এম এস রানা
কী কারণে বা কোন ভাবনা থেকে আরণ্যকের জন্ম?
ভাবনার শুরুটা ষাটের দশকে। আমরা দেখলাম কলকাতায় তখন বাংলা নাটকের রমরমা অবস্থা। শম্ভু মিত্র নাটক করছেন, উৎপল দত্ত নাটক করছেন। সেইসব সংবাদ আমরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখতাম। তখন কালেভদ্রে কিছু নাটক হতো আমাদের দেশে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে। আমাদের মাঝে একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হলো।
এরপর ছয় দফা আসল, দেশে মুক্তিযুদ্ধ হলো। আমরা কলকাতায় গেলাম। সেখানে নাটক দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সাড়ে ছয়টায় নাটক শুরু হচ্ছে, নয়টার মধ্যে নাটক শেষ হচ্ছে। কি অসাধারণ ডিসিপ্লিন! আমরা ভাবতাম দেশ স্বাধীন হলে আমরা স্বাধীনভাবে নিয়মিত নাট্যচর্চা করব। এই যে এতদিনের আকাঙ্ক্ষা, সেই আোঙ্ক্ষা থেকেই থিয়েটার গঠন। নাট্যদল গঠন। আমরা ডিসেম্বরে দেশে ফিরলাম, জানুয়ারিতেই নাট্যদলের কাজ শুরু হয়ে গেল। পহেলা ফেব্রুয়ারিতে আরণ্যকের জন্ম হলো। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেই আরণ্যকের ৫০ বছর হলো। আমরা সেটা উদ্যাপন করছি। সেই উদ্যাপনটা শেষ করব ২০২৩ এর পহেলা ফেব্রুয়ারিতে।
থিয়েটার চর্চায় ‘রাঢ়াঙ’ নাটকটিরও ২০০তম মঞ্চায়ন কতখানি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন?
দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে নাটকটির প্রদর্শনী চলছে। কাস্টিংয়ে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। আজ নাটকটি ২০০তম রজনী পার করবে। ঢাকায় যদি কলকাতার মতো, লন্ডনের মতো, নিউয়র্কের মতো মঞ্চ থাকত তাহলে হয়তো আরও আগেই নাটকটি ২০০তম রজনী পার করতে পারত। হাজার রজনী পার করেছে এমন নাটক কলকাতাতেই অনেক রয়েছে। তবু দীর্ঘ সময় পারি দিয়ে মঞ্চের সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে রাঢ়াঙ নাটকটির ২০০তম মঞ্চায়ন অবশ্যই একটা বড় ব্যাপার।
এ উপলক্ষে আজ বিশেষ কি আয়োজন থাকছে?
নাটকের যে বিষয়বস্থু সাঁওতালদের জীবন এবং তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে সকাল বেলায় একটা সেমিনার আছে। আর বিকেল বেলায় দলের সব নাট্যকর্মীরা একত্রিত হবেন। সন্ধ্যায় নাটকের প্রদর্শনী শেষে দর্শকের সঙ্গে আলোচনা বা মতবিনিময়ের ব্যবস্থা থাকছে।
যে কারণে বা যে দায় থেকে আরণ্যকের জন্ম, তার কতটা পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন?
আমরা তো অসংখ নাটক করেছি। পথে ঘাটে নাটক করেছি। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নাটক করেছি, বিভিন্ন মঞ্চে করেছি। রাঢ়াঙের কথাই যদি ধরি, এটা সারা দেশে প্রদর্শনী হয়েছে। যেহেতু এটা সাঁওতালদের জীবন সংগ্রামের গল্প, তাই যে সমস্থ অঞ্চলে সাঁওতালদের বসবাস, শুধু সাঁওতালই বা বলছি কেন আদিবাসীরা যেখানে আছেন যেমন রাঙামাটি, গারো পাহাড়সহ দেশের অসংখ্য জায়গায় প্রদর্শনী হয়েছে। দেশের বাইরেও অসংখ্য প্রদর্শনী হয়েছে। আমরা তো আমাদের দায় মেটানোর চেষ্টা করছিই। কিন্তু লক্ষ্য করবেন ঢাকার একটি নির্দিষ্ট এলাকা এবং সারা দেশের কয়েকটা জায়গা ছাড়া নাট্যকলা এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে যে ওখানে স্বাধীনভাবে নাট্যচর্চা করা সম্ভব হয় না। নাটকের ক্ষেত্রে যেটা করা যেত রাষ্ট্র কিন্তু সেটা করেনি।
এই যে প্রতিবন্ধকতার বলছেন, এটা কি কেবলই মঞ্চ ব্যবস্থাপনায়? আরও যে সব প্রতিকন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন সেগুলো কেমন?
সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের যে শাসকগোষ্ঠি তারা নাটক, শিল্প, সাহিত্যকে গুরুত্ব দেয় না। যে খাতে যে পরিমাণ বরাদ্ধের প্রয়োজন সেটা হয় না।
দ্বিতীয়ত টাকার যে বরাদ্ধ সেটা হওয়া উচিত অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য। লক্ষ্য করলে দেখবেন, ঢাকার উত্তরা, গুলশান, বনানী এমনকি মিরপুরের মতো একটা জায়গায় মঞ্চ নাই। এমনকি পর্যাপ্ত সিনেমা হল পর্যন্ত নেই। তাহলে এইসব অঞ্চলের মানুষ কি করবে? কেবল চাকরি করবে, খাবে আর ঘুমোবে? তাদের মানিসক বিকাশ কিভাবে হবে? একটা মানুষকে নাটক দেখতে হলে কতটা সময় নিয়ে, কতটা পথ পাড়ি দিয়ে তবে শিল্পকলায় আসতে হয়?
একটা সময় বেইলি রোডে নাট্যপ্রেমিদের ভীড় দেখা যেত, এখনও শিল্পকলায় দেখা যায়। কিন্তু আসলেই আমাদের থিয়েটারের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন?নাটকের দলগুলে এখন খুবই তৎপর। সব নাটক ভালো হয় এটা বলব না। কিন্তু নাটক করার আকঙ্ক্ষা সবার প্রবল। রিহার্সেল রুমে গেলে দেখবেন প্রতিটা মানুষ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে রিহার্সেল করছেন। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে, শত বাধা বিপত্তি পাড়ি দিয়ে, রাজনৈতিক নানা অস্থিরতার মাঝেও তারা থিয়েটার করছেন। কিন্তু দর্শকের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ্য করছি। এ দেশে এত রাজনৈতিক অসস্থিরতা চলতে থাকে যে তাদের মধ্যে একটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা হলে এমন সব খবর আসে, এমন সব খেলাধুলার কথা বলে যে মানুষ আর বাইরে বেরুতে চায় না। নাটকের দর্শক কমে যায়।
একটা নাটকের দল চালাতে আসলে কী লাগে?
প্রথম কথা হচ্ছে ডিসিপ্লিন। এটা সার্বজনীন হতে হবে। সময় মেনে চলা, দল থেক দেওয়া সব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা। দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, পাঠাভ্যাস। থিয়েটার করতে হলে পড়াশোনা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আর তৃতীয় শর্ত হচ্ছে মনযোগ। থিয়েটারে মনযোগের বিষয়টা একটু অন্যরকম, সেটা হচ্ছে শিল্পের একনিষ্ঠতা। সেটা কেমন? একজন অভিনেতা যখন মঞ্চে থাকেন তখন ডিরক্টর থেকে শুরু করে কারোরই কিছু করার থাকে না। অভিনেতা তখন নিজের অভিনয় নিয়ে বড় একা, নিঃসঙ্গ। এই যে নিঃসঙ্গযাত্রা, এই যাত্রার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
থিয়েটারে পেশাদারিত্ব নিয়ে জানতে চাই। এ দেশে থিয়েটারকে পেশা হিসেবে নেওয়া সম্ভব?
আমরা যারা থিয়েটার করি তারা পেশাদার থিয়েটারই করি। যিনি লাইট করেন, যেনি সেট করেন, কিংবা যিনি অভিনয় করেন- কারও মাঝে অপেশাদার মনোভাব থাকে না।
নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েই থিয়েটার করেন। কিন্তু থিয়েটার করে জিবীকা নার্বাহ করা এখনও সম্ভব নয়। কারণ কোনো প্রোডিউসার পকেটের টাকা দিয়ে থিয়েটার চালাবেন না।
এই দায়িত্বটা সারা পৃথিবীতেই রাষ্ট্রকে নিতে হয়। আমি বলেছিলাম সরকারি ভাবে কিছু থিয়েটারকে পৃষ্টপোষকতা করা হোক। দলগুলোর নাট্য নির্দশক, পরিচালক থেক শুরু করে অভিনেতাসহ প্রয়োজনীয় লোকদের বেতনের ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু সেটা হয়নি। আমাদের বন্ধুরাও দায়িত্বে ছিলেন তারাও তেমন কিছু করেননি। পৃথিবীতে অনেক শিল্প আছে যার মাধ্যমে জিবিকা নির্বাহ সম্ভব নয়, কিন্তু ওই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে যে কোনো সভ্য দেশে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হয়। আমাদের দেশে এক একটা অনুষ্ঠানে ১৫ মিনিটে যে পরিমাণ বাজি পোড়ানো হয় ওই টাকা দিয়ে সারা বছেরর থিয়েটারের ব্যায় নির্বাহন সম্ভব।
অভিযোগ শোনা যায় অনেকেই নাকি থিয়েটার করতে আসে টিভিতে মুখ দেখানোর আশায়?
এটা সবাই অন্যায়ভাবে দেখে। আমি এর ঘোরতর বিরোধিতা করি। কারণ হচ্ছে মানুষ এখানে শিখতে আসে। এখান থেকে শিখে কেউ যদি টিভিতে যায়, সিনেমায় যায় তাতে তো দোষের কিছু দেখি না।
একটা সময় ছিল দর্শক টিভির সামনে অপেক্ষায় থাকত একটা ভালো নাটকের আশায়। এখন ওটিটির প্রভাবে বলুন কিংবা যে কোনো কারণেই আমরা তেমন নাটক আর পাচ্ছি না। এর কারণটা কী?
গতকাল একটা অনুষ্ঠানে এক ভদ্রমহিলা আমাকে বললেন, এক সময় আমরা কথা বলতে শিখেছি নাটক দেখে, নাটকের ভাষা শুনে। এখন যে নাটক হচ্ছে আমরাই চাই না এই নাটক দেখে আমার ছেলেমেয়েরা কথা বলতে শিখুক। সাংস্কৃতিকভাবে এই নাটকগুলো অত্যন্ত নিচুমানের হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আর ওটিটির মূল ভাষাইতো দেখছি ভায়োলেন্স। এর কারণ হচ্ছে টিভিতে যে নাটকগুলো প্রচার হচ্ছে তার জন্য কোনো প্রিভিউ কিমিট নেই।
কী হবে কী হবে না, এই যে নাটকে গালিগালাজের ব্যবহার, এসব নিয়ন্ত্রণ করবে কারা?
সিনেমা কিংবা ওটিটি তো ভিন্ন এক মাধ্যম। আমি টাকা দিয়ে ইচ্ছে হলে দেখব ইচ্ছে না হলে দেখব না। কিন্তু টিভি তো সার্বজনীন মাধ্যম। একটা বাসায় পুরো পরিবার একসঙ্গে বসে নাটক দেখে, কাজেই এ ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া উচিত না। এমনটা ঘোরতর অন্যায়। অনেক দেশে একটা রেগুলেটরি বোর্ড থাকে। আমাদেরও একটা সার্বজনীন রেগুলেটরি বোর্ড থাকা প্রয়োজন। প্রতিটি চ্যানেলে প্রিভিউ কিমিটিকে আরও স্ট্রং রতে হবে।
কী কারণে বা কোন ভাবনা থেকে আরণ্যকের জন্ম?
ভাবনার শুরুটা ষাটের দশকে। আমরা দেখলাম কলকাতায় তখন বাংলা নাটকের রমরমা অবস্থা। শম্ভু মিত্র নাটক করছেন, উৎপল দত্ত নাটক করছেন। সেইসব সংবাদ আমরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখতাম। তখন কালেভদ্রে কিছু নাটক হতো আমাদের দেশে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে। আমাদের মাঝে একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হলো।
এরপর ছয় দফা আসল, দেশে মুক্তিযুদ্ধ হলো। আমরা কলকাতায় গেলাম। সেখানে নাটক দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সাড়ে ছয়টায় নাটক শুরু হচ্ছে, নয়টার মধ্যে নাটক শেষ হচ্ছে। কি অসাধারণ ডিসিপ্লিন! আমরা ভাবতাম দেশ স্বাধীন হলে আমরা স্বাধীনভাবে নিয়মিত নাট্যচর্চা করব। এই যে এতদিনের আকাঙ্ক্ষা, সেই আোঙ্ক্ষা থেকেই থিয়েটার গঠন। নাট্যদল গঠন। আমরা ডিসেম্বরে দেশে ফিরলাম, জানুয়ারিতেই নাট্যদলের কাজ শুরু হয়ে গেল। পহেলা ফেব্রুয়ারিতে আরণ্যকের জন্ম হলো। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেই আরণ্যকের ৫০ বছর হলো। আমরা সেটা উদ্যাপন করছি। সেই উদ্যাপনটা শেষ করব ২০২৩ এর পহেলা ফেব্রুয়ারিতে।
থিয়েটার চর্চায় ‘রাঢ়াঙ’ নাটকটিরও ২০০তম মঞ্চায়ন কতখানি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন?
দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে নাটকটির প্রদর্শনী চলছে। কাস্টিংয়ে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। আজ নাটকটি ২০০তম রজনী পার করবে। ঢাকায় যদি কলকাতার মতো, লন্ডনের মতো, নিউয়র্কের মতো মঞ্চ থাকত তাহলে হয়তো আরও আগেই নাটকটি ২০০তম রজনী পার করতে পারত। হাজার রজনী পার করেছে এমন নাটক কলকাতাতেই অনেক রয়েছে। তবু দীর্ঘ সময় পারি দিয়ে মঞ্চের সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে রাঢ়াঙ নাটকটির ২০০তম মঞ্চায়ন অবশ্যই একটা বড় ব্যাপার।
এ উপলক্ষে আজ বিশেষ কি আয়োজন থাকছে?
নাটকের যে বিষয়বস্থু সাঁওতালদের জীবন এবং তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে সকাল বেলায় একটা সেমিনার আছে। আর বিকেল বেলায় দলের সব নাট্যকর্মীরা একত্রিত হবেন। সন্ধ্যায় নাটকের প্রদর্শনী শেষে দর্শকের সঙ্গে আলোচনা বা মতবিনিময়ের ব্যবস্থা থাকছে।
যে কারণে বা যে দায় থেকে আরণ্যকের জন্ম, তার কতটা পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন?
আমরা তো অসংখ নাটক করেছি। পথে ঘাটে নাটক করেছি। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নাটক করেছি, বিভিন্ন মঞ্চে করেছি। রাঢ়াঙের কথাই যদি ধরি, এটা সারা দেশে প্রদর্শনী হয়েছে। যেহেতু এটা সাঁওতালদের জীবন সংগ্রামের গল্প, তাই যে সমস্থ অঞ্চলে সাঁওতালদের বসবাস, শুধু সাঁওতালই বা বলছি কেন আদিবাসীরা যেখানে আছেন যেমন রাঙামাটি, গারো পাহাড়সহ দেশের অসংখ্য জায়গায় প্রদর্শনী হয়েছে। দেশের বাইরেও অসংখ্য প্রদর্শনী হয়েছে। আমরা তো আমাদের দায় মেটানোর চেষ্টা করছিই। কিন্তু লক্ষ্য করবেন ঢাকার একটি নির্দিষ্ট এলাকা এবং সারা দেশের কয়েকটা জায়গা ছাড়া নাট্যকলা এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে যে ওখানে স্বাধীনভাবে নাট্যচর্চা করা সম্ভব হয় না। নাটকের ক্ষেত্রে যেটা করা যেত রাষ্ট্র কিন্তু সেটা করেনি।
এই যে প্রতিবন্ধকতার বলছেন, এটা কি কেবলই মঞ্চ ব্যবস্থাপনায়? আরও যে সব প্রতিকন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন সেগুলো কেমন?
সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের যে শাসকগোষ্ঠি তারা নাটক, শিল্প, সাহিত্যকে গুরুত্ব দেয় না। যে খাতে যে পরিমাণ বরাদ্ধের প্রয়োজন সেটা হয় না।
দ্বিতীয়ত টাকার যে বরাদ্ধ সেটা হওয়া উচিত অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য। লক্ষ্য করলে দেখবেন, ঢাকার উত্তরা, গুলশান, বনানী এমনকি মিরপুরের মতো একটা জায়গায় মঞ্চ নাই। এমনকি পর্যাপ্ত সিনেমা হল পর্যন্ত নেই। তাহলে এইসব অঞ্চলের মানুষ কি করবে? কেবল চাকরি করবে, খাবে আর ঘুমোবে? তাদের মানিসক বিকাশ কিভাবে হবে? একটা মানুষকে নাটক দেখতে হলে কতটা সময় নিয়ে, কতটা পথ পাড়ি দিয়ে তবে শিল্পকলায় আসতে হয়?
একটা সময় বেইলি রোডে নাট্যপ্রেমিদের ভীড় দেখা যেত, এখনও শিল্পকলায় দেখা যায়। কিন্তু আসলেই আমাদের থিয়েটারের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন?নাটকের দলগুলে এখন খুবই তৎপর। সব নাটক ভালো হয় এটা বলব না। কিন্তু নাটক করার আকঙ্ক্ষা সবার প্রবল। রিহার্সেল রুমে গেলে দেখবেন প্রতিটা মানুষ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে রিহার্সেল করছেন। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে, শত বাধা বিপত্তি পাড়ি দিয়ে, রাজনৈতিক নানা অস্থিরতার মাঝেও তারা থিয়েটার করছেন। কিন্তু দর্শকের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ্য করছি। এ দেশে এত রাজনৈতিক অসস্থিরতা চলতে থাকে যে তাদের মধ্যে একটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা হলে এমন সব খবর আসে, এমন সব খেলাধুলার কথা বলে যে মানুষ আর বাইরে বেরুতে চায় না। নাটকের দর্শক কমে যায়।
একটা নাটকের দল চালাতে আসলে কী লাগে?
প্রথম কথা হচ্ছে ডিসিপ্লিন। এটা সার্বজনীন হতে হবে। সময় মেনে চলা, দল থেক দেওয়া সব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা। দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, পাঠাভ্যাস। থিয়েটার করতে হলে পড়াশোনা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আর তৃতীয় শর্ত হচ্ছে মনযোগ। থিয়েটারে মনযোগের বিষয়টা একটু অন্যরকম, সেটা হচ্ছে শিল্পের একনিষ্ঠতা। সেটা কেমন? একজন অভিনেতা যখন মঞ্চে থাকেন তখন ডিরক্টর থেকে শুরু করে কারোরই কিছু করার থাকে না। অভিনেতা তখন নিজের অভিনয় নিয়ে বড় একা, নিঃসঙ্গ। এই যে নিঃসঙ্গযাত্রা, এই যাত্রার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
থিয়েটারে পেশাদারিত্ব নিয়ে জানতে চাই। এ দেশে থিয়েটারকে পেশা হিসেবে নেওয়া সম্ভব?
আমরা যারা থিয়েটার করি তারা পেশাদার থিয়েটারই করি। যিনি লাইট করেন, যেনি সেট করেন, কিংবা যিনি অভিনয় করেন- কারও মাঝে অপেশাদার মনোভাব থাকে না।
নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েই থিয়েটার করেন। কিন্তু থিয়েটার করে জিবীকা নার্বাহ করা এখনও সম্ভব নয়। কারণ কোনো প্রোডিউসার পকেটের টাকা দিয়ে থিয়েটার চালাবেন না।
এই দায়িত্বটা সারা পৃথিবীতেই রাষ্ট্রকে নিতে হয়। আমি বলেছিলাম সরকারি ভাবে কিছু থিয়েটারকে পৃষ্টপোষকতা করা হোক। দলগুলোর নাট্য নির্দশক, পরিচালক থেক শুরু করে অভিনেতাসহ প্রয়োজনীয় লোকদের বেতনের ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু সেটা হয়নি। আমাদের বন্ধুরাও দায়িত্বে ছিলেন তারাও তেমন কিছু করেননি। পৃথিবীতে অনেক শিল্প আছে যার মাধ্যমে জিবিকা নির্বাহ সম্ভব নয়, কিন্তু ওই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে যে কোনো সভ্য দেশে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হয়। আমাদের দেশে এক একটা অনুষ্ঠানে ১৫ মিনিটে যে পরিমাণ বাজি পোড়ানো হয় ওই টাকা দিয়ে সারা বছেরর থিয়েটারের ব্যায় নির্বাহন সম্ভব।
অভিযোগ শোনা যায় অনেকেই নাকি থিয়েটার করতে আসে টিভিতে মুখ দেখানোর আশায়?
এটা সবাই অন্যায়ভাবে দেখে। আমি এর ঘোরতর বিরোধিতা করি। কারণ হচ্ছে মানুষ এখানে শিখতে আসে। এখান থেকে শিখে কেউ যদি টিভিতে যায়, সিনেমায় যায় তাতে তো দোষের কিছু দেখি না।
একটা সময় ছিল দর্শক টিভির সামনে অপেক্ষায় থাকত একটা ভালো নাটকের আশায়। এখন ওটিটির প্রভাবে বলুন কিংবা যে কোনো কারণেই আমরা তেমন নাটক আর পাচ্ছি না। এর কারণটা কী?
গতকাল একটা অনুষ্ঠানে এক ভদ্রমহিলা আমাকে বললেন, এক সময় আমরা কথা বলতে শিখেছি নাটক দেখে, নাটকের ভাষা শুনে। এখন যে নাটক হচ্ছে আমরাই চাই না এই নাটক দেখে আমার ছেলেমেয়েরা কথা বলতে শিখুক। সাংস্কৃতিকভাবে এই নাটকগুলো অত্যন্ত নিচুমানের হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আর ওটিটির মূল ভাষাইতো দেখছি ভায়োলেন্স। এর কারণ হচ্ছে টিভিতে যে নাটকগুলো প্রচার হচ্ছে তার জন্য কোনো প্রিভিউ কিমিট নেই।
কী হবে কী হবে না, এই যে নাটকে গালিগালাজের ব্যবহার, এসব নিয়ন্ত্রণ করবে কারা?
সিনেমা কিংবা ওটিটি তো ভিন্ন এক মাধ্যম। আমি টাকা দিয়ে ইচ্ছে হলে দেখব ইচ্ছে না হলে দেখব না। কিন্তু টিভি তো সার্বজনীন মাধ্যম। একটা বাসায় পুরো পরিবার একসঙ্গে বসে নাটক দেখে, কাজেই এ ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া উচিত না। এমনটা ঘোরতর অন্যায়। অনেক দেশে একটা রেগুলেটরি বোর্ড থাকে। আমাদেরও একটা সার্বজনীন রেগুলেটরি বোর্ড থাকা প্রয়োজন। প্রতিটি চ্যানেলে প্রিভিউ কিমিটিকে আরও স্ট্রং রতে হবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে