আজকের পত্রিকা ডেস্ক
সঞ্চালক: আজকের পত্রিকা আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আপনাদের স্বাগত।
আমাদের আলোচনার বিষয়: করোনার প্রভাব ও ব্যাংকিং খাত। করোনাকালে কেমন ছিল ব্যাংকিং খাত এবং কী কী চ্যালেঞ্জ আছে সামনে—এসব বিষয়ে শুনব। করোনাকালে অর্থনীতি সচল রাখতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। এর প্রায় পুরোটাই ব্যবস্থাপনা করছে ব্যাংকিং খাত। এসব নিয়েই আলোচনা।
আলোচক
ড. মো. গোলাম রহমান
আমরা দেখছি যে, প্রায় ২০ মাসে সারা দেশের সবকিছুতেই একটা স্থবিরতা ছিল। তারপরও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতকে আপনারা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, এটা উল্লেখযোগ্য বিষয়। আজকে আমরা এ বিষয়গুলোই জানতে চাই। আমাদের চিন্তা আছে, সামনে আমরা বিভিন্ন খাত ধরে ধরে এ রকম আলোচনায় যাব। শুরুতেই আপনাদের ডেকেছি, এটা আমাদের সৌভাগ্য। আপনাদের সহযোগিতার জন্য আমি আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ড. শাহ মো. আহসান হাবিব
অর্থ সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মাথায় রাখতে হবে যে, ব্যাংকিং খাত ব্যর্থ হলে পুরো অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আদর্শ মানের থেকে কম পুঁজি সংরক্ষণ করে। এর আগে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পুরো সক্ষমতা এখনো ব্যাংকগুলো রাখে না। তারপরও দেশের সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকগুলো সরকারকে যেভাবে অর্থ সরবরাহ করেছে, তা একটা বিরাট ব্যাপার। সামনে যখন মরিটোরিয়াম বা ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে শিথিলতা বাতিল করা হবে, অনাদায়কৃত ও খেলাপি ঋণ নিয়ে সামগ্রিক একটা স্বচ্ছ হিসাব করা হবে, তখন পুরো বিষয়টা মোকাবিলা করার প্রস্তুতি ব্যাংকগুলো গ্রহণ করেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ফারুক মঈনউদ্দীন
করোনাকালে অনেক কিছুই বন্ধ থাকলেও সচল ছিল ব্যাংক, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত। কৃষকেরা এক দিনের জন্যও খাদ্য উৎপাদন থেকে সরে যাননি। এখন যদি ব্যাংকিং খাতের দিকেই তাকাই তাহলে দেখব, এ খাতের সংকটটা শুরু হয়েছে। যখন মরিটোরিয়াম শেষ হয়ে যাবে, তখনই কিন্তু আসল চিত্রটা দেখা যাবে। শুরুতে অনেকে মনে করেছিলেন প্রণোদনার টাকা মনে হয় আর ফেরত দিতে হবে না। ওই সময় আমি বলেছি, এটা চ্যারিটি নয়, ফেরত দিতে হবে। বড়দের অনেকের প্রয়োজন না থাকলেও সব জায়গা থেকেই প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। আমরা দেখেছি, অনেকে বেশি নিয়েছেন, যাঁদের প্রয়োজন ছিল না। আবার যাঁদের প্রয়োজন ছিল, তাঁদের দিতে পারিনি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে। অথচ তাঁদের দিতে পারিনি। আমি মনে করি এটা আমাদের ব্যর্থতা।
ড. নাজনীন আহমেদ
ব্যাংক নিয়ে করোনার আগেও আলোচনা ছিল। এ খাতের যেসব সমস্যা নিয়ে আগে কথা হয়েছে, সে সমস্যাগুলো কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। এক দিনে এগুলো শেষ হবেও না। মূল কথা হলো, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি কি না? করোনা এসে সমস্যাগুলো আরও প্রকট করেছে। সমাধানের চ্যালেঞ্জটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাংক তো অর্থনীতির লাইফলাইন। ব্যাংক ভালো না চললে, এর প্রভাব অন্য খাতেও পড়তে বাধ্য।
ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা করে একটা ঋণ থাকা দরকার ছিল। আর যেসব শর্তে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, সেখানে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। তাতে আমি দেখছি যে, যাঁদের ক্ষতি হয়েছে বেশি, তাঁদের প্রণোদনা পাওয়ার সম্ভাবনাটা কম। যাঁদের কম ক্ষতি হয়েছে তাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন। এতে ব্যাংকের ঝুঁকিও কম। আমি মনে করি, যাঁদের বেশি ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের মাধ্যমে ওই ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া যায় কি না, তা ভাবা যেতে পারে। তাঁদের কোনো সিড মানিও দেওয়া যেতে পারে। তবে এটা হতে হবে সহজ শর্তে।
অধ্যাপক ড. এম এ বাকী খলিলী
করোনাকালে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রণোদনা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এটা ছিল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে এ ঋণের ঝুঁকিও রয়েছে। মরিটোরিয়াম সুবিধা তুলে দিলে অনেক গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না, এমন ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া পোশাকশিল্পে ক্রয়াদেশ বাতিল হলে তা ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ জন্য ঋণ ব্যবস্থাপনা সঠিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে হয়। তা না হলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ব্যাংকের পুঁজি এবং তারল্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তবে সরকারি ব্যাংকে পুঁজিস্বল্পতা দেখা দিলে তা নিয়ে আমি মোটেই শঙ্কিত নই। কারণ, এসব ব্যাংক সরকারের বিশেষ সুরক্ষায় থাকে। এই সুরক্ষা না থাকলে একদিন অনেক সরকারি ব্যাংক ভেঙে পড়ত। আমার ভয় হয় যে, কোনো অবস্থায় যদি একটা বা দুইটা ব্যাংক ভেঙে পড়ে, তাহলে মূলত পুরো আর্থিক খাতে ধস নেমে আসতে পারে। ঠিক এ জায়গাটিতেই বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। একটা বড় ঋণ, তহবিল এবং তারল্য মনিটরিং করতে হবে। ব্যাংক পরিচালনার ওপর চাপ বাড়ানো উচিত।
রবিউল হোসেন
যেকোনো কাজে পরিকল্পনা দরকার। এ কথা ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও সত্য। কিন্তু আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকিং করি না, এ জন্য ভুল ফলাফল তো আসবেই। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বসে পরিকল্পনা করা হয় এবং তা পরিপত্র আকারে জারি করা হয়, যার আলোকে ভালো ব্যাংকিং করা যায় না।
মাঠপর্যায়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রতিবেদন নিয়ে সেই আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তাহলেই ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সফলতা আসবে। কিন্তু এসব না করে নতুন প্রবণতা হলো বড় বড় ঋণ দেওয়া। আমরা দেখি যে, যত্রতত্র ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং ঋণ দেওয়ার পরে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে না। আর তা করতে না পারার ফলে অধিকাংশ ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এতে সমস্যাটা হলো যে বড় একজন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে বিশাল ক্ষতি হয়। এ জন্য ব্যাংকারদের উচিত ছোট ছোট ঋণ দেওয়া, যাতে ক্ষুদ্র পরিসরে অনেক কর্মসংস্থান হয়। একই জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হবে। এর ফলে দেশের অবস্থার উন্নতি ঘটবে।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান
করোনা মহামারির সময়ে ব্যাংকিং খাত যে ভূমিকা রেখেছে, তা এর আগে কেউ চিন্তাও করেনি। প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঋণ বিতরণের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে সমস্যা হয়নি। ব্যাংক কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণ করেছে। করোনার ঝুঁকিতেও সেবা দিতে গিয়ে অনেক ব্যাংকার মারা গেছেন। আমরা এ সময়টা পার করে আসতে পারায় এখন অর্থনীতি ভালোর দিকে যাচ্ছে।
ব্যাংক ঠিকই ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিচ্ছে। তবে এ ঋণের একটা বড় অংশ যাঁদের দরকার, তা তাঁদের কাছে পৌঁছায় না। এটা একটা বড় সমস্যা। প্রকৃত সুবিধা নিশ্চিত করতে বৃহৎ এবং মাঝারি শিল্পকে অবশ্যই ক্ষুদ্র এবং ছোট শিল্প থেকে আলাদা করতে হবে। আর ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রেও সুবিধাভোগী এবং সুদের হার সুনির্দিষ্ট করতে হবে। আর আমানতের জন্য সুদ, ব্যবস্থাপনা খরচ, মুনাফা থেকে করপোরেট ট্যাক্স ও ঝুঁকি প্রভৃতি বিষয় মাথায় রেখে ব্যাংকিং করতে হয়। ঝুঁকির কারণে ব্যাংক বসেও যেতে পারে। বিশেষ করে মরিটোরিয়াম সুবিধা যখন প্রত্যাহার করা হবে, তখন অবস্থাটা কী হবে? বাংলাদেশ ব্যাংক, স্টেকহোল্ডার এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যাংকারসহ সংশ্লিষ্টদের একসঙ্গে বসে আলোচনা করে এর একটা সমাধান বের করতে হবে।
ড. জামালউদ্দিন আহমেদ
ব্যাংকিং খাত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার। তা না হলে ব্যাংকের ওপর ভর করা অর্থনীতি নিয়ে বেশি দূর আগানো যাবে না। ব্যাংকিং খাতে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংকনির্ভর অর্থ ব্যবস্থাপনা থেকে বের হয়ে ‘ব্যাংক, বন্ড এবং তারল্য বাজার’নির্ভরতা বাড়াতে হবে। আমাদের অর্থনীতি এখনো ডিজিটাল হয়নি। যতটুকু ডিজিটাল হয়েছে তা করোনাকালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এখনই সরকারকে পুঁজিবাজারে ব্যয় বাড়াতে হবে এবং ব্যাংকের ওপর চাপ কমাতে হবে। আর তা করতে না পারলে ব্যাংকগুলোও ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে। এমনকি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠানও সংকটে পড়তে পারে।
ঋণখেলাপি তথা ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকারদের দোষ না দিয়ে ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্প খাতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দিতে হবে। শহর এবং গ্রামভিত্তিক আমানতের সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে গ্রামের মানুষের আমানত যেন শহরের রাঘববোয়ালরা আত্মসাৎ করতে না পারে।
এম এ মান্নান
আসলে ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমি বলার জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি নই। আমি কখনো ব্যাংকে কাজ করিনি, জীবনে কখনো ব্যাংক থেকে ঋণও নিইনি। সুতরাং ব্যাংক বিষয়ে আমি বলার চেয়ে জানতেই বেশি আগ্রহী। এখানে অনেকে ব্যাংকের নানান বিষয়ে কথা বলেছেন। আমি হয়তো দু-একটি বিষয় নিয়ে একটু বলব। করোনায় কী কী সচল ছিল বলতে গিয়ে একজন কৃষি খাতের কথা বলেছেন। আসলে করোনার সময়েও কৃষিতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কৃষক পরিবার থেকে এসেছি বলে নয়, বাস্তবতা হলো আমাদের কৃষিতে একটা বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে। আমি দেখে খুব আশ্চর্য হই যে, সাধারণ কৃষকেরা উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি খুব আনন্দের সঙ্গে, ভালোভাবে ব্যবহার করছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব বা লাভটা সার্বিক অর্থনীতি পাচ্ছে।
প্রণোদনাসহ নানান পদক্ষেপের কারণে আমাদের ক্ষতি হয়তো তেমনটা হয়নি। কিন্তু রীতি বলছে যে, এখানে যাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই টাকাটা ঠিকমতো শোধ করবেন না। তাঁরা সুযোগ নেবেন। এ ব্যাপারে বেশ দক্ষ তাঁরা। তবে আমাদের সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে সরকারকে সবার আগে সাবধান হতে হবে। একটা বিষয় এখানে আমার বলতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাহস আছে। মাঝে মাঝে তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নেন, তা দেখে আমি বিস্মিত হই। ভাবি, এটা কীভাবে সম্ভব? সুতরাং আমার মনে হয়, ভাগ্য, সাহস এবং দক্ষতা দিয়ে আমরা আমাদের সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারব। এখন পর্যন্ত আমরা তেমন একটা অকৃতকার্য হইনি। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ করোনার সংকট কাটিয়ে খুব ভালোভাবেই সামনে এগিয়ে যাবে।
সঞ্চালক: আজকের পত্রিকা আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আপনাদের স্বাগত।
আমাদের আলোচনার বিষয়: করোনার প্রভাব ও ব্যাংকিং খাত। করোনাকালে কেমন ছিল ব্যাংকিং খাত এবং কী কী চ্যালেঞ্জ আছে সামনে—এসব বিষয়ে শুনব। করোনাকালে অর্থনীতি সচল রাখতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। এর প্রায় পুরোটাই ব্যবস্থাপনা করছে ব্যাংকিং খাত। এসব নিয়েই আলোচনা।
আলোচক
ড. মো. গোলাম রহমান
আমরা দেখছি যে, প্রায় ২০ মাসে সারা দেশের সবকিছুতেই একটা স্থবিরতা ছিল। তারপরও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতকে আপনারা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, এটা উল্লেখযোগ্য বিষয়। আজকে আমরা এ বিষয়গুলোই জানতে চাই। আমাদের চিন্তা আছে, সামনে আমরা বিভিন্ন খাত ধরে ধরে এ রকম আলোচনায় যাব। শুরুতেই আপনাদের ডেকেছি, এটা আমাদের সৌভাগ্য। আপনাদের সহযোগিতার জন্য আমি আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ড. শাহ মো. আহসান হাবিব
অর্থ সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মাথায় রাখতে হবে যে, ব্যাংকিং খাত ব্যর্থ হলে পুরো অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আদর্শ মানের থেকে কম পুঁজি সংরক্ষণ করে। এর আগে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পুরো সক্ষমতা এখনো ব্যাংকগুলো রাখে না। তারপরও দেশের সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকগুলো সরকারকে যেভাবে অর্থ সরবরাহ করেছে, তা একটা বিরাট ব্যাপার। সামনে যখন মরিটোরিয়াম বা ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে শিথিলতা বাতিল করা হবে, অনাদায়কৃত ও খেলাপি ঋণ নিয়ে সামগ্রিক একটা স্বচ্ছ হিসাব করা হবে, তখন পুরো বিষয়টা মোকাবিলা করার প্রস্তুতি ব্যাংকগুলো গ্রহণ করেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ফারুক মঈনউদ্দীন
করোনাকালে অনেক কিছুই বন্ধ থাকলেও সচল ছিল ব্যাংক, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত। কৃষকেরা এক দিনের জন্যও খাদ্য উৎপাদন থেকে সরে যাননি। এখন যদি ব্যাংকিং খাতের দিকেই তাকাই তাহলে দেখব, এ খাতের সংকটটা শুরু হয়েছে। যখন মরিটোরিয়াম শেষ হয়ে যাবে, তখনই কিন্তু আসল চিত্রটা দেখা যাবে। শুরুতে অনেকে মনে করেছিলেন প্রণোদনার টাকা মনে হয় আর ফেরত দিতে হবে না। ওই সময় আমি বলেছি, এটা চ্যারিটি নয়, ফেরত দিতে হবে। বড়দের অনেকের প্রয়োজন না থাকলেও সব জায়গা থেকেই প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। আমরা দেখেছি, অনেকে বেশি নিয়েছেন, যাঁদের প্রয়োজন ছিল না। আবার যাঁদের প্রয়োজন ছিল, তাঁদের দিতে পারিনি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে। অথচ তাঁদের দিতে পারিনি। আমি মনে করি এটা আমাদের ব্যর্থতা।
ড. নাজনীন আহমেদ
ব্যাংক নিয়ে করোনার আগেও আলোচনা ছিল। এ খাতের যেসব সমস্যা নিয়ে আগে কথা হয়েছে, সে সমস্যাগুলো কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। এক দিনে এগুলো শেষ হবেও না। মূল কথা হলো, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি কি না? করোনা এসে সমস্যাগুলো আরও প্রকট করেছে। সমাধানের চ্যালেঞ্জটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাংক তো অর্থনীতির লাইফলাইন। ব্যাংক ভালো না চললে, এর প্রভাব অন্য খাতেও পড়তে বাধ্য।
ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা করে একটা ঋণ থাকা দরকার ছিল। আর যেসব শর্তে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, সেখানে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। তাতে আমি দেখছি যে, যাঁদের ক্ষতি হয়েছে বেশি, তাঁদের প্রণোদনা পাওয়ার সম্ভাবনাটা কম। যাঁদের কম ক্ষতি হয়েছে তাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন। এতে ব্যাংকের ঝুঁকিও কম। আমি মনে করি, যাঁদের বেশি ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের মাধ্যমে ওই ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া যায় কি না, তা ভাবা যেতে পারে। তাঁদের কোনো সিড মানিও দেওয়া যেতে পারে। তবে এটা হতে হবে সহজ শর্তে।
অধ্যাপক ড. এম এ বাকী খলিলী
করোনাকালে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রণোদনা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এটা ছিল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে এ ঋণের ঝুঁকিও রয়েছে। মরিটোরিয়াম সুবিধা তুলে দিলে অনেক গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না, এমন ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া পোশাকশিল্পে ক্রয়াদেশ বাতিল হলে তা ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ জন্য ঋণ ব্যবস্থাপনা সঠিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে হয়। তা না হলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ব্যাংকের পুঁজি এবং তারল্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তবে সরকারি ব্যাংকে পুঁজিস্বল্পতা দেখা দিলে তা নিয়ে আমি মোটেই শঙ্কিত নই। কারণ, এসব ব্যাংক সরকারের বিশেষ সুরক্ষায় থাকে। এই সুরক্ষা না থাকলে একদিন অনেক সরকারি ব্যাংক ভেঙে পড়ত। আমার ভয় হয় যে, কোনো অবস্থায় যদি একটা বা দুইটা ব্যাংক ভেঙে পড়ে, তাহলে মূলত পুরো আর্থিক খাতে ধস নেমে আসতে পারে। ঠিক এ জায়গাটিতেই বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। একটা বড় ঋণ, তহবিল এবং তারল্য মনিটরিং করতে হবে। ব্যাংক পরিচালনার ওপর চাপ বাড়ানো উচিত।
রবিউল হোসেন
যেকোনো কাজে পরিকল্পনা দরকার। এ কথা ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও সত্য। কিন্তু আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকিং করি না, এ জন্য ভুল ফলাফল তো আসবেই। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বসে পরিকল্পনা করা হয় এবং তা পরিপত্র আকারে জারি করা হয়, যার আলোকে ভালো ব্যাংকিং করা যায় না।
মাঠপর্যায়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রতিবেদন নিয়ে সেই আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তাহলেই ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সফলতা আসবে। কিন্তু এসব না করে নতুন প্রবণতা হলো বড় বড় ঋণ দেওয়া। আমরা দেখি যে, যত্রতত্র ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং ঋণ দেওয়ার পরে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে না। আর তা করতে না পারার ফলে অধিকাংশ ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এতে সমস্যাটা হলো যে বড় একজন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে বিশাল ক্ষতি হয়। এ জন্য ব্যাংকারদের উচিত ছোট ছোট ঋণ দেওয়া, যাতে ক্ষুদ্র পরিসরে অনেক কর্মসংস্থান হয়। একই জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হবে। এর ফলে দেশের অবস্থার উন্নতি ঘটবে।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান
করোনা মহামারির সময়ে ব্যাংকিং খাত যে ভূমিকা রেখেছে, তা এর আগে কেউ চিন্তাও করেনি। প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঋণ বিতরণের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে সমস্যা হয়নি। ব্যাংক কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণ করেছে। করোনার ঝুঁকিতেও সেবা দিতে গিয়ে অনেক ব্যাংকার মারা গেছেন। আমরা এ সময়টা পার করে আসতে পারায় এখন অর্থনীতি ভালোর দিকে যাচ্ছে।
ব্যাংক ঠিকই ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিচ্ছে। তবে এ ঋণের একটা বড় অংশ যাঁদের দরকার, তা তাঁদের কাছে পৌঁছায় না। এটা একটা বড় সমস্যা। প্রকৃত সুবিধা নিশ্চিত করতে বৃহৎ এবং মাঝারি শিল্পকে অবশ্যই ক্ষুদ্র এবং ছোট শিল্প থেকে আলাদা করতে হবে। আর ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রেও সুবিধাভোগী এবং সুদের হার সুনির্দিষ্ট করতে হবে। আর আমানতের জন্য সুদ, ব্যবস্থাপনা খরচ, মুনাফা থেকে করপোরেট ট্যাক্স ও ঝুঁকি প্রভৃতি বিষয় মাথায় রেখে ব্যাংকিং করতে হয়। ঝুঁকির কারণে ব্যাংক বসেও যেতে পারে। বিশেষ করে মরিটোরিয়াম সুবিধা যখন প্রত্যাহার করা হবে, তখন অবস্থাটা কী হবে? বাংলাদেশ ব্যাংক, স্টেকহোল্ডার এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যাংকারসহ সংশ্লিষ্টদের একসঙ্গে বসে আলোচনা করে এর একটা সমাধান বের করতে হবে।
ড. জামালউদ্দিন আহমেদ
ব্যাংকিং খাত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার। তা না হলে ব্যাংকের ওপর ভর করা অর্থনীতি নিয়ে বেশি দূর আগানো যাবে না। ব্যাংকিং খাতে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংকনির্ভর অর্থ ব্যবস্থাপনা থেকে বের হয়ে ‘ব্যাংক, বন্ড এবং তারল্য বাজার’নির্ভরতা বাড়াতে হবে। আমাদের অর্থনীতি এখনো ডিজিটাল হয়নি। যতটুকু ডিজিটাল হয়েছে তা করোনাকালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এখনই সরকারকে পুঁজিবাজারে ব্যয় বাড়াতে হবে এবং ব্যাংকের ওপর চাপ কমাতে হবে। আর তা করতে না পারলে ব্যাংকগুলোও ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে। এমনকি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠানও সংকটে পড়তে পারে।
ঋণখেলাপি তথা ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকারদের দোষ না দিয়ে ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্প খাতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দিতে হবে। শহর এবং গ্রামভিত্তিক আমানতের সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে গ্রামের মানুষের আমানত যেন শহরের রাঘববোয়ালরা আত্মসাৎ করতে না পারে।
এম এ মান্নান
আসলে ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমি বলার জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি নই। আমি কখনো ব্যাংকে কাজ করিনি, জীবনে কখনো ব্যাংক থেকে ঋণও নিইনি। সুতরাং ব্যাংক বিষয়ে আমি বলার চেয়ে জানতেই বেশি আগ্রহী। এখানে অনেকে ব্যাংকের নানান বিষয়ে কথা বলেছেন। আমি হয়তো দু-একটি বিষয় নিয়ে একটু বলব। করোনায় কী কী সচল ছিল বলতে গিয়ে একজন কৃষি খাতের কথা বলেছেন। আসলে করোনার সময়েও কৃষিতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কৃষক পরিবার থেকে এসেছি বলে নয়, বাস্তবতা হলো আমাদের কৃষিতে একটা বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে। আমি দেখে খুব আশ্চর্য হই যে, সাধারণ কৃষকেরা উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি খুব আনন্দের সঙ্গে, ভালোভাবে ব্যবহার করছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব বা লাভটা সার্বিক অর্থনীতি পাচ্ছে।
প্রণোদনাসহ নানান পদক্ষেপের কারণে আমাদের ক্ষতি হয়তো তেমনটা হয়নি। কিন্তু রীতি বলছে যে, এখানে যাঁরা প্রণোদনা পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই টাকাটা ঠিকমতো শোধ করবেন না। তাঁরা সুযোগ নেবেন। এ ব্যাপারে বেশ দক্ষ তাঁরা। তবে আমাদের সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে সরকারকে সবার আগে সাবধান হতে হবে। একটা বিষয় এখানে আমার বলতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাহস আছে। মাঝে মাঝে তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নেন, তা দেখে আমি বিস্মিত হই। ভাবি, এটা কীভাবে সম্ভব? সুতরাং আমার মনে হয়, ভাগ্য, সাহস এবং দক্ষতা দিয়ে আমরা আমাদের সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারব। এখন পর্যন্ত আমরা তেমন একটা অকৃতকার্য হইনি। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ করোনার সংকট কাটিয়ে খুব ভালোভাবেই সামনে এগিয়ে যাবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে