বিধান রিবেরু
না গিলে যদি কেবল খাওয়া যেত, তাতেও বোধ হয় আমাদের উদর ও দেহ কিছুটা রক্ষা পেত। তবে সেটা শুধু সুকুমার রায়ের ছড়াতেই সম্ভব: খাচ্ছি কিন্তু গিলছি না। বাস্তবতা হলো, না খেতে চাইলেও আমাদের প্রতিনিয়ত গিলতে হয় বিষ। ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা কয়েক বছর ধরে কমলা ঘর থেকে লাল ঘরেই ওঠানামা করছে; অর্থাৎ ‘ভীষণ খারাপ’ থেকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মাত্রার দূষণে আমরা বড় হচ্ছি, বুড়ো হচ্ছি এবং একটা সময় পর মারা যাচ্ছি। দেহের ভেতর খারাপ বাতাস ঢোকা তো আছেই, আর আছে অস্বাস্থ্যকর খাবার ভক্ষণ। পুরোনো আমলের গ্রিসে একটি কথা চালু ছিল: এমন খাবার খাও যেন তা ওষুধের কাজ করে, এমন ওষুধ খাও যা পেটের ক্ষুধা মেটায়। ঘুরেফিরে কথা একটাই, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং প্রকৃতিতে শাকসবজি-ফলমূলের ভেতরেই শারীরিক অসুখ-বিসুখের নিদান দেওয়া রয়েছে। আমরা আসলে বেমালুম যে মানুষ এই প্রকৃতিরই অংশ এবং বানর বা ভালুকদের কোনো বদ্যি নেই, নেই কোনো হাসপাতাল, তারা প্রকৃতিতে দিব্যি বেঁচেবর্তে আছে। ইদানীং তারা সংকটে রয়েছে মানুষের জন্যই, কারণ মানুষ নিজেদের সভ্য আখ্যা দিয়ে গোটা দুনিয়াকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাজন জঙ্গল উজাড় করে সেখানে গবাদিপশুর খামার বানাচ্ছে। আমিষের চাহিদা মেটানোর নাম করে মানুষের জীবনকে ফেলে দিচ্ছে আরও ঝুঁকিতে।
আদতে আমরা যা খাই, বাজারের শাকসবজি থেকে শুরু করে পুকুরের মাছ কিংবা কসাইখানা ও খামার থেকে আসা মাংস-ডিম, সেগুলো কি আমাদের শরীরের জন্য ভালো? শাকসবজি ফলাতে যে ধরনের কীটনাশক ও সার ব্যবহার করা হয়, ফল পাকাতে যে ওষুধ দেওয়া হয় এবং আমিষের চাহিদা মেটাতে যে ধরনের খাবার মাছ-গবাদিপশু-হাঁস-মুরগিকে খাওয়ানো হয়, সেগুলোর ভেতর থাকা ক্ষতিকর উপাদান আমাদের শরীরে ঢুকছে প্রতিনিয়ত এবং এসব নিয়ে আমাদের ভ্রুক্ষেপ নেই, আমরা চিন্তিতও নই। এর বড় কারণ বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম খাদ্যসামগ্রী কিনতেই লোকে হিমশিম খাচ্ছে। মূল্যস্ফীতিতে কারও সর্বনাশ, কেউ আঙুল ফুলে কলাগাছ। এমন বাস্তবতায় ভালো খাবারের দাম তো আকাশচুম্বী, যা শুধু পাওয়া যায় পাঁচতারকা হোটেলে আর তাদের খদ্দের হতে পারে সে রকম লোকেদের বাড়িতে। তাই লোকে অস্বাস্থ্যকর খাবারই গিলছে শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে। ঢাকায় তো মাছ আর মাংস নয়, ইদানীং মাছের কাঁটা আর মাংসের হাড় বিক্রি হয়। গরিব মানুষ দুধের সাধ ঘোলে মেটাচ্ছে সেসব কিনে। কী করুণ দশা আমাদের, অথচ আমরা দিনরাত উন্নয়নের নামতা মুখস্থ করছি।
ওদিকে মাছ-মাংসের বাইরে গিয়ে, উন্নত বিশ্বে এখন মানুষ ঝুঁকে পড়ছে উদ্ভিজ্জ খাদ্যের দিকে। তারা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিচ্ছে পশুপাখির খামার। প্রোটিনের চাহিদা মাশরুমের কাছ থেকে মেটানো যায়, এমনকি মাংসাশী জিহ্বার জন্যও সেখানে উদ্ভিজ্জ উপাদান থেকে তৈরি হচ্ছে হ্যাম, সসেজ, বেকন প্রভৃতি, শুনলে অবাক হবেন—ডিম পর্যন্ত! বিশ্বাস না হলে দেখে নিতে পারেন ‘ইউ আর হোয়াট ইউ ইট: আ টুইন এক্সপেরিমেন্ট’ প্রামাণ্যচিত্রটি। নানা প্রকার উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ডিম, যা স্বাদ ও গুণে মুরগির পেটের ডিমের চেয়ে কম নয়! তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমাদেরও উচিত উদ্ভিজ্জ খাদ্যের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো, এতে করে পশুপাখির ওপর চাপ কমবে, আর পশুপাখি কম খেলে পরিবেশের ওপর থেকে চাপ কমবে। অধিক খামার মানে অধিক কার্বন ডাই-অক্সাইড। অর্থনৈতিকভাবেও আমরা কিছুটা বেঁচে যাব। কারণ যে হারে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, সেই হারে তো ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে না। শাকসবজি ফলানোর মতো যথেষ্ট জমিজমা এখনো আমাদের রয়েছে। যদিও কৃষিজমি রক্ষার্থে আমাদের পদক্ষেপ অত জোরালো নয়, শিগগিরই সেটা জোরালো করা উচিত। ইদানীং তো ছাদবাগানের সুফল পেয়েছেন অনেকে। কাজেই জমিতে কিংবা ছাদে যদি শাকসবজির চাষাবাদ বাড়ানো যায়, তাতে অনেক দিক দিয়েই আমরা রেহাই পাব বলে আমার বিশ্বাস। স্ট্যানফোর্ডভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সর্বভুক, তাদের তুলনায় যারা নিরামিষভোজী, তাদের কালানুক্রমিক বয়সের বিবেচনায় শারীরিক বয়স কম, অর্থাৎ তাদের শরীরে বয়সের ছাপ সেভাবে পড়ে না। এই নিরীক্ষাটিই দেখানো হয়েছে ‘ইউ আর হোয়াট ইউ ইট’ প্রামাণ্যচিত্রে।
বিষয়টি আসলে জটিল কিছু নয়, আমিষের জন্য যে মাছ ও মাংস খাচ্ছি, সেসব খাবার হজমে আমাদের শরীরকে অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করতে হয়, এর পাশাপাশি আমিষের হাত ধরে নানা প্রকার জীবাণুও শরীরে প্রবেশ করে, সেসবের সঙ্গেও লড়াই করতে হয় শরীরকে। অন্যদিকে, প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠা শাকসবজি আমাদের শরীরে কাজ করে ওষুধের মতো। শুধু প্রাচীন গ্রিসের লোকজনই যে বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে, তা-ই নয়, এই ভারত উপমহাদেশের মুনি-ঋষি-সাধুরাও বিষয়টি জানতেন। সম্প্রতি সোমব্রত সরকারের ‘সাধুর হেঁশেল’ পড়লাম।
কিছু কথা পাঠকের পাতে তুলে দেওয়ার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। সোমব্রত লিখেছেন: ‘সাধু বললেন, শাক হলো লোকঔষধি। আগে গায়ে যখন চুককানি হতো, ঠাকুরমা হেলেঞ্চা ভাজা করে দিতেন। চোখের রোগে হেলেঞ্চা পাতার রস খুব উপকারী। জ্যোতি বাড়ে চোখের।...বেথুয়া শাক বেটে রস করে খেলে অর্শ রোগে উপকার পাওয়া যায়।...পাটপাতা শুকিয়ে রাখতেন ঠাকুরমা একটা ধামার মধ্যে করে। শুক্তো রান্না করলে শুকনো পাটপাতা তিনি তার মধ্যে দিয়ে দিতেন। বলতেন, খাও, গ্যাস অম্বল হবে না পেটে।...পুঁইপাতার রস খেলে দীর্ঘকালীন অনিদ্রা রোগ সারে।’
এ তো কেবল শাক থেকে প্রাপ্ত ঔষধি গুণের বিবরণ। এমন করে দেখলে প্রকৃতিতে থাকা প্রতিটি শাকসবজি ও ফলফলাদিই আসলে শরীরকে সুরক্ষা ও আরোগ্য দিতে বেশ কার্যকারী। প্রাচীন আয়ুর্বেদচর্চা সেই কথাই বলে। তো আমরা সেসব ভুলেটুলে এখন বড় বড় ওষুধ কারখানা বানিয়েছি। করপোরেট বাণিজ্য। খাদ্যাভ্যাস পাল্টে যদি লোকে সুস্থ থাকে, নীরোগ থাকে, তাহলে তো এসব পুঁজিপতির লোকসান। তারা ওষুধ বিক্রি করবে কার কাছে? নিশ্চয়ই বনের বানর ও ভালুকের কাছে নয়। যদিও তাদের পেটও খারাপ হয়, বদহজম হয়। তাদের তো আর বড়ি কিনে খাওয়ার সুযোগ নেই। মুখপোড়া বানর নাকি পেট খারাপ হলে কাঠকয়লা খায়। আর তাতেই সেরে যায় পীড়া। সাপের কামড় খেলে, বেজি নাকি বিষ নামায় ঘৃতকুমারীগাছের পাতা চিবিয়ে। ইংরেজিতে বললে অনেকেই চিনবেন ঘৃতকুমারী কি—অ্যালোভেরা। ভেষজ চিকিৎসায় এই ঘৃতকুমারীর ব্যবহার হয় খ্রিষ্টপূর্ব যুগ থেকেই। অথচ আজ এর দেখা মেলে হাতে গোনা কয়েকজন ফেরিওয়ালার কাছে। তাও এটি ব্যবহার হয় শুধু রূপচর্চার উপাদান হিসেবে। আমরা সত্যি অদ্ভুত!
আজকাল তো বোতলজাত পানি খাওয়ারও জো নেই। মাইক্রোপ্লাস্টিক, অর্থাৎ প্লাস্টিকের অতিক্ষুদ্র কণা আমাদের পেটে গিয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে পুরো শরীরে। আর এর খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে নানাবিধ অসুখ-বিসুখের মাধ্যমে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও আমরা ফেলে দিচ্ছি ঝুঁকির ভেতর। অথচ উন্নত বিশ্বে কলতলার পানি পান করা যায় নির্দ্বিধায়। আমরা পানির কর পরিশোধ করেও পাই না জীবাণুমুক্ত সুপেয় পানি। দেশের নাগরিক যে পয়সা দেওয়ার পরও প্রাপ্য জিনিসটি পাচ্ছে না, তাতে দেনেওলাদের যেমন লজ্জা নেই, ভোক্তা শ্রেণিরও কোনো সচেতনতা নেই। বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় একই দশা। পয়সা ঠিকই দিচ্ছেন, কিন্তু সেবা বা পণ্য পাবেন তলানির কাছাকাছি।
বসবাসের অযোগ্য এক শহর ঢাকা, যেখানে আবার জীবনযাত্রায় ব্যয় টরন্টো কিংবা মন্ট্রিল শহরের মতো, সেই শহরে দিনকে দিন মানুষের ভিড় বাড়ছে। ভারী ভারী নির্মাণকাজ চলছে। এরই ভেতর আমাদের বেঁচে থাকতে হবে, বিশেষ করে যারা দুনিয়ার অন্যত্র দ্বিতীয় আবাসের ব্যবস্থা করিনি। তো এই সংগ্রামী বেঁচে থাকার একটি কৌশলী পদক্ষেপ হতে পারে আমাদের খাদ্যাভ্যাস পাল্টে ফেলা। জীবনযাত্রায় শরীরচর্চা যুক্ত করা। তাতে যদি কিছুটা নিস্তার মেলে।
বিধান রিবেরু, চলচ্চিত্র সমালোচক
না গিলে যদি কেবল খাওয়া যেত, তাতেও বোধ হয় আমাদের উদর ও দেহ কিছুটা রক্ষা পেত। তবে সেটা শুধু সুকুমার রায়ের ছড়াতেই সম্ভব: খাচ্ছি কিন্তু গিলছি না। বাস্তবতা হলো, না খেতে চাইলেও আমাদের প্রতিনিয়ত গিলতে হয় বিষ। ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা কয়েক বছর ধরে কমলা ঘর থেকে লাল ঘরেই ওঠানামা করছে; অর্থাৎ ‘ভীষণ খারাপ’ থেকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মাত্রার দূষণে আমরা বড় হচ্ছি, বুড়ো হচ্ছি এবং একটা সময় পর মারা যাচ্ছি। দেহের ভেতর খারাপ বাতাস ঢোকা তো আছেই, আর আছে অস্বাস্থ্যকর খাবার ভক্ষণ। পুরোনো আমলের গ্রিসে একটি কথা চালু ছিল: এমন খাবার খাও যেন তা ওষুধের কাজ করে, এমন ওষুধ খাও যা পেটের ক্ষুধা মেটায়। ঘুরেফিরে কথা একটাই, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং প্রকৃতিতে শাকসবজি-ফলমূলের ভেতরেই শারীরিক অসুখ-বিসুখের নিদান দেওয়া রয়েছে। আমরা আসলে বেমালুম যে মানুষ এই প্রকৃতিরই অংশ এবং বানর বা ভালুকদের কোনো বদ্যি নেই, নেই কোনো হাসপাতাল, তারা প্রকৃতিতে দিব্যি বেঁচেবর্তে আছে। ইদানীং তারা সংকটে রয়েছে মানুষের জন্যই, কারণ মানুষ নিজেদের সভ্য আখ্যা দিয়ে গোটা দুনিয়াকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাজন জঙ্গল উজাড় করে সেখানে গবাদিপশুর খামার বানাচ্ছে। আমিষের চাহিদা মেটানোর নাম করে মানুষের জীবনকে ফেলে দিচ্ছে আরও ঝুঁকিতে।
আদতে আমরা যা খাই, বাজারের শাকসবজি থেকে শুরু করে পুকুরের মাছ কিংবা কসাইখানা ও খামার থেকে আসা মাংস-ডিম, সেগুলো কি আমাদের শরীরের জন্য ভালো? শাকসবজি ফলাতে যে ধরনের কীটনাশক ও সার ব্যবহার করা হয়, ফল পাকাতে যে ওষুধ দেওয়া হয় এবং আমিষের চাহিদা মেটাতে যে ধরনের খাবার মাছ-গবাদিপশু-হাঁস-মুরগিকে খাওয়ানো হয়, সেগুলোর ভেতর থাকা ক্ষতিকর উপাদান আমাদের শরীরে ঢুকছে প্রতিনিয়ত এবং এসব নিয়ে আমাদের ভ্রুক্ষেপ নেই, আমরা চিন্তিতও নই। এর বড় কারণ বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম খাদ্যসামগ্রী কিনতেই লোকে হিমশিম খাচ্ছে। মূল্যস্ফীতিতে কারও সর্বনাশ, কেউ আঙুল ফুলে কলাগাছ। এমন বাস্তবতায় ভালো খাবারের দাম তো আকাশচুম্বী, যা শুধু পাওয়া যায় পাঁচতারকা হোটেলে আর তাদের খদ্দের হতে পারে সে রকম লোকেদের বাড়িতে। তাই লোকে অস্বাস্থ্যকর খাবারই গিলছে শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে। ঢাকায় তো মাছ আর মাংস নয়, ইদানীং মাছের কাঁটা আর মাংসের হাড় বিক্রি হয়। গরিব মানুষ দুধের সাধ ঘোলে মেটাচ্ছে সেসব কিনে। কী করুণ দশা আমাদের, অথচ আমরা দিনরাত উন্নয়নের নামতা মুখস্থ করছি।
ওদিকে মাছ-মাংসের বাইরে গিয়ে, উন্নত বিশ্বে এখন মানুষ ঝুঁকে পড়ছে উদ্ভিজ্জ খাদ্যের দিকে। তারা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিচ্ছে পশুপাখির খামার। প্রোটিনের চাহিদা মাশরুমের কাছ থেকে মেটানো যায়, এমনকি মাংসাশী জিহ্বার জন্যও সেখানে উদ্ভিজ্জ উপাদান থেকে তৈরি হচ্ছে হ্যাম, সসেজ, বেকন প্রভৃতি, শুনলে অবাক হবেন—ডিম পর্যন্ত! বিশ্বাস না হলে দেখে নিতে পারেন ‘ইউ আর হোয়াট ইউ ইট: আ টুইন এক্সপেরিমেন্ট’ প্রামাণ্যচিত্রটি। নানা প্রকার উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ডিম, যা স্বাদ ও গুণে মুরগির পেটের ডিমের চেয়ে কম নয়! তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমাদেরও উচিত উদ্ভিজ্জ খাদ্যের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো, এতে করে পশুপাখির ওপর চাপ কমবে, আর পশুপাখি কম খেলে পরিবেশের ওপর থেকে চাপ কমবে। অধিক খামার মানে অধিক কার্বন ডাই-অক্সাইড। অর্থনৈতিকভাবেও আমরা কিছুটা বেঁচে যাব। কারণ যে হারে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, সেই হারে তো ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে না। শাকসবজি ফলানোর মতো যথেষ্ট জমিজমা এখনো আমাদের রয়েছে। যদিও কৃষিজমি রক্ষার্থে আমাদের পদক্ষেপ অত জোরালো নয়, শিগগিরই সেটা জোরালো করা উচিত। ইদানীং তো ছাদবাগানের সুফল পেয়েছেন অনেকে। কাজেই জমিতে কিংবা ছাদে যদি শাকসবজির চাষাবাদ বাড়ানো যায়, তাতে অনেক দিক দিয়েই আমরা রেহাই পাব বলে আমার বিশ্বাস। স্ট্যানফোর্ডভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সর্বভুক, তাদের তুলনায় যারা নিরামিষভোজী, তাদের কালানুক্রমিক বয়সের বিবেচনায় শারীরিক বয়স কম, অর্থাৎ তাদের শরীরে বয়সের ছাপ সেভাবে পড়ে না। এই নিরীক্ষাটিই দেখানো হয়েছে ‘ইউ আর হোয়াট ইউ ইট’ প্রামাণ্যচিত্রে।
বিষয়টি আসলে জটিল কিছু নয়, আমিষের জন্য যে মাছ ও মাংস খাচ্ছি, সেসব খাবার হজমে আমাদের শরীরকে অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করতে হয়, এর পাশাপাশি আমিষের হাত ধরে নানা প্রকার জীবাণুও শরীরে প্রবেশ করে, সেসবের সঙ্গেও লড়াই করতে হয় শরীরকে। অন্যদিকে, প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠা শাকসবজি আমাদের শরীরে কাজ করে ওষুধের মতো। শুধু প্রাচীন গ্রিসের লোকজনই যে বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে, তা-ই নয়, এই ভারত উপমহাদেশের মুনি-ঋষি-সাধুরাও বিষয়টি জানতেন। সম্প্রতি সোমব্রত সরকারের ‘সাধুর হেঁশেল’ পড়লাম।
কিছু কথা পাঠকের পাতে তুলে দেওয়ার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। সোমব্রত লিখেছেন: ‘সাধু বললেন, শাক হলো লোকঔষধি। আগে গায়ে যখন চুককানি হতো, ঠাকুরমা হেলেঞ্চা ভাজা করে দিতেন। চোখের রোগে হেলেঞ্চা পাতার রস খুব উপকারী। জ্যোতি বাড়ে চোখের।...বেথুয়া শাক বেটে রস করে খেলে অর্শ রোগে উপকার পাওয়া যায়।...পাটপাতা শুকিয়ে রাখতেন ঠাকুরমা একটা ধামার মধ্যে করে। শুক্তো রান্না করলে শুকনো পাটপাতা তিনি তার মধ্যে দিয়ে দিতেন। বলতেন, খাও, গ্যাস অম্বল হবে না পেটে।...পুঁইপাতার রস খেলে দীর্ঘকালীন অনিদ্রা রোগ সারে।’
এ তো কেবল শাক থেকে প্রাপ্ত ঔষধি গুণের বিবরণ। এমন করে দেখলে প্রকৃতিতে থাকা প্রতিটি শাকসবজি ও ফলফলাদিই আসলে শরীরকে সুরক্ষা ও আরোগ্য দিতে বেশ কার্যকারী। প্রাচীন আয়ুর্বেদচর্চা সেই কথাই বলে। তো আমরা সেসব ভুলেটুলে এখন বড় বড় ওষুধ কারখানা বানিয়েছি। করপোরেট বাণিজ্য। খাদ্যাভ্যাস পাল্টে যদি লোকে সুস্থ থাকে, নীরোগ থাকে, তাহলে তো এসব পুঁজিপতির লোকসান। তারা ওষুধ বিক্রি করবে কার কাছে? নিশ্চয়ই বনের বানর ও ভালুকের কাছে নয়। যদিও তাদের পেটও খারাপ হয়, বদহজম হয়। তাদের তো আর বড়ি কিনে খাওয়ার সুযোগ নেই। মুখপোড়া বানর নাকি পেট খারাপ হলে কাঠকয়লা খায়। আর তাতেই সেরে যায় পীড়া। সাপের কামড় খেলে, বেজি নাকি বিষ নামায় ঘৃতকুমারীগাছের পাতা চিবিয়ে। ইংরেজিতে বললে অনেকেই চিনবেন ঘৃতকুমারী কি—অ্যালোভেরা। ভেষজ চিকিৎসায় এই ঘৃতকুমারীর ব্যবহার হয় খ্রিষ্টপূর্ব যুগ থেকেই। অথচ আজ এর দেখা মেলে হাতে গোনা কয়েকজন ফেরিওয়ালার কাছে। তাও এটি ব্যবহার হয় শুধু রূপচর্চার উপাদান হিসেবে। আমরা সত্যি অদ্ভুত!
আজকাল তো বোতলজাত পানি খাওয়ারও জো নেই। মাইক্রোপ্লাস্টিক, অর্থাৎ প্লাস্টিকের অতিক্ষুদ্র কণা আমাদের পেটে গিয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে পুরো শরীরে। আর এর খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে নানাবিধ অসুখ-বিসুখের মাধ্যমে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও আমরা ফেলে দিচ্ছি ঝুঁকির ভেতর। অথচ উন্নত বিশ্বে কলতলার পানি পান করা যায় নির্দ্বিধায়। আমরা পানির কর পরিশোধ করেও পাই না জীবাণুমুক্ত সুপেয় পানি। দেশের নাগরিক যে পয়সা দেওয়ার পরও প্রাপ্য জিনিসটি পাচ্ছে না, তাতে দেনেওলাদের যেমন লজ্জা নেই, ভোক্তা শ্রেণিরও কোনো সচেতনতা নেই। বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় একই দশা। পয়সা ঠিকই দিচ্ছেন, কিন্তু সেবা বা পণ্য পাবেন তলানির কাছাকাছি।
বসবাসের অযোগ্য এক শহর ঢাকা, যেখানে আবার জীবনযাত্রায় ব্যয় টরন্টো কিংবা মন্ট্রিল শহরের মতো, সেই শহরে দিনকে দিন মানুষের ভিড় বাড়ছে। ভারী ভারী নির্মাণকাজ চলছে। এরই ভেতর আমাদের বেঁচে থাকতে হবে, বিশেষ করে যারা দুনিয়ার অন্যত্র দ্বিতীয় আবাসের ব্যবস্থা করিনি। তো এই সংগ্রামী বেঁচে থাকার একটি কৌশলী পদক্ষেপ হতে পারে আমাদের খাদ্যাভ্যাস পাল্টে ফেলা। জীবনযাত্রায় শরীরচর্চা যুক্ত করা। তাতে যদি কিছুটা নিস্তার মেলে।
বিধান রিবেরু, চলচ্চিত্র সমালোচক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে