রাহুল শর্মা, ঢাকা
স্বাস্থ্য ও কারিগরি ক্যাডারের অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডের হলেও শিক্ষা ক্যাডার এ অধ্যাপক পদ চতুর্থ গ্রেডভুক্ত। সিলেকশন গ্রেড বিলোপে সরকারি কলেজ অধ্যাপকদের ওপরের গ্রেডে যাওয়া আটকে যায়। এ নিয়ে আন্দোলনের মুখে সরকার অধ্যাপক পদের গ্রেড উন্নীত করার আশ্বাস দিয়েছিল। সম্প্রতি সরকারি কলেজ অধ্যক্ষের পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় তৈরি হতে যাচ্ছে নতুন জটিলতা। কারণ, এসব কলেজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালকেরা চতুর্থ গ্রেডের।
জানা যায়, মাউশির মহাপরিচালকের পদটি প্রথম গ্রেডের হলেও শিক্ষা ক্যাডারে চতুর্থ গ্রেডের ওপরে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় সবশেষ তিন মহাপরিচালকের কেউই গ্রেড-১ পাননি। এই বাধা না কাটিয়েই গত ১৯ জুন ৯৫টি অধ্যক্ষের পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। যদিও বোর্ডের সভা এখনো হয়নি।
এই সিদ্ধান্তে শিক্ষা ক্যাডারে সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা (অধ্যক্ষদের গ্রেড পরিবর্তন) হলে মাঠপর্যায়ে কিছু সমন্বয়হীনতা দেখা দিতে পারে। তবে সেটি বড় বিষয় নয়, শিক্ষকেরা তৃতীয় গ্রেড পাচ্ছেন—এটাই বড় কথা। এতেই আমি খুশি।’ তিনি আরও বলেন, ২ ও ৩ নম্বর গ্রেডের পদ সৃষ্টি না করায় ডিজি চতুর্থ গ্রেডেই আটকে থাকছেন।
একাধিক কলেজশিক্ষক বলেন, শিক্ষা ক্যাডারে পদসোপান তৈরি এবং অধ্যাপক পদের গ্রেড উন্নীত না করে শুধু অধ্যক্ষদের গ্রেড পরিবর্তন দুরভিসন্ধিমূলক। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির এক নেতা বলেন, ‘পদসোপান সৃষ্টি না করে অধ্যক্ষদের গ্রেড পরিবর্তনে শিক্ষা ক্যাডারের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। কারণ, তৃতীয় গ্রেডের একজন অধ্যক্ষ চতুর্থ গ্রেডের ডিজিকে কেন মানবেন? এ সুযোগে প্রাথমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মতো মাউশির মহাপরিচালকের পদেও প্রশাসন ক্যাডারের কাউকে বসিয়ে দেওয়া হতে পারে।’
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি ও মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি; বরং দিন দিন বৈষম্য বাড়ছে। ২০১৫ সালের বেতন স্কেলে শিক্ষা ক্যাডারের অবনমন ঘটলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেতনবৈষম্য দূরীকরণে দুটি কমিটি করা হয়েছিল। তখন অধ্যাপক পদের ৫০ শতাংশ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার সুপারিশ করা হলেও তা অবজ্ঞা করে মাত্র ৮ শতাংশ অধ্যাপক পদকে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার পদক্ষেপ নেওয়া শিক্ষা ক্যাডারের প্রতি চরম অবজ্ঞার শামিল। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষা ক্যাডারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মু. ফজলুর রহমান অবশ্য শিক্ষা ক্যাডারের গ্রেড জটিলতা অচিরেই কেটে যাবে বলে আশাবাদী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। এ বিষয়ে কাজ চলছে। আশা করি, শিগগির গ্রেড জটিলতার সমাধান হবে।’
‘বনসাই ক্যাডার’
কর্মকর্তার সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি ক্যাডারের একটি হলো শিক্ষা। এই ক্যাডারে মোট ১৫ হাজার ৯৫০টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৪ হাজারের কিছু বেশি। তাঁদের অধিকাংশই সরকারি কলেজের শিক্ষক। কিছু সদস্য মাউশিসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত।
কয়েকজন শিক্ষক বলেন, তাঁদের পদোন্নতি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবনা কম। অথচ প্রশাসনসহ কিছু ক্যাডারে নতুন পদ সৃষ্টি ছাড়াও পদের অতিরিক্ত অনেক কর্মকর্তার নিয়মিত পদোন্নতি হচ্ছে। সরকারি কলেজের অন্তত ২০ জন অধ্যাপক জানান, পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধার নাজুক অবস্থার কারণে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে মারাত্মক হতাশা বিরাজ করছে। ওপরের ধাপে ওঠার সুযোগ না থাকায় অনেকেই একে ‘বনসাই ক্যাডার’ বলে থাকেন। সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদেরও কেউ কেউ চতুর্থ গ্রেড পেয়ে থাকেন। এতে সামাজিকভাবে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন অধ্যাপকেরা। তাঁরা আরও জানান, পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা না থাকায় অনেক শিক্ষক নিম্ন গ্রেডের পদেও প্রশাসন ক্যাডারে চলে যান। সর্বশেষ উদাহরণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬তম ব্যাচের চতুর্থ গ্রেডের সাতজন শিক্ষক। তাঁরা প্রশাসন ক্যাডারে উপসচিব (পঞ্চম গ্রেড) পদে যোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, ৫৯৩ জন অধ্যাপক ২০২১ সালে মামলা করেন তৃতীয় গ্রেডের দাবিতে। গত ২৩ নভেম্বর আদালত তাঁদের পক্ষে রায় দেন। এ বিষয়ে মাউশির শিক্ষা কর্মকর্তা (আইন) মো. আল আমিন সরকার বলেন, রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।
দুই দফা পদোন্নতিতেও গ্রেড বাড়েনি
মাউশি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডারের ৯ম থেকে ১৬তম ব্যাচের অধ্যাপকদের প্রায় সবাই চতুর্থ গ্রেডের শেষ ধাপে পৌঁছে গেছেন। তাঁদের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। এই অবস্থায় অবসরে গেছেন প্রায় তিন হাজার শিক্ষক। ৩৪ বছরের শিক্ষকতা জীবন শেষে গত বছর অবসরে যান বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দিক। ৯ম ব্যাচের এই শিক্ষক ২০১৩ সালে চতুর্থ গ্রেড পেয়েছিলেন। এরপর তৃতীয় গ্রেড পাওয়ার সুযোগ না থাকায় সেই অর্থে বেতন বাড়েনি। তিনি বলেন, ‘গ্রেড পরিবর্তন না হওয়ায় অনেক শিক্ষককে একই বেতনে জীবনের শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়, যা চরম হতাশাজনক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘২০১৩ সালে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার সময়ই চতুর্থ গ্রেড পেয়েছি। ২০১৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে সহযোগী অধ্যাপক হলাম, তখনো চতুর্থ গ্রেড। ২০২০ সালে অধ্যাপক হলাম, তখনো চতুর্থ গ্রেড। ২০২৫ সালে অবসরে যাব চতুর্থ গ্রেডে থেকেই। এ ধরনের বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না।’
ছয় স্তরের পদসোপান তৈরির তাগিদ
আগের পে স্কেল অনুযায়ী, ৫০ শতাংশ অধ্যাপক তৃতীয় গ্রেড পেতেন। দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতি হতো সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে। ২০১৫ সালের জাতীয় বেতনকাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বিলোপ করা হলেও শিক্ষকদের চতুর্থ গ্রেডের ওপরে যাওয়ার কোনো উপায় বলা হয়নি। তখন আন্দোলনরত শিক্ষকদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল, তিন স্তরের (গ্রেড-১, গ্রেড-২, গ্রেড-৩) অধ্যাপকসহ ছয় স্তরের পদসোপান। সে সময় মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে কোর কমিটি ৪২৯টি অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
কয়েকজন শিক্ষক জানান, অন্যান্য ক্যাডারে ছয় স্তরের পদসোপান থাকলেও শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত মাত্র চারটি স্তর। প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্যাডারে পঞ্চম গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে গেলেও শিক্ষা ক্যাডারে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে চতুর্থ গ্রেডে যান। তাঁদের মতে, আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন এবং শৃঙ্খলার স্বার্থে শিক্ষা ক্যাডারে বিসিএসের ব্যাচ ধরে পদোন্নতি, ছয় স্তরের পদসোপান এবং সর্বোচ্চ গ্রেডপ্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি।
মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, ‘অন্যান্য ক্যাডারের মতো অধ্যাপক পদটি তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারের আরও যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। তা না হলে কোয়ালিটি এডুকেশন (মানসম্পন্ন শিক্ষা) নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।’
স্বাস্থ্য ও কারিগরি ক্যাডারের অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডের হলেও শিক্ষা ক্যাডার এ অধ্যাপক পদ চতুর্থ গ্রেডভুক্ত। সিলেকশন গ্রেড বিলোপে সরকারি কলেজ অধ্যাপকদের ওপরের গ্রেডে যাওয়া আটকে যায়। এ নিয়ে আন্দোলনের মুখে সরকার অধ্যাপক পদের গ্রেড উন্নীত করার আশ্বাস দিয়েছিল। সম্প্রতি সরকারি কলেজ অধ্যক্ষের পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় তৈরি হতে যাচ্ছে নতুন জটিলতা। কারণ, এসব কলেজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালকেরা চতুর্থ গ্রেডের।
জানা যায়, মাউশির মহাপরিচালকের পদটি প্রথম গ্রেডের হলেও শিক্ষা ক্যাডারে চতুর্থ গ্রেডের ওপরে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় সবশেষ তিন মহাপরিচালকের কেউই গ্রেড-১ পাননি। এই বাধা না কাটিয়েই গত ১৯ জুন ৯৫টি অধ্যক্ষের পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। যদিও বোর্ডের সভা এখনো হয়নি।
এই সিদ্ধান্তে শিক্ষা ক্যাডারে সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা (অধ্যক্ষদের গ্রেড পরিবর্তন) হলে মাঠপর্যায়ে কিছু সমন্বয়হীনতা দেখা দিতে পারে। তবে সেটি বড় বিষয় নয়, শিক্ষকেরা তৃতীয় গ্রেড পাচ্ছেন—এটাই বড় কথা। এতেই আমি খুশি।’ তিনি আরও বলেন, ২ ও ৩ নম্বর গ্রেডের পদ সৃষ্টি না করায় ডিজি চতুর্থ গ্রেডেই আটকে থাকছেন।
একাধিক কলেজশিক্ষক বলেন, শিক্ষা ক্যাডারে পদসোপান তৈরি এবং অধ্যাপক পদের গ্রেড উন্নীত না করে শুধু অধ্যক্ষদের গ্রেড পরিবর্তন দুরভিসন্ধিমূলক। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির এক নেতা বলেন, ‘পদসোপান সৃষ্টি না করে অধ্যক্ষদের গ্রেড পরিবর্তনে শিক্ষা ক্যাডারের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। কারণ, তৃতীয় গ্রেডের একজন অধ্যক্ষ চতুর্থ গ্রেডের ডিজিকে কেন মানবেন? এ সুযোগে প্রাথমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মতো মাউশির মহাপরিচালকের পদেও প্রশাসন ক্যাডারের কাউকে বসিয়ে দেওয়া হতে পারে।’
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি ও মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি; বরং দিন দিন বৈষম্য বাড়ছে। ২০১৫ সালের বেতন স্কেলে শিক্ষা ক্যাডারের অবনমন ঘটলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেতনবৈষম্য দূরীকরণে দুটি কমিটি করা হয়েছিল। তখন অধ্যাপক পদের ৫০ শতাংশ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার সুপারিশ করা হলেও তা অবজ্ঞা করে মাত্র ৮ শতাংশ অধ্যাপক পদকে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার পদক্ষেপ নেওয়া শিক্ষা ক্যাডারের প্রতি চরম অবজ্ঞার শামিল। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষা ক্যাডারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মু. ফজলুর রহমান অবশ্য শিক্ষা ক্যাডারের গ্রেড জটিলতা অচিরেই কেটে যাবে বলে আশাবাদী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। এ বিষয়ে কাজ চলছে। আশা করি, শিগগির গ্রেড জটিলতার সমাধান হবে।’
‘বনসাই ক্যাডার’
কর্মকর্তার সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি ক্যাডারের একটি হলো শিক্ষা। এই ক্যাডারে মোট ১৫ হাজার ৯৫০টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৪ হাজারের কিছু বেশি। তাঁদের অধিকাংশই সরকারি কলেজের শিক্ষক। কিছু সদস্য মাউশিসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত।
কয়েকজন শিক্ষক বলেন, তাঁদের পদোন্নতি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবনা কম। অথচ প্রশাসনসহ কিছু ক্যাডারে নতুন পদ সৃষ্টি ছাড়াও পদের অতিরিক্ত অনেক কর্মকর্তার নিয়মিত পদোন্নতি হচ্ছে। সরকারি কলেজের অন্তত ২০ জন অধ্যাপক জানান, পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধার নাজুক অবস্থার কারণে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে মারাত্মক হতাশা বিরাজ করছে। ওপরের ধাপে ওঠার সুযোগ না থাকায় অনেকেই একে ‘বনসাই ক্যাডার’ বলে থাকেন। সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদেরও কেউ কেউ চতুর্থ গ্রেড পেয়ে থাকেন। এতে সামাজিকভাবে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন অধ্যাপকেরা। তাঁরা আরও জানান, পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা না থাকায় অনেক শিক্ষক নিম্ন গ্রেডের পদেও প্রশাসন ক্যাডারে চলে যান। সর্বশেষ উদাহরণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬তম ব্যাচের চতুর্থ গ্রেডের সাতজন শিক্ষক। তাঁরা প্রশাসন ক্যাডারে উপসচিব (পঞ্চম গ্রেড) পদে যোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, ৫৯৩ জন অধ্যাপক ২০২১ সালে মামলা করেন তৃতীয় গ্রেডের দাবিতে। গত ২৩ নভেম্বর আদালত তাঁদের পক্ষে রায় দেন। এ বিষয়ে মাউশির শিক্ষা কর্মকর্তা (আইন) মো. আল আমিন সরকার বলেন, রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।
দুই দফা পদোন্নতিতেও গ্রেড বাড়েনি
মাউশি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডারের ৯ম থেকে ১৬তম ব্যাচের অধ্যাপকদের প্রায় সবাই চতুর্থ গ্রেডের শেষ ধাপে পৌঁছে গেছেন। তাঁদের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। এই অবস্থায় অবসরে গেছেন প্রায় তিন হাজার শিক্ষক। ৩৪ বছরের শিক্ষকতা জীবন শেষে গত বছর অবসরে যান বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দিক। ৯ম ব্যাচের এই শিক্ষক ২০১৩ সালে চতুর্থ গ্রেড পেয়েছিলেন। এরপর তৃতীয় গ্রেড পাওয়ার সুযোগ না থাকায় সেই অর্থে বেতন বাড়েনি। তিনি বলেন, ‘গ্রেড পরিবর্তন না হওয়ায় অনেক শিক্ষককে একই বেতনে জীবনের শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়, যা চরম হতাশাজনক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘২০১৩ সালে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার সময়ই চতুর্থ গ্রেড পেয়েছি। ২০১৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে সহযোগী অধ্যাপক হলাম, তখনো চতুর্থ গ্রেড। ২০২০ সালে অধ্যাপক হলাম, তখনো চতুর্থ গ্রেড। ২০২৫ সালে অবসরে যাব চতুর্থ গ্রেডে থেকেই। এ ধরনের বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না।’
ছয় স্তরের পদসোপান তৈরির তাগিদ
আগের পে স্কেল অনুযায়ী, ৫০ শতাংশ অধ্যাপক তৃতীয় গ্রেড পেতেন। দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতি হতো সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে। ২০১৫ সালের জাতীয় বেতনকাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বিলোপ করা হলেও শিক্ষকদের চতুর্থ গ্রেডের ওপরে যাওয়ার কোনো উপায় বলা হয়নি। তখন আন্দোলনরত শিক্ষকদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল, তিন স্তরের (গ্রেড-১, গ্রেড-২, গ্রেড-৩) অধ্যাপকসহ ছয় স্তরের পদসোপান। সে সময় মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে কোর কমিটি ৪২৯টি অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
কয়েকজন শিক্ষক জানান, অন্যান্য ক্যাডারে ছয় স্তরের পদসোপান থাকলেও শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত মাত্র চারটি স্তর। প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্যাডারে পঞ্চম গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে গেলেও শিক্ষা ক্যাডারে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে চতুর্থ গ্রেডে যান। তাঁদের মতে, আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন এবং শৃঙ্খলার স্বার্থে শিক্ষা ক্যাডারে বিসিএসের ব্যাচ ধরে পদোন্নতি, ছয় স্তরের পদসোপান এবং সর্বোচ্চ গ্রেডপ্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি।
মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, ‘অন্যান্য ক্যাডারের মতো অধ্যাপক পদটি তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারের আরও যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। তা না হলে কোয়ালিটি এডুকেশন (মানসম্পন্ন শিক্ষা) নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে