অরুণ কর্মকার
বছরখানেক ধরে জ্বালানি-সংকট আমাদের বেশ জ্বালাচ্ছে। এখনো যে সেই জ্বালার অবসান হয়েছে, তা নয়। অবশ্য জ্বালানি রপ্তানিকারী দেশগুলো ছাড়া পৃথিবীর সব দেশই এই জ্বালায় জ্বলেছে এবং জ্বলছে; অর্থাৎ আমাদের মতো যেসব দেশের জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর, জ্বালার শিকার হয়েছে তারা সবাই। তারপরও আমাদের দেশে সরকার ক্রমাগতভাবে জ্বালানির আমদানি বাড়িয়ে যাওয়ার পথেই হাঁটছে। আমদানিনির্ভরতার ওপরই তাদের আস্থা।
সরকার ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের একটি প্রক্ষেপণ (প্রজেকশন) তৈরি করেছে। তাতে ২০২৪ সালের পর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা দেখা যায় না। সম্পূর্ণটাই আমদানিনির্ভর প্রক্ষেপণ। ওই প্রক্ষেপণে ২০৩০ সালে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই চাহিদা পূরণের জন্য দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহে সক্ষম একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল এবং প্রতিটি ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার দুটি ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) স্থাপনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থলভিত্তিক টার্মিনালটির সক্ষমতা প্রয়োজনে বৃদ্ধি করা যাবে বলেও প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে দুটি এফএসআরইউ দেশে রয়েছে, যার সরবরাহ ক্ষমতা দৈনিক মোট এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।
এলএনজি আমদানি নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজন হলে বাড়ানোর লক্ষ্যে কাতার ও ওমানের সঙ্গে নতুন করে দুটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এলএনজির বাইরে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে বর্তমানে দৈনিক ২ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করে মোট ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে। এরপর আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধির কোনো কথাবার্তা প্রক্ষেপণে নেই।
যদিও গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য বেশি দামে আমদানি করা এলএনজির সঙ্গে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলিত স্বল্প দামের গ্যাসের মিশ্রণ একটি অপরিহার্য বিষয়। আমদানি করা গ্যাসের দাম যেখানে ১০ ডলারের কম সাধারণত হয় না, সেখানে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস পাওয়া যায় ৩ ডলারে। উপরন্তু বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম যেকোনো সময় শত কারণে যে অস্থিতিশীল হতে পারে, সে কথাও কারও অজানা নয়।
শুরুতে যে জ্বালানি-সংকটের কথা উল্লেখ করা হলো, তার কারণ আমরা জানি। কোভিড-১৯-পরবর্তী পৃথিবীতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে দাম বাড়তে থাকে এবং সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হয়। এর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হলে পরিস্থিতি জটিলতর হয়ে ওঠে। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হয়ে যায়। পাশাপাশি বিশ্ববাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যায়। ফলে আমাদের মতো দেশগুলো জাঁতাকলে পিষ্ট হওয়ার মতো চাপে পড়ে যায়।
ডলার সংকট ও অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে গত বছরের জুলাইয়ে একটানা সাত মাস স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হয়। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে আমদানিও ন্যূনতম পরিমাণে সীমিত করতে হয়। এর ফলে সৃষ্ট জ্বালানি-সংকটে পড়েন দেশের বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন, বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকেরা। উৎপাদন ব্যাহত হয়। রপ্তানি কমে যায়। এর সঙ্গে ডলার-সংকট তো ছিলই। আছেও।
তবে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কিছুটা কমে আসছিল। তখন থেকে দেশে সেচ, রমজান ও গ্রীষ্মকাল শুরু হওয়ায় বর্ধিত চাহিদা মোকাবিলায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে সীমিত পরিমাণে আমদানি শুরু করা হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ বছর দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে ৫৬ জাহাজ এবং স্পট মার্কেট থেকে আরও ১২ জাহাজ এলএনজি আমদানি করা হবে। ইতিমধ্যে ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলো দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল করে তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর জ্বালানি বাজারে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
উচ্চমূল্যের পাশাপাশি ডলার সংকটের কারণে শুধু যে গ্যাস আমদানি বিঘ্নিত হয়েছে, তা নয়। দেশের তিনটি ক্ষেত্র থেকে আমেরিকান কোম্পানি শেভরনের কাছ থেকে যে গ্যাস নেওয়া হচ্ছে, ডলার সংকটে তারও দাম পরিশোধ করা যাচ্ছে না। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শেভরনের গ্যাস বিল বাকি পড়েছে ১৭ কোটি ডলার, যা টাকার হিসাবে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি।
প্রতি মাসে শেভরনের গ্যাস বিল হয় ৫ কোটি ডলার। উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি অনুসারে শেভরন প্রতি মাসের গ্যাস বিল জমা দেওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে তা পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিল পরিশোধ করতে এর চেয়ে বেশি দেরি হলে প্রতিদিন ওই বিলের ওপর জরিমানা ও সুদ বাবদ মোট সাড়ে ৪ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হয়।
প্রতি মাসে ৫ কোটি ডলার বিল হলেও পেট্রোবাংলার অনুরোধে শেভরন তাদের পরিচালনাধীন তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের পরিচালন ব্যয় মেটানোর জন্য আড়াই কোটি ডলার পরিশোধ করতে বলেছে। কিন্তু পেট্রোবাংলা তা-ও পারছে না। প্রতি মাসে পরিশোধ করছে এক থেকে দেড় কোটি ডলার। ফলে প্রতি মাসেই বকেয়া বিলের পরিমাণ বাড়ছে।
এ অবস্থায় শেভরন চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ বন্ধও করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দেবে, যা মোকাবিলার কোনো উপায়ই থাকবে না। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৪০০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে ২৯০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে ২৫০ কোটি ঘনফুটের মতো। এই ২৫০ কোটি ঘনফুটের মধ্যে শেভরনের পরিচালিত তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ কোটি ঘনফুট। কার্যত শেভরনের এই গ্যাসই এখন দেশের সবচেয়ে বড় ভরসা।
এর পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানি করা এবং দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথা সরকারের কেনা বিদ্যুতের বিলও বাকি পড়েছে ডলার সংকটের কারণে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই দুই খাতে বাকি পড়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল আমদানি বিঘ্নিত হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে পিডিবি এখন এসব বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের প্রস্তাব পাঠিয়েছে সরকারের অনুমোদনের জন্য।
এই পরিস্থিতিতেও সরকার আমদানিনির্ভরতার ওপরই বেশি আস্থাবান কী করে হতে পারে, তা সাধারণভাবে বোধগম্য নয়। কোন যুক্তিতেই বা দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর বিষয়টি বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষা করা হয়, তা-ও বোঝা যায় না। ভূতত্ত্ববিদ-বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে গ্যাসের উল্লেখযোগ্য অনাবিষ্কৃত মজুত রয়েছে। আমদানির পাশাপাশি স্বল্প ব্যয়ে কম খরচে এই গ্যাস উত্তোলন দেশকে জ্বালানিসংকট থেকে মুক্ত রাখতে পারে।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
বছরখানেক ধরে জ্বালানি-সংকট আমাদের বেশ জ্বালাচ্ছে। এখনো যে সেই জ্বালার অবসান হয়েছে, তা নয়। অবশ্য জ্বালানি রপ্তানিকারী দেশগুলো ছাড়া পৃথিবীর সব দেশই এই জ্বালায় জ্বলেছে এবং জ্বলছে; অর্থাৎ আমাদের মতো যেসব দেশের জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর, জ্বালার শিকার হয়েছে তারা সবাই। তারপরও আমাদের দেশে সরকার ক্রমাগতভাবে জ্বালানির আমদানি বাড়িয়ে যাওয়ার পথেই হাঁটছে। আমদানিনির্ভরতার ওপরই তাদের আস্থা।
সরকার ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের একটি প্রক্ষেপণ (প্রজেকশন) তৈরি করেছে। তাতে ২০২৪ সালের পর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা দেখা যায় না। সম্পূর্ণটাই আমদানিনির্ভর প্রক্ষেপণ। ওই প্রক্ষেপণে ২০৩০ সালে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই চাহিদা পূরণের জন্য দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহে সক্ষম একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল এবং প্রতিটি ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার দুটি ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) স্থাপনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থলভিত্তিক টার্মিনালটির সক্ষমতা প্রয়োজনে বৃদ্ধি করা যাবে বলেও প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে দুটি এফএসআরইউ দেশে রয়েছে, যার সরবরাহ ক্ষমতা দৈনিক মোট এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।
এলএনজি আমদানি নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজন হলে বাড়ানোর লক্ষ্যে কাতার ও ওমানের সঙ্গে নতুন করে দুটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এলএনজির বাইরে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে বর্তমানে দৈনিক ২ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করে মোট ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে। এরপর আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধির কোনো কথাবার্তা প্রক্ষেপণে নেই।
যদিও গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য বেশি দামে আমদানি করা এলএনজির সঙ্গে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলিত স্বল্প দামের গ্যাসের মিশ্রণ একটি অপরিহার্য বিষয়। আমদানি করা গ্যাসের দাম যেখানে ১০ ডলারের কম সাধারণত হয় না, সেখানে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস পাওয়া যায় ৩ ডলারে। উপরন্তু বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম যেকোনো সময় শত কারণে যে অস্থিতিশীল হতে পারে, সে কথাও কারও অজানা নয়।
শুরুতে যে জ্বালানি-সংকটের কথা উল্লেখ করা হলো, তার কারণ আমরা জানি। কোভিড-১৯-পরবর্তী পৃথিবীতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে দাম বাড়তে থাকে এবং সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হয়। এর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হলে পরিস্থিতি জটিলতর হয়ে ওঠে। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হয়ে যায়। পাশাপাশি বিশ্ববাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যায়। ফলে আমাদের মতো দেশগুলো জাঁতাকলে পিষ্ট হওয়ার মতো চাপে পড়ে যায়।
ডলার সংকট ও অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে গত বছরের জুলাইয়ে একটানা সাত মাস স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হয়। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে আমদানিও ন্যূনতম পরিমাণে সীমিত করতে হয়। এর ফলে সৃষ্ট জ্বালানি-সংকটে পড়েন দেশের বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন, বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকেরা। উৎপাদন ব্যাহত হয়। রপ্তানি কমে যায়। এর সঙ্গে ডলার-সংকট তো ছিলই। আছেও।
তবে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কিছুটা কমে আসছিল। তখন থেকে দেশে সেচ, রমজান ও গ্রীষ্মকাল শুরু হওয়ায় বর্ধিত চাহিদা মোকাবিলায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে সীমিত পরিমাণে আমদানি শুরু করা হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ বছর দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে ৫৬ জাহাজ এবং স্পট মার্কেট থেকে আরও ১২ জাহাজ এলএনজি আমদানি করা হবে। ইতিমধ্যে ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলো দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল করে তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর জ্বালানি বাজারে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
উচ্চমূল্যের পাশাপাশি ডলার সংকটের কারণে শুধু যে গ্যাস আমদানি বিঘ্নিত হয়েছে, তা নয়। দেশের তিনটি ক্ষেত্র থেকে আমেরিকান কোম্পানি শেভরনের কাছ থেকে যে গ্যাস নেওয়া হচ্ছে, ডলার সংকটে তারও দাম পরিশোধ করা যাচ্ছে না। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শেভরনের গ্যাস বিল বাকি পড়েছে ১৭ কোটি ডলার, যা টাকার হিসাবে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি।
প্রতি মাসে শেভরনের গ্যাস বিল হয় ৫ কোটি ডলার। উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি অনুসারে শেভরন প্রতি মাসের গ্যাস বিল জমা দেওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে তা পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিল পরিশোধ করতে এর চেয়ে বেশি দেরি হলে প্রতিদিন ওই বিলের ওপর জরিমানা ও সুদ বাবদ মোট সাড়ে ৪ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হয়।
প্রতি মাসে ৫ কোটি ডলার বিল হলেও পেট্রোবাংলার অনুরোধে শেভরন তাদের পরিচালনাধীন তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের পরিচালন ব্যয় মেটানোর জন্য আড়াই কোটি ডলার পরিশোধ করতে বলেছে। কিন্তু পেট্রোবাংলা তা-ও পারছে না। প্রতি মাসে পরিশোধ করছে এক থেকে দেড় কোটি ডলার। ফলে প্রতি মাসেই বকেয়া বিলের পরিমাণ বাড়ছে।
এ অবস্থায় শেভরন চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ বন্ধও করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দেবে, যা মোকাবিলার কোনো উপায়ই থাকবে না। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৪০০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে ২৯০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে ২৫০ কোটি ঘনফুটের মতো। এই ২৫০ কোটি ঘনফুটের মধ্যে শেভরনের পরিচালিত তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ কোটি ঘনফুট। কার্যত শেভরনের এই গ্যাসই এখন দেশের সবচেয়ে বড় ভরসা।
এর পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানি করা এবং দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথা সরকারের কেনা বিদ্যুতের বিলও বাকি পড়েছে ডলার সংকটের কারণে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই দুই খাতে বাকি পড়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল আমদানি বিঘ্নিত হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে পিডিবি এখন এসব বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের প্রস্তাব পাঠিয়েছে সরকারের অনুমোদনের জন্য।
এই পরিস্থিতিতেও সরকার আমদানিনির্ভরতার ওপরই বেশি আস্থাবান কী করে হতে পারে, তা সাধারণভাবে বোধগম্য নয়। কোন যুক্তিতেই বা দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর বিষয়টি বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষা করা হয়, তা-ও বোঝা যায় না। ভূতত্ত্ববিদ-বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে গ্যাসের উল্লেখযোগ্য অনাবিষ্কৃত মজুত রয়েছে। আমদানির পাশাপাশি স্বল্প ব্যয়ে কম খরচে এই গ্যাস উত্তোলন দেশকে জ্বালানিসংকট থেকে মুক্ত রাখতে পারে।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে