নুসরাত জাহান শুচি
আমার বান্ধবীর এক ছোট বোন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আগেই সেখানকার এক সিনিয়র আপুর সঙ্গে মেসেঞ্জারে কথা বলে। সেই আপু জানিয়ে দেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নিয়ম। ফেসবুকে নিজের বায়োডাটা কীভাবে দিতে হবে সেটি নাকি তাঁরাই বলে দেবেন। আবার তাঁদের সঙ্গে ‘বাংলিশ’-এ কথা বলা যাবে না। মেয়েটি এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখতে পারেনি। এরপর তার পরবর্তী দিনগুলো কেমন যাবে, তা নিয়েই সে শঙ্কিত।
শৈশবের গণ্ডি পেরিয়ে যখনই কেউ কৈশোরে পা রাখে, তখন বড় ভাই, কাজিন বা পাশের বাড়ির কোনো আপুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে বাড়িতে আসতে দেখে নিজের অজান্তেই স্বপ্ন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। ভাবতে থাকে, কবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। এরপর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও সব শেষে ভর্তি নামক যুদ্ধ জয় করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমন যায় নবীনদের প্রথম পদচারণ? তাঁদের সেই স্বপ্ন কতটা পূর্ণতা পায়?
প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার পরই শুরু হয় র্যাগিং নামক আতঙ্ক! বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই যেন নবীনদের শিক্ষক। তাঁদের ‘ম্যানার’ শেখানোর দায়িত্ব যেন সিনিয়ররা নিয়ে নেন। নবীনেরা প্রায় সময় শুনে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, ‘ক্যাম্পাসের কুকুরটাও তোমার সিনিয়র। তার কাছেও তোমাকে শিখতে হবে।’
এ ছাড়া কীভাবে কথা বলতে হবে, কতবার সালাম দিতে হবে, কোন আপুর কাছে গিয়ে পরিচয় দিতে হবে, কীভাবে গান শোনাতে হবে—আরও কত কিছু!
এখানেই শেষ নয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকে টর্চার সেল। সেখানেই চলে রাতভর ম্যানার শেখানোর ক্লাস। আবার কেউ আপত্তি করে বসলে শীতের রাতে পুকুরে নামিয়ে দেওয়া বা বালতি বালতি কাপড় ধুতে দেওয়া শাস্তির আরও অনেক অভিনব পন্থা তো রয়েছেই।
এমনই এক টর্চার সেলের শিকার বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ। আবরারের মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিল। কিছুটা পরিবর্তনও এসেছিল। কিন্তু বাঙালির যেন কোনো বিষয় নিয়েই বেশি দিন মাথা ঘামানো তাদের কর্ম নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র আপু-ভাইয়ারাও আবার আগের মতো ‘ম্যানার’ শেখাতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
অথচ প্রথমবারের মতো পরিবার ছেড়ে আসা ছেলেমেয়েগুলো জীবনযুদ্ধে পা রাখেন। তাঁর সঙ্গে হাজারো দায়িত্ব-কর্তব্য চোখের পলকেই তাঁদের উচ্ছ্বাসকে চিন্তায় বদলে দেয়। কোথায় থাকতে হবে, কী খাবে, কী পরতে হবে—কিছুই তাঁরা জানেন না। এমন পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থী অথই জলে পড়ে। সে স্কুল-কলেজ থেকে ম্যানার শিখেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছে। কিন্তু জীবনযুদ্ধ কী, কীভাবে টিকে থাকতে হয়, সে জানে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ব্যাচের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের ম্যানার শেখানোর দায়িত্ব না নিয়ে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কীভাবে নিতে হয়, তা শেখানো উচিত ছিল। নতুন শহরে কীভাবে চলতে হয়, তা শেখানো উচিত ছিল। এই দায়িত্বগুলো নিজ ইচ্ছায় কোনো সিনিয়রকে নিতে দেখা যায় না। কিন্তু তাঁদের সালামের মহড়া দেওয়া হয়। |তাঁদের শেখানো হয় চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা বেয়াদবি। এটিই নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি।
ঝরনার মতো উদ্যম, হিমালয়ের মতো সুউচ্চ আর তেজোদ্দীপ্ত সূর্যের মতো টগবগে তরুণদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাঁদের শিক্ষিত ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম কারখানা বিশ্ববিদ্যালয়। একটি দেশ ও জাতির ধারক ও বাহক তরুণ প্রজন্ম। নিজেকে গড়ে তোলার সময় যখন তাঁরা ভাবতে পারত দেশ ও জাতির প্রয়োজনে কীভাবে নিজেকে উৎসর্গ করবেন, ঠিক সেই সময়ে তাঁদের প্রয়োজন পথ নির্দেশনা, সঠিক পরিকল্পনা; যা তাদের নতুন আঙ্গিকে পথচলা শুরু করতে সাহায্য করবে। কিন্তু প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ব্যবধানটা বরাবরের মতোই অপূরণীয়। এ ক্ষেত্রে সবার আগে পাশে দাঁড়ানোর কথা ছিল তাঁদেরই সিনিয়রদের। হয়তো অনেকে চেষ্টা করেন, কিন্তু সংখ্যাটা খুবই কম। আইনস্টাইনের নামে প্রচলিত, যা আইনস্টাইন বলেননি, ‘পাগলামো হলো একই কাজ বারবার করে যাওয়া আর ভিন্ন ফল আশা করা।’ আমাদের বর্তমান অবস্থাও ঠিক তেমনই।
আমার বান্ধবীর এক ছোট বোন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আগেই সেখানকার এক সিনিয়র আপুর সঙ্গে মেসেঞ্জারে কথা বলে। সেই আপু জানিয়ে দেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নিয়ম। ফেসবুকে নিজের বায়োডাটা কীভাবে দিতে হবে সেটি নাকি তাঁরাই বলে দেবেন। আবার তাঁদের সঙ্গে ‘বাংলিশ’-এ কথা বলা যাবে না। মেয়েটি এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখতে পারেনি। এরপর তার পরবর্তী দিনগুলো কেমন যাবে, তা নিয়েই সে শঙ্কিত।
শৈশবের গণ্ডি পেরিয়ে যখনই কেউ কৈশোরে পা রাখে, তখন বড় ভাই, কাজিন বা পাশের বাড়ির কোনো আপুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে বাড়িতে আসতে দেখে নিজের অজান্তেই স্বপ্ন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। ভাবতে থাকে, কবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। এরপর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও সব শেষে ভর্তি নামক যুদ্ধ জয় করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমন যায় নবীনদের প্রথম পদচারণ? তাঁদের সেই স্বপ্ন কতটা পূর্ণতা পায়?
প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার পরই শুরু হয় র্যাগিং নামক আতঙ্ক! বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই যেন নবীনদের শিক্ষক। তাঁদের ‘ম্যানার’ শেখানোর দায়িত্ব যেন সিনিয়ররা নিয়ে নেন। নবীনেরা প্রায় সময় শুনে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, ‘ক্যাম্পাসের কুকুরটাও তোমার সিনিয়র। তার কাছেও তোমাকে শিখতে হবে।’
এ ছাড়া কীভাবে কথা বলতে হবে, কতবার সালাম দিতে হবে, কোন আপুর কাছে গিয়ে পরিচয় দিতে হবে, কীভাবে গান শোনাতে হবে—আরও কত কিছু!
এখানেই শেষ নয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকে টর্চার সেল। সেখানেই চলে রাতভর ম্যানার শেখানোর ক্লাস। আবার কেউ আপত্তি করে বসলে শীতের রাতে পুকুরে নামিয়ে দেওয়া বা বালতি বালতি কাপড় ধুতে দেওয়া শাস্তির আরও অনেক অভিনব পন্থা তো রয়েছেই।
এমনই এক টর্চার সেলের শিকার বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ। আবরারের মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিল। কিছুটা পরিবর্তনও এসেছিল। কিন্তু বাঙালির যেন কোনো বিষয় নিয়েই বেশি দিন মাথা ঘামানো তাদের কর্ম নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র আপু-ভাইয়ারাও আবার আগের মতো ‘ম্যানার’ শেখাতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
অথচ প্রথমবারের মতো পরিবার ছেড়ে আসা ছেলেমেয়েগুলো জীবনযুদ্ধে পা রাখেন। তাঁর সঙ্গে হাজারো দায়িত্ব-কর্তব্য চোখের পলকেই তাঁদের উচ্ছ্বাসকে চিন্তায় বদলে দেয়। কোথায় থাকতে হবে, কী খাবে, কী পরতে হবে—কিছুই তাঁরা জানেন না। এমন পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থী অথই জলে পড়ে। সে স্কুল-কলেজ থেকে ম্যানার শিখেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছে। কিন্তু জীবনযুদ্ধ কী, কীভাবে টিকে থাকতে হয়, সে জানে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ব্যাচের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের ম্যানার শেখানোর দায়িত্ব না নিয়ে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কীভাবে নিতে হয়, তা শেখানো উচিত ছিল। নতুন শহরে কীভাবে চলতে হয়, তা শেখানো উচিত ছিল। এই দায়িত্বগুলো নিজ ইচ্ছায় কোনো সিনিয়রকে নিতে দেখা যায় না। কিন্তু তাঁদের সালামের মহড়া দেওয়া হয়। |তাঁদের শেখানো হয় চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা বেয়াদবি। এটিই নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি।
ঝরনার মতো উদ্যম, হিমালয়ের মতো সুউচ্চ আর তেজোদ্দীপ্ত সূর্যের মতো টগবগে তরুণদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাঁদের শিক্ষিত ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম কারখানা বিশ্ববিদ্যালয়। একটি দেশ ও জাতির ধারক ও বাহক তরুণ প্রজন্ম। নিজেকে গড়ে তোলার সময় যখন তাঁরা ভাবতে পারত দেশ ও জাতির প্রয়োজনে কীভাবে নিজেকে উৎসর্গ করবেন, ঠিক সেই সময়ে তাঁদের প্রয়োজন পথ নির্দেশনা, সঠিক পরিকল্পনা; যা তাদের নতুন আঙ্গিকে পথচলা শুরু করতে সাহায্য করবে। কিন্তু প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ব্যবধানটা বরাবরের মতোই অপূরণীয়। এ ক্ষেত্রে সবার আগে পাশে দাঁড়ানোর কথা ছিল তাঁদেরই সিনিয়রদের। হয়তো অনেকে চেষ্টা করেন, কিন্তু সংখ্যাটা খুবই কম। আইনস্টাইনের নামে প্রচলিত, যা আইনস্টাইন বলেননি, ‘পাগলামো হলো একই কাজ বারবার করে যাওয়া আর ভিন্ন ফল আশা করা।’ আমাদের বর্তমান অবস্থাও ঠিক তেমনই।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে