মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
১৭ জুন সোমবার আমাদের দেশে কোরবানির ঈদ উদ্যাপিত হয়েছে। এর আগে গত শনিবার সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালিত এবং পরদিন অন্যান্য দেশেও মুসলমানদের ঈদ উদ্যাপিত হয়েছে। এ বছর অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা, সমালোচনা সর্বত্র রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা এখন প্রতিদিন শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গেছে, দ্রব্যমূল্য কত হলে ঊর্ধ্ব, কত হলে সহনীয় হবে, সেটাই অনেকটা ভুলে যাওয়ার কথা। সে অবস্থায় সাধারণ মানুষ ও মধ্যবিত্তরা খুব চাপে আছেন বলে প্রচারও রয়েছে। বাজারে গিয়ে অনেকেই তেমন একটা কেনাকাটা করতে পারছেন না বলেও গণমাধ্যমে প্রচার। কোরবানির ঈদের আগে বলা হয়েছিল, মানুষ এবার আগের মতো কোরবানিই হয়তো দিতে পারবে না। গরু-ছাগলের দাম এবার অন্য পণ্যসামগ্রীর মতোই ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে। পশুখাদ্যের দাম অনেক বেশি। তাই পশু না কিনেই এবার বাড়ি ফিরতে হবে—এমনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অনেক জায়গাতেই প্রচার-অপপ্রচারে জায়গা করে নিয়েছিল। মানুষের হাতে টাকা নেই, তাই এবারের কোরবানির ঈদটাও ভালো হবে না—এমনটিও কেউ কেউ প্রচার করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গরু ও ছাগলের হাটের দৃশ্য দেখে কি মনে হয়েছে দেশের মানুষ আগের চেয়ে খুব খারাপ ঈদ করেছে?
আমাদের দেশের মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, উৎসব পালনের আকাঙ্ক্ষা কতখানি বাস্তবে বিরাজ করছে, সে সম্পর্কে আমরা অনেক সময় ধারণাপ্রসূত কথাবার্তা বেশি বলে থাকি। করোনা-উত্তরকালে বিশ্ব অর্থনীতি এবং দেশের অর্থনীতিও বেশ একটা কঠিন সময় পার করছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু আমাদের কৃষি অর্থনীতি, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, ব্যবসা-বাণিজ্য, মানুষের জীবনযাত্রার মান ধরে রাখার তৎপরতা কমে গেছে—এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। তাই অর্থনীতির টানাপোড়েন চললেও পরিবারগুলোর আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা ধরে রাখার লড়াই নিরন্তর চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কেউই বন্ধ করে দিতে চায় না। সে কারণেই গত দুই-তিন বছর দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি বাজারে মানুষকে নাজেহাল করছে, তার অনেকটাই দুষ্টচক্রের কারসাজি ছাড়া আর কিছু নয় বলেই সাধারণ মানুষও মনে করে। এটিকে দমন করা খুব সহজও নয়, তবে অসম্ভবও নয়, তা দুনিয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই জানা যায়। সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ কার্যকর হলেই কেবল দুষ্টচক্রের অবাধ লুটপাটতন্ত্রে টান পড়তে পারে। মানুষ এখন সেটিই দেখতে চায়।
এবার আসছি কোরবানির ঈদ প্রসঙ্গে। বলা হচ্ছে, ৭০ হাজার কোটি টাকার ঈদ অর্থনীতি এবার দেশে কোরবানির ঈদ নিয়ে এসেছে। অনলাইনে শহরের অনেকেই গরু-ছাগল কেনাকাটা করেছেন। কোরবানির হাট গরু-ছাগলে যেমন ভরে গেছে, আবার শেষ দিনে হাট খালিও হয়ে গেছে। প্রথম দিকে ব্যাপারীরা বেশি দাম হাঁকলেও শেষের দিকে স্বাভাবিক দামেই গরু বেচাকেনা হয়েছে। নিশ্চয়ই কোনো ব্যাপারী গচ্চা দিয়ে বাজারে তোলা গরু-ছাগল বিক্রি করেননি। আবার গরু-ছাগল কিনতে গিয়ে দাম কিছুটা বেশি বললেও কেনাকাটা না করে বাড়ি ফিরেছেন—এমন খবরও শোনা যায়নি। প্রতিবারের মতো কেউ বলেছেন পশু কিনে তিনি সন্তুষ্ট, কেউ বলেছেন কিছুটা বেশি দাম তাঁকে দিতে হয়েছে, কারণ দরাদরি করতে তিনি পারেননি। কোরবানির পশুর হাটে এমনটি নতুন কোনো কথা নয়। প্রচুর খামারি এবং সাধারণ গৃহপালিত গরু-ছাগল ঈদের বাজারে আনা হয়েছে, বিক্রিও হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে খামারিরা যেমন মোটা অঙ্কের লাভ করে বেচাবিক্রি করেছেন, ছোট গৃহপালিত পশু বিক্রেতাও তাঁর আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী গরু-ছাগল বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেছেন।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে গরুর খামার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। অসংখ্য উদ্যোক্তা এই প্রতিষ্ঠানেই এখন নিজেদের আয়, উন্নতির ভবিষ্যৎ দেখছেন। বলা চলে, একসময় এগুলো আরও বড় আকার ধারণ করবে। তবে করপোরেট চরিত্র ধারণ করলে গৃহপালিতদের টিকে থাকা কঠিন হবে। একচেটিয়া কারবারিদের হাতে যখন এই ব্যবসা চলে যাবে, তখন বর্তমান করপোরেট যুগের সিন্ডিক্যালিজম এখানেও প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়। পুঁজিবাদের অনিয়ন্ত্রিত রূপটি যে দেশে সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে, সে দেশে একটা বড় সময় ধরে দুষ্টচক্রের হাতেই বাজার চলে যায়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে লুম্পেন চরিত্রের উদ্যোক্তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাতারাতি অধিক মুনাফা করার জন্য ছোট ছোট উৎপাদনকারীদের নির্বংশ করে দিতে সচেষ্ট থাকে।
আমাদের ভয় হয়, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে নিকট ভবিষ্যতে প্রাণিসম্পদ নিয়েও কখন থেকে আবার যেন বাজারটাকে দুষ্টচক্ররা সম্পূর্ণরূপে নিয়ে নেয়! তখন মানুষের ঈদ আনন্দ ওদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। সে কারণেই সরকারের উচিত হবে দেশে গবাদি খামারকে এখনই শিল্পের মর্যাদায় বেড়ে ওঠার বিধিবিধান, নিয়মশৃঙ্খলায় প্রতিষ্ঠা করা। এবার শত আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও গ্রামে ঈদের আনন্দে ভাটা পড়ার কথা শোনা যায়নি, গরু-ছাগল যে যাঁর মতো করে কোরবানি দিয়েছেন। শহর থেকে গ্রামে অসংখ্য মানুষ ছুটে গেছে। প্রবাস থেকে রেমিট্যান্সও এসেছে। পরিবারগুলোতে ঈদের কেনাকাটা এবং কোরবানি দেওয়ার আনন্দ দেখা গেছে। সুতরাং কোরবানির আগের হাহাকারের প্রচারণাটি কোরবানিতে খুব একটা দেখা যায়নি। এটি আমাদের জন্য স্বস্তির খবর।
দেশে এবার কত গরু-ছাগল কোরবানি হয়েছে, তা নিয়ে নানা সংখ্যার কথা শোনা যায়। তবে দেড় কোটির মতো সংখ্যাটি বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। এত বিপুলসংখ্যক গরু-ছাগল এই সময়ে কোরবানি হওয়ায় বাংলাদেশে চামড়াশিল্পের যে বিরাট সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা জাতীয় কোনো শিল্পের সুযোগ হতে পারছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। প্রায় এক দশক ধরে ক্রমাগতভাবে চামড়ার দাম কমতে কমতে এখন কোরবানিদাতাদের কাছে চামড়ার গুরুত্বই মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে এখন একটা ডিম কিনতে যেখানে ১০-১২ টাকা গুনতে হয়, সেখানে একটা ছাগলের চামড়া ১০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না। এক কেজি মাংস কিনতে যেখানে সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা গুনতে হয়, সেখানে একটি বড় গরুর কাঁচা চামড়া ৩০০-৪০০ টাকায়ও বিক্রি করা যাচ্ছে না। অথচ দেড়-দুই দশক আগে ২-৩ হাজার টাকার নিচে গরুর চামড়া বিক্রির কথা কেউ ভাবতেও পারেনি। তখন ২-৩ হাজার মূল্যমান এখনকার টাকার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হওয়ার কথা।
