চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নের জন্য নির্মিতব্য বিএফডিসি কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের প্রসার ঘটেছে। এর পেছনে আমার মায়ের অবদান আছে। সিনেমা দেখে একদিন মা ও আব্বা ফিরছিলেন। মা বলছিলেন, “আমরা বাঙালিরা বাংলাদেশে সিনেমা তৈরি করতে পারি না?” এরপরেই মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে এফডিসি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু।’

ভালো মানের সিনেমা নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিনেমায় জনসাধারণের জন্য বার্তা থাকতে হবে। কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ, সেগুলো মানুষকে শেখাবে সিনেমা। দৃষ্টি প্রসারিত হবে মানুষের।’

এ সময় বেশি বেশি শিশুতোষ সিনেমা নির্মাণের ওপর জোর দেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। সিনেমাশিল্প ও সংশ্লিষ্টদের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১২ সালের ৩ এপ্রিল গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়। “চলচ্চিত্র সংসদ নিবন্ধন আইন ২০১১”, “বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন-২০১৯” প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে “বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট”। অসচ্ছল শিল্পী ও কলাকুশলীদের আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যে “শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট” গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সিনেমা হলমালিকদের দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি ব্যাংকঋণ প্রদান করা হচ্ছে। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সিনেমা হল চালু হয়েছে। ভালো সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। হলেও দর্শক ফিরতে শুরু করেছে। এটা চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য ভালো দিক।’

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে এফডিসিতে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বাঙালি জাতির কৃষ্টি, সংস্কৃতি সংরক্ষণের বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাই বিএফডিসি নির্মাণ করেন। আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এফডিসির নতুন কমপ্লেক্স নির্মিত হতে যাচ্ছে। চলচ্চিত্রশিল্পের কল্যাণে গত ৬৬ বছরে এত বড় স্থাপনা হয়নি।’ তথ্যমন্ত্রী জানান, ভবনটির আজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হলেও, ইতিমধ্যেই তিনটি বেজমেন্ট এবং একতলার কিছু অংশ নির্মাণ হয়েছে। 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন ও চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
চলচ্চিত্রের উন্নয়নকল্পে ২০১৮ সালে ‘বিএফডিসি কমপ্লেক্স’ নির্মাণের ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর বেশ কয়েকবার নকশা পরিবর্তন হয়। করোনা মহামারির কারণেও বিলম্বিত হয় কাজ। অনুমোদনের পাঁচ বছর পর শেষ হয়েছে ২৫ শতাংশ কাজ। ২০২৪ সালের মধ্যে ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে ভবনটি বড় ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এ প্রকল্পের জন্য একনেক অনুমোদন দেয় ৩২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বহুতল এ ভবনে থাকছে তিনটি বেজমেন্ট। যেখানে একসঙ্গে ৩০০ গাড়ি পার্ক করা যাবে। এ ছাড়া থাকছে তিন ও দুই স্ক্রিনবিশিষ্ট দুটি সিনেপ্লেক্স। আরও থাকবে এফডিসির মূল কার্যালয়, ফিল্ম আর্কাইভ, চলচ্চিত্র জাদুঘর, রিহার্সাল রুম, আবাসিক হোটেল, শপিং মল, সুইমিংপুল ও ব্যায়ামাগার।