এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অভ্যুত্থানে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে রাষ্ট্র ও সংস্কারের সব ক্ষেত্রে সংস্কারের দাবি উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার গত বুধবার গুরুত্বপূর্ণ যে ছয়টি ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়, বিচার বিভাগ তার অন্যতম। আন্দোলনকারী ও নাগরিক সমাজের পাশাপাশি আইনজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকে রাজনীতিকরণসহ পুঞ্জীভূত সমস্যা থেকে মুক্ত করতে হবে। এজন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য পৃথক সচিবালয়ের দাবিটি আবার সামনে এসেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকে বিচার বিভাগ সংস্কারের দাবি ওঠেছে। এবিষয়ে ১২ দফা দাবি তুলে ধরেছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফোরাম। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংক্রান্ত যুগান্তকারী মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়ন, বিগত স্বৈরশাসককে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করা বিচারপতিদের অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনা, স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতাকাঠামো বিলুপ্ত করা এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংবিধানের আমূল সংস্কারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
‘ইয়াং জাজেস ফর জুডিশিয়াল রিফর্ম’ ব্যানারে তরুণ বিচারকেরাও সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে ১২ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে এই প্ল্যাটফর্ম। এসব দাবির মধ্যে আছে— বিচার বিভাগের বাজেটে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণ স্বাধীনতা, বিচারকদের পদায়ন ও বদলিতে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা, জনসংখ্যা ও মামলার অনুপাতে বিচারকদের সংখ্যা বৃদ্ধি, বিচারকদের নিরাপত্তা ও পৃথক আবাসনের ব্যবস্থা, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধিসহ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী ইত্যাদি।
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং জাতিসংঘের আপিল আদালতের সাবেক বিচারক ড. শাহজাহান সাজু আজকের পত্রিকাকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারপতি নিয়োগে আইন হওয়া দরকার। নইলে নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকে। বিচার বিভাগে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। এ জন্য পৃথক সচিবালয় করে নিম্ন আদালতের বিচারকদের সবকিছু সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত করতে হবে। এ ছাড়া মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা অনেক কম। তাই নিম্ন আদালতে ৫ থেকে ১০ হাজার এবং উচ্চ আদালতে অন্তত ৫০০ বিচারক নিয়োগ দিতে হবে।
বিচার বিভাগের সংস্কারের অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারপতি অবসরে যাওয়ার অন্তত এক বছরের মধ্যে সরকার কর্তৃক তাঁকে কোনো পদায়ন না করা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন বন্ধ করা, প্রধান বিচারপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা এবং আপিল বিভাগে সিনিয়র আইনজীবী নিয়োগের নীতিমালা নিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের ভিন্ন মত আছে।
বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে কখনো স্বৈরাচার সৃষ্টি হবে না, আইনের শাসন নিশ্চিত হবে।
— এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন
১৯৯৪ সালে বিচার বিভাগকে সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন করতে রিট আবেদন করেন জেলা জজ ও তৎকালীন জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন। হাইকোর্ট ১৯৯৭ সালে ওই আবেদনের পক্ষে রায় দেন। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে সরকার আপিল করে। কিন্তু ১৯৯৯ সালে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে বিচার বিভাগ পৃথক্করণসহ ১২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কিন্তু আপিল বিভাগের ওই নির্দেশনার সময় ও পরের মেয়াদে ক্ষমতাসীন দুটি রাজনৈতিক সরকারের কেউই বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করেনি। পরে ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগ পৃথক্করণ বাস্তবায়ন করে। পরবর্তী দেড় দশকের বেশি টানা ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। তখন বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় করা হয়নি। থমকে আছে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা বাস্তবায়নের কাজ।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি অধস্তন আদালতের বিচারকদের বিষয়ে এখতিয়ার। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১১ সালে সংযুক্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, অধস্তন আদালতের বিচারকদের কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি দান, ছুটি মঞ্জুরসহ শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তা প্রযুক্ত করবেন।
বিচারপতি নিয়োগে আইন দরকার। নইলে নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নের সুযোগ থাকে।
— ড. শাহজাহান সাজু, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ
সংবিধানের এই অনুচ্ছেদকে বিচারকদের স্বাধীনতার জন্য অনেকেই বাধা মনে করেন। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণসংশ্লিষ্ট উল্লিখিত বিষয়গুলোর দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত ছিল। ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে তা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়। ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি ও বদলির ক্ষমতা এককভাবে সুপ্রিম কোর্টের হাতে না থাকায় ‘দ্বৈত শাসন’ সৃষ্টি হচ্ছে বলে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মন্তব্য করেছিলেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১১৬ অনুচ্ছেদ চ্যালেঞ্জ করে গত ২৫ আগস্ট রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী।
আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মূলত রাষ্ট্রপতির ওপর এ দায়িত্ব ন্যস্ত থাকায় এতে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সরাসরি হস্তক্ষেপ দেখা যায়। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।
আবেদনকারী আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। ১১৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এ মৌলিক কাঠামো নষ্ট করা হয়েছে। নিম্ন আদালতের বিচারকেরা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। এর থেকে বের হয়ে প্রধান বিচারপতির অধীনে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় চাই। নিম্ন আদালতকে আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। মেধাবী, সৎ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন যোগ্যদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ করতে অবশ্যই আইন বা নীতিমালা করতে হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে কখনো স্বৈরাচার সৃষ্টি হবে না, আইনের শাসন নিশ্চিত হবে।’
বিচার বিভাগের সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে।
সংস্কার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন বিচার বিভাগ থেকে দূরে। অফিসে বসার আগপর্যন্ত কিছুই বলতে পারব না।’
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অভ্যুত্থানে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে রাষ্ট্র ও সংস্কারের সব ক্ষেত্রে সংস্কারের দাবি উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার গত বুধবার গুরুত্বপূর্ণ যে ছয়টি ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়, বিচার বিভাগ তার অন্যতম। আন্দোলনকারী ও নাগরিক সমাজের পাশাপাশি আইনজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকে রাজনীতিকরণসহ পুঞ্জীভূত সমস্যা থেকে মুক্ত করতে হবে। এজন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য পৃথক সচিবালয়ের দাবিটি আবার সামনে এসেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকে বিচার বিভাগ সংস্কারের দাবি ওঠেছে। এবিষয়ে ১২ দফা দাবি তুলে ধরেছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফোরাম। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংক্রান্ত যুগান্তকারী মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়ন, বিগত স্বৈরশাসককে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করা বিচারপতিদের অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনা, স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতাকাঠামো বিলুপ্ত করা এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংবিধানের আমূল সংস্কারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
‘ইয়াং জাজেস ফর জুডিশিয়াল রিফর্ম’ ব্যানারে তরুণ বিচারকেরাও সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে ১২ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে এই প্ল্যাটফর্ম। এসব দাবির মধ্যে আছে— বিচার বিভাগের বাজেটে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণ স্বাধীনতা, বিচারকদের পদায়ন ও বদলিতে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা, জনসংখ্যা ও মামলার অনুপাতে বিচারকদের সংখ্যা বৃদ্ধি, বিচারকদের নিরাপত্তা ও পৃথক আবাসনের ব্যবস্থা, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধিসহ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী ইত্যাদি।
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং জাতিসংঘের আপিল আদালতের সাবেক বিচারক ড. শাহজাহান সাজু আজকের পত্রিকাকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারপতি নিয়োগে আইন হওয়া দরকার। নইলে নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকে। বিচার বিভাগে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। এ জন্য পৃথক সচিবালয় করে নিম্ন আদালতের বিচারকদের সবকিছু সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত করতে হবে। এ ছাড়া মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা অনেক কম। তাই নিম্ন আদালতে ৫ থেকে ১০ হাজার এবং উচ্চ আদালতে অন্তত ৫০০ বিচারক নিয়োগ দিতে হবে।
বিচার বিভাগের সংস্কারের অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারপতি অবসরে যাওয়ার অন্তত এক বছরের মধ্যে সরকার কর্তৃক তাঁকে কোনো পদায়ন না করা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন বন্ধ করা, প্রধান বিচারপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা এবং আপিল বিভাগে সিনিয়র আইনজীবী নিয়োগের নীতিমালা নিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের ভিন্ন মত আছে।
বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে কখনো স্বৈরাচার সৃষ্টি হবে না, আইনের শাসন নিশ্চিত হবে।
— এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন
১৯৯৪ সালে বিচার বিভাগকে সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন করতে রিট আবেদন করেন জেলা জজ ও তৎকালীন জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন। হাইকোর্ট ১৯৯৭ সালে ওই আবেদনের পক্ষে রায় দেন। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে সরকার আপিল করে। কিন্তু ১৯৯৯ সালে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে বিচার বিভাগ পৃথক্করণসহ ১২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কিন্তু আপিল বিভাগের ওই নির্দেশনার সময় ও পরের মেয়াদে ক্ষমতাসীন দুটি রাজনৈতিক সরকারের কেউই বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করেনি। পরে ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগ পৃথক্করণ বাস্তবায়ন করে। পরবর্তী দেড় দশকের বেশি টানা ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। তখন বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় করা হয়নি। থমকে আছে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা বাস্তবায়নের কাজ।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি অধস্তন আদালতের বিচারকদের বিষয়ে এখতিয়ার। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১১ সালে সংযুক্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, অধস্তন আদালতের বিচারকদের কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি দান, ছুটি মঞ্জুরসহ শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তা প্রযুক্ত করবেন।
বিচারপতি নিয়োগে আইন দরকার। নইলে নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নের সুযোগ থাকে।
— ড. শাহজাহান সাজু, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ
সংবিধানের এই অনুচ্ছেদকে বিচারকদের স্বাধীনতার জন্য অনেকেই বাধা মনে করেন। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণসংশ্লিষ্ট উল্লিখিত বিষয়গুলোর দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত ছিল। ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে তা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়। ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি ও বদলির ক্ষমতা এককভাবে সুপ্রিম কোর্টের হাতে না থাকায় ‘দ্বৈত শাসন’ সৃষ্টি হচ্ছে বলে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মন্তব্য করেছিলেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১১৬ অনুচ্ছেদ চ্যালেঞ্জ করে গত ২৫ আগস্ট রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী।
আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মূলত রাষ্ট্রপতির ওপর এ দায়িত্ব ন্যস্ত থাকায় এতে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সরাসরি হস্তক্ষেপ দেখা যায়। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।
আবেদনকারী আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। ১১৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এ মৌলিক কাঠামো নষ্ট করা হয়েছে। নিম্ন আদালতের বিচারকেরা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। এর থেকে বের হয়ে প্রধান বিচারপতির অধীনে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় চাই। নিম্ন আদালতকে আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। মেধাবী, সৎ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন যোগ্যদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ করতে অবশ্যই আইন বা নীতিমালা করতে হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে কখনো স্বৈরাচার সৃষ্টি হবে না, আইনের শাসন নিশ্চিত হবে।’
বিচার বিভাগের সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে।
সংস্কার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন বিচার বিভাগ থেকে দূরে। অফিসে বসার আগপর্যন্ত কিছুই বলতে পারব না।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২১ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে