মামুনুর রশীদ
নিসর্গ ধ্বংসের একটা সংস্কৃতি আমাদের বাঙালি মুসলমানদের মজ্জাগত বিষয়। উপমহাদেশের প্রাচীনতম শহর তথা আমাদের ঢাকার কোনো স্মারকচিহ্ন আমরা রক্ষা করিনি। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে সেনাপতি ইসলাম খাঁ যে শহরটির সূচনা করেন, তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বুড়িগঙ্গার পাড়ে অসংখ্য খাল একটা নৌপথের সৃষ্টি করেছিল বটে, সেসব ধ্বংস করে ধোলাইখালকেও ভরাট করে দেওয়া হলো। অনুমান নয়, এটা প্রমাণ করাও কঠিন হবে না যে অসংখ্য নদ-নদী, জলাশয়, পুকুর, বিলের এই বাংলাও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, চলনবিল। চলনবিল ছিল উত্তরবঙ্গের একটা ফুসফুস। চলনবিলের মৎস্য সম্পদ সমৃদ্ধ ছিল। বর্ষার আগমনে একটা সাগরের মতো দেখাত। সেই উৎসটাও ধ্বংস হয়ে গেল। মাঝখান দিয়ে কংক্রিটের পথ হয়ে গেছে। দুই ধারে বাড়িঘর, ফসলি জমি—এগুলোর মালিকানা কার, তা-ও প্রশ্নবিদ্ধ।
বড় জলাশয়ের কোনো ব্যক্তিমালিকানা থাকা সম্ভব নয়। নদীর তো কোনো অভিভাবকই নেই। শ্বেতহস্তী নামধারী পানি উন্নয়ন বোর্ড অসংখ্য সেবায়েত বাহিনী নিয়ে অসহায় হয়ে থাকে ক্ষমতাসীনদের কাছে। ক্ষমতাসীনদের মতোই এই সেবায়েত বাহিনীও ফুলেফেঁপে ওঠে। নদী যে শুধু জলাধারসহ নানাভাবে জীবন বাঁচানো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তা-ই নয়, প্রমাণ হলো তার দেহটাও মূল্যবান। বালু মূল্যবান সম্পদও বটে। নদীকে নাব্য রাখার কাজে একসময় ড্রেজার দিয়ে খনন করার প্রয়োজন ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, বালু তুলে তুলে নদীর প্রাণটাই হারিয়ে যাচ্ছে, নদীর ধারে ধারে এখন পাহাড়প্রমাণ বালুর স্তূপ। সেই বালুর মালিকানা রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র সেখানে অসহায়। মালিকানা অবাধে চলে যাচ্ছে, বালুখেকো নামে খ্যাত ক্ষমতাবান কিছু লোকের হাতে।
এই ক্ষমতাবানেরা সরকার ও প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় ভাগাভাগি করে খাচ্ছে নিয়মিত। এ যেন তাদের রাষ্ট্র দখল করার পুরস্কার। যেখানে নদী পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে আছে পাহাড়। এতকাল চমৎকার একটা নিসর্গ উপহার দিয়ে, নানা ধরনের গাছগাছালি, লতাগুল্ম নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল এর গায়েও আঘাত পড়ল একদল হিংস্র নেকড়ের মতো মনুষ্যরূপী জানোয়ারের। ওরা পাহাড় কাটছে, পাহাড় ধসিয়ে দিচ্ছে। পাহাড়ের বন-জঙ্গল, সোনার মতো দামি কাষ্ঠ সম্পদ লুট হয়ে যাচ্ছে। এসব থেকে যে অর্থ আসে, তা গিয়ে জমা হয় ক্ষমতাসীনদের পকেটে। সৌম্যমূর্তি এসব মানুষ নামাজ, রোজা ও হজ করে সম্পদ বিদেশে পাচার করে বছরের পর বছর থিতু হয়ে বসে আছে।
অনেক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, ওদের শকুনে চোখটা পড়েছে পাথরের ওপর। নদীর স্রোতে ভেসে আসা পাথর সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে এসে জমা হয়। সেখানে কুড়ি বছর ধরে উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চোখের সামনেই এ খবর এসে থাকে। আসলে অর্থ উপায়ের সংস্কৃতিটাই এদের নেই।
এই যে রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ীদের এত টাকা, এই টাকা দিয়ে কী হবে? বিদেশে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে, সেখানেও বাড়ি-গাড়ি আছে। আবার দেশেও একটা তালাবদ্ধ বাড়ি আছে। এগুলো কি নদীখেকো, পাহাড়খেকোদের জীবনে কোনো অনাবিল সুখ এনে দিচ্ছে? যা-ই হোক, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি।
অনেক দিন ধরেই ভাবছি, পরিবারগুলোতে সংস্কৃতিচর্চা কীভাবে বাড়ানো সম্ভব? এই যে একুশে ফেব্রুয়ারি আসে-যায়, এত অনুষ্ঠান, বইমেলা, টিভি চ্যানেলে কত কথা, পত্রিকায় কত লেখা—এসবের কোনো প্রভাব কি পড়ছে? স্কুলগুলো কি সক্রিয় হচ্ছে? নাকি শিক্ষকেরা শুধু কোচিং-ব্যবসা নিয়ে আছেন? স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিও অসাধু শিক্ষকদের নিয়ে, সেখান থেকেও ‘বালু সংগ্রহ’ করছে?
অনেক নেতিবাচক কথা বলে ফেলছি। এর সমান্তরালে কি নতুন কথা আছে? আছে নিশ্চয়। যেকোনো জায়গায় সে চায়ের দোকানে হোক, আড্ডায় হোক, মধ্যবিত্ত পরিবারে হোক, অফিস-আদালতে হোক—সব জায়গায়ই একটি আলোচনার বিষয় হলো রাজনীতি এবং এর অনুষঙ্গ হিসেবেই থাকে দুর্নীতি। যেকোনো নির্বাচনে, সে সংসদ নির্বাচন হোক বা কোনো ছোট সংস্থার নির্বাচনেই হোক—সেখানেও আলোচনার মূল বিষয় টাকা, দুর্নীতি। এই দুর্নীতির সঙ্গে আবার সবাই জড়িত না। যারা জড়িত নয়, তারা কেউ সুযোগের অভাবে চরিত্রবান। আবার কেউ কেউ আছে, যারা ছেড়ে কথা বলে না। তাদের কণ্ঠস্বর একসময় বাড়বে বলে ইতিহাস মনে করে।
আরও খারাপ অবস্থা হতে পারে। কিন্তু এর মধ্যে ভালো কিছু বেঁচে থাকবে। মানুষ অতিদ্রুতই টাকার দাসত্ব থেকে মুক্তি চাইবে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আগে মনে হয়েছিল, উর্দুই হয়তো রাষ্ট্রভাষা হয়ে যাবে। কিন্তু হয়নি। নদীখেকো, বালুখেকো, পাথরখেকো, বনখেকোদের অবসান অনিবার্য। রাজনৈতিক আন্দোলন না হলেও প্রকৃতিই সমাজকে সে পথ দেখিয়ে দেবে।
লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
নিসর্গ ধ্বংসের একটা সংস্কৃতি আমাদের বাঙালি মুসলমানদের মজ্জাগত বিষয়। উপমহাদেশের প্রাচীনতম শহর তথা আমাদের ঢাকার কোনো স্মারকচিহ্ন আমরা রক্ষা করিনি। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে সেনাপতি ইসলাম খাঁ যে শহরটির সূচনা করেন, তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বুড়িগঙ্গার পাড়ে অসংখ্য খাল একটা নৌপথের সৃষ্টি করেছিল বটে, সেসব ধ্বংস করে ধোলাইখালকেও ভরাট করে দেওয়া হলো। অনুমান নয়, এটা প্রমাণ করাও কঠিন হবে না যে অসংখ্য নদ-নদী, জলাশয়, পুকুর, বিলের এই বাংলাও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, চলনবিল। চলনবিল ছিল উত্তরবঙ্গের একটা ফুসফুস। চলনবিলের মৎস্য সম্পদ সমৃদ্ধ ছিল। বর্ষার আগমনে একটা সাগরের মতো দেখাত। সেই উৎসটাও ধ্বংস হয়ে গেল। মাঝখান দিয়ে কংক্রিটের পথ হয়ে গেছে। দুই ধারে বাড়িঘর, ফসলি জমি—এগুলোর মালিকানা কার, তা-ও প্রশ্নবিদ্ধ।
বড় জলাশয়ের কোনো ব্যক্তিমালিকানা থাকা সম্ভব নয়। নদীর তো কোনো অভিভাবকই নেই। শ্বেতহস্তী নামধারী পানি উন্নয়ন বোর্ড অসংখ্য সেবায়েত বাহিনী নিয়ে অসহায় হয়ে থাকে ক্ষমতাসীনদের কাছে। ক্ষমতাসীনদের মতোই এই সেবায়েত বাহিনীও ফুলেফেঁপে ওঠে। নদী যে শুধু জলাধারসহ নানাভাবে জীবন বাঁচানো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তা-ই নয়, প্রমাণ হলো তার দেহটাও মূল্যবান। বালু মূল্যবান সম্পদও বটে। নদীকে নাব্য রাখার কাজে একসময় ড্রেজার দিয়ে খনন করার প্রয়োজন ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, বালু তুলে তুলে নদীর প্রাণটাই হারিয়ে যাচ্ছে, নদীর ধারে ধারে এখন পাহাড়প্রমাণ বালুর স্তূপ। সেই বালুর মালিকানা রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র সেখানে অসহায়। মালিকানা অবাধে চলে যাচ্ছে, বালুখেকো নামে খ্যাত ক্ষমতাবান কিছু লোকের হাতে।
এই ক্ষমতাবানেরা সরকার ও প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় ভাগাভাগি করে খাচ্ছে নিয়মিত। এ যেন তাদের রাষ্ট্র দখল করার পুরস্কার। যেখানে নদী পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে আছে পাহাড়। এতকাল চমৎকার একটা নিসর্গ উপহার দিয়ে, নানা ধরনের গাছগাছালি, লতাগুল্ম নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল এর গায়েও আঘাত পড়ল একদল হিংস্র নেকড়ের মতো মনুষ্যরূপী জানোয়ারের। ওরা পাহাড় কাটছে, পাহাড় ধসিয়ে দিচ্ছে। পাহাড়ের বন-জঙ্গল, সোনার মতো দামি কাষ্ঠ সম্পদ লুট হয়ে যাচ্ছে। এসব থেকে যে অর্থ আসে, তা গিয়ে জমা হয় ক্ষমতাসীনদের পকেটে। সৌম্যমূর্তি এসব মানুষ নামাজ, রোজা ও হজ করে সম্পদ বিদেশে পাচার করে বছরের পর বছর থিতু হয়ে বসে আছে।
অনেক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, ওদের শকুনে চোখটা পড়েছে পাথরের ওপর। নদীর স্রোতে ভেসে আসা পাথর সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে এসে জমা হয়। সেখানে কুড়ি বছর ধরে উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চোখের সামনেই এ খবর এসে থাকে। আসলে অর্থ উপায়ের সংস্কৃতিটাই এদের নেই।
এই যে রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ীদের এত টাকা, এই টাকা দিয়ে কী হবে? বিদেশে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে, সেখানেও বাড়ি-গাড়ি আছে। আবার দেশেও একটা তালাবদ্ধ বাড়ি আছে। এগুলো কি নদীখেকো, পাহাড়খেকোদের জীবনে কোনো অনাবিল সুখ এনে দিচ্ছে? যা-ই হোক, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি।
অনেক দিন ধরেই ভাবছি, পরিবারগুলোতে সংস্কৃতিচর্চা কীভাবে বাড়ানো সম্ভব? এই যে একুশে ফেব্রুয়ারি আসে-যায়, এত অনুষ্ঠান, বইমেলা, টিভি চ্যানেলে কত কথা, পত্রিকায় কত লেখা—এসবের কোনো প্রভাব কি পড়ছে? স্কুলগুলো কি সক্রিয় হচ্ছে? নাকি শিক্ষকেরা শুধু কোচিং-ব্যবসা নিয়ে আছেন? স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিও অসাধু শিক্ষকদের নিয়ে, সেখান থেকেও ‘বালু সংগ্রহ’ করছে?
অনেক নেতিবাচক কথা বলে ফেলছি। এর সমান্তরালে কি নতুন কথা আছে? আছে নিশ্চয়। যেকোনো জায়গায় সে চায়ের দোকানে হোক, আড্ডায় হোক, মধ্যবিত্ত পরিবারে হোক, অফিস-আদালতে হোক—সব জায়গায়ই একটি আলোচনার বিষয় হলো রাজনীতি এবং এর অনুষঙ্গ হিসেবেই থাকে দুর্নীতি। যেকোনো নির্বাচনে, সে সংসদ নির্বাচন হোক বা কোনো ছোট সংস্থার নির্বাচনেই হোক—সেখানেও আলোচনার মূল বিষয় টাকা, দুর্নীতি। এই দুর্নীতির সঙ্গে আবার সবাই জড়িত না। যারা জড়িত নয়, তারা কেউ সুযোগের অভাবে চরিত্রবান। আবার কেউ কেউ আছে, যারা ছেড়ে কথা বলে না। তাদের কণ্ঠস্বর একসময় বাড়বে বলে ইতিহাস মনে করে।
আরও খারাপ অবস্থা হতে পারে। কিন্তু এর মধ্যে ভালো কিছু বেঁচে থাকবে। মানুষ অতিদ্রুতই টাকার দাসত্ব থেকে মুক্তি চাইবে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আগে মনে হয়েছিল, উর্দুই হয়তো রাষ্ট্রভাষা হয়ে যাবে। কিন্তু হয়নি। নদীখেকো, বালুখেকো, পাথরখেকো, বনখেকোদের অবসান অনিবার্য। রাজনৈতিক আন্দোলন না হলেও প্রকৃতিই সমাজকে সে পথ দেখিয়ে দেবে।
লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে