শাইখ সিরাজ
বাংলাদেশ একটি বৃহৎ ব-দ্বীপ। এ ভূমির বড় আশীর্বাদ, এটি বিশ্বের অন্যতম বিস্তৃত নদীব্যবস্থা। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদীই এই ভূমিকে উর্বর করেছে। সহজ সেচ ব্যবস্থাপনায় এতে ফলে সোনার ফসল। তবে নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী যেমন আশীর্বাদ, তেমনি বেশ কিছু ঝুঁকিও আছে। বর্ষা মৌসুমে ৫৫-৬০ শতাংশ জমি পানিতে তলিয়ে যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম পানি থাকে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে। সঠিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা সমগ্র কৃষির ও প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানিনিষ্কাশন, সেচ, পানি সরবরাহ এবং সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার মূল বিকাশক্ষেত্র।
অবশ্যই বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার এবং চীনের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে কৃষি-কূটনীতির প্রেক্ষাপটে। বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০-২৫) টেকসই, নিরাপদ এবং বৈচিত্র্যময় খাদ্যপণ্য সরবরাহের জন্য কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের ওপর বিশেষ নজর রেখেছে। আমাদের অবশ্যই কৃষি উৎপাদনব্যবস্থার টেকসই সম্প্রসারণ এবং বৈচিত্র্যকে সমর্থন করতে হবে, যা বিশ্ব ও স্থানীয় বাজারের সঙ্গে আরও ভালোভাবে সংহত, খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি গ্রামীণ জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য, বিশেষ করে নারী এবং প্রান্তিক মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
তরুণদের হাত ধরেই কৃষি-বাণিজ্যের পথ দীর্ঘ হচ্ছে। হাতের মোবাইল ফোনটি হয়ে উঠেছে তথ্যের ভান্ডার। বড় শিল্প উদ্যোক্তা থেকে ছোট চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী খুঁজে নিচ্ছেন কৃষিভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য; বিশেষ করে করোনার সময়টিতে দেখেছি, যেসব তরুণ ঘরে বসে ছিলেন, তাঁরা ছোট ছোট উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন অনলাইন বাণিজ্য। অধিকাংশই কৃষিভিত্তিক। এতে উদ্যোক্তাদের যেমন আয়ের পথ তৈরি হয়েছে, তেমনি উপকৃত হয়েছেন কৃষকও।
বাংলাদেশের কৃষি-বাণিজ্যের প্রতি বিদেশিরাও আগ্রহী হয়ে উঠছে। বছর দুয়েক আগে আসামের বালিপাড়া ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, যিনি ভারতের আইপিএলের রাজস্থান রয়্যালস দলটি কিনেছেন, রঞ্জিত বারঠাকুর কৃষি-বাণিজ্য নিয়ে কথা বলতে এসেছিলেন আমার কাছে। তাঁরাও এ দেশে কৃষিতে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। এর মূল কারণ আমাদের দেশে কৃষি বৈচিত্র্য বাড়ছে। নতুন নতুন ফল-ফসল কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে, বহুমুখী হচ্ছে কৃষি। ফলে কৃষি-বাণিজ্যের খাতও প্রসারিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, কৃষির প্রয়োজনীয়তা কখনো ফুরাবে না। ক্রমেই বিকশিত হবে। রূপ বদলাতে পারে। সেই রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক হতে হবে।
দেশের রপ্তানি মূলত পোশাকশিল্পনির্ভর। এটিকে বহুমুখী করা না গেলে ভবিষ্যৎ অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হলো কৃষি খাত। বলা ভালো, প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি। ইন্টারনেট অব থিংস বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়িয়ে আমাদের কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এ জন্য আমাদের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমত, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো কৃষি প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের কৃষককে এগিয়ে রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ বাড়াতে হবে। চীনে দেখেছি, একটি কৃষিপণ্য থেকে কত প্রকার খাদ্য উপকরণ তারা তৈরি করছে। তৃতীয়ত, শিক্ষা ও গবেষণা মাঠকেন্দ্রিক হতে হবে; অর্থাৎ প্রাসঙ্গিক হতে হবে। চতুর্থত, কৃষিপণ্যের ভ্যালু চেইনের সঙ্গে মার্কেট চেইনের সামঞ্জস্য আনতে হবে। পঞ্চমত, একটি পরিকল্পিত মানসম্পন্ন কৃষিপণ্যের বাজার তৈরি করতে হবে।
ষষ্ঠত, আমাদের পরিশুদ্ধ কৃষিচর্চার অনুশীলন করতে হবে; অর্থাৎ গ্যাপ (গুড অ্যাগ্রিকারচারাল প্র্যাকটিসেস) সার্টিফিকেশনের আওতায় আসতে হবে।
আমি আগেই বলেছি, কৃষকের আয় বাড়াতে চাইলে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের সতেজ ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত করে দেশের ভেতর বাজার বিস্তৃত করতে হবে। এটি করতে পারলে কৃষকেরা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং তাঁদের আয় বাড়বে।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) বর্তমান সদস্য ৪৭৯টি প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে রপ্তানিকারক ২৪৪ এবং কৃষি-প্রক্রিয়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৩৩টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে, বাংলাদেশ কৃষি-শিল্পজাত পণ্য রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখেছে। এই রপ্তানিমূল্য ২৮২ দশমিক ৩ বিলিয়ন টাকা, যা ২০০৬-০৭ সালে ছিল মাত্র ৭৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন টাকা। এই হিসাবে রপ্তানি বেড়েছে ২৭২ শতাংশ। মৎস্য ও কৃষি খাতের জীবিত বা হিমায়িত এবং শুকনো পণ্যের পাশাপাশি পাট ও পাটজাতপণ্যের বিভিন্ন উপকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আশার কথা, উল্লেখযোগ্যভাবে পাট ও পাটজাতপণ্য রপ্তানি চালানে প্রাধান্য পেয়েছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের (ফোরআইআর) ফলে কৃষি উৎপাদন যেমন শিল্পের আকার পেয়েছে, কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের বিকাশও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেট অব থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে, কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটানোর একটি যুগান্তকারী সুযোগ রয়েছে। কারণ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য মূলত গ্রামীণ অর্থনীতিকে একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং গ্রামাঞ্চলে দক্ষ ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
ফোরআইআর বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা পরিচালনা করার জন্য একটি স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থাপনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফোরআইআরে কৃষি রোবোটিকস প্রযুক্তি ব্যবহারে শ্রমিক খরচ হ্রাস পাবে এবং নিরাপদ কৃষিপণ্যের গুণমান অটুট থাকবে, যা উন্নত বিশ্বে আমরা হরহামেশা দেখছি। কৃষকেরা যাতে ইন্টারনেট এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রবেশাধিকার পান এবং তাঁদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে অবগত থাকতে সক্ষম হন, সেটি এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা দেওয়া সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ, যেখানে স্মার্ট কৃষি বড় একটি নিয়ামক।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, তা মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটি, পানি ও বনভূমির অবক্ষয় টেকসই কৃষির জন্য হুমকিস্বরূপ। উপরন্তু আবাদি জমির পরিমাণ কমছে এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া কৃষি খাতে উন্নয়নের পথে উদ্বেগগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ এবং মূল্যস্ফীতি মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে অবশ্যই টেকসই কৃষি পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা মেটাতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে এবং তা সময়ের প্রয়োজনে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়াতে হবে। দেশের জন্য নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।
ষাটের দশকে সবুজবিপ্লব এসেছিল এবং এখন আরেকটি বিপ্লবের জন্য সেরা সময়। স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থাপনা ব্যবহারে স্মার্ট এবং দক্ষ হতে হবে। ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনে পর্যাপ্ত এবং কার্যকরী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। যেগুলো কৃষকের জন্য বাস্তবসম্মতভাবে সহজ ও কার্যকর হবে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে আমরা একসঙ্গে একটি টেকসই বা মজবুত পথে হাঁটতে পারব বলে বিশ্বাস রাখি। স্মার্ট বিপ্লব কৃষির দৃশ্যপটে একটি বিবর্তনমূলক পরিবর্তন আনবে, যা আমরা সবাই বুঝতে পারছি। এটি কেবল কৃষি খাতকে শক্তিশালী করবে তা নয়; বরং কার্যকরভাবে আমাদের জীবন-জীবিকা পরিবর্তন করবে। এটি আমাদের দারিদ্র্য এবং বৈষম্য দূর করতে সহায়তা করবে।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
