স্বপ্না রেজা
সম্প্রতি সাকলায়েন নামের একজন পুলিশ কর্মকর্তার চাকরি গেছে বলে পত্রিকান্তরে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। অভিযোগটি এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে। অর্থাৎ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সাকলায়েন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন, যা অপরাধ। আর তাই তাঁকে চাকরিচ্যুত করার আওয়াজ উঠেছে। সম্ভবত প্রশাসনে এ বিষয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে, যা সাধারণ জনগণের জানার মধ্যে নেই। জানার মধ্যে থাকবে কী করে? কেননা, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে কারও শাস্তি হতে পারে, চাকরি যেতে পারে—এমন ঘটনা ও তথ্য জানা হয়তো তাদের এই প্রথম। ফলে এমন সংবাদে অনেকেই চমকিত, আকৃষ্ট, বিস্মিত তো বটেই।
কোনো মামলার তদন্ত চলাকালীন কোনো পুলিশ কর্মকর্তা নিশ্চয়ই অভিযুক্ত কিংবা বাদীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে পারেন না। তাই সাকলায়েনের শাস্তিটা হয়েছে একজন নায়িকার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বলে নয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ কারণে। এমনটাই বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক চিঠিতে। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমণির সঙ্গে সাকলায়েন অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রমাণ পেয়ে ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সমাজে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে অনেক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটতে দেখা যায়। ঘর তো ভাঙেই। তরুণ প্রজন্ম হয়ে পড়ে দিশেহারা। পরকীয়ার বলি প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়। সমাজে যত ধরনের অপরাধ পরিলক্ষিত হয়, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নেপথ্যে রয়েছে পরকীয়া।
পুলিশ বিভাগে শুধু কি একজন সাকলায়েন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে বোঝা যেত শুদ্ধাচারের বিষয়টি এখন বেশ সক্রিয় ও গতিশীল। আর শুধু পুলিশ বিভাগের কথাই বলি কেন? কোথায় নেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক? আছে তো প্রায় সবখানেই। আর সেটা তো কমবেশি অনেকেই জানে। কবে যেন কার কাছে শুনেছিলাম, মন্ত্রণালয়গুলোতেও নাকি আচরণের দিক থেকে সংযত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তাদের। শোনা কথা, পরকীয়ার ব্যাধি ও প্রকোপ থেকে পরিবেশ রক্ষার জন্য বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। যা হোক, শোনা কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু পরকীয়া যে সব ধরনের সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভেতরে জন্ম নিয়েছে এবং দিনে দিনে বাড়ছে, তা কিন্তু কেউ জোর গলায় অস্বীকার করতে পারবে না। বরং পরকীয়া এখন কঠিন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এর ফলে সামাজিক সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। পরিবারে দ্বন্দ্ব, হিংসা, বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা, ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে এবং এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে সমাজে ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে।
একজন সাকলায়েন একজন নায়িকা পরীমণির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়েছেন, তাই তিনি সবার চোখে পড়েছেন, প্রশাসনের চোখে পড়েছেন। আর এই চোখে পড়াতেই তাঁকে বিচারের মুখোমুখি হতে হলো। আর সোশ্যাল মিডিয়ার পুরুষতান্ত্রিক গোষ্ঠীর কাছে পরীমণি হলেন তীব্রভাবে নিন্দনীয় এক আলোচনার পাত্রী। তাঁর জন্য বিসিএসে প্রথম হওয়া সফল এক পুলিশ কর্মকর্তার আজ এই দুরবস্থা বলে অনেক প্রচারমাধ্যমও সরব হলো। অর্থাৎ, তারা বলতে চাইল যে পরীমণির সঙ্গে পরকীয়া করায় সাকলায়েনের জীবন বরবাদ! যেন সাকলায়েন ধোয়া তুলসীপাতা, বাচ্চা মানুষ, ভালোমন্দ বোঝে না। সব বুঝদার পরীমণি! এই শ্রেণি কখনোই নারীকে সম্মানজনক দৃষ্টিতে দেখার কথা ভাবে না।
