অরুণ কর্মকার
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে একের পর এক রেকর্ড দেখা যাচ্ছে। সদ্য বিদায়ী এপ্রিল মাসের শেষ ৯ দিনে দুই দফায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২২ এপ্রিল রাত ৯টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট, যা এর আগে কখনোই হয়নি। অর্থাৎ, সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড। এর ঠিক ৯ দিনের মাথায় গত ৩০ এপ্রিল রাত ৯টায় ২২ এপ্রিলের ওই রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট। আপাতত এটাই দেশে সর্বকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড। তবে এ বছরের জন্য আবহাওয়ার যে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস, তাতে আরও দু-একবার বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
গত ১৫-১৬ বছরে দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঈর্ষা করার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, গত দেড় দশকে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়েছে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৭ বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল ৬ হাজার মেগাওয়াটের কম, যা এখন ২৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই অভাবনীয় সাফল্যের জন্য শতভাগ কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের।
উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধিতেও সরকার কৃতিত্বের দাবিদার। গত দেড় দশকে দেশে শিল্প-বাণিজ্য, কৃষি, সেবা খাতসহ অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। একই সঙ্গে সরকার একটি সাংবিধানিক অঙ্গীকার পূরণ করার জন্য শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছে। দেশের ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ খানা (হাউসহোল্ড) বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে। ফলে বিদ্যুতের ব্যবহার ও চাহিদাও অনেক বেড়েছে। এই যে উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন এবং চাহিদা বৃদ্ধি, এ দুইয়ের সমীকরণ হচ্ছে সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড।
এই সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ডগুলো যখন হচ্ছে, তখনো কোথাও কোথাও লোডশেডিং হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত ৩০ এপ্রিল যখন সর্বোচ্চ উৎপাদনের সর্বশেষ রেকর্ড হলো, তখন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) হিসাবেও ৪৯৯ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের কথা বলা হয়েছে। আর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, লোডশেডিং হয়েছে আরও অনেক বেশি। লোডশেডিং মানে হলো চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন কম হওয়ায় কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রেখে ওই ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া। কয়টি এলাকায় কতক্ষণ করে লোডশেড করা হবে, তা নির্ভর করে ঘাটতির পরিমাণের ওপর। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি যত বেশি হবে, তত বেশি সময় লোডশেড করতে হবে। কিংবা একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বারবার লোডশেড করতে হবে। তাহলে বিষয়টা দাঁড়াল এই যে, যখন আমরা ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড করছি, তখনো সব গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। চাহিদা আরও বেশি।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে, প্রকৃত চাহিদা কত? ওই যে ৩০ এপ্রিল ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট উৎপাদন হওয়ার পরও বিপিডিবি ৪৯৯ মেগাওয়াট লোডশেড করার কথা বলল, তাতে কি আমরা ধরে নিতে পারি যে প্রকৃত চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট? আসলে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের হিসাব এত সরল নয়। বিশেষ করে চাহিদার হিসাব তো নয়ই। এর কারণ, প্রকৃত চাহিদা নির্ণয়ের জন্য যে ধরনের জরিপ করা দরকার, আমাদের দেশে কখনো তা করা হয়নি। চাহিদা নির্ণয় করা হয় খুব সহজ ও সাদামাটাভাবে। দেশে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি রয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে কোন কোম্পানির চাহিদা কত, তা নিয়ে সর্বমোট চাহিদার হিসাব করা হয়।
আবার কোম্পানিগুলোও তার চাহিদার হিসাব করে খুব সাদামাটাভাবে। যেমন—যেকোনো বিতরণ কোম্পানি কোনো আবাসিক গ্রাহককে যখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়, তখন তার জন্য দুই কিলোওয়াট লোড (বিদ্যুৎ) বরাদ্দ করা হয়। অর্থাৎ, একজন আবাসিক গ্রাহক সব সময়ের জন্য সর্বোচ্চ দুই কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। সেই হিসাবে কোনো বিতরণ কোম্পানির যত জন আবাসিক গ্রাহক আছেন, তাঁদের সংখ্যাকে দুই কিলোওয়াট দিয়ে গুণ করে চাহিদার একটি হিসাব বের করা হয়। শিল্প-বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য গ্রাহকের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এমনই (বরাদ্দকৃত লোড গুণ গ্রাহক সংখ্যা=চাহিদা)।
কিন্তু আজকাল অধিকাংশ গ্রাহক (পল্লি অঞ্চলের প্রান্তিক গ্রাহক ছাড়া) দুই কিলোওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। এই বাড়তি ব্যবহার বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা করেন না। কারণ, এর সঙ্গে কিছু অর্থের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই যে দেশের প্রায় আড়াই কোটি গ্রাহকের অধিকাংশ তাঁর জন্য বরাদ্দকৃত পরিমাণের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে তার যথাযথ হিসাব নেই। আবার পরিস্থিতির ওপরও বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ নির্ভর করে। যেমন এখন দেশজুড়ে যে খরতাপ চলছে, তাতে যেকেনো গ্রাহক সারাক্ষণ সর্বোচ্চ পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন এটাই স্বাভাবিক। আবার যখন আবহাওয়া শীতল হবে, তখন বিদ্যুতের ব্যবহারও কম করবেন। দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা নির্ণয়ের জন্য একটি নিবিড় গ্রাহক জরিপ দরকার।
এখন আরেকটি প্রশ্ন হলো—তাহলে কি দেশে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতার চেয়েও বেশি? প্রয়োজনীয় জ্বালানি প্রাপ্তিসাপেক্ষে দেশে এখন সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তাই এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায় যে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতার চেয়ে বেশি নয়। তার পরও সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ডের দিনেও লোডশেড কেন করা হয়? উৎপাদন সক্ষমতা যখন বেশিই আছে, তখন আরেকটু উৎপাদন বাড়িয়ে সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন নিশ্চিত করা হয় না? এখানেই আবার ওঠে সেই পুরোনো কথা। জ্বালানি ঘাটতির কথা।
এ বিষয়ে একটি উদাহরণ উল্লেখ করাই বোধ হয় যথেষ্ট হবে। আমাদের দেশে এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার শতকরা ৬০ ভাগ গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রের। দেশে এখন যে পরিমাণ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে, তা পুরোপুরি ব্যবহার করতে হলে প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস দরকার ২ হাজার ৩১৬ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু বর্তমানে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। আমরা যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড করছি, তেমনি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহও একটি রেকর্ড। সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহের রেকর্ড। কিন্তু তাতেও গ্যাসের ঘাটতি ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি।
আর্থিক কারণে বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার টানাটানির জন্য তরল জ্বালানি (ডিজেল, ফার্নেস তেল) এবং কয়লাও প্রয়োজনীয় পরিমাণে আমদানি ও ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকৃত সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই অদূর ভবিষ্যতে যদি সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন রেকর্ডও সৃষ্টি হয়, তখনো যে লোডশেডিং থাকবে না, তেমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে একের পর এক রেকর্ড দেখা যাচ্ছে। সদ্য বিদায়ী এপ্রিল মাসের শেষ ৯ দিনে দুই দফায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২২ এপ্রিল রাত ৯টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট, যা এর আগে কখনোই হয়নি। অর্থাৎ, সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড। এর ঠিক ৯ দিনের মাথায় গত ৩০ এপ্রিল রাত ৯টায় ২২ এপ্রিলের ওই রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট। আপাতত এটাই দেশে সর্বকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড। তবে এ বছরের জন্য আবহাওয়ার যে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস, তাতে আরও দু-একবার বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
গত ১৫-১৬ বছরে দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঈর্ষা করার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, গত দেড় দশকে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়েছে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৭ বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল ৬ হাজার মেগাওয়াটের কম, যা এখন ২৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই অভাবনীয় সাফল্যের জন্য শতভাগ কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের।
উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধিতেও সরকার কৃতিত্বের দাবিদার। গত দেড় দশকে দেশে শিল্প-বাণিজ্য, কৃষি, সেবা খাতসহ অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। একই সঙ্গে সরকার একটি সাংবিধানিক অঙ্গীকার পূরণ করার জন্য শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছে। দেশের ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ খানা (হাউসহোল্ড) বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে। ফলে বিদ্যুতের ব্যবহার ও চাহিদাও অনেক বেড়েছে। এই যে উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন এবং চাহিদা বৃদ্ধি, এ দুইয়ের সমীকরণ হচ্ছে সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড।
এই সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ডগুলো যখন হচ্ছে, তখনো কোথাও কোথাও লোডশেডিং হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত ৩০ এপ্রিল যখন সর্বোচ্চ উৎপাদনের সর্বশেষ রেকর্ড হলো, তখন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) হিসাবেও ৪৯৯ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের কথা বলা হয়েছে। আর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, লোডশেডিং হয়েছে আরও অনেক বেশি। লোডশেডিং মানে হলো চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন কম হওয়ায় কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রেখে ওই ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া। কয়টি এলাকায় কতক্ষণ করে লোডশেড করা হবে, তা নির্ভর করে ঘাটতির পরিমাণের ওপর। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি যত বেশি হবে, তত বেশি সময় লোডশেড করতে হবে। কিংবা একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বারবার লোডশেড করতে হবে। তাহলে বিষয়টা দাঁড়াল এই যে, যখন আমরা ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড করছি, তখনো সব গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। চাহিদা আরও বেশি।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে, প্রকৃত চাহিদা কত? ওই যে ৩০ এপ্রিল ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট উৎপাদন হওয়ার পরও বিপিডিবি ৪৯৯ মেগাওয়াট লোডশেড করার কথা বলল, তাতে কি আমরা ধরে নিতে পারি যে প্রকৃত চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট? আসলে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের হিসাব এত সরল নয়। বিশেষ করে চাহিদার হিসাব তো নয়ই। এর কারণ, প্রকৃত চাহিদা নির্ণয়ের জন্য যে ধরনের জরিপ করা দরকার, আমাদের দেশে কখনো তা করা হয়নি। চাহিদা নির্ণয় করা হয় খুব সহজ ও সাদামাটাভাবে। দেশে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি রয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে কোন কোম্পানির চাহিদা কত, তা নিয়ে সর্বমোট চাহিদার হিসাব করা হয়।
আবার কোম্পানিগুলোও তার চাহিদার হিসাব করে খুব সাদামাটাভাবে। যেমন—যেকোনো বিতরণ কোম্পানি কোনো আবাসিক গ্রাহককে যখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়, তখন তার জন্য দুই কিলোওয়াট লোড (বিদ্যুৎ) বরাদ্দ করা হয়। অর্থাৎ, একজন আবাসিক গ্রাহক সব সময়ের জন্য সর্বোচ্চ দুই কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। সেই হিসাবে কোনো বিতরণ কোম্পানির যত জন আবাসিক গ্রাহক আছেন, তাঁদের সংখ্যাকে দুই কিলোওয়াট দিয়ে গুণ করে চাহিদার একটি হিসাব বের করা হয়। শিল্প-বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য গ্রাহকের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এমনই (বরাদ্দকৃত লোড গুণ গ্রাহক সংখ্যা=চাহিদা)।
কিন্তু আজকাল অধিকাংশ গ্রাহক (পল্লি অঞ্চলের প্রান্তিক গ্রাহক ছাড়া) দুই কিলোওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। এই বাড়তি ব্যবহার বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা করেন না। কারণ, এর সঙ্গে কিছু অর্থের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই যে দেশের প্রায় আড়াই কোটি গ্রাহকের অধিকাংশ তাঁর জন্য বরাদ্দকৃত পরিমাণের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে তার যথাযথ হিসাব নেই। আবার পরিস্থিতির ওপরও বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ নির্ভর করে। যেমন এখন দেশজুড়ে যে খরতাপ চলছে, তাতে যেকেনো গ্রাহক সারাক্ষণ সর্বোচ্চ পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন এটাই স্বাভাবিক। আবার যখন আবহাওয়া শীতল হবে, তখন বিদ্যুতের ব্যবহারও কম করবেন। দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা নির্ণয়ের জন্য একটি নিবিড় গ্রাহক জরিপ দরকার।
এখন আরেকটি প্রশ্ন হলো—তাহলে কি দেশে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতার চেয়েও বেশি? প্রয়োজনীয় জ্বালানি প্রাপ্তিসাপেক্ষে দেশে এখন সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তাই এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায় যে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতার চেয়ে বেশি নয়। তার পরও সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ডের দিনেও লোডশেড কেন করা হয়? উৎপাদন সক্ষমতা যখন বেশিই আছে, তখন আরেকটু উৎপাদন বাড়িয়ে সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন নিশ্চিত করা হয় না? এখানেই আবার ওঠে সেই পুরোনো কথা। জ্বালানি ঘাটতির কথা।
এ বিষয়ে একটি উদাহরণ উল্লেখ করাই বোধ হয় যথেষ্ট হবে। আমাদের দেশে এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার শতকরা ৬০ ভাগ গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রের। দেশে এখন যে পরিমাণ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে, তা পুরোপুরি ব্যবহার করতে হলে প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস দরকার ২ হাজার ৩১৬ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু বর্তমানে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। আমরা যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড করছি, তেমনি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহও একটি রেকর্ড। সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহের রেকর্ড। কিন্তু তাতেও গ্যাসের ঘাটতি ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি।
আর্থিক কারণে বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার টানাটানির জন্য তরল জ্বালানি (ডিজেল, ফার্নেস তেল) এবং কয়লাও প্রয়োজনীয় পরিমাণে আমদানি ও ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকৃত সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই অদূর ভবিষ্যতে যদি সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন রেকর্ডও সৃষ্টি হয়, তখনো যে লোডশেডিং থাকবে না, তেমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২১ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে