স্বাতী চৌধুরী
পরিবার বলতে সাধারণত আমাদের চোখে যে ছবি ভেসে ওঠে তা হলো দম্পতি ও তাঁদের ছেলেমেয়ে নিয়ে একটি ঘর। অবশ্য সেখানে আরও কিছু সদস্যও থাকেন। তবে মূল পরিবার হয় এক জোড়া দম্পতিকে কেন্দ্র করেই। এই দম্পতি জোড়া বাঁধেন বিয়ের মাধ্যমে। তাই হিসাবমতো বিয়ের শুরু থেকেই পরিবার নিয়ে পরিকল্পনা করা দরকার। কিন্তু বিয়ের সঙ্গে সঙ্গেই অধিকাংশ দম্পতি কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়া সন্তান উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
আমাদের দেশের শহর-গ্রাম যেমন অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে, তেমনি এ দেশের দরিদ্র ও অসচ্ছল এবং পড়ালেখা না জানা বা স্বল্প পড়ালেখা জানা এমনকি পড়ালেখা জানা অনেক সচ্ছল দম্পতি যাঁদের স্ত্রীর বয়স খুব কম, তাঁদের পরিবারও গড়ে ওঠে অপরিকল্পিতভাবে। পরিকল্পিত পরিবার গঠনের জন্য পরিবার পরিকল্পনা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা তাঁরা যেমন বোঝেন না, তেমনি বুঝতেও চান না।
অধিকাংশ লোকই মনে করে পরিবার পরিকল্পনা মানে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এবং এর উপকরণ ব্যবহার করার বিষয়। পরিবার পরিকল্পনা বা পরিকল্পিত পরিবারের সঙ্গে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সম্পর্ক অবশ্যই আছে। কিন্তু পরিকল্পিত পরিবার এবং পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও এ বিষয়ে সচেতন থাকলে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির উপকরণ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ছাড়াও পরিকল্পিত পরিবার গঠন করা যায়। সে জন্যই যখন দুজন তরুণ-তরুণী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তখনই অথবা চেনাজানার মধ্যে হলে বিয়ের আগেই পরিবার নিয়ে পরিকল্পনা করা উচিত, কবে তাঁরা বিয়ে করবেন, কখন এবং কতজন সন্তান নেবেন। অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে তাঁদের মাসিক আয় রোজগার কেমন, এই আয় রোজগার দিয়ে কতজন সন্তান ঠিকমতো ভরণপোষণ দিয়ে মানুষ করতে পারবেন।
কিন্তু দম্পতির, বিশেষ করে নারীটি এ রকম পরিকল্পনা করার মতো যোগ্য হওয়ার আগেই তো অভিভাবকেরা তাঁদের বিয়ে দিয়ে দেন। কারণ অধিকাংশ অভিভাবক সচেতন নন। ছেলেমেয়ে একটু বড় না হতেই বিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। আর পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ক্ষমতায়নের অভাবে পরিণত মেয়েরাই যেখানে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েগুলো যে তা পারবেন না, সেটা তো বলাই বাহুল্য। তবে পরিকল্পিত পরিবার গঠনে দম্পতির যৌথ পরিকল্পনায় সর্বাগ্রে যা প্রয়োজন তা হলো, দম্পতির যে জন নারী তাঁর মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া। কারণ পরিবার পরিকল্পিতভাবে গঠন না হলে নারীকেই সব দুর্গতি সহ্য করতে হয়। কিন্তু বাস্তবে যে তা হয় না, এখানে তার দুয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি।
সেদিন পানাউল্লার চরে ফিল্ড ভিজিটের সময় এক গৃহবধূ জানালেন তাঁর দুটো বাচ্চা, তাই আর সন্তান নিতে চান না। কিন্তু শাশুড়ি ও বর তাঁকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি নিতে দেন না। বরের বক্তব্য, তাঁর সন্তান তিনি খাওয়াবেন, তাতে অসুবিধা কী? ওই গৃহবধূ জানান, প্রতিটিবার গর্ভধারণের সময় তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে মরতে মরতে বেঁচেছেন। কিন্তু পরিবারের কাছে তাঁর জীবনের চেয়ে আরও সন্তান দরকার। সেখানেই দেখলাম আরও একজন কিশোরী বধূকে। ইতিমধ্যে দুটো শিশুর মা। তার নিজের ও সন্তান দুটোর জীর্ণশীর্ণ শরীরের দায় যতটা না আর্থিক দৈন্যের, তার চেয়ে বেশি সচেতনতার। দায় যত্নের অভাবেরও। কিন্তু সন্তান ও নিজের যত্ন কীভাবে নেবে তাই তো সে জানে না। এই কিশোরী মায়েরা হয়তো বুঝতেই পারে না তাদের কৈশোর দাম্পত্য ও মাতৃত্বের এই সময়টা কী দুঃসহ সময়! তারা ভাবে এটাই জীবন! এটুকু বয়সে অপরিণত শরীর-মন নিয়ে বরের চাহিদা মেটানো, সন্তান সামলানো, সংসারের কাজ এবং শ্বশুরবাড়ির মানুষের তির্যক বাক্যবাণ সহ্য করা আর যদি থাকে শারীরিক নির্যাতন তাহলে তো ষোলোকলাই পূর্ণ।
ওই কিশোরী নিজের বয়সটাও ঠিক করে বলতে পারেনি। বলেছিল, পিরিয়ডের তিন বছর পর বিয়ে আর বিয়ের তিন বছরের মধ্যে এই দুটো সন্তান। পরিবার পরিকল্পনাকর্মী তাকে দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতির সুবিধার কথা বলে উদ্বুদ্ধ করছিলেন। কিন্তু সে ওরাল পিল নেবে। ফিল্ড ভিজিটে একজন ডাক্তারও ছিলেন। তিনিও তাকে বোঝালেন, ওরাল পিলের নানা রকম সমস্যা আছে; বিশেষ করে রোজ সময়মতো পিল খেতে ভুলে গেলে কী হবে ইত্যাদি। কিন্তু মেয়েটি ওরাল পিলই নেবে। তার সিএনজিচালক বর বলেছেন, ইনজেকশন বা ইমপ্ল্যান্ট ভালো নয়, আইইউডি বা স্থায়ী পদ্ধতি আরও খারাপ। কারণ এসব নিলে গুনাহ হয়! যা-ই হোক, বরের কথায় অগাধ বিশ্বাস বা ভয় থেকেই হোক, পিল ছাড়া অন্য পদ্ধতি সে নিতে রাজি হয়নি।
আর এসব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অধিকাংশ দম্পতিই হয়তো জীবনে কোনো একটা অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে, কিন্তু অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে সেটা আর কার্যকর হয় না। এ ছাড়া বাল্যবিবাহের কারণে তাঁদের প্রজননকালটাও দীর্ঘতম হয় বলে তাঁরা গড়ে চার-পাঁচটি সন্তান জন্ম দিয়ে ফেলেন। আর পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সক্ষম দম্পতি হলো এই কিশোরী মায়েরা। যারা শিক্ষা, জ্ঞান ও বুদ্ধিতে অপিরপক্ব বলে এমনিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম। তার ওপর আমাদের পিতৃতান্ত্রিক পরিবারব্যবস্থায় যেখানে নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই, সেখানে যদি পরিবার, বিশেষ করে বর ও তাঁর পরিবারের মানুষগুলো সচেতন না হন, তাহলে রাষ্ট্রের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
দেখা গেছে, যেসব দম্পতির নারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক বা উচ্চমাধ্যমিক পাস এবং কোনো পেশায় যুক্ত, তাঁদের সন্তানসংখ্যা দুই-তিনেই সীমাবদ্ধ। সন্তানগুলো হৃষ্টপুষ্ট এবং তাদের মায়েদের শরীর-স্বাস্থ্যও যথেষ্ট ভালো থাকে। তাঁদের কাছে যখন পরিবার পরিকল্পনার কর্মীরা দেখা করেন, তাঁদের উদ্বুদ্ধ করতে হয় না। জানা গেছে, দম্পতি নিজেদের মধ্যে আগেই পরিকল্পনা করে নেন। তাই কর্মীদের মুখে শুধু বিভিন্ন পদ্ধতির কথা শুনে ওই নারী নিজের সুবিধামতো একটি পদ্ধতি বেছে নেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে পরিণত বয়স্ক, শিক্ষিত ও কর্মজীবী নারীরা সন্তান জন্মদান বা পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে যত সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, একজন অল্পবয়স্ক, কম পড়ালেখা জানা ও পরনির্ভর নারীর পক্ষে তা ততটাই দুরূহ। তাই পরিকল্পিত পরিবার গঠনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ যে অপরিহার্য, তাতে কারোর দ্বিমত থাকার কথা নয়।
কিন্তু ৫৬ শতাংশ কিশোরী যে বাল্যবিবাহের শিকার হয় তাদের না হয় পূর্ণ শিক্ষা ও জ্ঞান-বুদ্ধি, না হয় বিবাহিত জীবনযাপন করার মতো শারীরিক সক্ষমতা। যে কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মতো বুদ্ধি ও সাহস কোনোটাই তাদের থাকে না। তাই পরিবারের অন্যান্য বিষয়সহ নিজের জীবন, শিক্ষাগ্রহণ, বিয়ে, মাতৃত্ব—এসব বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তারা ওপরে বর্ণিত কিশোরীর মতো একই ভাঙা কলের গান বাজিয়ে বলতে থাকে, ‘বাচ্চার বাবা কইছে সুই না লইতে, কইছে বড়ি নিতাম।’ আর যে মেয়ে গর্ভধারণের ভয়ে কুঁকড়ে থাকে, তাকে পরিবারের ইচ্ছায় গর্ভধারণ করতেই হবে। তাই সরকারি-বেসরকারি চেষ্টা যা-ই হোক, বাস্তবতা হলো পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধান বাধা নারীর ক্ষমতাহীনতা। তাই পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম সফল করতে হলে সর্বক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সাধারণ সম্পাদক, মহিলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
পরিবার বলতে সাধারণত আমাদের চোখে যে ছবি ভেসে ওঠে তা হলো দম্পতি ও তাঁদের ছেলেমেয়ে নিয়ে একটি ঘর। অবশ্য সেখানে আরও কিছু সদস্যও থাকেন। তবে মূল পরিবার হয় এক জোড়া দম্পতিকে কেন্দ্র করেই। এই দম্পতি জোড়া বাঁধেন বিয়ের মাধ্যমে। তাই হিসাবমতো বিয়ের শুরু থেকেই পরিবার নিয়ে পরিকল্পনা করা দরকার। কিন্তু বিয়ের সঙ্গে সঙ্গেই অধিকাংশ দম্পতি কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়া সন্তান উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
আমাদের দেশের শহর-গ্রাম যেমন অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে, তেমনি এ দেশের দরিদ্র ও অসচ্ছল এবং পড়ালেখা না জানা বা স্বল্প পড়ালেখা জানা এমনকি পড়ালেখা জানা অনেক সচ্ছল দম্পতি যাঁদের স্ত্রীর বয়স খুব কম, তাঁদের পরিবারও গড়ে ওঠে অপরিকল্পিতভাবে। পরিকল্পিত পরিবার গঠনের জন্য পরিবার পরিকল্পনা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা তাঁরা যেমন বোঝেন না, তেমনি বুঝতেও চান না।
অধিকাংশ লোকই মনে করে পরিবার পরিকল্পনা মানে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এবং এর উপকরণ ব্যবহার করার বিষয়। পরিবার পরিকল্পনা বা পরিকল্পিত পরিবারের সঙ্গে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সম্পর্ক অবশ্যই আছে। কিন্তু পরিকল্পিত পরিবার এবং পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও এ বিষয়ে সচেতন থাকলে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির উপকরণ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ছাড়াও পরিকল্পিত পরিবার গঠন করা যায়। সে জন্যই যখন দুজন তরুণ-তরুণী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তখনই অথবা চেনাজানার মধ্যে হলে বিয়ের আগেই পরিবার নিয়ে পরিকল্পনা করা উচিত, কবে তাঁরা বিয়ে করবেন, কখন এবং কতজন সন্তান নেবেন। অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে তাঁদের মাসিক আয় রোজগার কেমন, এই আয় রোজগার দিয়ে কতজন সন্তান ঠিকমতো ভরণপোষণ দিয়ে মানুষ করতে পারবেন।
কিন্তু দম্পতির, বিশেষ করে নারীটি এ রকম পরিকল্পনা করার মতো যোগ্য হওয়ার আগেই তো অভিভাবকেরা তাঁদের বিয়ে দিয়ে দেন। কারণ অধিকাংশ অভিভাবক সচেতন নন। ছেলেমেয়ে একটু বড় না হতেই বিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। আর পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ক্ষমতায়নের অভাবে পরিণত মেয়েরাই যেখানে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েগুলো যে তা পারবেন না, সেটা তো বলাই বাহুল্য। তবে পরিকল্পিত পরিবার গঠনে দম্পতির যৌথ পরিকল্পনায় সর্বাগ্রে যা প্রয়োজন তা হলো, দম্পতির যে জন নারী তাঁর মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া। কারণ পরিবার পরিকল্পিতভাবে গঠন না হলে নারীকেই সব দুর্গতি সহ্য করতে হয়। কিন্তু বাস্তবে যে তা হয় না, এখানে তার দুয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি।
সেদিন পানাউল্লার চরে ফিল্ড ভিজিটের সময় এক গৃহবধূ জানালেন তাঁর দুটো বাচ্চা, তাই আর সন্তান নিতে চান না। কিন্তু শাশুড়ি ও বর তাঁকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি নিতে দেন না। বরের বক্তব্য, তাঁর সন্তান তিনি খাওয়াবেন, তাতে অসুবিধা কী? ওই গৃহবধূ জানান, প্রতিটিবার গর্ভধারণের সময় তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে মরতে মরতে বেঁচেছেন। কিন্তু পরিবারের কাছে তাঁর জীবনের চেয়ে আরও সন্তান দরকার। সেখানেই দেখলাম আরও একজন কিশোরী বধূকে। ইতিমধ্যে দুটো শিশুর মা। তার নিজের ও সন্তান দুটোর জীর্ণশীর্ণ শরীরের দায় যতটা না আর্থিক দৈন্যের, তার চেয়ে বেশি সচেতনতার। দায় যত্নের অভাবেরও। কিন্তু সন্তান ও নিজের যত্ন কীভাবে নেবে তাই তো সে জানে না। এই কিশোরী মায়েরা হয়তো বুঝতেই পারে না তাদের কৈশোর দাম্পত্য ও মাতৃত্বের এই সময়টা কী দুঃসহ সময়! তারা ভাবে এটাই জীবন! এটুকু বয়সে অপরিণত শরীর-মন নিয়ে বরের চাহিদা মেটানো, সন্তান সামলানো, সংসারের কাজ এবং শ্বশুরবাড়ির মানুষের তির্যক বাক্যবাণ সহ্য করা আর যদি থাকে শারীরিক নির্যাতন তাহলে তো ষোলোকলাই পূর্ণ।
ওই কিশোরী নিজের বয়সটাও ঠিক করে বলতে পারেনি। বলেছিল, পিরিয়ডের তিন বছর পর বিয়ে আর বিয়ের তিন বছরের মধ্যে এই দুটো সন্তান। পরিবার পরিকল্পনাকর্মী তাকে দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতির সুবিধার কথা বলে উদ্বুদ্ধ করছিলেন। কিন্তু সে ওরাল পিল নেবে। ফিল্ড ভিজিটে একজন ডাক্তারও ছিলেন। তিনিও তাকে বোঝালেন, ওরাল পিলের নানা রকম সমস্যা আছে; বিশেষ করে রোজ সময়মতো পিল খেতে ভুলে গেলে কী হবে ইত্যাদি। কিন্তু মেয়েটি ওরাল পিলই নেবে। তার সিএনজিচালক বর বলেছেন, ইনজেকশন বা ইমপ্ল্যান্ট ভালো নয়, আইইউডি বা স্থায়ী পদ্ধতি আরও খারাপ। কারণ এসব নিলে গুনাহ হয়! যা-ই হোক, বরের কথায় অগাধ বিশ্বাস বা ভয় থেকেই হোক, পিল ছাড়া অন্য পদ্ধতি সে নিতে রাজি হয়নি।
আর এসব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অধিকাংশ দম্পতিই হয়তো জীবনে কোনো একটা অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে, কিন্তু অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে সেটা আর কার্যকর হয় না। এ ছাড়া বাল্যবিবাহের কারণে তাঁদের প্রজননকালটাও দীর্ঘতম হয় বলে তাঁরা গড়ে চার-পাঁচটি সন্তান জন্ম দিয়ে ফেলেন। আর পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সক্ষম দম্পতি হলো এই কিশোরী মায়েরা। যারা শিক্ষা, জ্ঞান ও বুদ্ধিতে অপিরপক্ব বলে এমনিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম। তার ওপর আমাদের পিতৃতান্ত্রিক পরিবারব্যবস্থায় যেখানে নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই, সেখানে যদি পরিবার, বিশেষ করে বর ও তাঁর পরিবারের মানুষগুলো সচেতন না হন, তাহলে রাষ্ট্রের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
দেখা গেছে, যেসব দম্পতির নারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক বা উচ্চমাধ্যমিক পাস এবং কোনো পেশায় যুক্ত, তাঁদের সন্তানসংখ্যা দুই-তিনেই সীমাবদ্ধ। সন্তানগুলো হৃষ্টপুষ্ট এবং তাদের মায়েদের শরীর-স্বাস্থ্যও যথেষ্ট ভালো থাকে। তাঁদের কাছে যখন পরিবার পরিকল্পনার কর্মীরা দেখা করেন, তাঁদের উদ্বুদ্ধ করতে হয় না। জানা গেছে, দম্পতি নিজেদের মধ্যে আগেই পরিকল্পনা করে নেন। তাই কর্মীদের মুখে শুধু বিভিন্ন পদ্ধতির কথা শুনে ওই নারী নিজের সুবিধামতো একটি পদ্ধতি বেছে নেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে পরিণত বয়স্ক, শিক্ষিত ও কর্মজীবী নারীরা সন্তান জন্মদান বা পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে যত সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, একজন অল্পবয়স্ক, কম পড়ালেখা জানা ও পরনির্ভর নারীর পক্ষে তা ততটাই দুরূহ। তাই পরিকল্পিত পরিবার গঠনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ যে অপরিহার্য, তাতে কারোর দ্বিমত থাকার কথা নয়।
কিন্তু ৫৬ শতাংশ কিশোরী যে বাল্যবিবাহের শিকার হয় তাদের না হয় পূর্ণ শিক্ষা ও জ্ঞান-বুদ্ধি, না হয় বিবাহিত জীবনযাপন করার মতো শারীরিক সক্ষমতা। যে কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মতো বুদ্ধি ও সাহস কোনোটাই তাদের থাকে না। তাই পরিবারের অন্যান্য বিষয়সহ নিজের জীবন, শিক্ষাগ্রহণ, বিয়ে, মাতৃত্ব—এসব বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তারা ওপরে বর্ণিত কিশোরীর মতো একই ভাঙা কলের গান বাজিয়ে বলতে থাকে, ‘বাচ্চার বাবা কইছে সুই না লইতে, কইছে বড়ি নিতাম।’ আর যে মেয়ে গর্ভধারণের ভয়ে কুঁকড়ে থাকে, তাকে পরিবারের ইচ্ছায় গর্ভধারণ করতেই হবে। তাই সরকারি-বেসরকারি চেষ্টা যা-ই হোক, বাস্তবতা হলো পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধান বাধা নারীর ক্ষমতাহীনতা। তাই পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম সফল করতে হলে সর্বক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সাধারণ সম্পাদক, মহিলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ ঘণ্টা আগে