স্বপ্না রেজা
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি পড়ার সুফল যেমন আছে, কুফলও আছে। সহজ করে বললে দাঁড়ায়—এমন একটা বিষয় পড়লে লাভ ও লোকসান দুটোই হয়। যখন শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন যিনি শিক্ষা দিতেন, তাঁকে এবং নিজেকেও কোনোভাবেই স্বাভাবিক মনে হতো না।
আশ্চর্য রহস্যঘেরা মানুষের জীবন। কতই না জানা ও অজানার ভাঁজ। গোপন ও অগোপন আচরণ। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে যেমন মানবজীবনের বিকাশের ধারা উপস্থাপিত হয়, জানা যায় মায়ের গর্ভে প্রস্ফুটিত হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত মানুষের বিকাশের প্রতিটি ধাপ, তেমনি জানা যায় তার পরতে পরতে অস্বাভাবিকতার লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য। সংযুক্ত থাকে নানা ধরনের মানসিক বৈকল্যের সম্ভাবনার ইঙ্গিত। এই সব পড়ে ও জেনে কখনোই কাউকে স্বাভাবিক মানুষ মনে হতো না, নিজেকে তো নয়ই। মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ মনে হতো না।
যা হোক, লাভ হয়েছে, এমন একটা বিষয় পড়ে ব্যক্তির আচরণগত সমস্যা, যেমন—দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব, চিন্তা-চেতনা ইত্যাদি সম্পর্কে এক রকম ধারণা পেয়ে যাই প্রায় ক্ষেত্রে এবং সেটা সেই ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায়। আর লোকসানটা হলো, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সন্ধান পাওয়া কঠিন হয়ে যাওয়া। বুঝতে পারা সম্ভব বলে তেমন কাউকে পেয়ে ওঠা আর হয় না। ব্যক্তির ওপর আস্থা ও ভরসার জায়গাটা ক্ষীণ হয়ে আসে। সবাইকে মানসিকভাবে সুস্থ বলে ভাবাটা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে প্রায়ই মানুষ চিনতে পারার ঝামেলায় পড়তে হয়। তখন একধরনের হতাশা ও বিষাদ পেয়ে বসে।
ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব কিংবা মানুষ ও মনুষ্যত্ব—এই শব্দগুলো সমাজে বহুল প্রচলিত। কমবেশি সবাই অন্যের সম্বোধনে, সম্ভাষণে, মূল্যায়নে ব্যবহার করে থাকেন এবং সেটা প্রয়োজন মাফিক। কিংবা অপ্রয়োজনেও। যার যত বেশি প্রয়োজনবোধ, তার ও তাদের এই সব শব্দের ব্যবহার বেশি। মানবজীবনের অভিধানে এই শব্দগুলো যতটা না মর্যাদা ও ভাব নিয়ে বসে থাকে, বাস্তবে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই শব্দের অপব্যবহার, অপপ্রয়োগ করা হয়। কারণ, প্রয়োজন কথাটা এখন আর সমষ্টির স্বার্থ বা কল্যাণে ব্যবহার হয় না। প্রয়োজন শব্দটা ব্যবহৃত হয় সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে, গোষ্ঠীস্বার্থে। ব্যক্তি তার ব্যক্তিস্বার্থেই অন্যকে সন্তুষ্ট করার পরিকল্পনা ও পাঁয়তারা করে। জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে বেছে নেয়। ফলে যে বস্তুত যা নয়, তার সম্পর্কে সেটাই বলা হয়। যার ভেতরে ন্যূনতম মনুষ্যত্ব নেই, তাকে সমাজের মহামানব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। নেতিবাচক মনোভাবের ব্যক্তিকে ইতিবাচক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। সমাজে এখন সেই সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে—কে কীভাবে লাভবান হবে কিংবা হতে পারে। বিবেক বা আদর্শের জায়গায় কেউ আর থাকছে না। মজার বিষয় হলো, বিবেক ও আদর্শহীন হয়ে যারা সমাজে বিচরণ করছে, তারা কিন্তু বুঝতে পারে না যে, তাদের বাকিরা সহজেই বুঝতে পারে এবং তাদের গ্রহণযোগ্যতা এই বাকিদের কাছে কমে গেছে কিংবা যাচ্ছে।
তবে দিনে দিনে যে পরিবর্তন দেখা যায় তা হলো, মানুষ অন্যের অপেক্ষায় না থেকে নিজের ঢোল নিজেই পেটায়। সুযোগ পেলে বা থাকলে নিজেকে মনের মাধুরী মিশিয়ে উপস্থাপন করে। সাধারণত এদের ভেতরে ও বাইরে দুই চিত্র। মানে দ্বৈততা নিয়েই এরা সমাজে বিচরণ করে। যেমন—ঘরের নারীর প্রতি এরা দায়িত্বহীন ও নির্যাতনকারী, অথচ অন্য নারীর প্রতি এরা মাত্রাতিরিক্ত দায়িত্ববান ও সহনশীল। আবার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এরা আত্মনিবেদিত হয়ে সমাজে পরিচিত হয়, কিন্তু বাস্তবে এরা ব্রিটিশদের চাইতেও ভয়ংকর চরিত্রের হয়ে থাকে। কোথাও তাদের নৈতিকতার স্বাক্ষর নেই, যা আছে ওপরে ওপরে এবং মুখের বুলিতে। এরা পারলে দরিদ্র মানুষের হক মেরে খায়। এক ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলছিল, গরিবের বন্ধু বলে নিজেকে দাবি করে, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের জন্য আবেদন করে পুরস্কারও পায়, কিন্তু বাস্তবে যে লোকটা গরিবের কাজের অজুহাতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খায়, সেই সত্য বলার সাহস কজন মানুষ রাখে? এই শ্রেণির মানুষ টাকার গন্ধ ছাড়া নড়াচড়া করে না। অথচ এরাই গরিবের বন্ধু।
সাইকোলজিতে একটা শব্দ আছে, সেটা হলো সাইকোপ্যাথিক। যারা ভেতরে এক রূপ আর বাইরে আরেক রূপ, তারা মূলত সমাজবিরোধী। এই সমাজবিরোধীরা হলো সাইকোপ্যাথিক। এরা প্রকাশ্যে যারা খুন করে, অপরাধ করে তাদের চাইতেও ভয়ংকর। কারণ, এদের সহজে চেনা যায় না। সাধারণ মানুষ চিনতে পারে না। মুখোশ পরে চলে এরা। সাধারণের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকে। উপযুক্ত শিক্ষার অভাব, সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা না হওয়া, অপসংস্কৃতির আগ্রাসন, রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা, দেশের ইতিহাস যথাযথ ও সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং তার প্রচার না হওয়া, পারিবারিক কাঠামোর দুর্বলতা ইত্যাদি কারণে ব্যক্তির ভেতরে আচরণগত বৈকল্যের সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়। চিন্তা-চেতনার অসুস্থতা কখনোই কোনো ব্যক্তিকে ইতিবাচকভাবে কোনো কিছু দেখতে সহায়তা করে না। আর এই চিন্তা-চেতনার অসুস্থতা সৃষ্টি হয় পরিবেশ ও পরিবেশের উপকরণ থেকে। বলতে দ্বিধা নেই, যেকোনো পরিবেশে যে বিষয়টি মুখ্য হয়ে থাকে, তা হলো সুবিধাভোগ এবং তা ন্যায় কিংবা অন্যায় যেভাবেই হোক। অতি সুবিধাভোগ ও সুবিধাপ্রাপ্তির অসুস্থ দৌড় এখন সমাজে। ফলে প্রকৃত মনুষ্যত্ববোধ দেখা যায় না।
মিথ্যা কথা বলা একটা মানসিক অসুস্থতা। অথচ মানুষ জেনে-বুঝেই মিথ্যা বলে। মিথ্যা কথা বলার প্রবণতা বেড়ে গেছে। প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে নৈতিকতার অভাব যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে আধুনিকতায় জীবনযাপনের অতি সহজ ও সরলীকরণের উপায়সমূহ।
আগে যখন প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না (যেমন—সেলফোনের ব্যবহার ছিল না), তখন মানুষ সত্য বলায় বাধ্য ছিল। সেলফোন সেই বাধ্যবাধকতা থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছে। এখন সে বরিশালে গিয়েও বলতে পারে যে ঢাকায় অবস্থান করছে। নানান ধরনের সামাজিক অপরাধও সংঘটিত হয় সেলফোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাসী, চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও অপরাধীদের সক্রিয় হতে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার অহরহ ও নিয়মিত। এক কথায়, সমাজকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনায় সেলফোন ব্যক্তির অন্যতম ডিভাইসে পরিণত হয়েছে। ডিভাইসের প্রতি আসক্তি ব্যক্তির সামাজিক সম্পর্কের ওপর মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব ফেলে। সম্পর্ক ভাঙনের ও একাকিত্বের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরকীয়ার মতো একটা সামাজিক ব্যাধিকে সমাজে সংক্রমিত হতে সহায়তা করেছে সোশ্যাল মিডিয়া, যা হাতের মুঠোয় থাকা ডিভাইসের মাধ্যমে সম্ভব হয়ে থাকে। বৈশিষ্ট্যগত কারণে ব্যক্তির ভেতরে কামনা-বাসনা থাকেই। এই কামনা-বাসনাকে বেপরোয়া ও সীমাহীন করে তোলে প্রযুক্তির ব্যবহার। একটা সময় ছিল, যখন মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো রাতভর ফ্রি টাইম চালু রেখেছিল। এতে তরুণ সমাজ রাত জেগে সবার অগোচরে তার গোপন যোগাযোগে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। মানসিক সুস্থতার কথা তখন ভাবা হয়নি। ব্যবসাই মুখ্য ছিল। এখনো এমন অনেক কিছু আছে চারপাশে, যা মানসিক সুস্থতা নয়, অসুস্থতার কারণ হয়ে থাকছে।
ব্যক্তির ভেতরে অসংগতি ও অসম্পূর্ণতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার পরিণামই হলো সামাজিক অবক্ষয়। সুস্থতা দিয়ে অসুস্থতাকে জয় কিংবা সুরক্ষা দিয়ে অরক্ষিত না হওয়ার প্রত্যয়ই মানবজীবনের জন্য অতীব জরুরি। সবাই মিলে সেই কাজটি করি—ভালো মানুষ খুঁজি, ভালো মানুষ গড়ি!
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি পড়ার সুফল যেমন আছে, কুফলও আছে। সহজ করে বললে দাঁড়ায়—এমন একটা বিষয় পড়লে লাভ ও লোকসান দুটোই হয়। যখন শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন যিনি শিক্ষা দিতেন, তাঁকে এবং নিজেকেও কোনোভাবেই স্বাভাবিক মনে হতো না।
আশ্চর্য রহস্যঘেরা মানুষের জীবন। কতই না জানা ও অজানার ভাঁজ। গোপন ও অগোপন আচরণ। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে যেমন মানবজীবনের বিকাশের ধারা উপস্থাপিত হয়, জানা যায় মায়ের গর্ভে প্রস্ফুটিত হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত মানুষের বিকাশের প্রতিটি ধাপ, তেমনি জানা যায় তার পরতে পরতে অস্বাভাবিকতার লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য। সংযুক্ত থাকে নানা ধরনের মানসিক বৈকল্যের সম্ভাবনার ইঙ্গিত। এই সব পড়ে ও জেনে কখনোই কাউকে স্বাভাবিক মানুষ মনে হতো না, নিজেকে তো নয়ই। মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ মনে হতো না।
যা হোক, লাভ হয়েছে, এমন একটা বিষয় পড়ে ব্যক্তির আচরণগত সমস্যা, যেমন—দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব, চিন্তা-চেতনা ইত্যাদি সম্পর্কে এক রকম ধারণা পেয়ে যাই প্রায় ক্ষেত্রে এবং সেটা সেই ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায়। আর লোকসানটা হলো, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সন্ধান পাওয়া কঠিন হয়ে যাওয়া। বুঝতে পারা সম্ভব বলে তেমন কাউকে পেয়ে ওঠা আর হয় না। ব্যক্তির ওপর আস্থা ও ভরসার জায়গাটা ক্ষীণ হয়ে আসে। সবাইকে মানসিকভাবে সুস্থ বলে ভাবাটা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে প্রায়ই মানুষ চিনতে পারার ঝামেলায় পড়তে হয়। তখন একধরনের হতাশা ও বিষাদ পেয়ে বসে।
ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব কিংবা মানুষ ও মনুষ্যত্ব—এই শব্দগুলো সমাজে বহুল প্রচলিত। কমবেশি সবাই অন্যের সম্বোধনে, সম্ভাষণে, মূল্যায়নে ব্যবহার করে থাকেন এবং সেটা প্রয়োজন মাফিক। কিংবা অপ্রয়োজনেও। যার যত বেশি প্রয়োজনবোধ, তার ও তাদের এই সব শব্দের ব্যবহার বেশি। মানবজীবনের অভিধানে এই শব্দগুলো যতটা না মর্যাদা ও ভাব নিয়ে বসে থাকে, বাস্তবে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই শব্দের অপব্যবহার, অপপ্রয়োগ করা হয়। কারণ, প্রয়োজন কথাটা এখন আর সমষ্টির স্বার্থ বা কল্যাণে ব্যবহার হয় না। প্রয়োজন শব্দটা ব্যবহৃত হয় সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে, গোষ্ঠীস্বার্থে। ব্যক্তি তার ব্যক্তিস্বার্থেই অন্যকে সন্তুষ্ট করার পরিকল্পনা ও পাঁয়তারা করে। জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে বেছে নেয়। ফলে যে বস্তুত যা নয়, তার সম্পর্কে সেটাই বলা হয়। যার ভেতরে ন্যূনতম মনুষ্যত্ব নেই, তাকে সমাজের মহামানব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। নেতিবাচক মনোভাবের ব্যক্তিকে ইতিবাচক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। সমাজে এখন সেই সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে—কে কীভাবে লাভবান হবে কিংবা হতে পারে। বিবেক বা আদর্শের জায়গায় কেউ আর থাকছে না। মজার বিষয় হলো, বিবেক ও আদর্শহীন হয়ে যারা সমাজে বিচরণ করছে, তারা কিন্তু বুঝতে পারে না যে, তাদের বাকিরা সহজেই বুঝতে পারে এবং তাদের গ্রহণযোগ্যতা এই বাকিদের কাছে কমে গেছে কিংবা যাচ্ছে।
তবে দিনে দিনে যে পরিবর্তন দেখা যায় তা হলো, মানুষ অন্যের অপেক্ষায় না থেকে নিজের ঢোল নিজেই পেটায়। সুযোগ পেলে বা থাকলে নিজেকে মনের মাধুরী মিশিয়ে উপস্থাপন করে। সাধারণত এদের ভেতরে ও বাইরে দুই চিত্র। মানে দ্বৈততা নিয়েই এরা সমাজে বিচরণ করে। যেমন—ঘরের নারীর প্রতি এরা দায়িত্বহীন ও নির্যাতনকারী, অথচ অন্য নারীর প্রতি এরা মাত্রাতিরিক্ত দায়িত্ববান ও সহনশীল। আবার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এরা আত্মনিবেদিত হয়ে সমাজে পরিচিত হয়, কিন্তু বাস্তবে এরা ব্রিটিশদের চাইতেও ভয়ংকর চরিত্রের হয়ে থাকে। কোথাও তাদের নৈতিকতার স্বাক্ষর নেই, যা আছে ওপরে ওপরে এবং মুখের বুলিতে। এরা পারলে দরিদ্র মানুষের হক মেরে খায়। এক ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলছিল, গরিবের বন্ধু বলে নিজেকে দাবি করে, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের জন্য আবেদন করে পুরস্কারও পায়, কিন্তু বাস্তবে যে লোকটা গরিবের কাজের অজুহাতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খায়, সেই সত্য বলার সাহস কজন মানুষ রাখে? এই শ্রেণির মানুষ টাকার গন্ধ ছাড়া নড়াচড়া করে না। অথচ এরাই গরিবের বন্ধু।
সাইকোলজিতে একটা শব্দ আছে, সেটা হলো সাইকোপ্যাথিক। যারা ভেতরে এক রূপ আর বাইরে আরেক রূপ, তারা মূলত সমাজবিরোধী। এই সমাজবিরোধীরা হলো সাইকোপ্যাথিক। এরা প্রকাশ্যে যারা খুন করে, অপরাধ করে তাদের চাইতেও ভয়ংকর। কারণ, এদের সহজে চেনা যায় না। সাধারণ মানুষ চিনতে পারে না। মুখোশ পরে চলে এরা। সাধারণের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকে। উপযুক্ত শিক্ষার অভাব, সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা না হওয়া, অপসংস্কৃতির আগ্রাসন, রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা, দেশের ইতিহাস যথাযথ ও সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং তার প্রচার না হওয়া, পারিবারিক কাঠামোর দুর্বলতা ইত্যাদি কারণে ব্যক্তির ভেতরে আচরণগত বৈকল্যের সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়। চিন্তা-চেতনার অসুস্থতা কখনোই কোনো ব্যক্তিকে ইতিবাচকভাবে কোনো কিছু দেখতে সহায়তা করে না। আর এই চিন্তা-চেতনার অসুস্থতা সৃষ্টি হয় পরিবেশ ও পরিবেশের উপকরণ থেকে। বলতে দ্বিধা নেই, যেকোনো পরিবেশে যে বিষয়টি মুখ্য হয়ে থাকে, তা হলো সুবিধাভোগ এবং তা ন্যায় কিংবা অন্যায় যেভাবেই হোক। অতি সুবিধাভোগ ও সুবিধাপ্রাপ্তির অসুস্থ দৌড় এখন সমাজে। ফলে প্রকৃত মনুষ্যত্ববোধ দেখা যায় না।
মিথ্যা কথা বলা একটা মানসিক অসুস্থতা। অথচ মানুষ জেনে-বুঝেই মিথ্যা বলে। মিথ্যা কথা বলার প্রবণতা বেড়ে গেছে। প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে নৈতিকতার অভাব যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে আধুনিকতায় জীবনযাপনের অতি সহজ ও সরলীকরণের উপায়সমূহ।
আগে যখন প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না (যেমন—সেলফোনের ব্যবহার ছিল না), তখন মানুষ সত্য বলায় বাধ্য ছিল। সেলফোন সেই বাধ্যবাধকতা থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছে। এখন সে বরিশালে গিয়েও বলতে পারে যে ঢাকায় অবস্থান করছে। নানান ধরনের সামাজিক অপরাধও সংঘটিত হয় সেলফোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাসী, চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও অপরাধীদের সক্রিয় হতে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার অহরহ ও নিয়মিত। এক কথায়, সমাজকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনায় সেলফোন ব্যক্তির অন্যতম ডিভাইসে পরিণত হয়েছে। ডিভাইসের প্রতি আসক্তি ব্যক্তির সামাজিক সম্পর্কের ওপর মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব ফেলে। সম্পর্ক ভাঙনের ও একাকিত্বের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরকীয়ার মতো একটা সামাজিক ব্যাধিকে সমাজে সংক্রমিত হতে সহায়তা করেছে সোশ্যাল মিডিয়া, যা হাতের মুঠোয় থাকা ডিভাইসের মাধ্যমে সম্ভব হয়ে থাকে। বৈশিষ্ট্যগত কারণে ব্যক্তির ভেতরে কামনা-বাসনা থাকেই। এই কামনা-বাসনাকে বেপরোয়া ও সীমাহীন করে তোলে প্রযুক্তির ব্যবহার। একটা সময় ছিল, যখন মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো রাতভর ফ্রি টাইম চালু রেখেছিল। এতে তরুণ সমাজ রাত জেগে সবার অগোচরে তার গোপন যোগাযোগে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। মানসিক সুস্থতার কথা তখন ভাবা হয়নি। ব্যবসাই মুখ্য ছিল। এখনো এমন অনেক কিছু আছে চারপাশে, যা মানসিক সুস্থতা নয়, অসুস্থতার কারণ হয়ে থাকছে।
ব্যক্তির ভেতরে অসংগতি ও অসম্পূর্ণতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার পরিণামই হলো সামাজিক অবক্ষয়। সুস্থতা দিয়ে অসুস্থতাকে জয় কিংবা সুরক্ষা দিয়ে অরক্ষিত না হওয়ার প্রত্যয়ই মানবজীবনের জন্য অতীব জরুরি। সবাই মিলে সেই কাজটি করি—ভালো মানুষ খুঁজি, ভালো মানুষ গড়ি!
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৬ ঘণ্টা আগে