আমাদের সমাজে এমন অনেক বিশিষ্টজন আছেন, যাঁদের কমবেশি সবাই শ্রদ্ধা করেন, সম্মান করেন। এই শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন তাঁদের কোনো গুণের জন্য হলেও হতে পারে। কিন্তু তাই বলে যে তাঁরা সবাই উত্তম চরিত্রের অবিকারী, তা কিন্তু নয়। এমন অনেক বিশিষ্টজনের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা বাজারে যে চালু নেই, তা কিন্তু নয়। বেশ আছে। এমন দৃষ্টান্তও আছে যে, এই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে কারও কারও দীর্ঘদিনের গড়া সুন্দর সংসার ভেঙে গেছে। এদের নিয়ে সমাজে খুব একটা বিরূপ আলোচনা-সমালোচনা হয় না। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায় না। কারণ, এরা বিশিষ্টজন। এরা যা করে সেটাই শিল্প হয়ে ওঠে, অকাতরে বৈধতা পায়।
যেসব মিডিয়া সাকলায়েন ও পরীমণির বিষয় নিয়ে মুখরোচক আলাপচারিতায় মশগুল হয়ে ওঠে, তারা কিন্তু সমাজের উল্লিখিত বিশিষ্টজনদের নিয়ে কথা বলে না। একজন বলছিলেন, সাকলায়েনের পরকীয়া সম্পর্ক যদি পরীমণির সঙ্গে না হয়ে অন্য কারও সঙ্গে হতো, তাহলে বেচারা সাকলায়েনের চাকরি হারাতে হতো না। আর শাস্তি শুধু সাকলায়েনের হলো না, পরীমণিরও হলো। সাকলায়েন চাকরি হারালেন আর পরীমণিকে পুরুষশাসিত সমাজ ধিক্কার দিল। আর কারও কাছে মন্দ কিছু মনে হলে সেখানে নারীর দোষ খোঁজা হয় আগে। এটাই সমাজের বাস্তবতা, যতই নারীরা তাদের যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে সমাজ-সংসারে অংশীদারত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হোক না কেন।
অতিমারি করোনার সময় যখন নারী ও পুরুষ সবাই গৃহবন্দী হয়ে পড়ল বেশ লম্বা সময়ের জন্য, তখন অনেক পরিবারে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে যারা পরিবারের বাইরে ভিন্ন পরিবেশ ও ভিন্ন সান্নিধ্যে অবস্থান করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত, আনন্দ পেত, উপভোগ করত, তাদের জন্য করোনাকাল ছিল ভয়ানক কষ্টের, যন্ত্রণার। করোনা অনেক পুরুষের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন করেছে— এমন অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে। কতিপয় নারীকেও বাদ দেওয়া যায় না এ প্রসঙ্গে। মূলত যারা পরিবারকে নিছক একটা সামাজিক কাঠামো বা স্থান হিসেবে বিবেচনা করে, সামাজিকতার একটা অবলম্বন ভেবে থাকে এবং এর বেশি কিছু ভাবতে পারে না, তাদের জন্যই করোনাকাল ছিল চরম অস্বস্তিকর, অশান্তির সময়।
এমন অনেক ব্যক্তি আছে, যারা জগতের সবকিছুর মধ্যে কেবল নিজের কথাই ভাবতে ভালোবাসে। নিজের সুখ, আনন্দ, স্বার্থকে এরা বেশি প্রাধান্য দিতে ভালোবাসে। প্রাধান্য দিয়েও থাকে। পরিবার এদের টেনে ধরে রাখতে পারে না। তাদের সাধারণত দাবি হয়—মানুষ হিসেবে তারা নিজেদের জীবন উপভোগ করে এবং এটা তাদের অধিকার। ব্যক্তির অধিকার আর শৃঙ্খলাবোধ তারা একসঙ্গে দেখতে অপারগতা প্রকাশ করে।
পেশাগত সম্পর্কের বাইরে একজন মানুষ কিন্তু বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জন্য শাস্তি পেতে পারে না। তবে সামাজিক যে অবক্ষয়, তা রোধ করতে হলে শিক্ষা প্রয়োজন, যা বিবেক নামক এক দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিতে পারে। ব্যক্তি বুঝতে পারে কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায়। চাকরিচ্যুত করলেই ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন হয় না বা হতে দেখা যায় না। একজন ব্যক্তি তিনি যে-ই হোন না কেন, তিনি কেমন আচরণ করবেন বা কেমন আচরণে অভ্যস্ত হবেন, তা নির্ধারণ করবে পরিবার, সামাজিক পরিবেশ ও শিক্ষাব্যবস্থা।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
সম্প্রতি সাকলায়েন নামের একজন পুলিশ কর্মকর্তার চাকরি গেছে বলে পত্রিকান্তরে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। অভিযোগটি এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে। অর্থাৎ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সাকলায়েন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন, যা অপরাধ। আর তাই তাঁকে চাকরিচ্যুত করার আওয়াজ উঠেছে। সম্ভবত প্রশাসনে এ বিষয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে, যা সাধারণ জনগণের জানার মধ্যে নেই। জানার মধ্যে থাকবে কী করে? কেননা, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে কারও শাস্তি হতে পারে, চাকরি যেতে পারে—এমন ঘটনা ও তথ্য জানা হয়তো তাদের এই প্রথম। ফলে এমন সংবাদে অনেকেই চমকিত, আকৃষ্ট, বিস্মিত তো বটেই।
কোনো মামলার তদন্ত চলাকালীন কোনো পুলিশ কর্মকর্তা নিশ্চয়ই অভিযুক্ত কিংবা বাদীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে পারেন না। তাই সাকলায়েনের শাস্তিটা হয়েছে একজন নায়িকার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বলে নয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ কারণে। এমনটাই বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক চিঠিতে। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমণির সঙ্গে সাকলায়েন অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রমাণ পেয়ে ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সমাজে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে অনেক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটতে দেখা যায়। ঘর তো ভাঙেই। তরুণ প্রজন্ম হয়ে পড়ে দিশেহারা। পরকীয়ার বলি প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়। সমাজে যত ধরনের অপরাধ পরিলক্ষিত হয়, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নেপথ্যে রয়েছে পরকীয়া।
পুলিশ বিভাগে শুধু কি একজন সাকলায়েন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে বোঝা যেত শুদ্ধাচারের বিষয়টি এখন বেশ সক্রিয় ও গতিশীল। আর শুধু পুলিশ বিভাগের কথাই বলি কেন? কোথায় নেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক? আছে তো প্রায় সবখানেই। আর সেটা তো কমবেশি অনেকেই জানে। কবে যেন কার কাছে শুনেছিলাম, মন্ত্রণালয়গুলোতেও নাকি আচরণের দিক থেকে সংযত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তাদের। শোনা কথা, পরকীয়ার ব্যাধি ও প্রকোপ থেকে পরিবেশ রক্ষার জন্য বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। যা হোক, শোনা কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু পরকীয়া যে সব ধরনের সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভেতরে জন্ম নিয়েছে এবং দিনে দিনে বাড়ছে, তা কিন্তু কেউ জোর গলায় অস্বীকার করতে পারবে না। বরং পরকীয়া এখন কঠিন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এর ফলে সামাজিক সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। পরিবারে দ্বন্দ্ব, হিংসা, বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা, ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে এবং এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে সমাজে ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে।
একজন সাকলায়েন একজন নায়িকা পরীমণির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়েছেন, তাই তিনি সবার চোখে পড়েছেন, প্রশাসনের চোখে পড়েছেন। আর এই চোখে পড়াতেই তাঁকে বিচারের মুখোমুখি হতে হলো। আর সোশ্যাল মিডিয়ার পুরুষতান্ত্রিক গোষ্ঠীর কাছে পরীমণি হলেন তীব্রভাবে নিন্দনীয় এক আলোচনার পাত্রী। তাঁর জন্য বিসিএসে প্রথম হওয়া সফল এক পুলিশ কর্মকর্তার আজ এই দুরবস্থা বলে অনেক প্রচারমাধ্যমও সরব হলো। অর্থাৎ, তারা বলতে চাইল যে পরীমণির সঙ্গে পরকীয়া করায় সাকলায়েনের জীবন বরবাদ! যেন সাকলায়েন ধোয়া তুলসীপাতা, বাচ্চা মানুষ, ভালোমন্দ বোঝে না। সব বুঝদার পরীমণি! এই শ্রেণি কখনোই নারীকে সম্মানজনক দৃষ্টিতে দেখার কথা ভাবে না।
আমাদের সমাজে এমন অনেক বিশিষ্টজন আছেন, যাঁদের কমবেশি সবাই শ্রদ্ধা করেন, সম্মান করেন। এই শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন তাঁদের কোনো গুণের জন্য হলেও হতে পারে। কিন্তু তাই বলে যে তাঁরা সবাই উত্তম চরিত্রের অবিকারী, তা কিন্তু নয়। এমন অনেক বিশিষ্টজনের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা বাজারে যে চালু নেই, তা কিন্তু নয়। বেশ আছে। এমন দৃষ্টান্তও আছে যে, এই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে কারও কারও দীর্ঘদিনের গড়া সুন্দর সংসার ভেঙে গেছে। এদের নিয়ে সমাজে খুব একটা বিরূপ আলোচনা-সমালোচনা হয় না। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায় না। কারণ, এরা বিশিষ্টজন। এরা যা করে সেটাই শিল্প হয়ে ওঠে, অকাতরে বৈধতা পায়।
যেসব মিডিয়া সাকলায়েন ও পরীমণির বিষয় নিয়ে মুখরোচক আলাপচারিতায় মশগুল হয়ে ওঠে, তারা কিন্তু সমাজের উল্লিখিত বিশিষ্টজনদের নিয়ে কথা বলে না। একজন বলছিলেন, সাকলায়েনের পরকীয়া সম্পর্ক যদি পরীমণির সঙ্গে না হয়ে অন্য কারও সঙ্গে হতো, তাহলে বেচারা সাকলায়েনের চাকরি হারাতে হতো না। আর শাস্তি শুধু সাকলায়েনের হলো না, পরীমণিরও হলো। সাকলায়েন চাকরি হারালেন আর পরীমণিকে পুরুষশাসিত সমাজ ধিক্কার দিল। আর কারও কাছে মন্দ কিছু মনে হলে সেখানে নারীর দোষ খোঁজা হয় আগে। এটাই সমাজের বাস্তবতা, যতই নারীরা তাদের যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে সমাজ-সংসারে অংশীদারত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হোক না কেন।
অতিমারি করোনার সময় যখন নারী ও পুরুষ সবাই গৃহবন্দী হয়ে পড়ল বেশ লম্বা সময়ের জন্য, তখন অনেক পরিবারে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে যারা পরিবারের বাইরে ভিন্ন পরিবেশ ও ভিন্ন সান্নিধ্যে অবস্থান করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত, আনন্দ পেত, উপভোগ করত, তাদের জন্য করোনাকাল ছিল ভয়ানক কষ্টের, যন্ত্রণার। করোনা অনেক পুরুষের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন করেছে— এমন অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে। কতিপয় নারীকেও বাদ দেওয়া যায় না এ প্রসঙ্গে। মূলত যারা পরিবারকে নিছক একটা সামাজিক কাঠামো বা স্থান হিসেবে বিবেচনা করে, সামাজিকতার একটা অবলম্বন ভেবে থাকে এবং এর বেশি কিছু ভাবতে পারে না, তাদের জন্যই করোনাকাল ছিল চরম অস্বস্তিকর, অশান্তির সময়।
এমন অনেক ব্যক্তি আছে, যারা জগতের সবকিছুর মধ্যে কেবল নিজের কথাই ভাবতে ভালোবাসে। নিজের সুখ, আনন্দ, স্বার্থকে এরা বেশি প্রাধান্য দিতে ভালোবাসে। প্রাধান্য দিয়েও থাকে। পরিবার এদের টেনে ধরে রাখতে পারে না। তাদের সাধারণত দাবি হয়—মানুষ হিসেবে তারা নিজেদের জীবন উপভোগ করে এবং এটা তাদের অধিকার। ব্যক্তির অধিকার আর শৃঙ্খলাবোধ তারা একসঙ্গে দেখতে অপারগতা প্রকাশ করে।
পেশাগত সম্পর্কের বাইরে একজন মানুষ কিন্তু বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জন্য শাস্তি পেতে পারে না। তবে সামাজিক যে অবক্ষয়, তা রোধ করতে হলে শিক্ষা প্রয়োজন, যা বিবেক নামক এক দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিতে পারে। ব্যক্তি বুঝতে পারে কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায়। চাকরিচ্যুত করলেই ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন হয় না বা হতে দেখা যায় না। একজন ব্যক্তি তিনি যে-ই হোন না কেন, তিনি কেমন আচরণ করবেন বা কেমন আচরণে অভ্যস্ত হবেন, তা নির্ধারণ করবে পরিবার, সামাজিক পরিবেশ ও শিক্ষাব্যবস্থা।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে