মৃত্যুঞ্জয় রায়
বয়স চল্লিশ পেরিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে প্রায়ই একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, রোজ হাঁটেন তো? কতক্ষণ হাঁটেন? অধিকাংশ ডাক্তার বোধ হয় ধরেই নেন, ভাত খাওয়া বাঙালিদের ডায়াবেটিস থাকবে না তো কার থাকবে? কোলেস্টেরল বেশি হবে না তো কী হবে? তাতেও সমস্যা ছিল না, যদি আমরা দুই বেলা ভাত খেয়ে এক বেলা হাঁটতাম। সময়ের অজুহাত তো আছেই, তারপর খুঁজতে হয়, হাঁটব কোথায়? শহরে হাঁটার অপশন আমাদের হাতে খুব বেশি নেই। প্রথমত পার্ক, মাঠ বা জলাশয়ের ধারে হাঁটা এবং দ্বিতীয়ত স্বল্প দূরত্বে যেতে হলে ফুটপাত দিয়ে হাঁটা। শহরের এ দুটো স্থানই ধীরে ধীরে সংকুচিত ও অনিরাপদ হয়ে উঠছে।
শহরের মানুষের হাঁটার জন্য রাখা হয় ফুটপাত। রাস্তায় চলে যানবাহন। রাস্তার দুই পাশে রাস্তা থেকে খানিকটা উঁচু করে বানানো হয় ফুটপাত, যাতে ফুটপাতে কোনো যানবাহন ঢুকে না পড়ে, বৃষ্টি হলে যেন তা জলমগ্ন না হয়। রাস্তা পারাপারের জন্য রাখা হয় ওভারপাস ও আন্ডারপাস এবং জেব্রা ক্রসিং। ফুটপাতের ধারে লাগানো হয় ছায়াতরু, যাতে মানুষ সেসব গাছের ছায়ায় পরম শান্তিতে হেঁটে যেতে পারে। পরিবেশবান্ধব ফুটপাতে হাঁটার অধিকার রয়েছে প্রত্যেক নগরবাসীর। কিন্তু সে অধিকার কতটুকু আমরা উপভোগ করতে পারছি তা ভুক্তভোগী পথচারীরাই জানেন।
ঢাকার ফুটপাত দখল ও বিক্রিতে জড়িত রয়েছে এক শক্তিশালী চক্র। সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য ফুটপাত। কিন্তু সেই ফুটপাত দখল করে বসে আছেন হকাররা, গড়ে উঠেছে দোকানপাট। উচ্চ আদালত সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে রাজধানীর ফুটপাত অবৈধভাবে কারা দখল করে আছেন এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত। অতীতে দখলদারেরা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পায়নি। ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ফুটপাত বিক্রি ও ভাড়া দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন কিছু ব্যক্তি, এতে জনসাধারণের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে মর্মে ২০২২ সালের আগস্টে দৈনিক সংবাদে ‘বিক্রি হচ্ছে ঢাকার ফুটপাত’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। সেই রিটের ভিত্তিতে হাইকোর্ট ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর রুল জারি করেন। দখলদারদের তালিকা ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেন। বলাবাহুল্য সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। তালিকাও পাওয়া যায়নি, ফুটপাতও দখলদারমুক্ত হয়নি এবং সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক হাঁটার জন্য ফুটপাতও উন্মুক্ত হয়নি। অথচ ঢাকা সিটি ম্যানুয়াল-১৯৮২ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এ রাজধানীর ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ফুটপাতে যাতে পথচারীরা নির্বিঘ্নে নিরাপদে হাঁটতে পারে সে জন্য ফুটপাতগুলোকেও হাঁটার উপযোগী করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এত বছরেও সেসব কাজ করা যায়নি। সে সিস্টেমের যেন পরিবর্তন হয়, ফুটপাতগুলো যেন সংস্কারের মাধ্যমে পদবান্ধব করা হয়, সেটিই বর্তমান সরকারের কাছে পথচারীদের প্রত্যাশা।
কিছু ফুটপাতে পেভ টাইলস বসেছে সত্য, কিন্তু অধিকাংশ ফুটপাতের এখনো অনেক স্থান ভাঙা ও উঁচু-নিচু এবড়োখেবড়ো এবং আবর্জনাময়। এসব ফুটপাতে মানুষের হাঁটাও বিপজ্জনক, নারীবান্ধব তো নয়ই। হকার ও দোকানিদের অবস্থানের কারণে ফুটপাতে লোকজন গিজগিজ করে, বাধ্য হয়ে অনেক সময় পথচারীদের ফুটপাত ছেড়ে সড়কের ধার দিয়ে হাঁটতে হয়। সেখানেও বিপত্তি। সড়কের কোনো কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন ভ্যান নিয়ে হকাররা। নানা রকমের পসরা সাজিয়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানে নানা রকম হাঁকডাক ছেড়ে তাঁরা লোক ডাকাডাকি করে পরিবেশকে কোলাহলমুখর করে শব্দদূষণে ভরিয়ে তুলছেন। এসব চিৎকার-চেঁচামেচিতে অনেক সময় পথচারীদের অনেকে গাড়ির হর্নও শুনতে পায় না, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।
