএ লোকাল অ্যাডাপ্টেশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’। জলবায়ু অভিযোজন কৌশল নিয়ে বাংলাদেশে যত কাজ হয়েছে, অন্য দেশে সে রকম হয়নি। এসব অর্জন আমাদের আনন্দিত ও উৎসাহিত করে। দিন শেষে আমরা দেখতে চাই, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন হ্রাসের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা অর্জিত হয়েছে।
এ বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস ২৮’ সংক্ষেপে ‘কপ২৮’। সম্মেলনে এবার অংশ নিয়েছেন ১৯৮টি দেশের শীর্ষ নেতারাসহ প্রায় ৭০ হাজার অংশগ্রহণকারী, যার মধ্যে ১৪০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরাও রয়েছেন। অতীতের যেকোনো সময়ে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের চেয়ে এটি বড় সম্মেলন। তাই এই সম্মেলন ঘিরে সারা বিশ্বের নেতাদের কাছে বিশ্বের মানুষের ছিল অনেক প্রত্যাশা। বাংলাদেশের মানুষেরও প্রত্যাশা—বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে সপ্তম অবস্থানে থাকায় এই সম্মেলনে এ দেশের প্রতিনিধিরা কার্যকর ভূমিকা পালন করে এ দেশসহ সারা পৃথিবীর জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল ও প্রযুক্তি সহায়তাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবেন।
সম্মেলনে যাওয়ার আগে ঢাকায় ৩১টি সংগঠন যৌথভাবে ‘কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলন: সরকার ও নাগরিক সমাজের অভিমত’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। সেই সেমিনারে পূর্বের জলবায়ু সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার প্রাক্শিল্পযুগের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটা ক্ষয়ক্ষতি বা লস অ্যান্ড ড্যামেজের জন্য পৃথক তহবিল গঠনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ধনী দেশগুলোর সম্মত হওয়া। জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দলের কাছে বক্তারা কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন।
সুপারিশগুলো ছিল:
১. কার্বন নিঃসারণকারী বড় দেশগুলোকে ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য নিঃসারণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সে বিষয়ে তাদের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে;
২. একটি আলাদা লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল গঠন করতে হবে;
৩. জলবায়ু অর্থায়নের একটি নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যা হবে অনুদাননির্ভর, ঋণনির্ভর নয় এবং
৪. জলবায়ু পরিবর্তনে অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোকে রক্ষায় বিশেষ সহায়তা দিতে হবে।
কপ২৮ সম্মেলনে মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেছেন। এসব দাবির মধ্যেই স্পষ্ট করা হয়েছে কপ২৮ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশা।
দাবিগুলো ছিল: ১. প্যারিস চুক্তির ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সীমাবদ্ধ রাখতে ২০৩০ সালের জন্য কার্বন নিঃসারণ হ্রাসের প্রতিশ্রুতির উচ্চাকাঙ্ক্ষা সাত গুণ বেশি হওয়া দরকার। এ বিষয়ে প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তির লক্ষ্য পূরণের দিকে সম্মিলিতভাবে কোথায় কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে এবং কোথায় হয়নি, তা খতিয়ে দেখতে হবে। কার্যক্রমের অগ্রগতির মূল্যায়নসহ ভবিষ্যতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বৈশ্বিক মজুত থেকে সুনির্দিষ্ট মাইলফলকসহ স্পষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চায় বাংলাদেশ; ২. প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশকে উন্নত দেশগুলোর প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করতে হবে। সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ), স্বল্পোন্নত দেশের তহবিল (এলডিসিএফ), অভিযোজন তহবিল (এএফ) এবং জিইএফ ট্রাস্ট তহবিলকে পর্যাপ্ত অর্থসংস্থান দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে এবং সেই তহবিলের প্রবেশাধিকার দ্রুত ও সহজ করতে হবে; ৩. প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে অভিযোজন ও প্রশমন এবং অনুদানভিত্তিক অর্থায়নের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ ৫০: ৫০ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের প্রস্তাব হলো, এনএপি বা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করা দরকার। কপ-২৬ সম্মেলনে ২০১৯-২০১৫ সময়ের জন্য উন্নত দেশগুলোকে যে ‘কল টু ডাবল অ্যাডাপটেশন ফাইন্যান্স’-এর পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল, তার অধীনে পর্যাপ্ত অর্থসহায়তা প্রদান করতে হবে। কপ২৮ সম্মেলনে নেতারা অভিযোজন তহবিলের জন্য ১৬৯ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৩০০ মিলিয়ন ডলারের প্রায় অর্ধেক।
সম্মেলনের প্রথম দিনেই ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলের বিষয়টি দীর্ঘ আলোচনা ও প্রতীক্ষার পর অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে। এই তহবিলে সংযুক্ত আরব আমিরাত ১০০ মিলিয়ন ডলার, জার্মানি ১০০ মিলিয়ন ডলার, ব্রিটেন ৫১ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১৭.৫ মিলিয়ন ডলার ও জাপান ১০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সম্মেলনের প্রথম পাঁচ দিনে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ৮৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বছরে বাংলাদেশের ক্ষতি ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য ৪০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে এডিবি।
এই বরাদ্দ সবুজ জলবায়ু তহবিলে থাকবে। তবে খুশির খবর শোনালেও এই অর্থের কতটুকু অনুদান আর কতটুকু ঋণ হিসেবে আসবে, তা পরিষ্কার নয়। এমনকি দেশভিত্তিক চাহিদার তুলনায় তা কতটুকু পর্যাপ্ত, সেই বিভাজনও স্পষ্ট নয়। জলবায়ু তহবিলের নামে অনেক ঋণ আসছে, তা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ঋণের ফাঁদ তৈরি করছে কি? যদি বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ঋণ গ্রহণ নিয়ে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনের কাজগুলো করতে হয়, তাহলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে এসব অর্থপ্রাপ্তির অনিশচয়তাও। কেননা, আগের প্রতিশ্রুত অর্থের সবটুকুই এখনো বাংলাদেশ পায়নি। তাই এবারের প্রতিশ্রুত অর্থের কতটুকু পাওয়া যাবে, সেই অনিশ্চয়তাও রয়েছে। কেননা, যারা যতটুকু অর্থসহায়তার আশ্বাস দেয়, তারাই সে কথা পরে রাখে না। সম্মেলন শেষে চলেছে এ নিয়ে দরকষাকষি এবং কোন খাতে কতটুকু অর্থ ব্যয় করতে হবে তার আলোচনা। প্রতিটি দেশেরই এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্টি পরিকল্পনা রয়েছে বা থাকে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়নে এই অর্থ খরচ করা হয়। কাজেই অনিশ্চয়তা থাকলে সেই সব কাজের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয় না।
প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন ও কপ২৮ সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি কাঠামোগত আইনি ব্যবস্থা থাকা দরকার। অনেক চুক্তিতে অনেক দেশ সই করে, কিন্তু বাস্তবে তা মানার ব্যাপারে তাদের সেরূপ কোনো গরজ দেখা যায় না। মানলে ভালো, কিন্তু না মানলে তার কারণে যেসব ক্ষতি হয়, সেই সব ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে বা আদৌ সেই ক্ষতি পোষানোর কোনো সুযোগ আছে কি না, যারা চুক্তি ভঙ্গ করল তাদের তাতে কী হবে, সেই সব বিষয়ে কোনো স্পষ্ট উল্লেখ চুক্তিতে থাকে না। তাই এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষতিসাধনকারী উভয়েরই ভূমিকার একটি আইনগত বিষয়ের বাধ্যবাধকতা থাকা দরকার। জাতিসংঘ এ বিষয়ে না ভাবলে আর ভাববে কে? কে কাকে সাজা দেবে আর ক্ষতি সহায়তা দেবে?
তবে সব প্রত্যাশা ছাপিয়ে বাংলাদেশের জন্য এই সম্মেলন থেকে জলবায়ু অভিযোজন তহবিলের আশ্বাস ছাড়াও অর্জিত হয়েছে আরও একটি অনন্য সাফল্য। জলবায়ুসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অটল প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছেন, সে জন্য তাঁকে প্রদান করা হয়েছে ‘ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘জিসিএ লোকাল অ্যাডাপ্টেশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’। জলবায়ু অভিযোজন কৌশল নিয়ে বাংলাদেশে যত কাজ হয়েছে, অন্য দেশে সে রকম হয়নি। এসব অর্জন আমাদের আনন্দিত ও উৎসাহিত করে। দিন শেষে আমরা দেখতে চাই, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন হ্রাসের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা অর্জিত হয়েছে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে