বিশেষ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ শুরু করেছে নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকার। দুর্নীতি, দখল, চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন সরকারের উপদেষ্টারাও। কিন্তু এসবে গা করছে না একটি গোষ্ঠী।
সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে তারা। কেউ চাইছে ঠিকাদারি, কেউ দাবি করছে চাঁদা, আবার কেউ ব্যস্ত চেয়ার দখল নিয়ে। ক্ষমতার পালাবদলে যেন দখলের মচ্ছব লেগেছে সর্বত্র।
গত রোববার রাজধানীর মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান শাখায় গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করেছে ঢাকা মহানগর যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ। মোহাম্মদপুরের বছিলায় খাসজমি দখল করে বিএনপির দলীয় ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মী। শুধু এই দুটি নয়, গত কয়েক দিনে দখলের এমন বেশ কিছু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন আজকের পত্রিকার সাতজন প্রতিবেদক।
গত সোমবার বেলা আড়াইটা। রাজধানীর কাকরাইলে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ২০-২৫ জনের একটি দল নিয়ে প্রবেশ করেন কুদ্দুস মোল্লা ও দীপু সরকার নামের দুই ব্যক্তি। তাঁরা নিজেদের একটি রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কক্ষে যান। কমপক্ষে ২০ জন প্রকৌশলীর কক্ষে গিয়ে পরবর্তী দরপত্রগুলো তাঁদের দিতে হবে, এমন বার্তা দিয়ে যান তাঁরা। এরপর মঙ্গল ও বুধবার এ দুই ব্যক্তির নামে একাধিক যুবক গিয়ে ধমকের সুরে প্রকৌশলীদের কাজ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই অধিদপ্তরের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাকরিজীবনে সব সময়ই রাজনৈতিক লোকজন কাজ নেওয়ার জন্য আসে। তাদের কিছু কাজ দিতেও হয়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে যা করা হচ্ছে, তা কেউ করেনি। মনে হচ্ছে, বুঝিয়ে কিছু বলতে গেলেও মেরে ফেলবে।’
রাজউকে প্রভাব বিস্তারের মহড়া
দু-তিন দিন ধরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অফিসের চিত্রও অনেকটা এমন। গত সোমবার রাজউক ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানদের কক্ষে গিয়ে নিজেদের নানা পরিচয় দিচ্ছেন একদল লোক। এলাকার রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাবের ফিরিস্তি দিয়ে তাঁরা জানাচ্ছেন, এখন থেকে নিয়মিত আসবেন। যাওয়ার আগে নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়ে তা সংরক্ষণ করতে বলছেন কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের। পরিস্থিতি বেসামাল দেখে রাজউকের কোনো কোনো কর্মকর্তা বা প্রকৌশলীকে নিজ দপ্তরে না বসে অন্য সহকর্মীর কক্ষে গিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে সেদিন। একপর্যায়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ছিদ্দিকুর রহমান সরকার সব দপ্তর পরিদর্শনে বের হন। এতেও পরিবেশ খুব একটা শান্ত হয়নি।
রুমে রুমে গিয়ে চোটপাট করা এসব ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় রেজাউল করিম বাবু, শ্রমিকনেতা পরিচয় দেওয়া বেলাল হোসেন রিপন, আমিনুল হুদা, জাকির হোসেন এবং ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে প্রভাব বিস্তারের এই মহড়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, পরিস্থিতি এমন যে চেয়ার বসার জন্য একটি গ্রুপকে ইতিমধ্যে টাকা দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করত। এরপর আরও টাকার জন্য দরজায় এসে লাথি মেরেছে।’
ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগে নানা অনিয়মে চাকরি হারানো আমীর খসরু নামের একজন রাজউক চেয়ারম্যানকে চাপ দিয়ে পুনরায় চাকরিতে পুনর্বহালের চিঠি করিয়ে নিয়েছেন। আর রাজউকের শ্রমিক সংগঠনের পরিচয়ে অথরাইজড অফিসার, ইমারত পরিদর্শক, উচ্চমান সহকারী পদে বদলি করিয়ে নিচ্ছে একটি গ্রুপ। তারা ২০ জনের মতো বদলির তদবির করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইতিমধ্যে।
গণপূর্তে টেন্ডারবাজি
গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন ডিভিশনে দলবল নিয়ে ঠিকাদারি কাজের জন্য চাপ দিচ্ছে একটি মহল। তারা পূর্তের ঢাকা ডিভিশন ১, ৩, ৪ এবং শেরেবাংলা নগর ও আজিমপুর ডিভিশনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। নিজেদের একটি রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে ফারুক হোসেন ও সুইট নামের দুই ব্যক্তি ঠিকাদারি কাজের জন্য প্রকৌশলীদের চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসতে সংস্থার প্রধানের দপ্তরে গিয়ে মনিরুজ্জামান এবং বদরুল আলম নামের দুই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রীতিমতো হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জাগৃকে চাঁদাবাজি
ক্ষমতার পালাবদলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) উন্নয়নকাজগুলো দখলে নিতে মরিয়া হয়েছে একটি মহল। সংস্থাটির অধীনে সবচেয়ে বড় ধরনের উন্নয়নকাজ চলছে মোহাম্মদপুর এলাকায় দোলনচাঁপা এবং কনকচাঁপা ফ্ল্যাট প্রকল্পে। তিন-চার দিন ধরে সেখানে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজ বন্ধ করে দিয়ে আলোচনা করতে চাপ দিচ্ছেন মাহবুবুল ইসলাম স্বপন নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁর পক্ষে থেকে সেখানে সার্বক্ষণিক বেশ কিছু যুবক অবস্থান করছেন। ভিডিও ফুটেজ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বপন টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। টাকা না পেয়ে তাঁর লোকজন নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িতদের মারধর করছে।
ঢাকা ওয়াসায় হট্টগোল
কর্মচারীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে ওয়াসা ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষ ফাঁকা। ৫ আগস্টের পর দুই দিন তাকসিমের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা অফিস না করলেও তাঁদের কেউ কেউ ফিরে এসে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। ওয়াসা ভবনের দোতলা, তিনতলায় অনেক কর্মকর্তার নেমপ্লেট তুলে ফেলা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক লীগ অফিস দখল নিতে হট্টগোল করতে দেখা গেছে একদল লোককে।
ইইডি ও ইউজিসিতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরেও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দপ্তরের প্রধানদের জিম্মি করে অবৈধ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিকে বদলি করতে বাধ্য করা হয়েছে। দপ্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী বিশেষ একটি গোষ্ঠী। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ভোল পাল্টিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘সুযোগ বুঝে’ যোগ দিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারকে পদত্যাগে বাধ্য করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ। অভিযোগ উঠেছে, ইইডিতে গত কয়েক দিনে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মদদ দিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী পদে যেতে ইচ্ছুক ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রায়হান বাদশা। আর প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসেম সরদার। এই দুই কর্মকর্তা নিজেদের সাবেক চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী লিটন ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগ আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আফরোজা বেগম, সমীর কুমার রজক দাস, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান শওকতও এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইইডি সূত্র জানান, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রায়হান বাদশা প্রায় ১০ বছর গোপালগঞ্জে চাকরি করেছেন। সেখানে তার শ্বশুর বাড়িও। এরপর তিনি সাবেক চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী লিটন-এর সুপারিশে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হিসেবে বিবেচিত ঢাকা সার্কেলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন পান। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্তও হয়েছিলেন তিনি।
সূত্র আরও বলছে, দীপু মনির শাসনামলে মূলত ইইডি নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রধান কার্যালয়ের ডেস্ক-১ এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হাসেম সরদার। চাঁদপুরে বাড়ি হওয়ায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর বিশেষ ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজস্ব খাতের প্রায় ৫০ লাখ টাকা দীপু মনির বাসভবন মেরামতে খরচেরও অভিযোগও রয়েছে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীরকে অবরুদ্ধ করে সচিব পদে রদবদল, ২১ কর্মকর্তাকে পদচ্যুতি-বদলি ও নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক খোকন খানের শাস্তি মওকুফের দাবি জানান এক ছাত্রদল নেতা এবং ইউজিসির গুটিকয়েক কর্মকর্তা। তাঁদের দাবির মুখে সচিব পদ থেকে ড. ফেরদৌস জামানকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে পেছনে থাকা মো. ফখরুল ইসলামকে। তবে এই ফখরুল ইসলাম গত মাসেও শেখ হাসিনার স্তুতি গেয়ে গণমাধ্যমে কলাম লিখেছেন। একই সঙ্গে দাবির মুখে অফিস সহায়ক খোকনের শাস্তিও মওকুফ করা হয়। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মওদুদ আহমেদ এ ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় দখল
৬ আগস্ট কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নামের প্রতিষ্ঠানটি কিছু ব্যক্তি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সহকারী রেজিস্ট্রার কুতুব উদ্দীন আজকের পত্রিকার কাছে অভিযোগ করে বলেন, দেশের চলমান অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে মো. মুজিবুর রহমান ৬ আগস্ট সকালে একদল বহিরাগত লোক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, হামলা ও লুটপাট চালিয়েছেন। একপর্যায়ে মুজিব বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড সরিয়ে সেখানে প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর নাম (মুজিবুর রহমান) জুড়িয়ে দিয়েছেন। তবে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মো. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটি মূলত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। আগে দখল হয়েছিল। এখন উদ্ধার করলাম।’
প্রশাসনে চেয়ার দখলের দৌড়
৫ আগস্টের পর প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েও দেখা দিয়েছে চেয়ার দখলের মচ্ছব। নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে একটি গ্রুপ বিভিন্ন চেয়ারে বসার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৫, ১৭, ২০ ও ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের একটি অংশ মূলত এসব কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁদের চাপে জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে তাঁদের পোস্টিং বাগিয়ে নেন। আবার একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন পদোন্নতি না পাওয়ার তারা পদোন্নতিও করিয়ে নেয়। তাদের ভয়ে অফিস করতে পারেননি এপিডি (নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রেষণ) অনুবিভাগের কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে গত পরশু সেখানে একজন নতুন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দখল হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রও
পাবনার সুজানগরে নির্মাণাধীন ৬০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলাদেশের পাশাপাশি চীনা নাগরিকেরাও কাজ করছেন। কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে পাবনার সুজানগর উপজেলার আমিনপুর থানার সাগরকান্দি ইউনিয়নের চররামকান্তপুরে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর এই কেন্দ্র একাধিকবার দখলের চেষ্টা করেছেন স্থানীয় মো. ফারুক ওরফে তাবিজ ফারুক, আরশাদ আলী ওরফে আরশাদ মেম্বার ও লুৎফর ডাক্তার। গত মঙ্গলবার প্রায় ২০০ লোক নিয়ে তাঁরা কেন্দ্রটি দখলেন চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় চীনা নাগরিকেরা এলাকা ত্যাগ করেন।
সিটি করপোরেশনে ভয়ভীতি
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও (ডিএসসিসি) চলছে একই অবস্থা। সেখানে যাঁরা বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মে চাকরি হারিয়েছেন, তাঁরা এখন শ্রমিকনেতা সেজে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শরিফুল ইসলাম নামের একজন এ দলে নেতৃত্বে দিচ্ছেন। একপর্যায়ে মেয়র ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আশিকুর রহমানকে বল প্রয়োগ করে গত মঙ্গলবার পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরও নগর ভবনে অফিস করতে পারছেন না। এ প্রকৌশলীর দরজায় নানা ধরনের লিফলেট লাগানো হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ‘কাওলার তারানটেক এলাকায় আমার জমিতে একটি খেলার মাঠ করেছিলাম। সেটিতে এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেরা ক্রিকেট, ফুটবল খেলত। দুই দিন আগে সেটিও আশিয়ান সিটির মালিক নজরুল ভূঁইয়া দাঁড়িয়ে থেকে মাঠের বাউন্ডারির দেয়াল ভেঙে দখল করে নিয়ে গেছেন।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চেয়ার দখলের হিড়িক
চেয়ার দখলের হিড়িক পড়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে। যে যেভাবে পারছেন, বদলি অর্ডার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের শপথের আগেই অন্তত ১৪ জন কর্মকর্তার বদলির ঘটনা ঘটেছে। ডিজি নিজের চেয়ার ঠিক রাখার জন্য তড়িঘড়ি করে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তাদের পদায়ন করেছেন। এই বদলি প্রক্রিয়ার হোতা মো. আফসার আলী নামের এক ঠিকাদার। তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী ভান্ডার কর্মকর্তা (স্টোর অফিসার) ছিলেন। পরে দুর্নীতির অভিযোগে তিনি চাকরি হারান। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের ট্রাক প্রতীকে আফসার আলী সাতক্ষীরা সদর-২ সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, আফসার আলী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হককে চাপ দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দিয়ে এই বদলি করিয়েছেন।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বিশেষ প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান তুহিন ও উবায়দুল্লাহ বাদল এবং জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাহুল শর্মা, মোস্তফা ইউসুফ ও নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুল মাসুম]
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ শুরু করেছে নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকার। দুর্নীতি, দখল, চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন সরকারের উপদেষ্টারাও। কিন্তু এসবে গা করছে না একটি গোষ্ঠী।
সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে তারা। কেউ চাইছে ঠিকাদারি, কেউ দাবি করছে চাঁদা, আবার কেউ ব্যস্ত চেয়ার দখল নিয়ে। ক্ষমতার পালাবদলে যেন দখলের মচ্ছব লেগেছে সর্বত্র।
গত রোববার রাজধানীর মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান শাখায় গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করেছে ঢাকা মহানগর যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ। মোহাম্মদপুরের বছিলায় খাসজমি দখল করে বিএনপির দলীয় ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মী। শুধু এই দুটি নয়, গত কয়েক দিনে দখলের এমন বেশ কিছু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন আজকের পত্রিকার সাতজন প্রতিবেদক।
গত সোমবার বেলা আড়াইটা। রাজধানীর কাকরাইলে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ২০-২৫ জনের একটি দল নিয়ে প্রবেশ করেন কুদ্দুস মোল্লা ও দীপু সরকার নামের দুই ব্যক্তি। তাঁরা নিজেদের একটি রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কক্ষে যান। কমপক্ষে ২০ জন প্রকৌশলীর কক্ষে গিয়ে পরবর্তী দরপত্রগুলো তাঁদের দিতে হবে, এমন বার্তা দিয়ে যান তাঁরা। এরপর মঙ্গল ও বুধবার এ দুই ব্যক্তির নামে একাধিক যুবক গিয়ে ধমকের সুরে প্রকৌশলীদের কাজ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই অধিদপ্তরের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাকরিজীবনে সব সময়ই রাজনৈতিক লোকজন কাজ নেওয়ার জন্য আসে। তাদের কিছু কাজ দিতেও হয়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে যা করা হচ্ছে, তা কেউ করেনি। মনে হচ্ছে, বুঝিয়ে কিছু বলতে গেলেও মেরে ফেলবে।’
রাজউকে প্রভাব বিস্তারের মহড়া
দু-তিন দিন ধরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অফিসের চিত্রও অনেকটা এমন। গত সোমবার রাজউক ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানদের কক্ষে গিয়ে নিজেদের নানা পরিচয় দিচ্ছেন একদল লোক। এলাকার রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাবের ফিরিস্তি দিয়ে তাঁরা জানাচ্ছেন, এখন থেকে নিয়মিত আসবেন। যাওয়ার আগে নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়ে তা সংরক্ষণ করতে বলছেন কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের। পরিস্থিতি বেসামাল দেখে রাজউকের কোনো কোনো কর্মকর্তা বা প্রকৌশলীকে নিজ দপ্তরে না বসে অন্য সহকর্মীর কক্ষে গিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে সেদিন। একপর্যায়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ছিদ্দিকুর রহমান সরকার সব দপ্তর পরিদর্শনে বের হন। এতেও পরিবেশ খুব একটা শান্ত হয়নি।
রুমে রুমে গিয়ে চোটপাট করা এসব ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় রেজাউল করিম বাবু, শ্রমিকনেতা পরিচয় দেওয়া বেলাল হোসেন রিপন, আমিনুল হুদা, জাকির হোসেন এবং ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে প্রভাব বিস্তারের এই মহড়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, পরিস্থিতি এমন যে চেয়ার বসার জন্য একটি গ্রুপকে ইতিমধ্যে টাকা দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করত। এরপর আরও টাকার জন্য দরজায় এসে লাথি মেরেছে।’
ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগে নানা অনিয়মে চাকরি হারানো আমীর খসরু নামের একজন রাজউক চেয়ারম্যানকে চাপ দিয়ে পুনরায় চাকরিতে পুনর্বহালের চিঠি করিয়ে নিয়েছেন। আর রাজউকের শ্রমিক সংগঠনের পরিচয়ে অথরাইজড অফিসার, ইমারত পরিদর্শক, উচ্চমান সহকারী পদে বদলি করিয়ে নিচ্ছে একটি গ্রুপ। তারা ২০ জনের মতো বদলির তদবির করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইতিমধ্যে।
গণপূর্তে টেন্ডারবাজি
গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন ডিভিশনে দলবল নিয়ে ঠিকাদারি কাজের জন্য চাপ দিচ্ছে একটি মহল। তারা পূর্তের ঢাকা ডিভিশন ১, ৩, ৪ এবং শেরেবাংলা নগর ও আজিমপুর ডিভিশনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। নিজেদের একটি রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে ফারুক হোসেন ও সুইট নামের দুই ব্যক্তি ঠিকাদারি কাজের জন্য প্রকৌশলীদের চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসতে সংস্থার প্রধানের দপ্তরে গিয়ে মনিরুজ্জামান এবং বদরুল আলম নামের দুই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রীতিমতো হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জাগৃকে চাঁদাবাজি
ক্ষমতার পালাবদলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) উন্নয়নকাজগুলো দখলে নিতে মরিয়া হয়েছে একটি মহল। সংস্থাটির অধীনে সবচেয়ে বড় ধরনের উন্নয়নকাজ চলছে মোহাম্মদপুর এলাকায় দোলনচাঁপা এবং কনকচাঁপা ফ্ল্যাট প্রকল্পে। তিন-চার দিন ধরে সেখানে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজ বন্ধ করে দিয়ে আলোচনা করতে চাপ দিচ্ছেন মাহবুবুল ইসলাম স্বপন নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁর পক্ষে থেকে সেখানে সার্বক্ষণিক বেশ কিছু যুবক অবস্থান করছেন। ভিডিও ফুটেজ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বপন টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। টাকা না পেয়ে তাঁর লোকজন নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িতদের মারধর করছে।
ঢাকা ওয়াসায় হট্টগোল
কর্মচারীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে ওয়াসা ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষ ফাঁকা। ৫ আগস্টের পর দুই দিন তাকসিমের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা অফিস না করলেও তাঁদের কেউ কেউ ফিরে এসে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। ওয়াসা ভবনের দোতলা, তিনতলায় অনেক কর্মকর্তার নেমপ্লেট তুলে ফেলা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক লীগ অফিস দখল নিতে হট্টগোল করতে দেখা গেছে একদল লোককে।
ইইডি ও ইউজিসিতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরেও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দপ্তরের প্রধানদের জিম্মি করে অবৈধ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিকে বদলি করতে বাধ্য করা হয়েছে। দপ্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী বিশেষ একটি গোষ্ঠী। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ভোল পাল্টিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘সুযোগ বুঝে’ যোগ দিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারকে পদত্যাগে বাধ্য করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ। অভিযোগ উঠেছে, ইইডিতে গত কয়েক দিনে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মদদ দিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী পদে যেতে ইচ্ছুক ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রায়হান বাদশা। আর প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসেম সরদার। এই দুই কর্মকর্তা নিজেদের সাবেক চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী লিটন ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগ আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আফরোজা বেগম, সমীর কুমার রজক দাস, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান শওকতও এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইইডি সূত্র জানান, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রায়হান বাদশা প্রায় ১০ বছর গোপালগঞ্জে চাকরি করেছেন। সেখানে তার শ্বশুর বাড়িও। এরপর তিনি সাবেক চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী লিটন-এর সুপারিশে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হিসেবে বিবেচিত ঢাকা সার্কেলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন পান। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্তও হয়েছিলেন তিনি।
সূত্র আরও বলছে, দীপু মনির শাসনামলে মূলত ইইডি নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রধান কার্যালয়ের ডেস্ক-১ এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হাসেম সরদার। চাঁদপুরে বাড়ি হওয়ায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর বিশেষ ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজস্ব খাতের প্রায় ৫০ লাখ টাকা দীপু মনির বাসভবন মেরামতে খরচেরও অভিযোগও রয়েছে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীরকে অবরুদ্ধ করে সচিব পদে রদবদল, ২১ কর্মকর্তাকে পদচ্যুতি-বদলি ও নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক খোকন খানের শাস্তি মওকুফের দাবি জানান এক ছাত্রদল নেতা এবং ইউজিসির গুটিকয়েক কর্মকর্তা। তাঁদের দাবির মুখে সচিব পদ থেকে ড. ফেরদৌস জামানকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে পেছনে থাকা মো. ফখরুল ইসলামকে। তবে এই ফখরুল ইসলাম গত মাসেও শেখ হাসিনার স্তুতি গেয়ে গণমাধ্যমে কলাম লিখেছেন। একই সঙ্গে দাবির মুখে অফিস সহায়ক খোকনের শাস্তিও মওকুফ করা হয়। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মওদুদ আহমেদ এ ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় দখল
৬ আগস্ট কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নামের প্রতিষ্ঠানটি কিছু ব্যক্তি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সহকারী রেজিস্ট্রার কুতুব উদ্দীন আজকের পত্রিকার কাছে অভিযোগ করে বলেন, দেশের চলমান অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে মো. মুজিবুর রহমান ৬ আগস্ট সকালে একদল বহিরাগত লোক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, হামলা ও লুটপাট চালিয়েছেন। একপর্যায়ে মুজিব বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড সরিয়ে সেখানে প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর নাম (মুজিবুর রহমান) জুড়িয়ে দিয়েছেন। তবে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মো. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটি মূলত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। আগে দখল হয়েছিল। এখন উদ্ধার করলাম।’
প্রশাসনে চেয়ার দখলের দৌড়
৫ আগস্টের পর প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েও দেখা দিয়েছে চেয়ার দখলের মচ্ছব। নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে একটি গ্রুপ বিভিন্ন চেয়ারে বসার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৫, ১৭, ২০ ও ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের একটি অংশ মূলত এসব কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁদের চাপে জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে তাঁদের পোস্টিং বাগিয়ে নেন। আবার একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন পদোন্নতি না পাওয়ার তারা পদোন্নতিও করিয়ে নেয়। তাদের ভয়ে অফিস করতে পারেননি এপিডি (নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রেষণ) অনুবিভাগের কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে গত পরশু সেখানে একজন নতুন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দখল হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রও
পাবনার সুজানগরে নির্মাণাধীন ৬০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলাদেশের পাশাপাশি চীনা নাগরিকেরাও কাজ করছেন। কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে পাবনার সুজানগর উপজেলার আমিনপুর থানার সাগরকান্দি ইউনিয়নের চররামকান্তপুরে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর এই কেন্দ্র একাধিকবার দখলের চেষ্টা করেছেন স্থানীয় মো. ফারুক ওরফে তাবিজ ফারুক, আরশাদ আলী ওরফে আরশাদ মেম্বার ও লুৎফর ডাক্তার। গত মঙ্গলবার প্রায় ২০০ লোক নিয়ে তাঁরা কেন্দ্রটি দখলেন চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় চীনা নাগরিকেরা এলাকা ত্যাগ করেন।
সিটি করপোরেশনে ভয়ভীতি
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও (ডিএসসিসি) চলছে একই অবস্থা। সেখানে যাঁরা বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মে চাকরি হারিয়েছেন, তাঁরা এখন শ্রমিকনেতা সেজে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শরিফুল ইসলাম নামের একজন এ দলে নেতৃত্বে দিচ্ছেন। একপর্যায়ে মেয়র ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আশিকুর রহমানকে বল প্রয়োগ করে গত মঙ্গলবার পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরও নগর ভবনে অফিস করতে পারছেন না। এ প্রকৌশলীর দরজায় নানা ধরনের লিফলেট লাগানো হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ‘কাওলার তারানটেক এলাকায় আমার জমিতে একটি খেলার মাঠ করেছিলাম। সেটিতে এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেরা ক্রিকেট, ফুটবল খেলত। দুই দিন আগে সেটিও আশিয়ান সিটির মালিক নজরুল ভূঁইয়া দাঁড়িয়ে থেকে মাঠের বাউন্ডারির দেয়াল ভেঙে দখল করে নিয়ে গেছেন।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চেয়ার দখলের হিড়িক
চেয়ার দখলের হিড়িক পড়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে। যে যেভাবে পারছেন, বদলি অর্ডার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের শপথের আগেই অন্তত ১৪ জন কর্মকর্তার বদলির ঘটনা ঘটেছে। ডিজি নিজের চেয়ার ঠিক রাখার জন্য তড়িঘড়ি করে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তাদের পদায়ন করেছেন। এই বদলি প্রক্রিয়ার হোতা মো. আফসার আলী নামের এক ঠিকাদার। তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী ভান্ডার কর্মকর্তা (স্টোর অফিসার) ছিলেন। পরে দুর্নীতির অভিযোগে তিনি চাকরি হারান। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের ট্রাক প্রতীকে আফসার আলী সাতক্ষীরা সদর-২ সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, আফসার আলী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হককে চাপ দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দিয়ে এই বদলি করিয়েছেন।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বিশেষ প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান তুহিন ও উবায়দুল্লাহ বাদল এবং জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাহুল শর্মা, মোস্তফা ইউসুফ ও নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুল মাসুম]
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে