মহিউদ্দিন খান মোহন
দীর্ঘ এক দশক পর্দার অন্তরালে থাকার পর হঠাৎ করেই সরব হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ১০ জুন পূর্বঘোষণা অনুয়ায়ী তারা রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সমাবেশ করেছে। এর আগে তারা উন্মুক্ত স্থানে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও ডিএমপি কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। তখন তারা ঘোষণা করেছিল, সরকার অনুমতি না দিলে অনুমতি ছাড়াই সমাবেশ করবে। এ নিয়ে টান টান উত্তেজনা ছিল কয়েক দিন। কিন্তু সব শেষে জামায়াত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সমাবেশ করার অনুমতি চাইলে ডিএমপি তা মঞ্জুর করে।
দশ বছর পর প্রকাশ্যে আসা জামায়াতের সমাবেশটি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রচুরসংখ্যক নেতা-কর্মী সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি, কারাদণ্ড এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলার পরেও যে দলটির কর্মীরা হতোদ্যম হয়ে পড়েননি, তার প্রমাণ মিলেছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সমাবেশে। সরকারের রোষানলে নিগৃহীত জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তিও যে এতটুকু কমেনি, তাও অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে জামায়াত নিজেদের যে ফ্যাক্টরে পরিণত করতে পেরেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
জামায়াতকে নিয়ে প্রশ্ন আগেও ছিল, এখনো আছে। হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যে দেশবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন তা ইতিহাসের অংশ। লক্ষণীয় হলো, একাত্তরের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াত এখন পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হলে জামায়াত পুনরায় রাজনীতির ময়দানে ফিরে আসার সুযোগ পায়।
ওই সময় সরকার ‘জামায়াত’ নামে দলের নিবন্ধন দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা মাওলানা আবদুর রহিমের নেতৃত্বে ‘ইসলামী ডেমোক্রেটিক লীগ’ (আইডিএল) নামে নিবন্ধন নিয়ে ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। পরে তারা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে দলকে সংগঠিত করে; যার ভারপ্রাপ্ত আমির করা হয় আব্বাস আলী খানকে। সেই থেকে জামায়াতে ইসলামী নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং শক্তি সঞ্চয়ের জন্য কখনো বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়েছে, কখনো আওয়ামী লীগের ছায়াসঙ্গী হয়েছে।
১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচন বিএনপি বয়কট করলেও আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াত অংশ নিয়ে ১০টি আসন লাভ করে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পায় ১৮টি আসন। ওই সংসদে থাকতেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের একধরনের সখ্য গড়ে ওঠে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হয়। যে কারণে ১৯৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করলে জামায়াতও তাদের অনুগামী হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার পর সে বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জামায়াত এককভাবে অংশ নেয়, আসন পায় মাত্র তিনটি। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তারা বিএনপির সঙ্গে চারদলীয় ঐক্যজোটে সম্পৃক্ত হয়। সেই নির্বাচনে তারা ১৭টি আসন লাভ করে।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, বাংলাদেশের ভোটের রজনীতিতে জামায়াত নিজেদের ফ্যাক্টরে পরিণত করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এটাকে তাদের সাফল্য না বলে উপায় কী। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এবং একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যায় সহায়তাকারী দলটি কীভাবে নতুন প্রজন্মের, বিশেষ করে যাদের জন্ম স্বাধীনতার পরে, তাদের দলভুক্ত করতে পারল, এ এক বিস্ময়কর ব্যাপার! যা হোক, তাদের ভোটব্যাংকের বিষয়টি বিবেচনা করেই বিএনপি জামায়াতকে হাতছাড়া করতে চায়নি। কিন্তু এটা তাদের জন্য একসময় বুমেরাং হয়ে যায়।
জোটের নেতৃত্বদানকারী দল বিএনপি ক্রমান্বয়ে জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে থাকে। সময়ে-সময়ে তারা প্রভাব বিস্তার করে বিএনপিকে দিয়ে নিজেদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করিয়ে নেয়। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, ওয়ান-ইলেভেনের সময় সাবজেলে গিয়ে জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। যে সময়ে আইনজীবী ছাড়া আর কেউ বেগম জিয়ার সাক্ষাতের অনুমতি পেতেন না, সেই সময়ে জামায়াত নেতার অবলীলায় কারাগারে গিয়ে বৈঠক অনেক প্রশ্নেরই জন্ম দিয়েছিল।
মূলত ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে চারদলীয় জোটভুক্ত হয়ে জামায়াত বিএনপির ওপর সওয়ার হওয়ার পরে আর নামেনি। তাদের মন্ত্রণায় নিশ্চিত পরাজয় জেনেও বিএনপিকে ২০০৮-এর নির্বাচনে যেতে হয়েছে, আবার জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা সত্ত্বেও ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করতে হয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দলটির কয়েকজন শীর্ষনেতার ফাঁসির পরেই।
কেননা, বিএনপি ওই সময় একরকম চুপচাপই ছিল। এ ছাড়া তাদের কোনো উপায়ও ছিল না। কেননা, সরকারি প্রচার-প্রোপাগান্ডায় ইতিমধ্যে জামায়াতের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে। তাই বিএনপি নিজেদের ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখেই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি অবলম্বন করে। বিপদের সময় বন্ধুকে কাছে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয় জামায়াত। তারা ২০-দলীয় জোটে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
যদিও এখন পর্যন্ত ২০-দলীয় জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি জামায়াত। তবে রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে এটা অনুমান করা যায় যে ২০-দলীয় জোটে জামায়াতের সক্রিয় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আর নেই।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও সমমনাদের দাবি ছিল ‘যুদ্ধাপরাধীদের দল’ হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা। কিন্তু তা করা হয়নি। এ নিয়ে আদালতে মামলাও আছে। তবে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে। ফলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের নেতারা ২০ দলের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ‘ধানের শীষ’ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নিবন্ধন বাতিল হলেও দল হিসেবে জামায়াতকে কেন নিষিদ্ধ করা হলো না—অনেকের মনেই এ প্রশ্ন রয়েছে। এটা কি কেবলই আইনি জটিলতার কারণে, নাকি রাজনৈতিক পাশা খেলাও আছে এর পেছনে, তা নিয়ে সচেতন মহলে গুঞ্জন রয়েছে অনেক দিন ধরেই। তবে রাজনৈতিক সচেতন মহল বলে আসছিল যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে সরকার তথা আওয়ামী লীগ হাতের পাঁচ হারাতে চায়নি। প্রয়োজনে সময়মতো যাতে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যায়, সে জন্যই দলটিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকার তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি।
এমন অবস্থায় হঠাৎ করে জামায়াতের মাঠে নামা সেই সন্দেহকেই অনেকখানি ভিত্তি দেয় বৈকি। এ বিষয়ে ১১ জুন আজকের পত্রিকার ‘তবে কি হিসাবে বদল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জামায়াতের বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতকে নিয়ে একটা কৌশলে এগোচ্ছে সরকার। প্রথমত, হতে পারে, নির্বাচনে অধিকসংখ্যক দলকে হাতে রাখা। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে জামায়াত যাতে সহিংস পথ বেছে না নেয়, সে বিষয়টি বিবেচনা করা। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই জামায়াতকে নিয়ে ভাবছে সরকার।’ এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দেশব্যাপী আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অগ্নি-সন্ত্রাস করতে বিএনপিই জামায়াতকে মাঠে নামিয়েছে।’ আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘সরকার কেন জামায়াতের প্রতি নরম হলো, সেটা সরকারই জানে। সরকার এটা বলবে।’
রাজনীতির মাঠে জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্যে মাঠে নামা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এটা কি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের কোনো ছক, নাকি অন্য কোনো শক্তির পরিকল্পনার অংশ, তা এখনো পরিষ্কার নয়। অবশ্য এই কুয়াশা অচিরেই কেটে যাবে। আর তখনই বোঝা যাবে মঞ্চের সামনে জামায়াত, কিন্তু পেছনের সুতা কার হাতে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
দীর্ঘ এক দশক পর্দার অন্তরালে থাকার পর হঠাৎ করেই সরব হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ১০ জুন পূর্বঘোষণা অনুয়ায়ী তারা রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সমাবেশ করেছে। এর আগে তারা উন্মুক্ত স্থানে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও ডিএমপি কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। তখন তারা ঘোষণা করেছিল, সরকার অনুমতি না দিলে অনুমতি ছাড়াই সমাবেশ করবে। এ নিয়ে টান টান উত্তেজনা ছিল কয়েক দিন। কিন্তু সব শেষে জামায়াত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সমাবেশ করার অনুমতি চাইলে ডিএমপি তা মঞ্জুর করে।
দশ বছর পর প্রকাশ্যে আসা জামায়াতের সমাবেশটি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রচুরসংখ্যক নেতা-কর্মী সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি, কারাদণ্ড এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলার পরেও যে দলটির কর্মীরা হতোদ্যম হয়ে পড়েননি, তার প্রমাণ মিলেছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সমাবেশে। সরকারের রোষানলে নিগৃহীত জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তিও যে এতটুকু কমেনি, তাও অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে জামায়াত নিজেদের যে ফ্যাক্টরে পরিণত করতে পেরেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
জামায়াতকে নিয়ে প্রশ্ন আগেও ছিল, এখনো আছে। হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যে দেশবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন তা ইতিহাসের অংশ। লক্ষণীয় হলো, একাত্তরের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াত এখন পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হলে জামায়াত পুনরায় রাজনীতির ময়দানে ফিরে আসার সুযোগ পায়।
ওই সময় সরকার ‘জামায়াত’ নামে দলের নিবন্ধন দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা মাওলানা আবদুর রহিমের নেতৃত্বে ‘ইসলামী ডেমোক্রেটিক লীগ’ (আইডিএল) নামে নিবন্ধন নিয়ে ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। পরে তারা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে দলকে সংগঠিত করে; যার ভারপ্রাপ্ত আমির করা হয় আব্বাস আলী খানকে। সেই থেকে জামায়াতে ইসলামী নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং শক্তি সঞ্চয়ের জন্য কখনো বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়েছে, কখনো আওয়ামী লীগের ছায়াসঙ্গী হয়েছে।
১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচন বিএনপি বয়কট করলেও আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াত অংশ নিয়ে ১০টি আসন লাভ করে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পায় ১৮টি আসন। ওই সংসদে থাকতেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের একধরনের সখ্য গড়ে ওঠে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হয়। যে কারণে ১৯৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করলে জামায়াতও তাদের অনুগামী হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার পর সে বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জামায়াত এককভাবে অংশ নেয়, আসন পায় মাত্র তিনটি। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তারা বিএনপির সঙ্গে চারদলীয় ঐক্যজোটে সম্পৃক্ত হয়। সেই নির্বাচনে তারা ১৭টি আসন লাভ করে।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, বাংলাদেশের ভোটের রজনীতিতে জামায়াত নিজেদের ফ্যাক্টরে পরিণত করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এটাকে তাদের সাফল্য না বলে উপায় কী। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এবং একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যায় সহায়তাকারী দলটি কীভাবে নতুন প্রজন্মের, বিশেষ করে যাদের জন্ম স্বাধীনতার পরে, তাদের দলভুক্ত করতে পারল, এ এক বিস্ময়কর ব্যাপার! যা হোক, তাদের ভোটব্যাংকের বিষয়টি বিবেচনা করেই বিএনপি জামায়াতকে হাতছাড়া করতে চায়নি। কিন্তু এটা তাদের জন্য একসময় বুমেরাং হয়ে যায়।
জোটের নেতৃত্বদানকারী দল বিএনপি ক্রমান্বয়ে জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে থাকে। সময়ে-সময়ে তারা প্রভাব বিস্তার করে বিএনপিকে দিয়ে নিজেদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করিয়ে নেয়। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, ওয়ান-ইলেভেনের সময় সাবজেলে গিয়ে জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। যে সময়ে আইনজীবী ছাড়া আর কেউ বেগম জিয়ার সাক্ষাতের অনুমতি পেতেন না, সেই সময়ে জামায়াত নেতার অবলীলায় কারাগারে গিয়ে বৈঠক অনেক প্রশ্নেরই জন্ম দিয়েছিল।
মূলত ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে চারদলীয় জোটভুক্ত হয়ে জামায়াত বিএনপির ওপর সওয়ার হওয়ার পরে আর নামেনি। তাদের মন্ত্রণায় নিশ্চিত পরাজয় জেনেও বিএনপিকে ২০০৮-এর নির্বাচনে যেতে হয়েছে, আবার জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা সত্ত্বেও ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করতে হয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দলটির কয়েকজন শীর্ষনেতার ফাঁসির পরেই।
কেননা, বিএনপি ওই সময় একরকম চুপচাপই ছিল। এ ছাড়া তাদের কোনো উপায়ও ছিল না। কেননা, সরকারি প্রচার-প্রোপাগান্ডায় ইতিমধ্যে জামায়াতের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে। তাই বিএনপি নিজেদের ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখেই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি অবলম্বন করে। বিপদের সময় বন্ধুকে কাছে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয় জামায়াত। তারা ২০-দলীয় জোটে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
যদিও এখন পর্যন্ত ২০-দলীয় জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি জামায়াত। তবে রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে এটা অনুমান করা যায় যে ২০-দলীয় জোটে জামায়াতের সক্রিয় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আর নেই।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও সমমনাদের দাবি ছিল ‘যুদ্ধাপরাধীদের দল’ হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা। কিন্তু তা করা হয়নি। এ নিয়ে আদালতে মামলাও আছে। তবে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে। ফলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের নেতারা ২০ দলের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ‘ধানের শীষ’ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নিবন্ধন বাতিল হলেও দল হিসেবে জামায়াতকে কেন নিষিদ্ধ করা হলো না—অনেকের মনেই এ প্রশ্ন রয়েছে। এটা কি কেবলই আইনি জটিলতার কারণে, নাকি রাজনৈতিক পাশা খেলাও আছে এর পেছনে, তা নিয়ে সচেতন মহলে গুঞ্জন রয়েছে অনেক দিন ধরেই। তবে রাজনৈতিক সচেতন মহল বলে আসছিল যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে সরকার তথা আওয়ামী লীগ হাতের পাঁচ হারাতে চায়নি। প্রয়োজনে সময়মতো যাতে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যায়, সে জন্যই দলটিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকার তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি।
এমন অবস্থায় হঠাৎ করে জামায়াতের মাঠে নামা সেই সন্দেহকেই অনেকখানি ভিত্তি দেয় বৈকি। এ বিষয়ে ১১ জুন আজকের পত্রিকার ‘তবে কি হিসাবে বদল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জামায়াতের বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতকে নিয়ে একটা কৌশলে এগোচ্ছে সরকার। প্রথমত, হতে পারে, নির্বাচনে অধিকসংখ্যক দলকে হাতে রাখা। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে জামায়াত যাতে সহিংস পথ বেছে না নেয়, সে বিষয়টি বিবেচনা করা। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই জামায়াতকে নিয়ে ভাবছে সরকার।’ এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দেশব্যাপী আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অগ্নি-সন্ত্রাস করতে বিএনপিই জামায়াতকে মাঠে নামিয়েছে।’ আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘সরকার কেন জামায়াতের প্রতি নরম হলো, সেটা সরকারই জানে। সরকার এটা বলবে।’
রাজনীতির মাঠে জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্যে মাঠে নামা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এটা কি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের কোনো ছক, নাকি অন্য কোনো শক্তির পরিকল্পনার অংশ, তা এখনো পরিষ্কার নয়। অবশ্য এই কুয়াশা অচিরেই কেটে যাবে। আর তখনই বোঝা যাবে মঞ্চের সামনে জামায়াত, কিন্তু পেছনের সুতা কার হাতে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে