বিজন সাহা
স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে বিবর্তনবাদ বাদ দেওয়ায় সামাজিক মাধ্যম উত্তাল। বিবর্তনবাদ- বিরোধীরা যেমন উল্লাসে ফেটে পড়েছে, বিবর্তনবাদের পক্ষের লোকজন তেমনি ফেটে পড়েছে ক্ষোভে। এই আনন্দ ও বেদনাকে উপেক্ষা করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। কারণ, শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার মাশুল দিতে হয় দেশকেই।
বিবর্তনবাদের যাঁরা বিরোধিতা করেন, তাঁদের যুক্তি, কস্মিন কালেও তো কেউ কোনো বানর থেকে মানুষ হতে দেখেনি, তাহলে এটা সত্য হয় কী করে? কিন্তু তাঁরা প্রশ্ন করেন না ঈশ্বর যে প্রথম মানব তৈরি করেছেন, সেটাও কেউই দেখেনি। তাঁরা যদি সাক্ষ্য-প্রমাণবিহীন অনেক ঘটনা বিশ্বাস করতে পারেন, তাহলে বিবর্তন তত্ত্বে এত আপত্তি কেন? এটাও তো একটা সম্ভাবনা মাত্র। তা ছাড়া বিবর্তনবাদ বানর থেকে মানুষের উৎপত্তির কথা বলে না, সে বলে এককোষী প্রাণী থেকে বিবর্তনের বা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অন্যান্য প্রাণী তথা মানুষের উৎপত্তির কথা। আমরা নিজেরাই অনবরত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দুই প্রজন্মের আগের শিশু আর আজকের শিশু এক নয়। এক নয় সমাজ, সামাজিক বন্ধন। আমরা যদি সামাজিক, রাজনৈতিক, নৈতিক—এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন মেনে নিতে পারি, তাহলে জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সমস্যা কেন?
ধর্ম অতীতকেন্দ্রিক, সে অতীতে সব সমস্যার সমাধান দেখে। বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল, সে শেষ কথা বলে না, একটু একটু করে সত্যের দিকে এগিয়ে যায়। বিজ্ঞান জানে প্রতিটি নতুন জ্ঞান অনেক অজানার জন্ম দেয়। তাই তার যাত্রা অন্তহীন। সে শেষ কথা বলবে না, শেষ উত্তর দেবে না, আরও সঠিক, আরও নিখুঁত উত্তর পাওয়ার জন্য এগিয়ে যাবে। তাই স্কুলে বৈজ্ঞানিক মতবাদ পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় মতবাদ পড়ালে বিজ্ঞানের অসুবিধা হয় না, একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের ধর্মীয় ব্যাখ্যা পড়তে সমস্যা হয় না, উল্টো সে তাতে সমৃদ্ধ হয়। কেননা, বিজ্ঞানীর জন্য ভুল রেজাল্টও রেজাল্ট, এটা তাকে ভবিষ্যতে ভুল করার হাত থেকে রক্ষা করবে। ধার্মিকের সেই মহানুভবতা নেই, তার জন্য নিজের সত্যে আস্থা না রাখা আর ধর্মচ্যুত হওয়া সমার্থক। আর এ জন্যই তার কাছে এটা অস্তিত্বের লড়াই। ধর্ম এখানে মহানুভব নয়।
বায়ান্নতে আমরা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি করেছিলাম, একমাত্র নয়। তাই আমরা মেহেদি হাসান বা গোলাম আলীর গজল শুনে নিজেদের ঋদ্ধ করতে পারি। যদি কেউ বাংলা বলে রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল পড়া থেকে বিরত থাকে, সেটা তার দীনতা। গণতন্ত্রের মূল কথা হলো বিকল্প। বিকল্প না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না। আমরা পাঠ্যসূচি থেকে বিবর্তনবাদ তুলে দিয়ে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করছি, মানুষের সার্বিক বিকাশে বাধা দিচ্ছি। মানুষের উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছে, সে বিষয়ে রায় দেওয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রের নেই। এ নিয়ে যদি একাধিক মতবাদ থাকে এবং সেসব মতবাদের পেছনে যদি শক্ত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকে, তাহলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছাত্রছাত্রীরা যাতে সেসব মতবাদ জানার সুযোগ পায়, সেটা নিশ্চিত করা। স্কুলের মূল কাজ ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন করতে শেখানো, নতুন নতুন জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী করে তোলা। কোনো বিষয়ে তোতা পাখির মতো মুখস্থ করিয়ে মাছি মারা কেরানি বানানো যায়, সুশিক্ষিত নাগরিক তৈরি করা যায় না।
মানুষের সামনে যত বেশি বিকল্প পথ, তত বেশি তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা। যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে আধুনিক সভ্যতা, সেই কোয়ান্টাম তত্ত্ব বহু সম্ভাবনায় বিশ্বাসী। জ্ঞান—এটা নিজেকে বিকাশ করার সুযোগ। প্রতিটি মানুষের বিকাশের ওপর নির্ভর করে সমাজ তথা দেশের বিকাশ। পাঠ্যসূচি থেকে বিবর্তনবাদ বাদ দিয়ে আমরা জ্ঞানার্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করব, জাতির ভবিষ্যৎ অগ্রগতিতে বাধা দেব। যে মানুষ মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারে না, সে না ধার্মিক, না বৈজ্ঞানিক—সে শুধুই অন্ধবিশ্বাসী!
বিজন সাহা, শিক্ষক ও গবেষক
স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে বিবর্তনবাদ বাদ দেওয়ায় সামাজিক মাধ্যম উত্তাল। বিবর্তনবাদ- বিরোধীরা যেমন উল্লাসে ফেটে পড়েছে, বিবর্তনবাদের পক্ষের লোকজন তেমনি ফেটে পড়েছে ক্ষোভে। এই আনন্দ ও বেদনাকে উপেক্ষা করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। কারণ, শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার মাশুল দিতে হয় দেশকেই।
বিবর্তনবাদের যাঁরা বিরোধিতা করেন, তাঁদের যুক্তি, কস্মিন কালেও তো কেউ কোনো বানর থেকে মানুষ হতে দেখেনি, তাহলে এটা সত্য হয় কী করে? কিন্তু তাঁরা প্রশ্ন করেন না ঈশ্বর যে প্রথম মানব তৈরি করেছেন, সেটাও কেউই দেখেনি। তাঁরা যদি সাক্ষ্য-প্রমাণবিহীন অনেক ঘটনা বিশ্বাস করতে পারেন, তাহলে বিবর্তন তত্ত্বে এত আপত্তি কেন? এটাও তো একটা সম্ভাবনা মাত্র। তা ছাড়া বিবর্তনবাদ বানর থেকে মানুষের উৎপত্তির কথা বলে না, সে বলে এককোষী প্রাণী থেকে বিবর্তনের বা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অন্যান্য প্রাণী তথা মানুষের উৎপত্তির কথা। আমরা নিজেরাই অনবরত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দুই প্রজন্মের আগের শিশু আর আজকের শিশু এক নয়। এক নয় সমাজ, সামাজিক বন্ধন। আমরা যদি সামাজিক, রাজনৈতিক, নৈতিক—এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন মেনে নিতে পারি, তাহলে জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সমস্যা কেন?
ধর্ম অতীতকেন্দ্রিক, সে অতীতে সব সমস্যার সমাধান দেখে। বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল, সে শেষ কথা বলে না, একটু একটু করে সত্যের দিকে এগিয়ে যায়। বিজ্ঞান জানে প্রতিটি নতুন জ্ঞান অনেক অজানার জন্ম দেয়। তাই তার যাত্রা অন্তহীন। সে শেষ কথা বলবে না, শেষ উত্তর দেবে না, আরও সঠিক, আরও নিখুঁত উত্তর পাওয়ার জন্য এগিয়ে যাবে। তাই স্কুলে বৈজ্ঞানিক মতবাদ পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় মতবাদ পড়ালে বিজ্ঞানের অসুবিধা হয় না, একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের ধর্মীয় ব্যাখ্যা পড়তে সমস্যা হয় না, উল্টো সে তাতে সমৃদ্ধ হয়। কেননা, বিজ্ঞানীর জন্য ভুল রেজাল্টও রেজাল্ট, এটা তাকে ভবিষ্যতে ভুল করার হাত থেকে রক্ষা করবে। ধার্মিকের সেই মহানুভবতা নেই, তার জন্য নিজের সত্যে আস্থা না রাখা আর ধর্মচ্যুত হওয়া সমার্থক। আর এ জন্যই তার কাছে এটা অস্তিত্বের লড়াই। ধর্ম এখানে মহানুভব নয়।
বায়ান্নতে আমরা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি করেছিলাম, একমাত্র নয়। তাই আমরা মেহেদি হাসান বা গোলাম আলীর গজল শুনে নিজেদের ঋদ্ধ করতে পারি। যদি কেউ বাংলা বলে রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল পড়া থেকে বিরত থাকে, সেটা তার দীনতা। গণতন্ত্রের মূল কথা হলো বিকল্প। বিকল্প না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না। আমরা পাঠ্যসূচি থেকে বিবর্তনবাদ তুলে দিয়ে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করছি, মানুষের সার্বিক বিকাশে বাধা দিচ্ছি। মানুষের উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছে, সে বিষয়ে রায় দেওয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রের নেই। এ নিয়ে যদি একাধিক মতবাদ থাকে এবং সেসব মতবাদের পেছনে যদি শক্ত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকে, তাহলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছাত্রছাত্রীরা যাতে সেসব মতবাদ জানার সুযোগ পায়, সেটা নিশ্চিত করা। স্কুলের মূল কাজ ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন করতে শেখানো, নতুন নতুন জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী করে তোলা। কোনো বিষয়ে তোতা পাখির মতো মুখস্থ করিয়ে মাছি মারা কেরানি বানানো যায়, সুশিক্ষিত নাগরিক তৈরি করা যায় না।
মানুষের সামনে যত বেশি বিকল্প পথ, তত বেশি তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা। যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে আধুনিক সভ্যতা, সেই কোয়ান্টাম তত্ত্ব বহু সম্ভাবনায় বিশ্বাসী। জ্ঞান—এটা নিজেকে বিকাশ করার সুযোগ। প্রতিটি মানুষের বিকাশের ওপর নির্ভর করে সমাজ তথা দেশের বিকাশ। পাঠ্যসূচি থেকে বিবর্তনবাদ বাদ দিয়ে আমরা জ্ঞানার্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করব, জাতির ভবিষ্যৎ অগ্রগতিতে বাধা দেব। যে মানুষ মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারে না, সে না ধার্মিক, না বৈজ্ঞানিক—সে শুধুই অন্ধবিশ্বাসী!
বিজন সাহা, শিক্ষক ও গবেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে