মহিউদ্দিন খান মোহন
গত রোববার (৩১ মার্চ) আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখা ‘কিশোর গ্যাং: সমস্যার গভীরে একনজর’ উপসম্পাদকীয় পাঠ করে ফোন করেছিলেন আমার সাবেক বস তাজুল ইসলাম। তিনি খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর প্রেস সচিব ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া গ্রুপ) সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে বিসিএস তথ্য সার্ভিসের সদস্য হন।
তাজুল সাহেব বললেন, ‘লিখেছ ভালোই। সমস্যাও মোটামুটি চিহ্নিত করতে পেরেছ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা যেটা বলেছ তা হলো, আজকের কিশোর গ্যাং যখন সমাজ ও রাজনীতির নেতৃত্বে উঠে আসবে, তখন কী অবস্থা হবে? কিন্তু আমরা যে এখন “অ্যাডাল্ট গ্যাংয়ের” খপ্পরে পড়ে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থায় আছি, তা থেকে বাঁচার উপায় কী?’ বলা নিষ্প্রয়োজন, আজকের এই নিবন্ধের অনুপ্রেরণা তাজুল সাহেবের মন্তব্য থেকে উৎসারিত।
সমাজবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত বিপথগামী কিশোর-তরুণদের অভিহিত করা হয়ে থাকে কিশোর গ্যাং হিসেবে। ওরা যেসব অপরাধমূলক কাজ করে, তার চেয়েও জঘন্যতম অনেক অপরাধ করে প্রাপ্তবয়স্ক কিছু মানুষ। কখনো বিচ্ছিন্নভাবে, কখনো জোটবদ্ধ হয়ে। অপরাধীদের এই জোটকে শুদ্ধ ভাষায় বলা হয় ‘সিন্ডিকেট’। এদের সিন্ডিকেট বলে অভিহিত করে আসল সিন্ডিকেটের অবমাননা করছি আমরা হরহামেশা। সবাই জানেন, সিন্ডিকেট এমন একটি সংগঠন, যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন ও অনুমোদিত হতে হয়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার নামটি এখন অপরাধীদের অঘোষিত সংগঠনের নামের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট’ কথাটি বললে অনেকে দুর্নীতি, কালোবাজারি, পণ্য মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি সব অপকর্মের হোতাদের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। অতশত প্যাঁচঘোচ বোঝেন না, এমন কেউ কেউ মন্তব্য করে বসেন, সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়েও হানা দিয়েছে! আমার মনে হয়, সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট হিসেবে অভিহিত করা বাদ দেওয়ার। পরিবর্তে ওদের ‘গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। যেমন ঘুষখোর গ্যাং, কালোবাজারি গ্যাং, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারী গ্যাং, অর্থ পাচারকারী গ্যাং ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, এরা কিশোর নয় অ্যাডাল্ট বা প্রাপ্তবয়স্ক গ্যাং; যাদের অপকর্মে সমাজ আজ নরকতুল্য হয়ে উঠেছে।
এই অ্যাডাল্ট গ্যাংয়ের কালো থাবায় জনজীবন আজ অতিষ্ঠ। এরা সমাজ, রাজনীতি, সরকারি প্রশাসন, অর্থনীতি, শিক্ষাসহ রাষ্ট্র এবং সমাজজীবনের সর্বক্ষেত্রে থাবা বিস্তার করে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বলা যায় এদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত সমাজদেহ।
এরা সমাজে অনৈতিকতা ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে। সমাজের চিহ্নিত দুষ্কৃতকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তৈরি করছে অতিকায় দানব। এসব দানবকে ব্যবহার করে সমাজের একশ্রেণির প্রভাবশালী লোক কায়েম করছে তাদের আধিপত্য। এদের বিরুদ্ধে কিছু বলার উপায় নেই। কারণ এরা এতটাই শক্তিশালী যে সাধারণ মানুষ এদের সামনে অসহায়। ফলে তাদের মুখ বন্ধ করে, চোখ বুজে কোনোরকমে দিন গুজরান করতে হচ্ছে।
রাজনীতিই সমাজকে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে। একই সঙ্গে রাজনীতি একটি দেশের নাগরিকদের ভাগ্যনিয়ন্তাও। রাজনীতির কল্যাণে সমাজজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন বা উন্নতি হবে, অর্থনৈতিক অগ্রগতি হবে—এটাই স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতিবাজ, অসৎ এবং সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য সীমা অতিক্রম করে গেছে। এখন আর দেশপ্রেমিক, মানবদরদি এবং নিষ্ঠাবান মানুষের ঠাঁই রাজনীতিতে নেই।
জায়গা দখল করে নিয়েছে কালোটাকার মালিক, পেশিশক্তিতে বলীয়ান দুষ্কৃতকারীদের গডফাদাররা। রাজনীতির মাঠে একচ্ছত্রাধিপত্য তাদের।
নিষ্ঠাবান, সৎ এবং জনহিতৈষী রাজনীতিকেরা হয়ে পড়ছেন অপাঙ্ক্তেয়। রাজনৈতিক দলগুলোয় এখন আর আদর্শের চর্চা নেই। যদিও দলগুলোর নেতা-কর্মীরা আদর্শের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। তবে বাস্তবে তাঁরা আদর্শ নামের মূল্যবোধটির ধারপাশ দিয়ে হাঁটেন না। আগে নেতারা কর্মীদের আদর্শের শিক্ষা দিতেন, দেশপ্রেম, মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেন। এখন নেতা নামধারী গডফাদাররা কর্মীদের দুষ্কর্মের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।
টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, প্রতিপক্ষকে দমন ইত্যাদি অপকর্ম সম্পন্ন করতে নেতারা কর্মীদের অনুপ্রেরণা জোগান। আর এসব করতে গিয়ে তাদের সংঘবদ্ধ হতে হয়; যা মূলত দুষ্কৃতকারীদের গ্যাং। ভদ্র ভাষায় বলা হয় সিন্ডিকেট। এসব গ্যাং সমাজকে কলুষিত করে চলেছে।
শুধু রাজনীতি নয়, রাষ্ট্র কিংবা সমাজের সবখানে তথাকথিত সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া যাবে; যা মূলত দুর্বৃত্তদের একেকটা গ্যাং। সরকারি অফিসে কোনো কাজ করাতে গেলে এর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় সহজেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটি সংহত গ্যাংয়ের সদস্য যেন। তাঁরা এতটাই সংঘবদ্ধ যে, সেখানে তাঁদেরই রাজত্ব চলে। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত তাঁদের চেইন কাজ করে। অভিযোগ করেও কোনো ফায়দা হয় না। কেননা, ভূত তাড়ানোর ভূতের মধ্যেই যে ভূত বাসা বেঁধে বসে আছে!
তাকান অর্থনীতির দিকে। দেখবেন সিন্ডিকেট নামের গ্যাং কী অসাধারণ দক্ষতায় বাহু বিস্তার করে দখলে নিয়েছে সবকিছু। এসব মহাপরাক্রমশালী গ্যাং ব্যাংক ফোকলা করে দিয়ে দেশের অর্থ নির্বিঘ্নে পাচার করছে বিদেশে। তাদের কারণে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর আজ অসুস্থ। একটিকে আরেকটির সঙ্গে জুড়ে দিতে হচ্ছে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য। শুল্ক এবং আয়কর ফাঁকি দেওয়া আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের অলিখিত আদর্শ।
অনেকে বলেন, আমাদের দেশের ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা যদি সঠিকভাবে আয়কর দিতেন, তাহলে এত দিনে আরও গোটা পাঁচেক পদ্মা সেতু বানানো যেত। এমন একজন ব্যবসায়ীও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি তাঁর বার্ষিক আয়ের সঠিক হিসাবমতো আয়কর দেন। ব্যবসায়ীদের এই আয়কর ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে এক দীর্ঘ গ্যাং চেইন। তাঁরা পারস্পরিক যোগসাজশে সরকারের প্রাপ্য না দিয়ে একটি অংশ নিজেদের পকেটে পুরছেন। ব্যবসায়ীরা সরকারকে ফাঁকি দিতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটকে স্বাস্থ্যবান করে দিচ্ছেন।
সরকারি প্রতিটি অফিসে রয়েছে সিন্ডিকেট নামের দুর্নীতিবাজ গ্যাং। এরা সরকারি কেনাকাটা, ভবন নির্মাণসহ নানা কাজে থাবা বসিয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে তাদের সেই সব অপকর্মের খবর পত্রপত্রিকায় সংবাদ হয়ে আসে। ৭ হাজার টাকা দামের বালিশ, ২৭ লাখ টাকা দামের পর্দার খবর শুনে আমাদের চোখ কপালে ওঠে। কিন্তু এর হোতাদের কিছু হয় না। অবশ্য থলের বিড়াল একেবারে বেরিয়ে পড়লে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেরানি আবজাল কিংবা ড্রাইভার মালেকেরা ধরা পড়েন। তবে এসব গ্যাংয়ের ‘গ্যাং লিডাররা’ বরাবর থেকে যান পর্দার অন্তরালে।
অন্য সব ক্ষেত্রের মতো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনও এখন গ্যাংকবলিত; বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর যেসব খবর প্রতিনিয়ত বাইরে আসছে, তাতে শঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর কথাটি শুনলেই মনের পর্দায় শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিসম্পন্ন ও দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকা একজন সৎ মানুষের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠত। অথচ গত কয়েক বছরে এমন কয়েকজন ভিসির পরিচয় আমরা পেয়েছি, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ-বাণিজ্য, তহবিল তছরুপসহ হেন কোনো অপকর্ম নেই যেসব অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠেনি।
যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাগরিক তৈরি করার কথা, তার প্রধান যদি হন চরিত্রহীন, তাহলে দেশে চরিত্রবান মানুষের মঙ্গা তো পড়বেই! কয়েক দিন আগে এক প্রবীণ ব্যক্তি বলছিলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস হতো; যা আমাদের উদ্বিগ্ন রাখত। কিন্তু ইদানীং যেসব খবর পাই, তাতে মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যৌনাচারের অঙ্গনে পরিণত হয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক কেউ নেই এই অভিযোগের বাইরে!
কিশোর গ্যাং নিয়ে আমরা যথেষ্ট সোচ্চার। কীভাবে দ্রুত বর্ধমান এ ব্যাধির হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে বিশিষ্টজনেরা নানা কথা বলছেন। একই সঙ্গে অ্যাডাল্ট গ্যাংয়ের হাত থেকে জাতিকে রক্ষার উপায় খুঁজে বের করাও জরুরি।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
গত রোববার (৩১ মার্চ) আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখা ‘কিশোর গ্যাং: সমস্যার গভীরে একনজর’ উপসম্পাদকীয় পাঠ করে ফোন করেছিলেন আমার সাবেক বস তাজুল ইসলাম। তিনি খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর প্রেস সচিব ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া গ্রুপ) সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে বিসিএস তথ্য সার্ভিসের সদস্য হন।
তাজুল সাহেব বললেন, ‘লিখেছ ভালোই। সমস্যাও মোটামুটি চিহ্নিত করতে পেরেছ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা যেটা বলেছ তা হলো, আজকের কিশোর গ্যাং যখন সমাজ ও রাজনীতির নেতৃত্বে উঠে আসবে, তখন কী অবস্থা হবে? কিন্তু আমরা যে এখন “অ্যাডাল্ট গ্যাংয়ের” খপ্পরে পড়ে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থায় আছি, তা থেকে বাঁচার উপায় কী?’ বলা নিষ্প্রয়োজন, আজকের এই নিবন্ধের অনুপ্রেরণা তাজুল সাহেবের মন্তব্য থেকে উৎসারিত।
সমাজবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত বিপথগামী কিশোর-তরুণদের অভিহিত করা হয়ে থাকে কিশোর গ্যাং হিসেবে। ওরা যেসব অপরাধমূলক কাজ করে, তার চেয়েও জঘন্যতম অনেক অপরাধ করে প্রাপ্তবয়স্ক কিছু মানুষ। কখনো বিচ্ছিন্নভাবে, কখনো জোটবদ্ধ হয়ে। অপরাধীদের এই জোটকে শুদ্ধ ভাষায় বলা হয় ‘সিন্ডিকেট’। এদের সিন্ডিকেট বলে অভিহিত করে আসল সিন্ডিকেটের অবমাননা করছি আমরা হরহামেশা। সবাই জানেন, সিন্ডিকেট এমন একটি সংগঠন, যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন ও অনুমোদিত হতে হয়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার নামটি এখন অপরাধীদের অঘোষিত সংগঠনের নামের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট’ কথাটি বললে অনেকে দুর্নীতি, কালোবাজারি, পণ্য মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি সব অপকর্মের হোতাদের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। অতশত প্যাঁচঘোচ বোঝেন না, এমন কেউ কেউ মন্তব্য করে বসেন, সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়েও হানা দিয়েছে! আমার মনে হয়, সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট হিসেবে অভিহিত করা বাদ দেওয়ার। পরিবর্তে ওদের ‘গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। যেমন ঘুষখোর গ্যাং, কালোবাজারি গ্যাং, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারী গ্যাং, অর্থ পাচারকারী গ্যাং ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, এরা কিশোর নয় অ্যাডাল্ট বা প্রাপ্তবয়স্ক গ্যাং; যাদের অপকর্মে সমাজ আজ নরকতুল্য হয়ে উঠেছে।
এই অ্যাডাল্ট গ্যাংয়ের কালো থাবায় জনজীবন আজ অতিষ্ঠ। এরা সমাজ, রাজনীতি, সরকারি প্রশাসন, অর্থনীতি, শিক্ষাসহ রাষ্ট্র এবং সমাজজীবনের সর্বক্ষেত্রে থাবা বিস্তার করে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বলা যায় এদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত সমাজদেহ।
এরা সমাজে অনৈতিকতা ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে। সমাজের চিহ্নিত দুষ্কৃতকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তৈরি করছে অতিকায় দানব। এসব দানবকে ব্যবহার করে সমাজের একশ্রেণির প্রভাবশালী লোক কায়েম করছে তাদের আধিপত্য। এদের বিরুদ্ধে কিছু বলার উপায় নেই। কারণ এরা এতটাই শক্তিশালী যে সাধারণ মানুষ এদের সামনে অসহায়। ফলে তাদের মুখ বন্ধ করে, চোখ বুজে কোনোরকমে দিন গুজরান করতে হচ্ছে।
রাজনীতিই সমাজকে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে। একই সঙ্গে রাজনীতি একটি দেশের নাগরিকদের ভাগ্যনিয়ন্তাও। রাজনীতির কল্যাণে সমাজজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন বা উন্নতি হবে, অর্থনৈতিক অগ্রগতি হবে—এটাই স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতিবাজ, অসৎ এবং সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য সীমা অতিক্রম করে গেছে। এখন আর দেশপ্রেমিক, মানবদরদি এবং নিষ্ঠাবান মানুষের ঠাঁই রাজনীতিতে নেই।
জায়গা দখল করে নিয়েছে কালোটাকার মালিক, পেশিশক্তিতে বলীয়ান দুষ্কৃতকারীদের গডফাদাররা। রাজনীতির মাঠে একচ্ছত্রাধিপত্য তাদের।
নিষ্ঠাবান, সৎ এবং জনহিতৈষী রাজনীতিকেরা হয়ে পড়ছেন অপাঙ্ক্তেয়। রাজনৈতিক দলগুলোয় এখন আর আদর্শের চর্চা নেই। যদিও দলগুলোর নেতা-কর্মীরা আদর্শের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। তবে বাস্তবে তাঁরা আদর্শ নামের মূল্যবোধটির ধারপাশ দিয়ে হাঁটেন না। আগে নেতারা কর্মীদের আদর্শের শিক্ষা দিতেন, দেশপ্রেম, মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেন। এখন নেতা নামধারী গডফাদাররা কর্মীদের দুষ্কর্মের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।
টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, প্রতিপক্ষকে দমন ইত্যাদি অপকর্ম সম্পন্ন করতে নেতারা কর্মীদের অনুপ্রেরণা জোগান। আর এসব করতে গিয়ে তাদের সংঘবদ্ধ হতে হয়; যা মূলত দুষ্কৃতকারীদের গ্যাং। ভদ্র ভাষায় বলা হয় সিন্ডিকেট। এসব গ্যাং সমাজকে কলুষিত করে চলেছে।
শুধু রাজনীতি নয়, রাষ্ট্র কিংবা সমাজের সবখানে তথাকথিত সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া যাবে; যা মূলত দুর্বৃত্তদের একেকটা গ্যাং। সরকারি অফিসে কোনো কাজ করাতে গেলে এর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় সহজেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটি সংহত গ্যাংয়ের সদস্য যেন। তাঁরা এতটাই সংঘবদ্ধ যে, সেখানে তাঁদেরই রাজত্ব চলে। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত তাঁদের চেইন কাজ করে। অভিযোগ করেও কোনো ফায়দা হয় না। কেননা, ভূত তাড়ানোর ভূতের মধ্যেই যে ভূত বাসা বেঁধে বসে আছে!
তাকান অর্থনীতির দিকে। দেখবেন সিন্ডিকেট নামের গ্যাং কী অসাধারণ দক্ষতায় বাহু বিস্তার করে দখলে নিয়েছে সবকিছু। এসব মহাপরাক্রমশালী গ্যাং ব্যাংক ফোকলা করে দিয়ে দেশের অর্থ নির্বিঘ্নে পাচার করছে বিদেশে। তাদের কারণে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর আজ অসুস্থ। একটিকে আরেকটির সঙ্গে জুড়ে দিতে হচ্ছে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য। শুল্ক এবং আয়কর ফাঁকি দেওয়া আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের অলিখিত আদর্শ।
অনেকে বলেন, আমাদের দেশের ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা যদি সঠিকভাবে আয়কর দিতেন, তাহলে এত দিনে আরও গোটা পাঁচেক পদ্মা সেতু বানানো যেত। এমন একজন ব্যবসায়ীও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি তাঁর বার্ষিক আয়ের সঠিক হিসাবমতো আয়কর দেন। ব্যবসায়ীদের এই আয়কর ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে এক দীর্ঘ গ্যাং চেইন। তাঁরা পারস্পরিক যোগসাজশে সরকারের প্রাপ্য না দিয়ে একটি অংশ নিজেদের পকেটে পুরছেন। ব্যবসায়ীরা সরকারকে ফাঁকি দিতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটকে স্বাস্থ্যবান করে দিচ্ছেন।
সরকারি প্রতিটি অফিসে রয়েছে সিন্ডিকেট নামের দুর্নীতিবাজ গ্যাং। এরা সরকারি কেনাকাটা, ভবন নির্মাণসহ নানা কাজে থাবা বসিয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে তাদের সেই সব অপকর্মের খবর পত্রপত্রিকায় সংবাদ হয়ে আসে। ৭ হাজার টাকা দামের বালিশ, ২৭ লাখ টাকা দামের পর্দার খবর শুনে আমাদের চোখ কপালে ওঠে। কিন্তু এর হোতাদের কিছু হয় না। অবশ্য থলের বিড়াল একেবারে বেরিয়ে পড়লে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেরানি আবজাল কিংবা ড্রাইভার মালেকেরা ধরা পড়েন। তবে এসব গ্যাংয়ের ‘গ্যাং লিডাররা’ বরাবর থেকে যান পর্দার অন্তরালে।
অন্য সব ক্ষেত্রের মতো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনও এখন গ্যাংকবলিত; বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর যেসব খবর প্রতিনিয়ত বাইরে আসছে, তাতে শঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর কথাটি শুনলেই মনের পর্দায় শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিসম্পন্ন ও দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকা একজন সৎ মানুষের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠত। অথচ গত কয়েক বছরে এমন কয়েকজন ভিসির পরিচয় আমরা পেয়েছি, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ-বাণিজ্য, তহবিল তছরুপসহ হেন কোনো অপকর্ম নেই যেসব অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠেনি।
যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাগরিক তৈরি করার কথা, তার প্রধান যদি হন চরিত্রহীন, তাহলে দেশে চরিত্রবান মানুষের মঙ্গা তো পড়বেই! কয়েক দিন আগে এক প্রবীণ ব্যক্তি বলছিলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস হতো; যা আমাদের উদ্বিগ্ন রাখত। কিন্তু ইদানীং যেসব খবর পাই, তাতে মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যৌনাচারের অঙ্গনে পরিণত হয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক কেউ নেই এই অভিযোগের বাইরে!
কিশোর গ্যাং নিয়ে আমরা যথেষ্ট সোচ্চার। কীভাবে দ্রুত বর্ধমান এ ব্যাধির হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে বিশিষ্টজনেরা নানা কথা বলছেন। একই সঙ্গে অ্যাডাল্ট গ্যাংয়ের হাত থেকে জাতিকে রক্ষার উপায় খুঁজে বের করাও জরুরি।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৮ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে