চলতি হজ মৌসুমে হজ ব্যবস্থাপনায় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ভিসা না করায় এরই মধ্যে ৯৮টি হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। তারপরও ভিসার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত গতি ফেরেনি। এতে হজ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আজ বুধবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ হজযাত্রীর ভিসার কাজ শেষ করতে না পারলে লাল তালিকাভুক্ত করার হুমকি দিয়েছে সৌদি আরব। জেদ্দায় বাংলাদেশ হজ অফিস থেকে এমন তথ্য জানিয়ে ধর্মসচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার জেদ্দা হজ অফিসের কাউন্সেলর জহিরুল ইসলামের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ৭ জুনের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভিসা সম্পন্ন না হলে সংশ্লিষ্ট হজ অফিসকে লাল তালিকাভুক্ত করবে সৌদি সরকার। এ ক্ষেত্রে যাবতীয় দায়ভার সংশ্লিষ্ট হজ অফিসকে বহন করতে হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৮৯ হাজারের মতো হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। বাকি আছে আরও ৩৪ হাজার হজযাত্রীর ভিসা। সে হিসাবে বাংলাদেশের ৭৩ শতাংশ হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। এখনো বাকি ২৭ শতাংশ। আর সৌদি আরবের শর্ত পূরণ করতে হলে আজকের মধ্যে আরও অন্তত ৭ শতাংশ হজযাত্রীর ভিসা নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে আজকের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভিসা সম্পন্ন হবে বলে নিশ্চিত করেছেন এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম। তিনি বলেন, ‘ভিসাসংক্রান্ত জটিলতার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়ী। তাঁদের খামখেয়ালিপনায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

প্রথমবারের মতো হজ মৌসুমে ধর্মসচিব কাজী এনামুল হাসানকে তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব) পদে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। আর ধর্মসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব মু. আবদুল হামিদ জমাদ্দারকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ধর্মসচিবের নিয়োগ আদেশটি সোমবার থেকে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়। ফলে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরেই নতুন সচিব আবদুল হামিদ প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দায়িত্ব বুঝে নেন। ওই সময় সদ্য বিদায়ী ধর্মসচিব এনামুল হাসান উপস্থিত না থাকলেও তাঁর একান্ত সচিব (পিএস) মো. যুবায়ের উপস্থিত ছিলেন। নতুন সচিব দায়িত্ব নেওয়ায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একধরনের স্বস্তি দেখা দিয়েছে। বিদায়ী ধর্মসচিবের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত হজ শাখা-১-এর উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীনকে ইতিমধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সচিবের পিএস যুবায়েরকেও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। গতকালই তাঁকে দপ্তরের বিভিন্ন কাগজপত্র গোছাতে দেখা গেছে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীনের বিরুদ্ধে গত বছরই ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। তখন তাঁকে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলিও করা হয়েছিল। কিন্তু তদবির করে তিনি সেই বদলি ঠেকিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে এবার হজ মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁকে বদলি করা হয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এনপিওর পরিচালক হিসেবে।

দায়িত্ব নিয়ে নতুন ধর্মসচিব মু. আবদুল হামিদ জমাদ্দার বলেন, ‘আজই দায়িত্ব নিয়েছি। অসুস্থতার কারণে বিদায়ী সচিব ছিলেন না। সুষ্ঠুভাবে হজ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই।’

সূত্রমতে, বিদায়ী ধর্মসচিব কাজী এনামুল হাসান দীর্ঘ দিন ধরে দপ্তরে অনিয়মিত হওয়ায় তাঁকে নিয়ে আলোচনা ছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তিনি অনলাইনে সভা করতেন। সশরীরে অফিস করতেন না বললেই চলে। এ ছাড়া হজসংক্রান্ত সব কাজে তিনি নির্ভর করতেন উপসচিব শাহীন ও পিএস যুবায়েরের ওপর। মন্ত্রণালয়ের অন্য সিনিয়র কর্মকর্তারাও তাঁদের কাছে পাত্তা পেতেন না। এমনকি হজসংক্রান্ত সব দলের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশও আমলে নেননি তাঁরা। আরও নানা কারণে সচিবের ওপর নাখোশ ছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।