বাংলাদেশ একটি বৃহৎ ব-দ্বীপ। এ ভূমির বড় আশীর্বাদ, এটি বিশ্বের অন্যতম বিস্তৃত নদীব্যবস্থা। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদীই এই ভূমিকে উর্বর করেছে। সহজ সেচ ব্যবস্থাপনায় এতে ফলে সোনার ফসল। তবে নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী যেমন আশীর্বাদ, তেমনি বেশ কিছু ঝুঁকিও আছে। বর্ষা মৌসুমে ৫৫-৬০ শতাংশ জমি পানিতে তলিয়ে যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম পানি থাকে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে। সঠিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা সমগ্র কৃষির ও প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানিনিষ্কাশন, সেচ, পানি সরবরাহ এবং সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার মূল বিকাশক্ষেত্র।
অবশ্যই বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার এবং চীনের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে কৃষি-কূটনীতির প্রেক্ষাপটে। বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০-২৫) টেকসই, নিরাপদ এবং বৈচিত্র্যময় খাদ্যপণ্য সরবরাহের জন্য কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের ওপর বিশেষ নজর রেখেছে। আমাদের অবশ্যই কৃষি উৎপাদনব্যবস্থার টেকসই সম্প্রসারণ এবং বৈচিত্র্যকে সমর্থন করতে হবে, যা বিশ্ব ও স্থানীয় বাজারের সঙ্গে আরও ভালোভাবে সংহত, খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি গ্রামীণ জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য, বিশেষ করে নারী এবং প্রান্তিক মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
তরুণদের হাত ধরেই কৃষি-বাণিজ্যের পথ দীর্ঘ হচ্ছে। হাতের মোবাইল ফোনটি হয়ে উঠেছে তথ্যের ভান্ডার। বড় শিল্প উদ্যোক্তা থেকে ছোট চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী খুঁজে নিচ্ছেন কৃষিভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য; বিশেষ করে করোনার সময়টিতে দেখেছি, যেসব তরুণ ঘরে বসে ছিলেন, তাঁরা ছোট ছোট উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন অনলাইন বাণিজ্য। অধিকাংশই কৃষিভিত্তিক। এতে উদ্যোক্তাদের যেমন আয়ের পথ তৈরি হয়েছে, তেমনি উপকৃত হয়েছেন কৃষকও।
বাংলাদেশের কৃষি-বাণিজ্যের প্রতি বিদেশিরাও আগ্রহী হয়ে উঠছে। বছর দুয়েক আগে আসামের বালিপাড়া ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, যিনি ভারতের আইপিএলের রাজস্থান রয়্যালস দলটি কিনেছেন, রঞ্জিত বারঠাকুর কৃষি-বাণিজ্য নিয়ে কথা বলতে এসেছিলেন আমার কাছে। তাঁরাও এ দেশে কৃষিতে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। এর মূল কারণ আমাদের দেশে কৃষি বৈচিত্র্য বাড়ছে। নতুন নতুন ফল-ফসল কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে, বহুমুখী হচ্ছে কৃষি। ফলে কৃষি-বাণিজ্যের খাতও প্রসারিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, কৃষির প্রয়োজনীয়তা কখনো ফুরাবে না। ক্রমেই বিকশিত হবে। রূপ বদলাতে পারে। সেই রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক হতে হবে।
দেশের রপ্তানি মূলত পোশাকশিল্পনির্ভর। এটিকে বহুমুখী করা না গেলে ভবিষ্যৎ অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হলো কৃষি খাত। বলা ভালো, প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি। ইন্টারনেট অব থিংস বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়িয়ে আমাদের কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এ জন্য আমাদের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমত, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো কৃষি প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের কৃষককে এগিয়ে রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ বাড়াতে হবে। চীনে দেখেছি, একটি কৃষিপণ্য থেকে কত প্রকার খাদ্য উপকরণ তারা তৈরি করছে। তৃতীয়ত, শিক্ষা ও গবেষণা মাঠকেন্দ্রিক হতে হবে; অর্থাৎ প্রাসঙ্গিক হতে হবে। চতুর্থত, কৃষিপণ্যের ভ্যালু চেইনের সঙ্গে মার্কেট চেইনের সামঞ্জস্য আনতে হবে। পঞ্চমত, একটি পরিকল্পিত মানসম্পন্ন কৃষিপণ্যের বাজার তৈরি করতে হবে।
ষষ্ঠত, আমাদের পরিশুদ্ধ কৃষিচর্চার অনুশীলন করতে হবে; অর্থাৎ গ্যাপ (গুড অ্যাগ্রিকারচারাল প্র্যাকটিসেস) সার্টিফিকেশনের আওতায় আসতে হবে।
আমি আগেই বলেছি, কৃষকের আয় বাড়াতে চাইলে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের সতেজ ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত করে দেশের ভেতর বাজার বিস্তৃত করতে হবে। এটি করতে পারলে কৃষকেরা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং তাঁদের আয় বাড়বে।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) বর্তমান সদস্য ৪৭৯টি প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে রপ্তানিকারক ২৪৪ এবং কৃষি-প্রক্রিয়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৩৩টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে, বাংলাদেশ কৃষি-শিল্পজাত পণ্য রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখেছে। এই রপ্তানিমূল্য ২৮২ দশমিক ৩ বিলিয়ন টাকা, যা ২০০৬-০৭ সালে ছিল মাত্র ৭৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন টাকা। এই হিসাবে রপ্তানি বেড়েছে ২৭২ শতাংশ। মৎস্য ও কৃষি খাতের জীবিত বা হিমায়িত এবং শুকনো পণ্যের পাশাপাশি পাট ও পাটজাতপণ্যের বিভিন্ন উপকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আশার কথা, উল্লেখযোগ্যভাবে পাট ও পাটজাতপণ্য রপ্তানি চালানে প্রাধান্য পেয়েছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের (ফোরআইআর) ফলে কৃষি উৎপাদন যেমন শিল্পের আকার পেয়েছে, কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের বিকাশও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেট অব থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে, কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটানোর একটি যুগান্তকারী সুযোগ রয়েছে। কারণ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য মূলত গ্রামীণ অর্থনীতিকে একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং গ্রামাঞ্চলে দক্ষ ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
ফোরআইআর বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা পরিচালনা করার জন্য একটি স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থাপনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফোরআইআরে কৃষি রোবোটিকস প্রযুক্তি ব্যবহারে শ্রমিক খরচ হ্রাস পাবে এবং নিরাপদ কৃষিপণ্যের গুণমান অটুট থাকবে, যা উন্নত বিশ্বে আমরা হরহামেশা দেখছি। কৃষকেরা যাতে ইন্টারনেট এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রবেশাধিকার পান এবং তাঁদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে অবগত থাকতে সক্ষম হন, সেটি এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা দেওয়া সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ, যেখানে স্মার্ট কৃষি বড় একটি নিয়ামক।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, তা মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটি, পানি ও বনভূমির অবক্ষয় টেকসই কৃষির জন্য হুমকিস্বরূপ। উপরন্তু আবাদি জমির পরিমাণ কমছে এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া কৃষি খাতে উন্নয়নের পথে উদ্বেগগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ এবং মূল্যস্ফীতি মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে অবশ্যই টেকসই কৃষি পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা মেটাতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে এবং তা সময়ের প্রয়োজনে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়াতে হবে। দেশের জন্য নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।
ষাটের দশকে সবুজবিপ্লব এসেছিল এবং এখন আরেকটি বিপ্লবের জন্য সেরা সময়। স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থাপনা ব্যবহারে স্মার্ট এবং দক্ষ হতে হবে। ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনে পর্যাপ্ত এবং কার্যকরী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। যেগুলো কৃষকের জন্য বাস্তবসম্মতভাবে সহজ ও কার্যকর হবে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে আমরা একসঙ্গে একটি টেকসই বা মজবুত পথে হাঁটতে পারব বলে বিশ্বাস রাখি। স্মার্ট বিপ্লব কৃষির দৃশ্যপটে একটি বিবর্তনমূলক পরিবর্তন আনবে, যা আমরা সবাই বুঝতে পারছি। এটি কেবল কৃষি খাতকে শক্তিশালী করবে তা নয়; বরং কার্যকরভাবে আমাদের জীবন-জীবিকা পরিবর্তন করবে। এটি আমাদের দারিদ্র্য এবং বৈষম্য দূর করতে সহায়তা করবে।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে