আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ভ্রাম্যমাণ আদালত, প্রার্থীর এজেন্ট, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা—নির্বাচন পরিচালনায় সবই প্রস্তুত। কিন্তু নেই শুধু ভোটার। ভোটকেন্দ্র ফাঁকা। গতকাল মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে এমন চিত্র দেখা যায়। এদিন সরেজমিনে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সদর উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের উপস্থিতি তেমন একটা চোখে পড়েনি।

শুধু ঠাকুরগাঁও নয়, মাদারীপুরের কালকিনি ও যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও একই চিত্র দেখা যায়। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
ঠাঁকুরগাঁও: দুপুরে সদর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিংপাড়া কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, ভোট গ্রহণে ১২টি বুথ রয়েছে, কিন্তু কেন্দ্রে কোনো ভোটার সারি নেই। কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হামিদুল কবির বলেন, ভোটার ৩ হাজার ৭৯৭ জন থাকলেও দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে দুই শর মতো।

একই চিত্র দেখা গেছে, সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের বুড়ীর হাট উচ্চবিদ্যালয়, গড়েয়া ইউনিয়নের আরাজি গুঞ্জরগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়, একই ইউনিয়নের লস্করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মিলনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে। কেন্দ্রগুলোয় বেলা ১টা পর্যন্ত মোট ভোটারের গড় হারে ভোট গ্রহণ হয়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। এ সময় ভোটারশূন্য কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা আনসার ও পুলিশ সদস্যরা অলস বসে ছিলেন।

মিলনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা স্কুলশিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন, ভোটে মানুষের আস্থা কমে গেছে। বিরোধী দলের কোনো প্রার্থী নেই। চারজন চেয়ারম্যান একই দলের। কোনো প্রতিযোগিতা না থাকায় মানুষের আগ্রহ কম।

লস্করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক বলেন, সব প্রার্থীর এজেন্ট থাকলেও ভোটার উপস্থিতি খুব কম।

মাদারীপুর: কালকিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্র গতকাল মঙ্গলবার অধিকাংশ সময়ই ফাঁকা ছিল। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসে অলস সময় পার করেছেন বলে জানা গেছে।

এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫৪ জন। ভোটকেন্দ্র ছিল ৭৩টি। তবে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। লাইনে দাঁড়িয়ে কাউকে ভোট দিতে দেখা যায়নি।

এদিকে সকাল ১০টার দিকে কালকিনির দড়িচর লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুজ্জামান সরদার ও তাঁর সমর্থকদের লাঞ্ছিত করে আরেক প্রার্থী তৌফিকুজ্জামান শাহিনের সমর্থকেরা। তবে বড় কিছু ঘটার আগেই পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

এদিকে শিকারমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুরের দিকে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় অপ্রাপ্তবয়স্ক কয়েকজনকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তাদের 
হাতে ভোটার স্লিপ ছিল। তবে নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে দৌড়ে পালিয়ে যায় তারা।

শিকারমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জিয়াউল হক বলেন, ‘এই কেন্দ্রে কেউ-ই জাল ভোট দিতে পারেনি। মূলত জাল ভোট শনাক্ত করার দায়িত্ব এজেন্টের। তারা আমাদের জানালে ব্যবস্থা নিব।’

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ আলম বলেন, জাল ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কেউ সহযোগিতা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে।

ঝিকরগাছা: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শিওরদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুপুর ১২টা পযৃন্ত ভোটারদের কোনো লাইন চোখে পড়েনি।

উপজেলার অন্য ভোটকেন্দ্রগুলোতে। ভোট শুরু হওয়ার পর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার রঘুনাথ নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মল্লিকপুর গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয়  ধাপে ঝিকরগাছায় গতকাল বুধবার সকাল থেকে ১১০টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলে। ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে এম মামুনুর রশীদ বলেন, আমরা সব কেন্দ্রের খবর রাখছি। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।