নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে—এমন দাবি আদায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়াতে ব্যস্ত বিএনপি। বিপরীতে আওয়ামী লীগ অনেকটাই নির্ভার। দলটিতে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী থাকলেও সবাই নিজেদের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু মাঠপর্যায়ে তাঁদের প্রচারণা এখনো চোখে পড়ছে না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ঝিনাইদহ-৩ আসনে (মহেশপুর, কোটচাঁদপুর) দলগুলোর প্রস্তুতির খোঁজ নিয়ে এ চিত্র পাওয়া যায়। ভারত সীমান্তঘেঁষা এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) আওয়ামী লীগের শফিকুল আজম খান চঞ্চল। দুই উপজেলা মিলিয়ে আছে ২টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে কোটচাঁদপুরে ৫ ও মহেশপুরে ইউনিয়ন ১২টি। স্বাধীনতার পর থেকে গত ১১টি নির্বাচনে জয়ী হওয়া এমপিদের সবাই মহেশপুরের বাসিন্দা। ভোটারদের ভাষ্য, এ কারণে এ উপজেলার তুলনায় কোটচাঁদপুর অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। আগামী নির্বাচনে কিছুটা হলেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
এ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে জয়ী বর্তমান ও সাবেক এমপি দুজনের বাড়িই মহেশপুরে। দুই উপজেলাতেই তাঁদের অনুসারী আছেন। তাঁরা দলীয় কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করেন। আগামী নির্বাচনে বর্তমান এমপি শফিকুল আজম খান, সাবেক এমপি ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নবী নেওয়াজের প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরও আছেন শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা, সাবেক এমপি মইনুদ্দিন মিয়াজির ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক সচিব সালাউদ্দীন মিয়াজি এবং মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ।
বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদের একবার নবী নেওয়াজ ও দুবার শফিকুল আজম এমপি হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে শফিকুল আজম বলেন, সাংগঠনিক ও এমপি হিসেবে আগের কাজের মূল্যায়ন করা হলে তিনি মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন।
নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নকাজের বিষয়ে শফিকুল আজম বলেন, সরকারি নানা বরাদ্দ দুই উপজেলাতেই সমানভাবে বণ্টন করা হয়েছে। জনকল্যাণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজও সমানভাবে হয়েছে।
সাবেক এমপি নবী নেওয়াজ বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে জনগণের পাশে থেকে উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। দুই উপজেলাতেই আমার সময়ে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। দল মনোনয়ন দিলে ভোটাররা আমাকেই নির্বাচিত করবেন বলে বিশ্বাস করি।’
নিজ ও বিরোধী দল সম্পর্কে নবী নেওয়াজ বলেন, বিরোধীদের সাংগঠনিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। আর মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সম্পাদকের নেতৃত্বে দল এগিয়ে যাচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় দল প্রস্তুত আছে।
বিএনপির প্রস্তুতি
আগের নির্বাচনগুলোতে এ আসন থেকে জামায়াত ও বিএনপি জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্থানীয় জোটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জামায়াত-বিএনপি আলাদা হয়ে যায়। ওই নির্বাচনে ভরাডুবি হয় বিএনপির। এবারের নির্বাচন ঘিরে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করছে। দলটির নেতারা বলছেন, দাবি আদায়েই এখন তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান বলেন, নির্বাচনী এলাকার ২টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়নের প্রায় সবগুলোতে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে যেকোনো ধরনের আন্দোলন করতে দলের নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত। দল নির্বাচনে গেলে তিনিও মনোনয়ন চাইবেন।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বেশ কয়েকজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে ও মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান।
প্রস্তুতি নিয়ে মোমিনুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করেছেন। দল নির্বাচনে অংশ নিলে অবশ্যই মনোনয়ন চাইবেন।
আওয়ামী লীগ, বিএনপির বাইরে এ আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে আব্দুর রহমান ও জামায়াত থেকে কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মতিয়ার রহমানের সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
তবে মহেশপুর উপজেলা জামায়াতের আমির ফারুক হোসেন বলেছেন, মতিয়ার রহমান নির্বাচন করবেন—এমন সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। কিন্তু দল বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।