ঢাকা শহরে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার হকার রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার হকার ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান পেতে ব্যবসা করছেন। হঠাৎ করে ফুটপাত থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করলে তাঁরাইবা যাবেন কোথায়? তাই ফুটপাত হকারমুক্ত-দোকানমুক্ত করার আগে তাঁদের পুনর্বাসিত করার বিষয়টি ভাবতে হবে। অনেক দেশে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ‘উইকএন্ড ওপেন মার্কেট’ থাকে রাস্তার ওপরে। ফুটপাতে বসতে না দিয়ে রাস্তার কোনো একটি অংশ ছুটির দিনে বন্ধ করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁদের বসতে দেওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া রোজ ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার জন্য সান্ধ্য বাজারের কথা চিন্তা করা যায়। সে ক্ষেত্রে পিক আওয়ারে ফুটপাত বন্ধ না করে ফুটপাতের কোল ঘেঁষে রাস্তার এক ফালি অংশ অফ পিক আওয়ারে সীমিত সময় ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া আরও কিছু কৌশলের কথা ভাবা যায়, যেমন এলাকাভিত্তিক পৃথক হকার্স মার্কেট। যেভাবেই হোক সাধারণ মানুষের হাঁটার জন্য ফুটপাতকে দখলদারমুক্ত রাখতে হবে। ফুটপাতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসা দোকানিদের ক্লাস্টারিং করে গুছিয়ে বসাতে হবে।
আরেকটি অব্যবস্থাপনা হলো ফুটপাতগুলো নোংরা থাকা। ফুটপাতে কেন ময়লা ফেলতে হবে? খোলা বা ঢাকনাবিহীন ভাগাড়গুলো কেন ফুটপাতের ধারেই রাখতে হবে? পথচারীরা যাতে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে তার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অনেক টাকা খরচ করে বিদেশের মতো একবার বিদ্যুতের খুঁটির গায়ে সুদৃশ্য বর্জ্যদানি ঝুলিয়ে দিয়েছিল। সেখানে ময়লাও তেমন কেউ ফেলেনি, বরং কয়েক দিন পর দেখা গেল বর্জ্যদানিই উধাও, চুরি হয়ে গেছে সব! আমাদের এ অভ্যাসগুলো কে বদলাবে? ফুটপাতে লোক চলাচলে ছায়া দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত গাছপালা না থাকায় হাঁটতেও আরাম হয় না। নোংরা ও দুর্গন্ধময় ফুটপাতের পাশাপাশি রয়েছে সংকীর্ণ স্থান দিয়ে হাঁটাচলার সময় পথচারীদের ধাক্কা, ছিনতাই ও পকেটমারের ঝুঁকি, দুর্ঘটনার আশঙ্কা ইত্যাদি। তা ছাড়া যে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার কথা, তা কি সব রাস্তায় আছে? দেখা যায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হিসাবে মোট রাস্তার পরিমাণ ২ হাজার ১২১ কিলোমিটার, ফুটপাত আছে ৫৪২ কিলোমিটারে। তার মানে মাত্র সিকি ভাগ রাস্তায় ফুটপাত আছে। বাকি রাস্তায় হয় ফুটপাত তৈরির জায়গা নেই বা জায়গা থাকলেও তা তৈরি করা হয়নি।
ঢাকা শহরে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁদের মাসিক আয় ২০ হাজার টাকার নিচে, তাঁদের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ হেঁটেই চলাচল করেন। সব নগরবাসীর সব যাত্রার প্রায় ৪০ শতাংশ চলাচল করেন বাসে। ভবিষ্যৎ ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (২০২২-২০৩৫) এই বাস্তবতাকে অনুধাবন করে সড়কে হাঁটার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩২০৭ কিলোমিটার সড়কে ফুটপাত রাখার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কতটুকু কী হবে জানি না, কিন্তু এখন ঢাকা শহরে সত্যিই ফুটপাতে আর হাঁটার মতো অবস্থা নেই। হাঁটার পথগুলো অবশ্যই জনবান্ধব করতে দ্রুত দৃষ্টি দিতে হবে।
লেখক: মৃত্যুঞ্জয় রায়
কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
বয়স চল্লিশ পেরিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে প্রায়ই একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, রোজ হাঁটেন তো? কতক্ষণ হাঁটেন? অধিকাংশ ডাক্তার বোধ হয় ধরেই নেন, ভাত খাওয়া বাঙালিদের ডায়াবেটিস থাকবে না তো কার থাকবে? কোলেস্টেরল বেশি হবে না তো কী হবে? তাতেও সমস্যা ছিল না, যদি আমরা দুই বেলা ভাত খেয়ে এক বেলা হাঁটতাম। সময়ের অজুহাত তো আছেই, তারপর খুঁজতে হয়, হাঁটব কোথায়? শহরে হাঁটার অপশন আমাদের হাতে খুব বেশি নেই। প্রথমত পার্ক, মাঠ বা জলাশয়ের ধারে হাঁটা এবং দ্বিতীয়ত স্বল্প দূরত্বে যেতে হলে ফুটপাত দিয়ে হাঁটা। শহরের এ দুটো স্থানই ধীরে ধীরে সংকুচিত ও অনিরাপদ হয়ে উঠছে।
শহরের মানুষের হাঁটার জন্য রাখা হয় ফুটপাত। রাস্তায় চলে যানবাহন। রাস্তার দুই পাশে রাস্তা থেকে খানিকটা উঁচু করে বানানো হয় ফুটপাত, যাতে ফুটপাতে কোনো যানবাহন ঢুকে না পড়ে, বৃষ্টি হলে যেন তা জলমগ্ন না হয়। রাস্তা পারাপারের জন্য রাখা হয় ওভারপাস ও আন্ডারপাস এবং জেব্রা ক্রসিং। ফুটপাতের ধারে লাগানো হয় ছায়াতরু, যাতে মানুষ সেসব গাছের ছায়ায় পরম শান্তিতে হেঁটে যেতে পারে। পরিবেশবান্ধব ফুটপাতে হাঁটার অধিকার রয়েছে প্রত্যেক নগরবাসীর। কিন্তু সে অধিকার কতটুকু আমরা উপভোগ করতে পারছি তা ভুক্তভোগী পথচারীরাই জানেন।
ঢাকার ফুটপাত দখল ও বিক্রিতে জড়িত রয়েছে এক শক্তিশালী চক্র। সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য ফুটপাত। কিন্তু সেই ফুটপাত দখল করে বসে আছেন হকাররা, গড়ে উঠেছে দোকানপাট। উচ্চ আদালত সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে রাজধানীর ফুটপাত অবৈধভাবে কারা দখল করে আছেন এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত। অতীতে দখলদারেরা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পায়নি। ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ফুটপাত বিক্রি ও ভাড়া দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন কিছু ব্যক্তি, এতে জনসাধারণের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে মর্মে ২০২২ সালের আগস্টে দৈনিক সংবাদে ‘বিক্রি হচ্ছে ঢাকার ফুটপাত’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। সেই রিটের ভিত্তিতে হাইকোর্ট ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর রুল জারি করেন। দখলদারদের তালিকা ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেন। বলাবাহুল্য সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। তালিকাও পাওয়া যায়নি, ফুটপাতও দখলদারমুক্ত হয়নি এবং সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক হাঁটার জন্য ফুটপাতও উন্মুক্ত হয়নি। অথচ ঢাকা সিটি ম্যানুয়াল-১৯৮২ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এ রাজধানীর ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ফুটপাতে যাতে পথচারীরা নির্বিঘ্নে নিরাপদে হাঁটতে পারে সে জন্য ফুটপাতগুলোকেও হাঁটার উপযোগী করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এত বছরেও সেসব কাজ করা যায়নি। সে সিস্টেমের যেন পরিবর্তন হয়, ফুটপাতগুলো যেন সংস্কারের মাধ্যমে পদবান্ধব করা হয়, সেটিই বর্তমান সরকারের কাছে পথচারীদের প্রত্যাশা।
কিছু ফুটপাতে পেভ টাইলস বসেছে সত্য, কিন্তু অধিকাংশ ফুটপাতের এখনো অনেক স্থান ভাঙা ও উঁচু-নিচু এবড়োখেবড়ো এবং আবর্জনাময়। এসব ফুটপাতে মানুষের হাঁটাও বিপজ্জনক, নারীবান্ধব তো নয়ই। হকার ও দোকানিদের অবস্থানের কারণে ফুটপাতে লোকজন গিজগিজ করে, বাধ্য হয়ে অনেক সময় পথচারীদের ফুটপাত ছেড়ে সড়কের ধার দিয়ে হাঁটতে হয়। সেখানেও বিপত্তি। সড়কের কোনো কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন ভ্যান নিয়ে হকাররা। নানা রকমের পসরা সাজিয়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানে নানা রকম হাঁকডাক ছেড়ে তাঁরা লোক ডাকাডাকি করে পরিবেশকে কোলাহলমুখর করে শব্দদূষণে ভরিয়ে তুলছেন। এসব চিৎকার-চেঁচামেচিতে অনেক সময় পথচারীদের অনেকে গাড়ির হর্নও শুনতে পায় না, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।
ঢাকা শহরে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার হকার রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার হকার ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান পেতে ব্যবসা করছেন। হঠাৎ করে ফুটপাত থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করলে তাঁরাইবা যাবেন কোথায়? তাই ফুটপাত হকারমুক্ত-দোকানমুক্ত করার আগে তাঁদের পুনর্বাসিত করার বিষয়টি ভাবতে হবে। অনেক দেশে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ‘উইকএন্ড ওপেন মার্কেট’ থাকে রাস্তার ওপরে। ফুটপাতে বসতে না দিয়ে রাস্তার কোনো একটি অংশ ছুটির দিনে বন্ধ করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁদের বসতে দেওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া রোজ ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার জন্য সান্ধ্য বাজারের কথা চিন্তা করা যায়। সে ক্ষেত্রে পিক আওয়ারে ফুটপাত বন্ধ না করে ফুটপাতের কোল ঘেঁষে রাস্তার এক ফালি অংশ অফ পিক আওয়ারে সীমিত সময় ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া আরও কিছু কৌশলের কথা ভাবা যায়, যেমন এলাকাভিত্তিক পৃথক হকার্স মার্কেট। যেভাবেই হোক সাধারণ মানুষের হাঁটার জন্য ফুটপাতকে দখলদারমুক্ত রাখতে হবে। ফুটপাতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসা দোকানিদের ক্লাস্টারিং করে গুছিয়ে বসাতে হবে।
আরেকটি অব্যবস্থাপনা হলো ফুটপাতগুলো নোংরা থাকা। ফুটপাতে কেন ময়লা ফেলতে হবে? খোলা বা ঢাকনাবিহীন ভাগাড়গুলো কেন ফুটপাতের ধারেই রাখতে হবে? পথচারীরা যাতে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে তার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অনেক টাকা খরচ করে বিদেশের মতো একবার বিদ্যুতের খুঁটির গায়ে সুদৃশ্য বর্জ্যদানি ঝুলিয়ে দিয়েছিল। সেখানে ময়লাও তেমন কেউ ফেলেনি, বরং কয়েক দিন পর দেখা গেল বর্জ্যদানিই উধাও, চুরি হয়ে গেছে সব! আমাদের এ অভ্যাসগুলো কে বদলাবে? ফুটপাতে লোক চলাচলে ছায়া দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত গাছপালা না থাকায় হাঁটতেও আরাম হয় না। নোংরা ও দুর্গন্ধময় ফুটপাতের পাশাপাশি রয়েছে সংকীর্ণ স্থান দিয়ে হাঁটাচলার সময় পথচারীদের ধাক্কা, ছিনতাই ও পকেটমারের ঝুঁকি, দুর্ঘটনার আশঙ্কা ইত্যাদি। তা ছাড়া যে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার কথা, তা কি সব রাস্তায় আছে? দেখা যায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হিসাবে মোট রাস্তার পরিমাণ ২ হাজার ১২১ কিলোমিটার, ফুটপাত আছে ৫৪২ কিলোমিটারে। তার মানে মাত্র সিকি ভাগ রাস্তায় ফুটপাত আছে। বাকি রাস্তায় হয় ফুটপাত তৈরির জায়গা নেই বা জায়গা থাকলেও তা তৈরি করা হয়নি।
ঢাকা শহরে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁদের মাসিক আয় ২০ হাজার টাকার নিচে, তাঁদের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ হেঁটেই চলাচল করেন। সব নগরবাসীর সব যাত্রার প্রায় ৪০ শতাংশ চলাচল করেন বাসে। ভবিষ্যৎ ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (২০২২-২০৩৫) এই বাস্তবতাকে অনুধাবন করে সড়কে হাঁটার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩২০৭ কিলোমিটার সড়কে ফুটপাত রাখার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কতটুকু কী হবে জানি না, কিন্তু এখন ঢাকা শহরে সত্যিই ফুটপাতে আর হাঁটার মতো অবস্থা নেই। হাঁটার পথগুলো অবশ্যই জনবান্ধব করতে দ্রুত দৃষ্টি দিতে হবে।
লেখক: মৃত্যুঞ্জয় রায়
কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে