আধ্যাত্মিক সংগীতের মোহনীয় সুরে দিনের শুরু। এরপর গল্প, আড্ডা আর প্যানেল আলোচনা। বিশ্বসাহিত্যের খ্যাতিমান লেখকেরা বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে তাঁদের মেলবন্ধনের আলোচনা করছেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক সংমিশ্রণের মোহে কেটেছে পুরো দিন। বাদ যায়নি শিশুরাও। তাদের জন্য ছিল প্রিয় সিনেমা দেখার সুযোগ। হইচই করে উৎসবমুখর পরিবেশে অংশ নিয়েছে তারাও।

গল্প, আড্ডা, প্যানেল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিন। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন সাহিত্যপ্রেমী তরুণ-তরুণী, কিশোর থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষ। লিট ফেস্টের স্টল, নজরুল মঞ্চ, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে লোকজনের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। গতকাল সরকারি ছুটির দিনে ভিড়টা একটু বেশিই ছিল।

সকাল ১০টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার সঙ্গে আলাপে বসেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের সঞ্চালনায় ‘আগামীর আখ্যান’ নিয়ে আলাপ করেন কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও ইমদাদুল হক মিলন। ফেস্টের প্রযোজক ও পরিচালক সাদাফ সাযের সঞ্চালনায় বেলা সোয়া ১১টায় আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন ভারতীয় লেখক ও সাহিত্য সমালোচক অমিতাভ ঘোষ। সাংস্কৃতিক যুদ্ধ নিয়ে আলাপ করেন যুক্তরাজ্যের অধ্যাপক সারাহ চার্চওয়েল। দুপুরে ‘লস্ট কান্ট্রি, লাস্ট ওয়ার্ডস’ শীর্ষক সেশনে সোমালীয় লেখক নুরুদ্দিন ফারাহের মুখোমুখি হন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ।

নুরুদ্দিন ফারাহ বলেন, ‘আমি খুবই স্বাধীনচেতা ছিলাম। কেউ কিছু বললে সেটা করতাম না। ভেতরে একটা জিদ ছিল; জিদটাই আমাকে নানা সময় সহযোগিতা করেছে।’ লেখার ভাষা নির্ধারণ করার পন্থা কী, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ফারাহ বলেন, ‘আমি লেখক, আমি লেখার একজন নিজস্ব স্রষ্টা। কোনো দেখানো পন্থাই কার্যকর পন্থা নয়; নিজের কাজ নিজেকে করতে হবে। কোনো একটি বই যেকোনো ভাষায় লেখা হয়তো একটু কঠিন। লেখার সময় আপনার স্বস্তি দরকার। ভাষা নির্ধারণের কাজ একান্ত আপনার।’

‘হাচ ক্রসওয়ার্ড অ্যাওয়ার্ড ফর ফিকশন’ জয়ী উপন্যাস ‘দ্য হাংরি টাইড’ নিয়ে আলোচনার সেশনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঙালি লেখক অমিতাভ ঘোষ বলেন, প্রকৃতি মানুষের চেয়ে শক্তিশালী। প্রকৃতিকে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস মানুষ করতে পারে, কিন্তু ধ্বংস করতে পারবে না। প্রকৃতি সব ফিরিয়ে দেবে। উপনিবেশবাদীরাই প্রকৃতি ও পরিবেশের সবচেয়ে ক্ষতি করেছে।

নতুন পাঠক সৃষ্টির জন্য রাষ্ট্রীয় কাঠামোর চেয়ে সমাজের দায় বেশি রয়েছে বলে মত দেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। আর প্রযুক্তির যতই উন্নয়ন ঘটুক না কেন, ছাপার অক্ষরের সাহিত্য সব সময় টিকে থাকবে বলে মন্তব্য করেন ইমদাদুল হক মিলন।

লিট ফেস্টে এত আয়োজন দেখে বেশ উচ্ছ্বসিত দর্শনার্থীরা। মনিরা তামান্না উত্তরা থেকে লিট ফেস্টে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘লিট ফেস্ট নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা শুনেছি শুরুর আগে; ছিল বিতর্কও। কিন্তু এখানে এসে আমার মনে হলো বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে এক সম্মিলন চলছে। বিশ্বসাহিত্যের খ্যাতিমান লেখকেরা বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে মেলবন্ধনের আলোচনা করছেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক সংমিশ্রণ আমাকে অভিভূত করেছে।’ 

আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববার থাকবে লিট ফেস্টের অনুষ্ঠান।