বিনা শর্তে পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ চেয়েছেন এ খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা মনে করেন, এ সুযোগ দেওয়া হলে দেশের মুদ্রা পাচার কমে যাবে এবং পুঁজিবাজার ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। পুঁজিবাজার শক্তিশালী হলে সেখানে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। তাঁরা চান আগামী অর্থবছর থেকে মাত্র ৫ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের এ সুযোগ অবারিত রাখা হবে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের (এমবিএ) প্রতিনিধিদলের সদস্যরা যৌথভাবে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। এনবিআর সদস্য (শুল্কনীতি) মো. মাসুদ সাদিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে এনবিআর সদস্য (ভ্যাটনীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়করনীতি) সামসুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

সিএসইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ বহাল রাখার দাবি তুলে ধরে বলেন, নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তোলা হলে বাজারে বিনিয়োগ বাড়বে। এ ছাড়া লভ্যাংশের ওপর উৎসে কর বাতিল, করমুক্ত আয়ের সীমা ১ লাখ টাকায় উন্নীত করা, এসএমই কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে প্রথম তিন বছর কর ছাড় এবং পরে ১৫ শতাংশ কর নেওয়ার প্রস্তাব করেন।

মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট করহার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এই করহারের কারণে অনেক বড় ও ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে বিদ্যমান করহার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করারও দাবি জানাচ্ছি। করোনার কারণে পুঁজিবাজারে ‘ধীরগতি চলায়’ দেশের ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংকের পরিচালন খরচ বহন করাই কঠিন হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘আমরা মনে করি, সুকুকসহ সব ধরনের বন্ডকে করের আওতামুক্ত রাখা গেলে দেশে একটা বন্ড মার্কেট তৈরি হতে পারে।’

বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য ও এশিয়া ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাম শাহীন বলেন, ২০১৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী দেশের সব লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির পলিসি হোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ ‘গেইন ট্যাক্স’ দিতে হচ্ছে। এই কর বাতিল করতে হবে।

এ খাতের করপোরেট কর কমানোর দাবি জানিয়ে শাহীন বলেন, ‘আয়কর আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এই করহার অনেক বেশি। জীবনবিমার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং জীবনবিমা নয় এমন বিমার ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ করপোরেট কর করার প্রস্তাব করছি।’

এনবিআর সদস্য মাসুদ সাদিক বলেন, এসব খাতের সব প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে নতুন বাজেটে কী সুবিধা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে এনবিআর সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শন বা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার ফলে একদিকে নিয়মিত করদাতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। নাগরিক সমাজও এর বিরোধিতা করে।