শ্বাসরুদ্ধকর ১১ ঘণ্টা

বদরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২২, ১২: ৫৯

মাটিধসে কূপের ২৫ ফুট গভীরে গলা পর্যন্ত চাপা পড়েছিলেন শ্রমিক আবুল হাসান (৩০)। ফায়ার সার্ভিসের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে ১১ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার পেয়েছেন তিনি। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তাঁকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আবুল হাসান রংপুরের বদরগঞ্জ পৌর শহরের শাহাপুর মাস্টারপাড়া গ্রামের মৃত আজাদ আলীর ছেলে। তিনি শহরের বালুয়াভাটা গ্রামে দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন।

বদরগঞ্জ থানার পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, হাসানসহ চার শ্রমিক শনিবার সকালে বালুয়াভাটা গ্রামে বাবলু দাশের বাড়িতে শৌচাগারের গর্ত খনন করতে যান। বেলা ২টার দিকে মাটিধসে গভীর গর্তে চাপা পড়েন হাসান। পরে বাড়ির মালিক ও তিন শ্রমিক তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বদরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। ততক্ষণে হাসানের মাথা মাটিচাপা পড়ে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তখন পৌরসভার আবুল হোসেন নামের এক কর্মচারী গর্তে নেমে হাসানের গলা পর্যন্ত মাটি সরিয়ে দেন। তবে বদরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধারে ব্যর্থ হলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রংপুর জেলা এবং রাত ১০টার দিকে বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারে যুক্ত হন। তিন দলের সদস্যদের চেষ্টায় রাত ১২টায় ৫৬ মিনিটে উদ্ধার হন হাসান। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাকির মুবাশ্বির বলেন, হাসানের দুই পায়ে রক্ত চলাচল বন্ধ ছিল। হাসান উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত বালুয়াভাটা এলাকায় হাজারো নারী-পুরুষ ভিড় জমান। তাঁদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।

বদরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি বেলা ২টার দিকের, কিন্তু আমরা খবর পেয়েছি সন্ধ্যা ৬টার দিকে। আমি গভীর কূপে নেমে হাসানকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেই মাটিচাপা পড়েছিলাম। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। তবুও শেষ পর্যন্ত উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থেকে তাঁকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছি, এটাই সার্থকতা।’

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক সর্দার মধু জানান, যে বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে সেখানে রাস্তা না থাকায় যানবাহন নেওয়া যায়নি। যদি এস্কাভেটর (ভেকু) নেওয়ার ব্যবস্থা থাকত তাহলে হাসানকে তাৎক্ষণিক মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা যেতো। এতে এতক্ষণ কষ্ট পেতেন না তিনি।

পৌর মেয়র আহসানুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, ‘আবুল হাসানকে গভীর কূপে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় তিনি জীবিত উদ্ধার হয়েছেন, এটা তাঁদের সফলতা।’ হাসানের চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবারকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন মেয়র টুটুল।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট বলেন, ‘আবুল হাসান কূপ থেকে উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলাম। খুব সতর্কতা অবলম্বন করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাঁকে জীবিত উদ্ধার করেছেন।’

বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক জসীম উদ্দিন জানান, হাসান এমনভাবে মাটি ও বালুচাপা পড়েছিলেন যে তাঁকে জীবিত উদ্ধার করা খুবই কঠিন ছিল। কারণ গর্তের ভেতর দাঁড়ানোর মতো জায়গা ছিল না। ঝুঁকি নিয়ে অল্প অল্প করে মাটি ও বালু সরানো হচ্ছিল। কিন্তু পাশের মাটি ও বালু আবার ধসে পড়ছিল। সবার সহযোগিতায় রাত ১টার দিকে উদ্ধার অভিযান সফল হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

অধিকৃত অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদের সার্বভৌম মালিকানা ফিলিস্তিনিদের, জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

বিসিএস নিয়োগ: নিজেই রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্য দিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন অনেকে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত