চয়ন বিকাশ ভদ্র
‘শেষের কবিতা’ যেমন কবিতার বই নয়, তেমনি মহাবেলও বেল নয়। তবে নাম শুনে বিভ্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। আধুনিক কৃষিবিদ্যার জনক পিয়েত্রো দে’ ক্রিসেনজি বা ক্রেসেনজির নামে এই ফলের বৈজ্ঞানিক নাম রাখা হয়েছিল ক্রিসেন্টিয়া চুজেতে। এটি বিগনোনিয়েসি পরিবারের উদ্ভিদ। ইংরেজিতে এর নাম ক্যালাবাশ। আর বাংলায় ডাকা হয় মহাবেল নামে। তবে আমাদের দেশের কোথাও এটি তানপুরা ফল, ডুগডুগি ফল, আবার কোথাও বিলাতি ফল নামে পরিচিত।
কাঁচা মহাবেলের শরীর মসৃণ ও নরম; নখ দিয়ে চাপ দিলে বসে যায়। গাঢ় সবুজ রঙের এ ফল অনেকটা লাউয়ের মতো। পাকা ফলের খোলস শক্ত। কাঁচা অবস্থায় ফলটি কাটলে ভেতরে দুধসাদা শাঁস পাওয়া যায়। ফলটি পেকে গেলে শাঁস কালো ছাইয়ের মতো হয়ে যায়।
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে পশ্চিম ও দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অঞ্চলে মহাবেলের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। ফল হিসেবে এটি বিষাক্ত বলেই হয়তো ভারতবর্ষে দেশীয়করণ হলেও এর তেমন বিস্তার ঘটেনি। শোভাবর্ধক হিসেবে বৃক্ষপ্রেমীদের স্বীকৃতি পাওয়ায় গাছটি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
মহাবেলগাছ আট মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। দেখতে বেলগাছের মতো হলেও এ গাছে কাঁটা নেই; পাতায় বা ফলে বেলের বিশেষ গন্ধও নেই। ডাল লাগালে গাছ হয়। তরুণ কাণ্ড মসৃণ, অর্ধগোলাকার, ধূসর রঙের। পাতা সরল, গুচ্ছাকারে সাজানো, অবৃন্তক, প্রায় ডিম্বাকার, গোড়ার দিকে ক্রমে সরু। গাছ লাগানোর কয়েক বছর পর ফুল ফোটে সরাসরি কাণ্ডের গায়ে, যেমনটা দেখা যায় নাগলিঙ্গম, কাঁঠাল, ডুমুর, কোকো ইত্যাদি গাছে। ফুলের রং সবুজাভ সাদা, বেগুনি রেখাযুক্ত। ময়মনসিংহের টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ডের কাছে চুপশাহ মাজারের উঠানে এবং শশীলজের আঙিনার পূর্ব দিকে একটি মহাবেলগাছ আছে।
আমাদের দেশে বিষাক্ত বলে মনে করা হলেও দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ফলটির কাঁচা শাঁস পানিতে ফুটিয়ে রোগ নিরাময়কারী সিরাপ বানানো হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন রোগের প্রতিকারে গাছটির ছাল-পাতা ও শিকড়ের ব্যবহার রয়েছে। এর শক্ত ও মসৃণ খোসা ঘর সাজানোর বিভিন্ন দ্রব্য ও বাদ্যযন্ত্র তৈরির উপযোগী। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে মহাবেলের খোসা বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। পাকা ফলের খোলস শক্ত হওয়ায় এটি ডুগডুগি ছাড়াও নানা শিল্পকর্মে ব্যবহার করা যায়। এর খোল থেকে তৈরি হয় বিখ্যাত বাদ্যযন্ত্র মারাকা। আমাদের যন্ত্রীরা একে ‘মারাক্কাস’ বলেন। এটি এক প্রকার ঝুমঝুমি, যা মিউজিক্যাল রিদম সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের টিপরা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা মস্তিষ্ক বিকৃতির চিকিৎসায় এই ফলের মণ্ড মাথায় প্রলেপ হিসেবে ব্যবহার করে।
পরাগায়নের প্রধান বাহক বাদুড়। তবে যেখানে বাদুড় বিরল সেখানে হয়তো মথ বা মৌমাছি এর পরাগায়ন করে থাকে। ওভারির নিচে মধুগ্রন্থির উপস্থিতির কারণে মাজুলি বা বিষপিঁপড়া দেখা যায় মহাবেলগাছে, যা ফলটিকে বন্য প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা করে। গাছে ফল থাকে প্রায় সাত মাস। মহাবেল সবুজ থেকে আস্তে আস্তে ধূসর রং ধারণ করে। এর কাটিং থেকে সহজে নতুন গাছ জন্মানো যায়। বীজ থেকেও চারা হয়। অঙ্কুরোদ্গম হয় ১০ থেকে ১৫ দিন পর। সব রকম মাটিতেই, এমনকি কাদামাটিতেও মহাবেল জন্মাতে পারে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ
‘শেষের কবিতা’ যেমন কবিতার বই নয়, তেমনি মহাবেলও বেল নয়। তবে নাম শুনে বিভ্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। আধুনিক কৃষিবিদ্যার জনক পিয়েত্রো দে’ ক্রিসেনজি বা ক্রেসেনজির নামে এই ফলের বৈজ্ঞানিক নাম রাখা হয়েছিল ক্রিসেন্টিয়া চুজেতে। এটি বিগনোনিয়েসি পরিবারের উদ্ভিদ। ইংরেজিতে এর নাম ক্যালাবাশ। আর বাংলায় ডাকা হয় মহাবেল নামে। তবে আমাদের দেশের কোথাও এটি তানপুরা ফল, ডুগডুগি ফল, আবার কোথাও বিলাতি ফল নামে পরিচিত।
কাঁচা মহাবেলের শরীর মসৃণ ও নরম; নখ দিয়ে চাপ দিলে বসে যায়। গাঢ় সবুজ রঙের এ ফল অনেকটা লাউয়ের মতো। পাকা ফলের খোলস শক্ত। কাঁচা অবস্থায় ফলটি কাটলে ভেতরে দুধসাদা শাঁস পাওয়া যায়। ফলটি পেকে গেলে শাঁস কালো ছাইয়ের মতো হয়ে যায়।
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে পশ্চিম ও দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অঞ্চলে মহাবেলের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। ফল হিসেবে এটি বিষাক্ত বলেই হয়তো ভারতবর্ষে দেশীয়করণ হলেও এর তেমন বিস্তার ঘটেনি। শোভাবর্ধক হিসেবে বৃক্ষপ্রেমীদের স্বীকৃতি পাওয়ায় গাছটি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
মহাবেলগাছ আট মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। দেখতে বেলগাছের মতো হলেও এ গাছে কাঁটা নেই; পাতায় বা ফলে বেলের বিশেষ গন্ধও নেই। ডাল লাগালে গাছ হয়। তরুণ কাণ্ড মসৃণ, অর্ধগোলাকার, ধূসর রঙের। পাতা সরল, গুচ্ছাকারে সাজানো, অবৃন্তক, প্রায় ডিম্বাকার, গোড়ার দিকে ক্রমে সরু। গাছ লাগানোর কয়েক বছর পর ফুল ফোটে সরাসরি কাণ্ডের গায়ে, যেমনটা দেখা যায় নাগলিঙ্গম, কাঁঠাল, ডুমুর, কোকো ইত্যাদি গাছে। ফুলের রং সবুজাভ সাদা, বেগুনি রেখাযুক্ত। ময়মনসিংহের টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ডের কাছে চুপশাহ মাজারের উঠানে এবং শশীলজের আঙিনার পূর্ব দিকে একটি মহাবেলগাছ আছে।
আমাদের দেশে বিষাক্ত বলে মনে করা হলেও দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ফলটির কাঁচা শাঁস পানিতে ফুটিয়ে রোগ নিরাময়কারী সিরাপ বানানো হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন রোগের প্রতিকারে গাছটির ছাল-পাতা ও শিকড়ের ব্যবহার রয়েছে। এর শক্ত ও মসৃণ খোসা ঘর সাজানোর বিভিন্ন দ্রব্য ও বাদ্যযন্ত্র তৈরির উপযোগী। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে মহাবেলের খোসা বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। পাকা ফলের খোলস শক্ত হওয়ায় এটি ডুগডুগি ছাড়াও নানা শিল্পকর্মে ব্যবহার করা যায়। এর খোল থেকে তৈরি হয় বিখ্যাত বাদ্যযন্ত্র মারাকা। আমাদের যন্ত্রীরা একে ‘মারাক্কাস’ বলেন। এটি এক প্রকার ঝুমঝুমি, যা মিউজিক্যাল রিদম সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের টিপরা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা মস্তিষ্ক বিকৃতির চিকিৎসায় এই ফলের মণ্ড মাথায় প্রলেপ হিসেবে ব্যবহার করে।
পরাগায়নের প্রধান বাহক বাদুড়। তবে যেখানে বাদুড় বিরল সেখানে হয়তো মথ বা মৌমাছি এর পরাগায়ন করে থাকে। ওভারির নিচে মধুগ্রন্থির উপস্থিতির কারণে মাজুলি বা বিষপিঁপড়া দেখা যায় মহাবেলগাছে, যা ফলটিকে বন্য প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা করে। গাছে ফল থাকে প্রায় সাত মাস। মহাবেল সবুজ থেকে আস্তে আস্তে ধূসর রং ধারণ করে। এর কাটিং থেকে সহজে নতুন গাছ জন্মানো যায়। বীজ থেকেও চারা হয়। অঙ্কুরোদ্গম হয় ১০ থেকে ১৫ দিন পর। সব রকম মাটিতেই, এমনকি কাদামাটিতেও মহাবেল জন্মাতে পারে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে