মহিউদ্দিন খান মোহন
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন একই দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে রাজনীতিতে ‘নাবালক’, ‘অর্বাচীন’ ও ‘কুলাঙ্গার’ বলে মন্তব্য করেছেন।
২১ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মাহবুব উদ্দিন খোকন সভাপতি ও তাঁর প্যানেল থেকে চারজন নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম-সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন।
সাধারণ সম্পাদকসহ বাকি পদগুলোতে হেরে যায় জাতীয়তাবাদী প্যানেল। নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল স্বাক্ষরিত পত্র মারফত মাহবুব উদ্দিন খোকন ও অন্যদের দায়িত্ব গ্রহণে নিষেধ করা হয়। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্ধারিত দিনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এরপর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় কায়সার কামাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে মাহবুব উদ্দিন খোকনকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনটি আহ্বান করেছিলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার খোকন তাঁর ক্ষোভ উগরে দিতে গিয়ে কায়সার কামালকে বারবার ‘নাবালক’, ‘অর্বাচীন’ ও ‘কুলাঙ্গার’ বলে অভিহিত করেছেন। পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত সমালেচনায়ও প্রবৃত্ত হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, কায়সার কামাল নাকি তাঁকে সরকারের এজেন্ট বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে তাঁকে শপথ নিতে নিষেধ করে কায়সার কামালই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সরকার-সমর্থকদের একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন; বরং তিনি শপথ নিয়ে সেই চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছেন। ব্যারিস্টার খোকন এ-ও বলেছেন, তাঁকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পদ থকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার কায়সার কামালের নেই। এরপরও তিনি বিএনপিতেই থাকবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
একপর্যায়ে ব্যারিস্টার খোকন কায়সার কামালের নারী কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। বেশ কয়েক মাস আগে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর স্ত্রীর সঙ্গে কায়সার কামালের পরকীয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ কারণে ওই নারীর স্বামী কর্তৃক তিনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মামলার আসামি হিসেবে কয়েক দিন হাজতবাসও করে এসেছেন। মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও ফুটেজ এখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল এবং তা আমার সংরক্ষণেও রয়েছে।
দেশের পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অন্যতম মর্যাদাবান প্রতিষ্ঠান। এই সংগঠনে জাতীয়তাবাদী সমর্থক আইনজীবীদের শক্ত অবস্থানের বিষয়টি নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। কখনো পূর্ণ প্যানেলে, কখনো সভাপতি-সম্পাদকসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে, আবার কখনো সভাপতি অথবা সম্পাদক পদসহ উল্লেখযোগ্য পদে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করে আসছেন। নির্বাচনী কৌশলগত ভুলেই হোক, কিংবা অন্য যেকোনো কারণে এবার সভাপতিসহ মোট পাঁচটি পদে তাঁরা জয়লাভ করেছেন।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এর আগে সাতবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এবারই প্রথম সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করলেন। সেদিক দিয়ে বিচার করলে এটা তাঁর জন্য এক বিরাট সাফল্য ও সম্মানের বিষয়। কিন্তু জয়লাভ করার পর দল থেকে কেন তাঁকে দায়িত্ব নিতে নিষেধ করা হলো, তা অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়।
কেউ কেউ অবশ্য বলেন, বিএনপির ওপর এখন ‘বর্জন-ভূত’ আছর করেছে। তারা ইদানীং সব ব্যাপারেই ‘বর্জনেই সমাধান’তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। তারা জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে শাসক দলকে নির্বাচনী মাঠে ‘ওয়াকওভার’ দিয়েছে, এখন উপজেলা নির্বাচনের প্রশ্নেও সেই বর্জন জপমালা জপছে। আবার ভারতীয় পণ্য বর্জনের কোরাসে গলা মিলিয়ে সৃষ্টি করছে হাস্যকর পরিবেশ।
ভারতীয় অরবিন্দ আদি কাপড়ের ফিনফিনে পাঞ্জাবি গায়ে নেতা যখন সে দেশের পণ্য বর্জনের কথা বলেন, তখন সেই প্রাচীন ঢাকাইয়া কৌতুকটি মনে পড়ে, ‘আস্তে কন ছাব, হুনলে ঘোড়ায় ভি হাছব।’ এই বর্জন থেকে তারা কী অর্জন করতে চায়, তা রীতিমতো ট্রিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। কেননা, এ ধরনের বর্জনে যে কিছুই অর্জন করা যায় না, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, আইনজীবীদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং অন্যরা কেন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না?অর্জিত বিজয়ের ফসল ঘরে তোলা থেকে বিরত থেকে কী ফায়দা তুলতে চায় বিএনপি? তা ছাড়া, দলের একজন যুগ্ম মহাসচিবকে হাইকমান্ডের অনুমতি ব্যতিরেকে সহযোগী একটি সংগঠনের পদ থেকে এভাবে অব্যাহতি দেওয়া কতটা যুক্তিসংগত?
এটা এখনো প্রকাশ্যে আসেনি কায়সার কামাল মাহবুব উদ্দিন খোকনকে অব্যাহতিপত্র দেওয়ার আগে মূল দল বিএনপির স্থায়ী কমিটি বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়েছিলেন কি না। ফোরামের নিষেধ অমান্য করে দায়িত্ব নিয়ে খোকন কি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন? যদি তা করে থাকেন, তাহলে শুধু আইনজীবী ফোরাম কেন, তাঁকে তো মূল দল বিএনপি থেকেই বহিষ্কার করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি।
সুতরাং বোঝা যায়, মাহবুব উদ্দিন খোকনের অপরাধ ততটা গুরুতর নয়; বরং এটাই সত্য যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে খোকন সঠিক কাজ করেছেন। অন্তত দেশের সর্বোচ্চ আইন-অঙ্গনে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব জীবিত রাখলেন।
অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন, কেন মাহবুব উদ্দিন খোকনের গর্দানের ওপর অব্যাহতির খড়্গ নেমে এল। বিএনপিকে যতটুকু জানি, তাতে এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে তিনি দলের কোনো একটি শক্তিধর গ্রুপের কোপানলে পড়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ায় মাহবুব উদ্দিন খোকন জাতীয় পর্যায়ে ভিন্ন উচ্চতায় আসীন হয়েছেন—সন্দেহ নেই। কেউ কেউ এটাও মনে করেন যে বর্তমানে দলের যুগ্ম মহাসচিবের পদে থাকা খোকন হয়তো সামনে ‘সিনিয়র’ কোনো পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন।
তাতে কারও কারও ‘বাড়া ভাতে ছাই’ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর সে জন্যই তাঁর সামনের পথে ‘মান্দার কাঁটা’ বিছিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে বিজয়ী হওয়ার পরও তাঁকে ওই পদের দায়িত্ব নেওয়া থেকে নিবৃত্ত রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে ব্যারিস্টার খোকন হিসাবে ভুল করেননি।দলের সস্তা আবেগ ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বলি হয়ে মর্যাদার আসনে উপবিষ্ট হওয়ার সুযোগ নষ্ট করেননি।
এখন বিচার্য বিষয়, কায়সার কামালকে প্রকাশ্যে নাবালক, অর্বাচীন ও কুলাঙ্গার বলে অভিহিত করা মাহবুব উদ্দিন খোকনের উচিত হয়েছে কি না। অনেকেই মনে করেন, তাঁর মতো একজন সিনিয়র আইনজ্ঞ ও রাজনীতিকের একজন জুনিয়রকে এ রকম কদর্য ভাষায় আক্রমণ সমীচীন হয়নি। পার্লামেন্টারি রাজনীতিতে অভিজ্ঞ ব্যারিস্টার খোকন কেন এসব ‘আন পার্লামেন্টারি’ শব্দ প্রয়োগ করলেন, তা বোধগম্য নয়।
ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে কারও বিরুদ্ধে শিষ্টাচারবহির্ভূত ভাষা প্রয়োগ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবে কায়সার কামালকে নাবালক বলে অভিহিত করে ব্যারিস্টার খোকন বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের একটি নেতিবাচক দিক উন্মোচন করে দিয়েছেন বলে মনে করেন সাবেক এক ছাত্রদল নেতা। তিনি বললেন, একটু যদি গভীর দৃষ্টিতে তাকান, তাহলে বিএনপির সর্বস্তরে এখন নাবালকদের রাজত্ব দেখতে পাবেন।
রাজনীতিতে নাবালকেরাই এখন দলটির নেতৃত্ব কবজা করে দোর্দণ্ড প্রতাপে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। দলের হাইকমান্ডের কাছে অভিজ্ঞ, দক্ষ এবং প্রাজ্ঞ নেতাদের চেয়ে নাবালকদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তাই কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলা পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে রাজনৈতিক নাবালকদের প্ল্যান্টেশন (রোপণ) চলছে। কোথাও কোথাও আবার এই রোপণের জন্য পুরোনো বৃক্ষগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে বিএনপি নামের রাজনৈতিক বাগানটি যে ছায়াবৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে, সেদিকে বাগান-কর্তৃপক্ষের খেয়াল নেই।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন একই দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে রাজনীতিতে ‘নাবালক’, ‘অর্বাচীন’ ও ‘কুলাঙ্গার’ বলে মন্তব্য করেছেন।
২১ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মাহবুব উদ্দিন খোকন সভাপতি ও তাঁর প্যানেল থেকে চারজন নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম-সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন।
সাধারণ সম্পাদকসহ বাকি পদগুলোতে হেরে যায় জাতীয়তাবাদী প্যানেল। নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল স্বাক্ষরিত পত্র মারফত মাহবুব উদ্দিন খোকন ও অন্যদের দায়িত্ব গ্রহণে নিষেধ করা হয়। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্ধারিত দিনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এরপর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় কায়সার কামাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে মাহবুব উদ্দিন খোকনকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনটি আহ্বান করেছিলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার খোকন তাঁর ক্ষোভ উগরে দিতে গিয়ে কায়সার কামালকে বারবার ‘নাবালক’, ‘অর্বাচীন’ ও ‘কুলাঙ্গার’ বলে অভিহিত করেছেন। পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত সমালেচনায়ও প্রবৃত্ত হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, কায়সার কামাল নাকি তাঁকে সরকারের এজেন্ট বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে তাঁকে শপথ নিতে নিষেধ করে কায়সার কামালই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সরকার-সমর্থকদের একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন; বরং তিনি শপথ নিয়ে সেই চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছেন। ব্যারিস্টার খোকন এ-ও বলেছেন, তাঁকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পদ থকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার কায়সার কামালের নেই। এরপরও তিনি বিএনপিতেই থাকবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
একপর্যায়ে ব্যারিস্টার খোকন কায়সার কামালের নারী কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। বেশ কয়েক মাস আগে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর স্ত্রীর সঙ্গে কায়সার কামালের পরকীয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ কারণে ওই নারীর স্বামী কর্তৃক তিনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মামলার আসামি হিসেবে কয়েক দিন হাজতবাসও করে এসেছেন। মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও ফুটেজ এখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল এবং তা আমার সংরক্ষণেও রয়েছে।
দেশের পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অন্যতম মর্যাদাবান প্রতিষ্ঠান। এই সংগঠনে জাতীয়তাবাদী সমর্থক আইনজীবীদের শক্ত অবস্থানের বিষয়টি নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। কখনো পূর্ণ প্যানেলে, কখনো সভাপতি-সম্পাদকসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে, আবার কখনো সভাপতি অথবা সম্পাদক পদসহ উল্লেখযোগ্য পদে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করে আসছেন। নির্বাচনী কৌশলগত ভুলেই হোক, কিংবা অন্য যেকোনো কারণে এবার সভাপতিসহ মোট পাঁচটি পদে তাঁরা জয়লাভ করেছেন।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এর আগে সাতবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এবারই প্রথম সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করলেন। সেদিক দিয়ে বিচার করলে এটা তাঁর জন্য এক বিরাট সাফল্য ও সম্মানের বিষয়। কিন্তু জয়লাভ করার পর দল থেকে কেন তাঁকে দায়িত্ব নিতে নিষেধ করা হলো, তা অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়।
কেউ কেউ অবশ্য বলেন, বিএনপির ওপর এখন ‘বর্জন-ভূত’ আছর করেছে। তারা ইদানীং সব ব্যাপারেই ‘বর্জনেই সমাধান’তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। তারা জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে শাসক দলকে নির্বাচনী মাঠে ‘ওয়াকওভার’ দিয়েছে, এখন উপজেলা নির্বাচনের প্রশ্নেও সেই বর্জন জপমালা জপছে। আবার ভারতীয় পণ্য বর্জনের কোরাসে গলা মিলিয়ে সৃষ্টি করছে হাস্যকর পরিবেশ।
ভারতীয় অরবিন্দ আদি কাপড়ের ফিনফিনে পাঞ্জাবি গায়ে নেতা যখন সে দেশের পণ্য বর্জনের কথা বলেন, তখন সেই প্রাচীন ঢাকাইয়া কৌতুকটি মনে পড়ে, ‘আস্তে কন ছাব, হুনলে ঘোড়ায় ভি হাছব।’ এই বর্জন থেকে তারা কী অর্জন করতে চায়, তা রীতিমতো ট্রিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। কেননা, এ ধরনের বর্জনে যে কিছুই অর্জন করা যায় না, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, আইনজীবীদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং অন্যরা কেন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না?অর্জিত বিজয়ের ফসল ঘরে তোলা থেকে বিরত থেকে কী ফায়দা তুলতে চায় বিএনপি? তা ছাড়া, দলের একজন যুগ্ম মহাসচিবকে হাইকমান্ডের অনুমতি ব্যতিরেকে সহযোগী একটি সংগঠনের পদ থেকে এভাবে অব্যাহতি দেওয়া কতটা যুক্তিসংগত?
এটা এখনো প্রকাশ্যে আসেনি কায়সার কামাল মাহবুব উদ্দিন খোকনকে অব্যাহতিপত্র দেওয়ার আগে মূল দল বিএনপির স্থায়ী কমিটি বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়েছিলেন কি না। ফোরামের নিষেধ অমান্য করে দায়িত্ব নিয়ে খোকন কি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন? যদি তা করে থাকেন, তাহলে শুধু আইনজীবী ফোরাম কেন, তাঁকে তো মূল দল বিএনপি থেকেই বহিষ্কার করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি।
সুতরাং বোঝা যায়, মাহবুব উদ্দিন খোকনের অপরাধ ততটা গুরুতর নয়; বরং এটাই সত্য যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে খোকন সঠিক কাজ করেছেন। অন্তত দেশের সর্বোচ্চ আইন-অঙ্গনে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব জীবিত রাখলেন।
অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন, কেন মাহবুব উদ্দিন খোকনের গর্দানের ওপর অব্যাহতির খড়্গ নেমে এল। বিএনপিকে যতটুকু জানি, তাতে এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে তিনি দলের কোনো একটি শক্তিধর গ্রুপের কোপানলে পড়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ায় মাহবুব উদ্দিন খোকন জাতীয় পর্যায়ে ভিন্ন উচ্চতায় আসীন হয়েছেন—সন্দেহ নেই। কেউ কেউ এটাও মনে করেন যে বর্তমানে দলের যুগ্ম মহাসচিবের পদে থাকা খোকন হয়তো সামনে ‘সিনিয়র’ কোনো পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন।
তাতে কারও কারও ‘বাড়া ভাতে ছাই’ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর সে জন্যই তাঁর সামনের পথে ‘মান্দার কাঁটা’ বিছিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে বিজয়ী হওয়ার পরও তাঁকে ওই পদের দায়িত্ব নেওয়া থেকে নিবৃত্ত রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে ব্যারিস্টার খোকন হিসাবে ভুল করেননি।দলের সস্তা আবেগ ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বলি হয়ে মর্যাদার আসনে উপবিষ্ট হওয়ার সুযোগ নষ্ট করেননি।
এখন বিচার্য বিষয়, কায়সার কামালকে প্রকাশ্যে নাবালক, অর্বাচীন ও কুলাঙ্গার বলে অভিহিত করা মাহবুব উদ্দিন খোকনের উচিত হয়েছে কি না। অনেকেই মনে করেন, তাঁর মতো একজন সিনিয়র আইনজ্ঞ ও রাজনীতিকের একজন জুনিয়রকে এ রকম কদর্য ভাষায় আক্রমণ সমীচীন হয়নি। পার্লামেন্টারি রাজনীতিতে অভিজ্ঞ ব্যারিস্টার খোকন কেন এসব ‘আন পার্লামেন্টারি’ শব্দ প্রয়োগ করলেন, তা বোধগম্য নয়।
ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে কারও বিরুদ্ধে শিষ্টাচারবহির্ভূত ভাষা প্রয়োগ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবে কায়সার কামালকে নাবালক বলে অভিহিত করে ব্যারিস্টার খোকন বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের একটি নেতিবাচক দিক উন্মোচন করে দিয়েছেন বলে মনে করেন সাবেক এক ছাত্রদল নেতা। তিনি বললেন, একটু যদি গভীর দৃষ্টিতে তাকান, তাহলে বিএনপির সর্বস্তরে এখন নাবালকদের রাজত্ব দেখতে পাবেন।
রাজনীতিতে নাবালকেরাই এখন দলটির নেতৃত্ব কবজা করে দোর্দণ্ড প্রতাপে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। দলের হাইকমান্ডের কাছে অভিজ্ঞ, দক্ষ এবং প্রাজ্ঞ নেতাদের চেয়ে নাবালকদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তাই কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলা পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে রাজনৈতিক নাবালকদের প্ল্যান্টেশন (রোপণ) চলছে। কোথাও কোথাও আবার এই রোপণের জন্য পুরোনো বৃক্ষগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে বিএনপি নামের রাজনৈতিক বাগানটি যে ছায়াবৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে, সেদিকে বাগান-কর্তৃপক্ষের খেয়াল নেই।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে