কৃষি ও মাছে সমৃদ্ধির আশা

মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২২, ০৬: ৪১

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের খবরে উচ্ছ্বসিত পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। কৃষি ও মৎস্যনির্ভর এই জেলার মানুষ এখন পদ্মা সেতু ঘিরে শিল্প ও বাণিজ্যে সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হওয়ার স্বপ্ন বুনে যাচ্ছে। এই সেতু শুধু কৃষি, মৎস্য ও শিল্প খাতেই নয়, সুফল পাওয়া যাবে পর্যটন খাতেও—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পটুয়াখালী জেলার তরমুজ সারা দেশে সুস্বাদু ফল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। উপকূলীয় এই জেলার মাটি তরমুজ চাষে উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ তরমুজ, মুগ ডাল ও আমন ধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফসল দেশের নানা এলাকায় সরবরাহ করা হয়। এমনকি এখানকার উৎপাদিত মুগ ডাল বিদেশেও রপ্তানি হয়। মৎস্য উৎপাদনে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ধরা এবং চাষ করা মাছ নিয়মিত পটুয়াখালী থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। তবে সড়কপথে এসব পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে পদ্মায় ফেরি জটিলতার কারণে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক সময় পথেই নষ্ট হয় পচনশীল অনেক পণ্য। এতে সঠিক দাম থেকেও বঞ্চিত হয় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।

২৬ জুন পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে—এমন খবরে উচ্ছ্বসিত এই জেলার কৃষি ও মৎস্য খাতের সঙ্গে জড়িতরা।

রাঙ্গাবালী এলাকার তরমুজচাষি আব্দুস সোবহান মিয়া বলেন, ‘আমাদের রাঙ্গাবালীকে তরমুজের বাড়ি বলা হয়। আমরা ভালো তরমুজ চাষ করলেও তরমুজের তেমন দাম পাই না। কারণ, সরাসরি তরমুজ আড়তদারের কাছে বিক্রি করতে পারি না; দালালের মাধ্যমে বিক্রি করতে হয়। পদ্মা সেতু খুলে দিলে ঢাকা শহরে তরমুজ নিয়ে যাব, দামও বেশি পাব, লাভও বেশি হবে।’

কলাপাড়ার ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের এলাকার যেসব পণ্য ঢাকায় পাঠাতে হয়, সেগুলো এখন আর লঞ্চে যাবে না। সরাসরি ট্রাকে করে ঢাকায় যাবে ছয় ঘণ্টায়। পদ্মার ওপারের ব্যবসায়ীরা আমাদের এখানে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারবে। নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হবে, শিল্পকারখানা হবে।’

আলীপুর মৎস্যবন্দরের ব্যবসায়ী আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আগে মহিপুর ও আলীপুর থেকে ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলে মাছ পাঠাতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হতো। অনেক সময় অর্ধেক দামেই বিক্রি করে দিতে হতো। এখন সব ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছি।’

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, ‘মাছ পরিবহনে লম্বা সময় লাগলে মাছের কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়। শেষে মৎস্যজীবীরা অর্ধেক দামেই মাছ বিক্রি করে দেন। আমরা আশা করছি, পদ্মা সেতু চালু হলে পটুয়াখালী থেকে যেসব মাছ ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যায়, তা সহজে যেতে পারবে এবং মৎস্যজীবীরা উপযুক্ত দাম পাবেন।’

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের কৃষিপণ্যভিত্তিক ছোট-বড় ইন্ডাস্ট্রি দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠবে। মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এ ছাড়া নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। যারা ফল, সবজি ও কৃষিপণ্য উৎপাদন করছে। তাদের রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক জায়গায় এসব পণ্য পৌঁছানোর পথ সুগম হবে। এর ফলে তারা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে এবং নতুন নতুন উদ্যোগ নেবে।’

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর ফলে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য ও কৃষিপণ্যের উৎপাদনে মানুষের জীবনমানে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

দ্রুত বেতন-ভাতা পাবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান

দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগ, সুযোগ পেতে পারে ইলন মাস্কের স্টারলিংক

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

মালামালের সঙ্গে শিশুকেও তুলে নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত