রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
চিকিৎসকদের পদোন্নতি-পদায়ন নিয়ে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। সম্প্রতি ৯০ জন চিকিৎসককে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। কিন্তু তাঁদের পদায়নে বাধা দেয় স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের মধ্যে একরকম ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ চলছে। এই বিরোধে আটকে গেছে ১০ হাজার ৯৩১ জন চিকিৎসকের পদোন্নতি ও পদায়ন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামগ্রিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থা।
পদায়ন না নিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের জারি করা নির্দেশনাকে অ্যালোকেশন অব বিজনেস এবং সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব।
জানা গেছে, প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর সরকারি চিকিৎসকদের পদোন্নতির লক্ষ্যে বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি (ডিপিসি) প্রক্রিয়া শুরু করে গত জানুয়ারি মাসে। এর মধ্যে দুই দফায় ৯০ জন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুসারে চিকিৎসকদের পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষমতা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের। কিন্তু পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের পদায়নে বাধা দেয় স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ। এতে বন্ধ হয়ে যায় পদোন্নতির প্রক্রিয়া। ফলে চিকিৎসকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক শামিউল ইসলাম বলেন, সারা দেশের মানুষের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে ৫ হাজার ৬৭৭ জন, সহযোগী অধ্যাপক পদে ২ হাজার ৫৪৬ জন এবং অধ্যাপক পদে ৫৬০ জনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ ছাড়া জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদে যথাক্রমে ১ হাজার ৬৬০ এবং ৪২২ জনের নাম পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তর থেকে এর আগে এত বড় তালিকা (১০ হাজার ৯৩১ জনের) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দৃশ্যমান পরিবর্তন হতো। কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের আপত্তিতে সেটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির এসএমএস খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের যোগদানপত্র গ্রহণ না করতে এসএমএসের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষদের নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিঞা। ২ মার্চ পাঠানো এসএমএসে তিনি লিখেছেন, ‘সম্মানিত অধ্যক্ষ মহোদয়গণ, আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছি: পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকবৃন্দের ছাড়পত্র প্রদান ও যোগদানপত্র গ্রহণসংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে উল্লিখিত নির্দেশনা প্রদান করা হলো।’
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক স্বাস্থ্য খাতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকদের ছাড়পত্র প্রদান ও যোগদানপত্র গ্রহণে বাধা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক দিন আগে এসএমএস দেওয়া হয়েছিল। আগের পদায়নগুলো আমাদের চাহিদামতো হয়নি। তাই সংশোধন করে পদায়ন নিতে নির্দেশ দিয়েছি।’
স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের নির্দেশনা
জানা যায়, ৭ মার্চ স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের এক পত্রে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন সরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ম্যাটস ও আইএইচটির কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়নসহ অন্যান্য আবেদন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে পাঠানো হয়। সরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ম্যাটস ও আইএইচটির প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ওপর ন্যস্ত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের আবেদন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানোয় প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারি মেডিকেল কলেজসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওই সব আবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে না পাঠিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে এর আগেও দুটি চিঠি পাঠানো হয়।
এসব বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমানকে গত শনিবার একাধিকবার ফোন করে এবং এসএমএস পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
মন্ত্রীর নির্দেশনা চেয়ে চিঠি স্বাস্থ্য সেবা সচিবের
পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী বরাবর সমস্যার সমাধানে নির্দেশনা চেয়ে চিঠি দেন। তাতে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে জারীকৃত আদেশ/নির্দেশনা অ্যালোকেশন অব বিজনেসের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এমনকি সংবিধানের ৫৫(৬) উপধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমতাবস্থায়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনায় মহোদয়ের নির্দেশনা প্রয়োজন।’
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেওয়া ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ১৪টি বিষয়ে ২১ জন চিকিৎসককে পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করা হয়। একই ধারাবাহিকতায় ৩ মার্চ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ৪টি বিষয়ে ৬৯ জন চিকিৎসককে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউটে পদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষদের একটি খুদে বার্তা দিয়ে চিকিৎসকদের পদায়িত কর্মস্থলে যোগদান এবং ছাড়পত্র প্রদান না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের পদায়িত কর্মস্থলে যোগদানে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে পদায়নকৃত চিকিৎসকদের যোগদানও গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে স্বাস্থ্য সেক্টরে মারাত্মক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
২০১৭ সালের ১৬ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বিভক্ত করে স্বাস্থ্য সেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ নামে দুটি বিভাগ গঠন করা হয়।স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জন্য প্রণীত অ্যালোকেশন অব বিজনেসের অনুচ্ছেদ ১৮ অনুযায়ী বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের চিকিৎসকেরা (মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল) যেখানেই কর্মরত থাকুক না কেন, তাঁদের প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে গ্রহণ করা হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে কর্মরত সব চিকিৎসকের বদলি-পদায়ন, চলতি দায়িত্ব প্রদান, পদোন্নতি, পিআরএল অনুমোদন, পেনশন নিষ্পত্তি, বৈদেশিক ছুটি অনুমোদন, লিয়েন, অবসর, গোপনীয় অনুবেদনসহ সব প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
এ পরিস্থিতি নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক এম এ আজিজ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় দুই ভাগ হওয়ার পর থেকে আমলাদের চর দখলের মতো ক্ষমতা দখলের আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে চিকিৎসকদের সব ধরনের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে; বিশেষ করে নতুন মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষক-সংকট থেকেই যাচ্ছে।’
আরও খবর পড়ুন:
চিকিৎসকদের পদোন্নতি-পদায়ন নিয়ে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। সম্প্রতি ৯০ জন চিকিৎসককে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। কিন্তু তাঁদের পদায়নে বাধা দেয় স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের মধ্যে একরকম ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ চলছে। এই বিরোধে আটকে গেছে ১০ হাজার ৯৩১ জন চিকিৎসকের পদোন্নতি ও পদায়ন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামগ্রিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থা।
পদায়ন না নিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের জারি করা নির্দেশনাকে অ্যালোকেশন অব বিজনেস এবং সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব।
জানা গেছে, প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর সরকারি চিকিৎসকদের পদোন্নতির লক্ষ্যে বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি (ডিপিসি) প্রক্রিয়া শুরু করে গত জানুয়ারি মাসে। এর মধ্যে দুই দফায় ৯০ জন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুসারে চিকিৎসকদের পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষমতা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের। কিন্তু পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের পদায়নে বাধা দেয় স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ। এতে বন্ধ হয়ে যায় পদোন্নতির প্রক্রিয়া। ফলে চিকিৎসকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক শামিউল ইসলাম বলেন, সারা দেশের মানুষের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে ৫ হাজার ৬৭৭ জন, সহযোগী অধ্যাপক পদে ২ হাজার ৫৪৬ জন এবং অধ্যাপক পদে ৫৬০ জনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ ছাড়া জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদে যথাক্রমে ১ হাজার ৬৬০ এবং ৪২২ জনের নাম পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তর থেকে এর আগে এত বড় তালিকা (১০ হাজার ৯৩১ জনের) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দৃশ্যমান পরিবর্তন হতো। কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের আপত্তিতে সেটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির এসএমএস খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের যোগদানপত্র গ্রহণ না করতে এসএমএসের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষদের নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিঞা। ২ মার্চ পাঠানো এসএমএসে তিনি লিখেছেন, ‘সম্মানিত অধ্যক্ষ মহোদয়গণ, আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছি: পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকবৃন্দের ছাড়পত্র প্রদান ও যোগদানপত্র গ্রহণসংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে উল্লিখিত নির্দেশনা প্রদান করা হলো।’
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক স্বাস্থ্য খাতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকদের ছাড়পত্র প্রদান ও যোগদানপত্র গ্রহণে বাধা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক দিন আগে এসএমএস দেওয়া হয়েছিল। আগের পদায়নগুলো আমাদের চাহিদামতো হয়নি। তাই সংশোধন করে পদায়ন নিতে নির্দেশ দিয়েছি।’
স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের নির্দেশনা
জানা যায়, ৭ মার্চ স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের এক পত্রে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন সরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ম্যাটস ও আইএইচটির কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়নসহ অন্যান্য আবেদন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে পাঠানো হয়। সরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ম্যাটস ও আইএইচটির প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ওপর ন্যস্ত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের আবেদন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানোয় প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারি মেডিকেল কলেজসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওই সব আবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে না পাঠিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে এর আগেও দুটি চিঠি পাঠানো হয়।
এসব বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমানকে গত শনিবার একাধিকবার ফোন করে এবং এসএমএস পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
মন্ত্রীর নির্দেশনা চেয়ে চিঠি স্বাস্থ্য সেবা সচিবের
পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী বরাবর সমস্যার সমাধানে নির্দেশনা চেয়ে চিঠি দেন। তাতে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে জারীকৃত আদেশ/নির্দেশনা অ্যালোকেশন অব বিজনেসের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এমনকি সংবিধানের ৫৫(৬) উপধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমতাবস্থায়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনায় মহোদয়ের নির্দেশনা প্রয়োজন।’
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেওয়া ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ১৪টি বিষয়ে ২১ জন চিকিৎসককে পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করা হয়। একই ধারাবাহিকতায় ৩ মার্চ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ৪টি বিষয়ে ৬৯ জন চিকিৎসককে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউটে পদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষদের একটি খুদে বার্তা দিয়ে চিকিৎসকদের পদায়িত কর্মস্থলে যোগদান এবং ছাড়পত্র প্রদান না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের পদায়িত কর্মস্থলে যোগদানে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে পদায়নকৃত চিকিৎসকদের যোগদানও গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে স্বাস্থ্য সেক্টরে মারাত্মক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
২০১৭ সালের ১৬ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বিভক্ত করে স্বাস্থ্য সেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ নামে দুটি বিভাগ গঠন করা হয়।স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জন্য প্রণীত অ্যালোকেশন অব বিজনেসের অনুচ্ছেদ ১৮ অনুযায়ী বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের চিকিৎসকেরা (মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল) যেখানেই কর্মরত থাকুক না কেন, তাঁদের প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে গ্রহণ করা হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে কর্মরত সব চিকিৎসকের বদলি-পদায়ন, চলতি দায়িত্ব প্রদান, পদোন্নতি, পিআরএল অনুমোদন, পেনশন নিষ্পত্তি, বৈদেশিক ছুটি অনুমোদন, লিয়েন, অবসর, গোপনীয় অনুবেদনসহ সব প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
এ পরিস্থিতি নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক এম এ আজিজ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় দুই ভাগ হওয়ার পর থেকে আমলাদের চর দখলের মতো ক্ষমতা দখলের আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে চিকিৎসকদের সব ধরনের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে; বিশেষ করে নতুন মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষক-সংকট থেকেই যাচ্ছে।’
আরও খবর পড়ুন:
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে