অজয় দাশগুপ্ত
কোনোভাবেই রবীন্দ্রনাথের গানের কথা বিকৃত করা যায় না। এটা বাঙালির প্রাণের আরাম, আত্মার শান্তির জায়গা। এই শান্তি কেড়ে নেওয়ার শক্তি মমতা দিদির তো বটেই, কোনো রাজনীতিকেরও নেই। যাঁরা তা করতে চেয়েছিলেন, তাঁরা কেউ সার্থক হননি। আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি তারা আসলে মনে মনে একটু বেশি বাঙালি। বাংলাদেশে বা বাংলা ভাষার যেকোনো রাজ্যে কি হচ্ছে না হচ্ছে, তা নিয়ে অপার আগ্রহ আমাদের। বাঙালি হওয়ার এক আপ্রাণ চেষ্টা থাকে প্রবাসীদের। হয়তো সে কারণে বাংলা বা বাঙালির ওপর আঘাত আমাদের ব্যথিত করে। মাঝে মাঝে দ্রোহী করে তোলে। কিন্তু মানতে হবে সমস্যা সমাধানের বীজতলা হচ্ছে বাংলা ভাষার দেশ—যার ভাষা বাংলা, যার জনগণের সিংহভাগ বাঙালি। কথাগুলো বলার কারণ, রাজনীতি যখন সর্বগ্রাসী আর সবকিছু দখল নিতে উদ্যত, তখন আমাদের অস্তিত্বও সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।
আমরা মনে করি সমস্যা শুধু আমাদের দেশে। বাংলাদেশের মানুষ বড্ড স্পর্শকাতর। ভালো কি মন্দ, সে আলোচনায় যাব না, তবে এই ভাবাবেগ আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। ভাষা বাঁচানোর যে আবেগ, তার ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটি ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ আর সংগ্রামের মূলমন্ত্র ছিল ভাষা। আজকের রাজনীতি যত একমুখী আর যা-ই বলুক না কেন, বাংলা ভাষা, বাংলা শিল্প সংস্কৃতির জোর আর শক্তিতেই মূলত রাজনীতি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস পেয়েছিল। সেই সূত্রে আমরা একমাত্র বাংলা ভাষাভাষী রাষ্ট্রের নাগরিক। এই মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলাদেশই আমাদের বিশেষ অধিকার দিয়েছে। অধিকার দিয়েছে বাংলা, বাঙালির যেকোনো অপমানে প্রতিবাদমুখর হতে, রুখে দাঁড়াতে।
আমাদের বদ্ধমূল ধারণা, দেশের রাজনীতির মতো নোংরা পরিবেশ-পরিস্থিতি আর কোথাও বিরাজ করে না। এটা ঠিক, লুটপাট, নির্যাতন, উত্তেজনাপ্রবণ এক অচলায়তনের ভেতর বসবাস করে দেশের মানুষ। যেখানে নেতা মানেই ভয়ংকর। হাতে গোনা দু-একজন বাদ দিলে বাকিদের মানুষ চেনে না। চিনতে আগ্রহীও নয়। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং বর্তমান বাস্তবতায় দেশ ও সমাজ বুদ্ধিবৃত্তি শূন্য হওয়ার পথে হলেও আমাদের কিছু কিছু কাজ অর্জন আর বোধ প্রখর।
কিছুদিন আগে সংগীতজ্ঞ এ আর রহমানের কম্পোজিশনে জাতীয় কবি নজরুলের ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি ভাইরাল হয়েছিল। সেই ঘটনার ঢেউ আছড়ে পড়েছিল পদ্মা নদীর তীরে। সে জোয়ারের উত্তাল সময়ে আমরা মানুষের ভালোবাসা ও গানের জন্য যে দরদ দেখেছি তা তুলনাহীন। সব বাদানুবাদ বা প্রতিবাদ আমি সমর্থন করিনি। করবও না। কিন্তু এটা মানি, অন্তর থেকে মানুষ তা করেছে। জাতীয় কবির প্রতি ভালোবাসায় এ কাজ হয়েছে। আমাদের জাতীয় সংগীতের স্রষ্টা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির মহান ও কালজয়ী কবি। যাঁর গান না হলে আমাদের চলে না। সবাই জানি, একা রবীন্দ্রনাথই আঁকড়ে আছেন সংগীত ভুবন। বছরের পর বছর, কালের পর কাল তাঁর সুরের ধারা বয়ে চলেছে। এই বিশ্বকবি নিজে বিশ্বাস করতেন—আর কিছু টিকুক বা না টিকুক, তাঁর গান টিকে যাবে। এই মানুষটির গানের বাণী নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনীতি।
শুধু বাংলাদেশে নয়, রাজনীতি ওপার বাংলায়ও পচে গেছে। শুধু পচে গেছে বললে ভুল হবে, ওই বাংলায় এখন তা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসমর্থিত নেতা। এটা মানতে হবে, তাঁদের দেশে ঠিকমতো ভোট হয়। মানুষ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। সে ভোটে মমতাদি কয়েকবার জেতায় এখন তাঁর মস্তিষ্কে নতুন পোকা ঢুকেছে। কবিতা, গান, ভাষণ সব বিষয়ে নতুন নতুন ঘটনা তৈরি ও কৌতুকের পর এবার তাঁর নজর পড়েছে রবীন্দ্রনাথের গানের ওপর। ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ এই বিখ্যাত গানটি নিয়ে যুদ্ধে নেমেছেন মমতাদি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে যেদিন রাখিবন্ধন উৎসব করেছিলেন হিন্দু-মুসলমানের হাতে রাখি পরিয়ে দিয়ে, সে উপলক্ষেই তিনি লিখেছিলেন ‘বাংলার মাটি বাংলার জল বাংলার বায়ু, বাংলার ফল/ পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান’ গানটি। গানটিতে ‘বাঙালির পণ বাঙালির আশা’ এবং ‘বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন’ যে চরণগুলোতে আছে, সেখানে বাঙালি শব্দটি বদলিয়ে ‘বাংলার পণ বাংলার আশা’ ইত্যাদি করা যায় কি না, তা ভেবে দেখার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রাখিবন্ধনের জন্য রবীন্দ্রনাথ যখন গানটি লিখেছিলেন, তখন তিনি সব সমাজকে নিয়ে কথা বলেছিলেন, যাঁরা বাংলায় কথা বলেন। কিন্তু এখন বাংলায় বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায়, ধর্মের মানুষ বাস করেন। তিনি বেঁচে থাকলে বলতেন “বাংলার”।’
তাই ‘বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন’-এর জায়গায় ‘বাংলার প্রাণ বাংলার মন বাংলার ঘরে যত ভাইবোন’ ব্যবহার করা যায় কি না, সেই মতামত তিনি চেয়েছেন। কিন্তু মতামতের তোয়াক্কা তিনি থোড়াই করেন! বিধানসভায় তাঁর মতো করে গানটি গেয়ে এখন এটি রাজ্য সংগীত হিসেবে ব্যবহার করার ঘোষণা দিয়েছেন দিদি। তাঁর বিধানসভা আসনের সামনের সারিতে দণ্ডায়মান কবি ব্রাত্য বসু আর পেছনে দণ্ডায়মান রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের চেহারা দেখে মনে হলো শুধু বাংলাদেশে নয়, স্তাবক এখন উভয় বাংলায় অসহায়।
কেউ কথা বলে না। কেউ না। কথায় কথায় রাস্তায় নামা অপর্ণা সেন, বাক্যবাগীশ কবীর সুমন, চিরবিদ্রোহী জীবন পলায়নমুখী নচিকেতা সবাই কি ঘুমে? না ভাতা লোভ ও ভয়ে লেজ গুটিয়ে বসে? পোষ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত কি কানে শোনেন এখন? নব্য বধির বাবুল সুপ্রিয় কি রবীন্দ্রনাথের গান করেন না? কোথায় জয়তী, ইন্দ্রাণী, শ্রাবণী, ইমন, শ্রীকান্ত? কোথায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ?
ওই যে বললাম, বাঙালি হিসেবে আমাদের প্রাণে লাগে। আমরাই সংগ্রাম করে রবীন্দ্রনাথকে প্রতিষ্ঠা করেছি। নিষিদ্ধ কবিগুরু ফিরে এসেছেন জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ নিয়ে। আসল কথা হলো, এভাবে গান বিকৃত করাটা অন্যায়। আজ এই আবদার মানলে কাল আরেক শাসক এসে বলবেন, কবিগুরুর লেখায় আছে ‘দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে...’ পরিবর্তন করতে হবে। কারণ এ গান হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই গায়। এমন চলতে থাকলে কোনো মনীষীর কোনো লেখাই আর অবিকৃত থাকবে না। মমতার জনপ্রিয়তা সাময়িক। একদিন তাঁর রাজত্ব শেষ হবে। তখনো রবীন্দ্রনাথ থাকবেন; যেমন তিনি ব্রিটিশ রাজ থেকে ভারতে আছেন, বাংলাদেশে আছেন।
এসব বিতর্কের অবসান চাই। কথায় বলে, ‘পাওয়ার টেনডস টু করাপট অ্যান্ড অ্যাবসলিউট পাওয়ার করাপটস অ্যাবসলিউটলি’ (ক্ষমতা দুর্নীতিগ্রস্ত হয় এবং পরম ক্ষমতা একেবারে দূষিত করে)। মাথা খারাপ করার মতো ক্ষমতা আর স্পর্ধা পেলে এমন করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু দিদি ভুল জায়গায় হাত দিয়েছেন। কোনোভাবেই রবীন্দ্রনাথের গানের কথা বিকৃত করা যায় না। এটা বাঙালির প্রাণের আরাম, আত্মার শান্তির জায়গা। এই শান্তি কেড়ে নেওয়ার শক্তি দিদির তো বটেই, কোনো রাজনীতিকেরও নেই। যাঁরা তা করতে চেয়েছিলেন, তাঁরা কেউ সার্থক হননি। দিদিও পারবেন বলে মনে হয় না।রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলতেন, ‘বিধির বাঁধন কাটবে তুমি এমন শক্তিমান/ তুমি কি এমন শক্তিমান!’
কোনোভাবেই রবীন্দ্রনাথের গানের কথা বিকৃত করা যায় না। এটা বাঙালির প্রাণের আরাম, আত্মার শান্তির জায়গা। এই শান্তি কেড়ে নেওয়ার শক্তি মমতা দিদির তো বটেই, কোনো রাজনীতিকেরও নেই। যাঁরা তা করতে চেয়েছিলেন, তাঁরা কেউ সার্থক হননি। আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি তারা আসলে মনে মনে একটু বেশি বাঙালি। বাংলাদেশে বা বাংলা ভাষার যেকোনো রাজ্যে কি হচ্ছে না হচ্ছে, তা নিয়ে অপার আগ্রহ আমাদের। বাঙালি হওয়ার এক আপ্রাণ চেষ্টা থাকে প্রবাসীদের। হয়তো সে কারণে বাংলা বা বাঙালির ওপর আঘাত আমাদের ব্যথিত করে। মাঝে মাঝে দ্রোহী করে তোলে। কিন্তু মানতে হবে সমস্যা সমাধানের বীজতলা হচ্ছে বাংলা ভাষার দেশ—যার ভাষা বাংলা, যার জনগণের সিংহভাগ বাঙালি। কথাগুলো বলার কারণ, রাজনীতি যখন সর্বগ্রাসী আর সবকিছু দখল নিতে উদ্যত, তখন আমাদের অস্তিত্বও সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।
আমরা মনে করি সমস্যা শুধু আমাদের দেশে। বাংলাদেশের মানুষ বড্ড স্পর্শকাতর। ভালো কি মন্দ, সে আলোচনায় যাব না, তবে এই ভাবাবেগ আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। ভাষা বাঁচানোর যে আবেগ, তার ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটি ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ আর সংগ্রামের মূলমন্ত্র ছিল ভাষা। আজকের রাজনীতি যত একমুখী আর যা-ই বলুক না কেন, বাংলা ভাষা, বাংলা শিল্প সংস্কৃতির জোর আর শক্তিতেই মূলত রাজনীতি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস পেয়েছিল। সেই সূত্রে আমরা একমাত্র বাংলা ভাষাভাষী রাষ্ট্রের নাগরিক। এই মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলাদেশই আমাদের বিশেষ অধিকার দিয়েছে। অধিকার দিয়েছে বাংলা, বাঙালির যেকোনো অপমানে প্রতিবাদমুখর হতে, রুখে দাঁড়াতে।
আমাদের বদ্ধমূল ধারণা, দেশের রাজনীতির মতো নোংরা পরিবেশ-পরিস্থিতি আর কোথাও বিরাজ করে না। এটা ঠিক, লুটপাট, নির্যাতন, উত্তেজনাপ্রবণ এক অচলায়তনের ভেতর বসবাস করে দেশের মানুষ। যেখানে নেতা মানেই ভয়ংকর। হাতে গোনা দু-একজন বাদ দিলে বাকিদের মানুষ চেনে না। চিনতে আগ্রহীও নয়। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং বর্তমান বাস্তবতায় দেশ ও সমাজ বুদ্ধিবৃত্তি শূন্য হওয়ার পথে হলেও আমাদের কিছু কিছু কাজ অর্জন আর বোধ প্রখর।
কিছুদিন আগে সংগীতজ্ঞ এ আর রহমানের কম্পোজিশনে জাতীয় কবি নজরুলের ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি ভাইরাল হয়েছিল। সেই ঘটনার ঢেউ আছড়ে পড়েছিল পদ্মা নদীর তীরে। সে জোয়ারের উত্তাল সময়ে আমরা মানুষের ভালোবাসা ও গানের জন্য যে দরদ দেখেছি তা তুলনাহীন। সব বাদানুবাদ বা প্রতিবাদ আমি সমর্থন করিনি। করবও না। কিন্তু এটা মানি, অন্তর থেকে মানুষ তা করেছে। জাতীয় কবির প্রতি ভালোবাসায় এ কাজ হয়েছে। আমাদের জাতীয় সংগীতের স্রষ্টা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির মহান ও কালজয়ী কবি। যাঁর গান না হলে আমাদের চলে না। সবাই জানি, একা রবীন্দ্রনাথই আঁকড়ে আছেন সংগীত ভুবন। বছরের পর বছর, কালের পর কাল তাঁর সুরের ধারা বয়ে চলেছে। এই বিশ্বকবি নিজে বিশ্বাস করতেন—আর কিছু টিকুক বা না টিকুক, তাঁর গান টিকে যাবে। এই মানুষটির গানের বাণী নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনীতি।
শুধু বাংলাদেশে নয়, রাজনীতি ওপার বাংলায়ও পচে গেছে। শুধু পচে গেছে বললে ভুল হবে, ওই বাংলায় এখন তা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসমর্থিত নেতা। এটা মানতে হবে, তাঁদের দেশে ঠিকমতো ভোট হয়। মানুষ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। সে ভোটে মমতাদি কয়েকবার জেতায় এখন তাঁর মস্তিষ্কে নতুন পোকা ঢুকেছে। কবিতা, গান, ভাষণ সব বিষয়ে নতুন নতুন ঘটনা তৈরি ও কৌতুকের পর এবার তাঁর নজর পড়েছে রবীন্দ্রনাথের গানের ওপর। ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ এই বিখ্যাত গানটি নিয়ে যুদ্ধে নেমেছেন মমতাদি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে যেদিন রাখিবন্ধন উৎসব করেছিলেন হিন্দু-মুসলমানের হাতে রাখি পরিয়ে দিয়ে, সে উপলক্ষেই তিনি লিখেছিলেন ‘বাংলার মাটি বাংলার জল বাংলার বায়ু, বাংলার ফল/ পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান’ গানটি। গানটিতে ‘বাঙালির পণ বাঙালির আশা’ এবং ‘বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন’ যে চরণগুলোতে আছে, সেখানে বাঙালি শব্দটি বদলিয়ে ‘বাংলার পণ বাংলার আশা’ ইত্যাদি করা যায় কি না, তা ভেবে দেখার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রাখিবন্ধনের জন্য রবীন্দ্রনাথ যখন গানটি লিখেছিলেন, তখন তিনি সব সমাজকে নিয়ে কথা বলেছিলেন, যাঁরা বাংলায় কথা বলেন। কিন্তু এখন বাংলায় বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায়, ধর্মের মানুষ বাস করেন। তিনি বেঁচে থাকলে বলতেন “বাংলার”।’
তাই ‘বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন’-এর জায়গায় ‘বাংলার প্রাণ বাংলার মন বাংলার ঘরে যত ভাইবোন’ ব্যবহার করা যায় কি না, সেই মতামত তিনি চেয়েছেন। কিন্তু মতামতের তোয়াক্কা তিনি থোড়াই করেন! বিধানসভায় তাঁর মতো করে গানটি গেয়ে এখন এটি রাজ্য সংগীত হিসেবে ব্যবহার করার ঘোষণা দিয়েছেন দিদি। তাঁর বিধানসভা আসনের সামনের সারিতে দণ্ডায়মান কবি ব্রাত্য বসু আর পেছনে দণ্ডায়মান রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের চেহারা দেখে মনে হলো শুধু বাংলাদেশে নয়, স্তাবক এখন উভয় বাংলায় অসহায়।
কেউ কথা বলে না। কেউ না। কথায় কথায় রাস্তায় নামা অপর্ণা সেন, বাক্যবাগীশ কবীর সুমন, চিরবিদ্রোহী জীবন পলায়নমুখী নচিকেতা সবাই কি ঘুমে? না ভাতা লোভ ও ভয়ে লেজ গুটিয়ে বসে? পোষ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত কি কানে শোনেন এখন? নব্য বধির বাবুল সুপ্রিয় কি রবীন্দ্রনাথের গান করেন না? কোথায় জয়তী, ইন্দ্রাণী, শ্রাবণী, ইমন, শ্রীকান্ত? কোথায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ?
ওই যে বললাম, বাঙালি হিসেবে আমাদের প্রাণে লাগে। আমরাই সংগ্রাম করে রবীন্দ্রনাথকে প্রতিষ্ঠা করেছি। নিষিদ্ধ কবিগুরু ফিরে এসেছেন জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ নিয়ে। আসল কথা হলো, এভাবে গান বিকৃত করাটা অন্যায়। আজ এই আবদার মানলে কাল আরেক শাসক এসে বলবেন, কবিগুরুর লেখায় আছে ‘দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে...’ পরিবর্তন করতে হবে। কারণ এ গান হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই গায়। এমন চলতে থাকলে কোনো মনীষীর কোনো লেখাই আর অবিকৃত থাকবে না। মমতার জনপ্রিয়তা সাময়িক। একদিন তাঁর রাজত্ব শেষ হবে। তখনো রবীন্দ্রনাথ থাকবেন; যেমন তিনি ব্রিটিশ রাজ থেকে ভারতে আছেন, বাংলাদেশে আছেন।
এসব বিতর্কের অবসান চাই। কথায় বলে, ‘পাওয়ার টেনডস টু করাপট অ্যান্ড অ্যাবসলিউট পাওয়ার করাপটস অ্যাবসলিউটলি’ (ক্ষমতা দুর্নীতিগ্রস্ত হয় এবং পরম ক্ষমতা একেবারে দূষিত করে)। মাথা খারাপ করার মতো ক্ষমতা আর স্পর্ধা পেলে এমন করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু দিদি ভুল জায়গায় হাত দিয়েছেন। কোনোভাবেই রবীন্দ্রনাথের গানের কথা বিকৃত করা যায় না। এটা বাঙালির প্রাণের আরাম, আত্মার শান্তির জায়গা। এই শান্তি কেড়ে নেওয়ার শক্তি দিদির তো বটেই, কোনো রাজনীতিকেরও নেই। যাঁরা তা করতে চেয়েছিলেন, তাঁরা কেউ সার্থক হননি। দিদিও পারবেন বলে মনে হয় না।রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলতেন, ‘বিধির বাঁধন কাটবে তুমি এমন শক্তিমান/ তুমি কি এমন শক্তিমান!’
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪৪ মিনিট আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
১ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
১ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ ঘণ্টা আগে