চামড়ার এই দরহীনতার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে দুষ্টচক্রের কারসাজির খেলায় পরিণত হয়েছে। এরা জানে কোরবানিদাতাদের চামড়া বিক্রি করতেই হবে, কিন্তু ক্রেতা বাজার থেকে উধাও করে দেওয়া হয়েছে। নানা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চামড়া সংগ্রহের জন্য এসে হাজির হয়, এর পরের বিষয়টি আর কারও জানা থাকে না। বাজারে ফড়িয়া, মৌসুমি ব্যবসায়ী, আড়তদার, ট্যানারি মালিক নানা সমিতি, ফেডারেশনের পরিচয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন। তাঁদের কথা শুনে মনে হয় ব্যাংকগুলো তাঁদের কেন টাকার ভল্ট খুলে দিচ্ছে না, অতীত দায়দেনা কেন মাফ করে দিচ্ছে না! তাহলেই নাকি তাঁরা এটিকে একটি শিল্পে পরিণত করতে পারবেন। তাঁরা যে এটি করবেন না, তা গত কয়েক দশকেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। আড়তদার, ট্যানারি মালিকসহ অনেকেই চামড়ার ব্যবসা করে ভালোই অর্থকড়ি গড়েছেন। কিন্তু গরিবের হক বলে যে একটা কথা কোরবানির চামড়া নিয়ে আছে, সেটি তাঁরা একেবারেই ভুলিয়ে দিয়েছেন। সরকার তাঁদের সঙ্গে খুব বেশি পারবে বলে মনে হয় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর জাপান সফরকালে সে দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে চামড়াশিল্পের সদ্ব্যবহারে প্রতিষ্ঠান গড়ার যে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, সরকার মনে হয় সেদিকে মনোযোগ দিতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী যেসব শিল্পাঞ্চল তৈরি করেছেন, সেগুলোতে বিদেশি ও দেশীয় যাঁরা ইচ্ছুক উদ্যোক্তা আছেন, তাঁদের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে চামড়াজাত নানা বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করার সুযোগ করে দিলে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম উন্নত চামড়াশিল্প রপ্তানিকারক দেশ হতে পারে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাতে দেশে দক্ষ মানবশক্তি যেমন তৈরি হবে, বিদেশ থেকেও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। সরকারকে সেই পথেই হয়তো হাঁটার কথা ভাবতে হবে।
লেখক: মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
১৭ জুন সোমবার আমাদের দেশে কোরবানির ঈদ উদ্যাপিত হয়েছে। এর আগে গত শনিবার সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালিত এবং পরদিন অন্যান্য দেশেও মুসলমানদের ঈদ উদ্যাপিত হয়েছে। এ বছর অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা, সমালোচনা সর্বত্র রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা এখন প্রতিদিন শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গেছে, দ্রব্যমূল্য কত হলে ঊর্ধ্ব, কত হলে সহনীয় হবে, সেটাই অনেকটা ভুলে যাওয়ার কথা। সে অবস্থায় সাধারণ মানুষ ও মধ্যবিত্তরা খুব চাপে আছেন বলে প্রচারও রয়েছে। বাজারে গিয়ে অনেকেই তেমন একটা কেনাকাটা করতে পারছেন না বলেও গণমাধ্যমে প্রচার। কোরবানির ঈদের আগে বলা হয়েছিল, মানুষ এবার আগের মতো কোরবানিই হয়তো দিতে পারবে না। গরু-ছাগলের দাম এবার অন্য পণ্যসামগ্রীর মতোই ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে। পশুখাদ্যের দাম অনেক বেশি। তাই পশু না কিনেই এবার বাড়ি ফিরতে হবে—এমনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অনেক জায়গাতেই প্রচার-অপপ্রচারে জায়গা করে নিয়েছিল। মানুষের হাতে টাকা নেই, তাই এবারের কোরবানির ঈদটাও ভালো হবে না—এমনটিও কেউ কেউ প্রচার করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গরু ও ছাগলের হাটের দৃশ্য দেখে কি মনে হয়েছে দেশের মানুষ আগের চেয়ে খুব খারাপ ঈদ করেছে?
আমাদের দেশের মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, উৎসব পালনের আকাঙ্ক্ষা কতখানি বাস্তবে বিরাজ করছে, সে সম্পর্কে আমরা অনেক সময় ধারণাপ্রসূত কথাবার্তা বেশি বলে থাকি। করোনা-উত্তরকালে বিশ্ব অর্থনীতি এবং দেশের অর্থনীতিও বেশ একটা কঠিন সময় পার করছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু আমাদের কৃষি অর্থনীতি, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, ব্যবসা-বাণিজ্য, মানুষের জীবনযাত্রার মান ধরে রাখার তৎপরতা কমে গেছে—এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। তাই অর্থনীতির টানাপোড়েন চললেও পরিবারগুলোর আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা ধরে রাখার লড়াই নিরন্তর চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কেউই বন্ধ করে দিতে চায় না। সে কারণেই গত দুই-তিন বছর দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি বাজারে মানুষকে নাজেহাল করছে, তার অনেকটাই দুষ্টচক্রের কারসাজি ছাড়া আর কিছু নয় বলেই সাধারণ মানুষও মনে করে। এটিকে দমন করা খুব সহজও নয়, তবে অসম্ভবও নয়, তা দুনিয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই জানা যায়। সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ কার্যকর হলেই কেবল দুষ্টচক্রের অবাধ লুটপাটতন্ত্রে টান পড়তে পারে। মানুষ এখন সেটিই দেখতে চায়।
এবার আসছি কোরবানির ঈদ প্রসঙ্গে। বলা হচ্ছে, ৭০ হাজার কোটি টাকার ঈদ অর্থনীতি এবার দেশে কোরবানির ঈদ নিয়ে এসেছে। অনলাইনে শহরের অনেকেই গরু-ছাগল কেনাকাটা করেছেন। কোরবানির হাট গরু-ছাগলে যেমন ভরে গেছে, আবার শেষ দিনে হাট খালিও হয়ে গেছে। প্রথম দিকে ব্যাপারীরা বেশি দাম হাঁকলেও শেষের দিকে স্বাভাবিক দামেই গরু বেচাকেনা হয়েছে। নিশ্চয়ই কোনো ব্যাপারী গচ্চা দিয়ে বাজারে তোলা গরু-ছাগল বিক্রি করেননি। আবার গরু-ছাগল কিনতে গিয়ে দাম কিছুটা বেশি বললেও কেনাকাটা না করে বাড়ি ফিরেছেন—এমন খবরও শোনা যায়নি। প্রতিবারের মতো কেউ বলেছেন পশু কিনে তিনি সন্তুষ্ট, কেউ বলেছেন কিছুটা বেশি দাম তাঁকে দিতে হয়েছে, কারণ দরাদরি করতে তিনি পারেননি। কোরবানির পশুর হাটে এমনটি নতুন কোনো কথা নয়। প্রচুর খামারি এবং সাধারণ গৃহপালিত গরু-ছাগল ঈদের বাজারে আনা হয়েছে, বিক্রিও হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে খামারিরা যেমন মোটা অঙ্কের লাভ করে বেচাবিক্রি করেছেন, ছোট গৃহপালিত পশু বিক্রেতাও তাঁর আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী গরু-ছাগল বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেছেন।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে গরুর খামার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। অসংখ্য উদ্যোক্তা এই প্রতিষ্ঠানেই এখন নিজেদের আয়, উন্নতির ভবিষ্যৎ দেখছেন। বলা চলে, একসময় এগুলো আরও বড় আকার ধারণ করবে। তবে করপোরেট চরিত্র ধারণ করলে গৃহপালিতদের টিকে থাকা কঠিন হবে। একচেটিয়া কারবারিদের হাতে যখন এই ব্যবসা চলে যাবে, তখন বর্তমান করপোরেট যুগের সিন্ডিক্যালিজম এখানেও প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়। পুঁজিবাদের অনিয়ন্ত্রিত রূপটি যে দেশে সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে, সে দেশে একটা বড় সময় ধরে দুষ্টচক্রের হাতেই বাজার চলে যায়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে লুম্পেন চরিত্রের উদ্যোক্তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাতারাতি অধিক মুনাফা করার জন্য ছোট ছোট উৎপাদনকারীদের নির্বংশ করে দিতে সচেষ্ট থাকে।
আমাদের ভয় হয়, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে নিকট ভবিষ্যতে প্রাণিসম্পদ নিয়েও কখন থেকে আবার যেন বাজারটাকে দুষ্টচক্ররা সম্পূর্ণরূপে নিয়ে নেয়! তখন মানুষের ঈদ আনন্দ ওদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। সে কারণেই সরকারের উচিত হবে দেশে গবাদি খামারকে এখনই শিল্পের মর্যাদায় বেড়ে ওঠার বিধিবিধান, নিয়মশৃঙ্খলায় প্রতিষ্ঠা করা। এবার শত আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও গ্রামে ঈদের আনন্দে ভাটা পড়ার কথা শোনা যায়নি, গরু-ছাগল যে যাঁর মতো করে কোরবানি দিয়েছেন। শহর থেকে গ্রামে অসংখ্য মানুষ ছুটে গেছে। প্রবাস থেকে রেমিট্যান্সও এসেছে। পরিবারগুলোতে ঈদের কেনাকাটা এবং কোরবানি দেওয়ার আনন্দ দেখা গেছে। সুতরাং কোরবানির আগের হাহাকারের প্রচারণাটি কোরবানিতে খুব একটা দেখা যায়নি। এটি আমাদের জন্য স্বস্তির খবর।
দেশে এবার কত গরু-ছাগল কোরবানি হয়েছে, তা নিয়ে নানা সংখ্যার কথা শোনা যায়। তবে দেড় কোটির মতো সংখ্যাটি বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। এত বিপুলসংখ্যক গরু-ছাগল এই সময়ে কোরবানি হওয়ায় বাংলাদেশে চামড়াশিল্পের যে বিরাট সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা জাতীয় কোনো শিল্পের সুযোগ হতে পারছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। প্রায় এক দশক ধরে ক্রমাগতভাবে চামড়ার দাম কমতে কমতে এখন কোরবানিদাতাদের কাছে চামড়ার গুরুত্বই মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে এখন একটা ডিম কিনতে যেখানে ১০-১২ টাকা গুনতে হয়, সেখানে একটা ছাগলের চামড়া ১০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না। এক কেজি মাংস কিনতে যেখানে সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা গুনতে হয়, সেখানে একটি বড় গরুর কাঁচা চামড়া ৩০০-৪০০ টাকায়ও বিক্রি করা যাচ্ছে না। অথচ দেড়-দুই দশক আগে ২-৩ হাজার টাকার নিচে গরুর চামড়া বিক্রির কথা কেউ ভাবতেও পারেনি। তখন ২-৩ হাজার মূল্যমান এখনকার টাকার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হওয়ার কথা।
চামড়ার এই দরহীনতার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে দুষ্টচক্রের কারসাজির খেলায় পরিণত হয়েছে। এরা জানে কোরবানিদাতাদের চামড়া বিক্রি করতেই হবে, কিন্তু ক্রেতা বাজার থেকে উধাও করে দেওয়া হয়েছে। নানা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চামড়া সংগ্রহের জন্য এসে হাজির হয়, এর পরের বিষয়টি আর কারও জানা থাকে না। বাজারে ফড়িয়া, মৌসুমি ব্যবসায়ী, আড়তদার, ট্যানারি মালিক নানা সমিতি, ফেডারেশনের পরিচয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন। তাঁদের কথা শুনে মনে হয় ব্যাংকগুলো তাঁদের কেন টাকার ভল্ট খুলে দিচ্ছে না, অতীত দায়দেনা কেন মাফ করে দিচ্ছে না! তাহলেই নাকি তাঁরা এটিকে একটি শিল্পে পরিণত করতে পারবেন। তাঁরা যে এটি করবেন না, তা গত কয়েক দশকেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। আড়তদার, ট্যানারি মালিকসহ অনেকেই চামড়ার ব্যবসা করে ভালোই অর্থকড়ি গড়েছেন। কিন্তু গরিবের হক বলে যে একটা কথা কোরবানির চামড়া নিয়ে আছে, সেটি তাঁরা একেবারেই ভুলিয়ে দিয়েছেন। সরকার তাঁদের সঙ্গে খুব বেশি পারবে বলে মনে হয় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর জাপান সফরকালে সে দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে চামড়াশিল্পের সদ্ব্যবহারে প্রতিষ্ঠান গড়ার যে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, সরকার মনে হয় সেদিকে মনোযোগ দিতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী যেসব শিল্পাঞ্চল তৈরি করেছেন, সেগুলোতে বিদেশি ও দেশীয় যাঁরা ইচ্ছুক উদ্যোক্তা আছেন, তাঁদের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে চামড়াজাত নানা বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করার সুযোগ করে দিলে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম উন্নত চামড়াশিল্প রপ্তানিকারক দেশ হতে পারে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাতে দেশে দক্ষ মানবশক্তি যেমন তৈরি হবে, বিদেশ থেকেও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। সরকারকে সেই পথেই হয়তো হাঁটার কথা ভাবতে হবে।
লেখক: মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে