মামুনুর রশীদ
এবার ঈদ ও পয়লা বৈশাখ প্রায় কাছাকাছি সময়ে পড়েছে। তাতে গ্রীষ্মের এই দাবদাহে আরও উষ্ণ হয়ে উঠেছে বিপণিবিতান, ফুটপাতের বাজার এবং ছোটখাটো শহর ও উপজেলার বাজারগুলো। এমনকি গ্রাম পর্যায়েও এর একটা প্রভাব লক্ষ করা যায়। সেই সঙ্গে আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈসাবি, বিজু এবং আরও কিছু অনুষ্ঠান। রাজধানীর বাজারে ভিড় প্রচণ্ড, বিকেল থেকে শুরু হয়ে মাঝরাত পর্যন্ত এই বাজার চলতে থাকে। এই গ্রীষ্মের গরমের মধ্যেও কেনাকাটায় আগ্রহী হচ্ছেন অনেক মানুষ। কেউ কেউ রোজা রেখে এই দাবদাহের মধ্যে মার্কেট থেকে মার্কেটে ছুটছেন।
জানা গেল, সোয়া কোটি লোক এবার শহর থেকে গ্রামে যাবে। পরিবহনের অপ্রতুল ব্যবস্থায় এবারও তীব্র যানজট এবং দুর্ঘটনার একটা ছড়াছড়ি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবু মানুষের গ্রামযাত্রার বিরাম নেই। বাংলাদেশের মানুষের গ্রামনীতির কোনো তুলনা নেই। শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করার পরও পালাপার্বণে ঠিকই গ্রামে যাবে মানুষ। অনেক পরিবারেরই গ্রামে বাড়ি আছে কিন্তু সেগুলো তালাবদ্ধ। সেসব বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মাত্র কয়েক দিনের জন্য বাসযোগ্য করে তোলা হয়। দিন কয়েক পর চলে আসে দমবন্ধ করা ম্যাচবাক্সের শহর ঢাকায়।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে, এমনকি পাশের দেশেও ছুটিতে গ্রামে না গিয়ে দেশে-বিদেশে বেড়াতে যায় মানুষ। অবশ্য কারও কারও গ্রামেও যাওয়া হয়। জীবিকার তাগিদে শহরে থাকে এবং ছুটির সময়ে নতুন কোনো আনন্দ আবিষ্কারের স্থান খুঁজে বেড়ায়। সেখান থেকে প্রেরণা নিয়ে ঘরে ফেরে। যে শহরটায় তারা থাকে, সেটিও বাসযোগ্য। আমাদের রাজধানীর মতো এমন দমবন্ধ করা আবাসন নেই, সবুজের সমারোহ নেই, শিশুদের জন্য পার্ক নেই; বিপণিবিতান, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, ক্লিনিক আর স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটা ঠাসা পরিস্থিতি নেই।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে নদীর ওপারে জিনজিরা, শুভাঢ্যায় আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরের ব্যবধানে সেই জায়গাগুলো শহরের চেয়েও বেশি ঘিঞ্জি এবং আবাসের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেখানকার পৌরসভাগুলো বাড়িঘর, কলকারখানা নির্মাণের প্রয়োজনে কোনো আইনকানুনের প্রয়োগ করতে পারেনি। প্রভাবশালী লোকেরা যে যার ইচ্ছেমতো যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ করে পথঘাটকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। জেলা শহরগুলো এবং যেসব শহরে পৌরসভা আছে, সেই সব শহরের নির্মাণ আইনের ক্ষেত্রে যেসব ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তা-ও নেওয়া হয়নি। তাই যেকোনো উপজেলায় এখন প্রচুর যানজট ও অপরিকল্পিতভাবে দোকানপাট, বিপণিবিতান, প্রাইভেট স্কুল-কলেজ গড়ে তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশের যে সৌন্দর্য তা কোথাও পাওয়া যায় না।
বর্তমানে আরেকটা ঝোঁক তৈরি হয়েছে, সেটা হচ্ছে রিসোর্ট বানানো। ফসলি জমি ও দরিদ্র মানুষের ঘরবাড়ি, জায়গাজমি কিনে নব্য ধনিকশ্রেণি গ্রামে অথবা ছোট ছোট শহরতলিতে বিলাসবহুল রিসোর্ট নির্মাণ করছে। বিদেশে টাকা পাচার করার পরেও যে কালোটাকা থাকে, তা দিয়ে কিছু লোক এই রিসোর্টগুলো নির্মাণ করা শুরু করে। শুধু তা-ই নয়, যেকোনো বড় রাস্তার পাশে বড় বড় ফ্যাক্টরি করার প্রবণতা দিগন্ত ঢেকে দিচ্ছে। এই ছোট্ট আয়তনের দেশেও অনেক জায়গা অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। কুয়াকাটা সমুদ্রের পাড়েও একটা বিশাল জায়গাজুড়ে গড়ে উঠতে পারে শিল্প এলাকা। যেখানে রপ্তানিযোগ্য কারখানাগুলো অনায়াসে বিদেশে পণ্য সরবরাহের একটা সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের পাশেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করা যেতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সবকিছুর কেন্দ্র ঢাকা। অসংখ্য কলকারখানা ঢাকা কিংবা ঢাকার আশপাশে নির্মিত হয়ে একটা বড় ধরনের সামাজিক জট তৈরি করছে। ভূমিগ্রাসীরা শহরগুলোকে যেন একটা সোনার খনি হিসেবে পেয়ে গেছে।
সরকার বিভিন্ন সময়ে শুধু রাজধানীর জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা দিয়ে থাকে, কিন্তু সেগুলো প্রভাবিত করাও যেকোনো সিন্ডিকেটের পক্ষে কঠিন কাজ নয়। একদা ধানমন্ডি বসবাসের একটি আদর্শ জায়গা ছিল। পরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট, লেক, কমিউনিটি সেন্টার-স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল—এসবের ব্যবস্থা রেখেই এই আবাসিক এলাকাটি একটি সুস্থ স্থান হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু কালক্রমে এই এলাকা একটি বাণিজ্যিক স্থানে পরিণত হয়েছে। অসংখ্য রেস্তোরাঁ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-ক্লিনিকে এলাকাটি ভরে গেছে। এ বিষয়ে আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী লোকেরা তাদের স্থাপনা গুটিয়ে নেয়নি। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ও তারা অমান্য করে চলেছে।
একই ঘটনার ধারাবাহিকতা সব শহরেই। চট্টগ্রাম শহরটি আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগেও পাহাড়, সমুদ্র, বনানী মিলে একটি অসাধারণ নান্দনিক শহর হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু সেই চট্টগ্রামও কলকারখানা, অপরিকল্পিত পথঘাট এবং ম্যাচবাক্সের অ্যাপার্টমেন্টের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। একদা রেলের শহর চট্টগ্রাম এখন অটোমোবাইলের চলাচলে বিধ্বস্ত, যানজট সেখানেও নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামের পথ ধরে কক্সবাজার ছিল একটি অত্যন্ত চমৎকার প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত। সেখানেও নির্মাণের এমন তীব্র প্রতিযোগিতা যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিঃশেষ হয়ে শহরটি কংক্রিটের স্তূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমুদ্রসৈকত দখল হতে হতে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে এক আবর্জনার ভাগাড়। সেসব স্থানে আমরা যদি সৃজনশীল পথ আবিষ্কার করতে পারতাম, অবশ্যই পৃথিবীর দীর্ঘতম সাগরসৈকতকে রক্ষা করা যেত। বাণিজ্যিকীকরণের প্রভাবে তা ভেস্তে যেতে বসেছে। সেন্ট মার্টিন এতকাল নানা সামুদ্রিক উপাদানে একটি চমৎকার দ্বীপ হিসেবে মানুষকে আনন্দ-বিনোদন দিয়েছে। কিন্তু সে অবস্থা এখন আর নেই।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ইট-কংক্রিটের বিকল্প কিছু নেই। আমরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বসবাসের জন্য নানান প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি বাড়িঘর বা জাতীয় কোনো স্থাপত্যকে অনুসরণ করতে পারতাম। এর জন্য দেশের স্থপতিদের গুরুত্ব দিয়ে যদি শহর পরিকল্পনার দায়িত্ব দেওয়া হতো তাহলে বাংলাদেশ একটি জাতীয় স্থাপত্য পেত। দেশে আকাশচুম্বী অট্টালিকায় বিপণিবিতান গড়ে তোলা হচ্ছে।
মোগলরা এই ঢাকা শহরে সপ্তদশ শতাব্দীতে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্থাপত্যের উদাহরণ দিয়েছিল। ব্রিটিশের আগ্রাসী বিধ্বস্ত পরিকল্পনায় তা হারিয়ে গেছে। রাজনীতিবিদেরা এসবকে কখনোই গুরুত্ব দিতে চাননি। তাঁদের পরিকল্পনায় কোনো নতুন ভাবনা আনেননি। ফলে মানুষ একটু যে শান্তির আশায় গ্রামে যায়, সেখানেও একই প্রবণতা—দালানকোঠা। একটা সময় আসবে, এই আগ্রহও কমে যাবে। মানুষ সব জায়গায়ই শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় থাকতে থাকতে অসংস্কৃতিমান হয়ে উঠবে।
এখনো ঢাকা শহরে পয়লা বৈশাখ হয় রমনার বটমূলে, ভাগ্যিস বটমূলটি এখনো আছে। শহরের বাইরে কতগুলো বটমূল রয়েছে তার হিসাব কেউ দিতে পারবে না। এখনো বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গায় বটমূল আছে, তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব কে নেবে? সরকারের পক্ষে নেওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, সরকারি বন সংরক্ষকেরা রাজনৈতিক শক্তির প্রশ্রয়ে ধ্বংস করে ফেলেছে। নীতিনির্ধারক, প্রভাবশালী মহল এবং রাজনীতিকেরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা মানেন না। একদা সুজলা-সুফলা প্রাকৃতিক নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশকে আমরা কোথায় রেখে যাচ্ছি? সেটা ভাবার একটু অবকাশ যদি সৃষ্টি হতো, তাহলে এই মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার এগুলো অনেক আগেই নির্মিত হতে পারত।
এখনো রাস্তায় আদিম ব্যবস্থায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে, এর কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্রিটিশরা নিষ্ঠুর শোষণ করে নিজের দেশের সম্পদ বাড়িয়ে ভারতবর্ষকে দরিদ্র অবস্থায় রেখে গেল। সেই সঙ্গে রেখে গেল ধর্মের নামে দুই সহিংস জাতি। সেই দারিদ্র্য ও হিংসাকে আমরা বহন করে চলছি যুগের পর যুগ। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল একটি অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র হিসেবে। তার প্রতি সামাজিকদের যে ভূমিকা, তা-ও আমরা পালন করতে পারিনি। সামাজিকেরা বিষয়টি নিয়ে কি ভাববেন?
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
এবার ঈদ ও পয়লা বৈশাখ প্রায় কাছাকাছি সময়ে পড়েছে। তাতে গ্রীষ্মের এই দাবদাহে আরও উষ্ণ হয়ে উঠেছে বিপণিবিতান, ফুটপাতের বাজার এবং ছোটখাটো শহর ও উপজেলার বাজারগুলো। এমনকি গ্রাম পর্যায়েও এর একটা প্রভাব লক্ষ করা যায়। সেই সঙ্গে আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈসাবি, বিজু এবং আরও কিছু অনুষ্ঠান। রাজধানীর বাজারে ভিড় প্রচণ্ড, বিকেল থেকে শুরু হয়ে মাঝরাত পর্যন্ত এই বাজার চলতে থাকে। এই গ্রীষ্মের গরমের মধ্যেও কেনাকাটায় আগ্রহী হচ্ছেন অনেক মানুষ। কেউ কেউ রোজা রেখে এই দাবদাহের মধ্যে মার্কেট থেকে মার্কেটে ছুটছেন।
জানা গেল, সোয়া কোটি লোক এবার শহর থেকে গ্রামে যাবে। পরিবহনের অপ্রতুল ব্যবস্থায় এবারও তীব্র যানজট এবং দুর্ঘটনার একটা ছড়াছড়ি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবু মানুষের গ্রামযাত্রার বিরাম নেই। বাংলাদেশের মানুষের গ্রামনীতির কোনো তুলনা নেই। শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করার পরও পালাপার্বণে ঠিকই গ্রামে যাবে মানুষ। অনেক পরিবারেরই গ্রামে বাড়ি আছে কিন্তু সেগুলো তালাবদ্ধ। সেসব বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মাত্র কয়েক দিনের জন্য বাসযোগ্য করে তোলা হয়। দিন কয়েক পর চলে আসে দমবন্ধ করা ম্যাচবাক্সের শহর ঢাকায়।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে, এমনকি পাশের দেশেও ছুটিতে গ্রামে না গিয়ে দেশে-বিদেশে বেড়াতে যায় মানুষ। অবশ্য কারও কারও গ্রামেও যাওয়া হয়। জীবিকার তাগিদে শহরে থাকে এবং ছুটির সময়ে নতুন কোনো আনন্দ আবিষ্কারের স্থান খুঁজে বেড়ায়। সেখান থেকে প্রেরণা নিয়ে ঘরে ফেরে। যে শহরটায় তারা থাকে, সেটিও বাসযোগ্য। আমাদের রাজধানীর মতো এমন দমবন্ধ করা আবাসন নেই, সবুজের সমারোহ নেই, শিশুদের জন্য পার্ক নেই; বিপণিবিতান, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, ক্লিনিক আর স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটা ঠাসা পরিস্থিতি নেই।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে নদীর ওপারে জিনজিরা, শুভাঢ্যায় আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরের ব্যবধানে সেই জায়গাগুলো শহরের চেয়েও বেশি ঘিঞ্জি এবং আবাসের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেখানকার পৌরসভাগুলো বাড়িঘর, কলকারখানা নির্মাণের প্রয়োজনে কোনো আইনকানুনের প্রয়োগ করতে পারেনি। প্রভাবশালী লোকেরা যে যার ইচ্ছেমতো যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ করে পথঘাটকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। জেলা শহরগুলো এবং যেসব শহরে পৌরসভা আছে, সেই সব শহরের নির্মাণ আইনের ক্ষেত্রে যেসব ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তা-ও নেওয়া হয়নি। তাই যেকোনো উপজেলায় এখন প্রচুর যানজট ও অপরিকল্পিতভাবে দোকানপাট, বিপণিবিতান, প্রাইভেট স্কুল-কলেজ গড়ে তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশের যে সৌন্দর্য তা কোথাও পাওয়া যায় না।
বর্তমানে আরেকটা ঝোঁক তৈরি হয়েছে, সেটা হচ্ছে রিসোর্ট বানানো। ফসলি জমি ও দরিদ্র মানুষের ঘরবাড়ি, জায়গাজমি কিনে নব্য ধনিকশ্রেণি গ্রামে অথবা ছোট ছোট শহরতলিতে বিলাসবহুল রিসোর্ট নির্মাণ করছে। বিদেশে টাকা পাচার করার পরেও যে কালোটাকা থাকে, তা দিয়ে কিছু লোক এই রিসোর্টগুলো নির্মাণ করা শুরু করে। শুধু তা-ই নয়, যেকোনো বড় রাস্তার পাশে বড় বড় ফ্যাক্টরি করার প্রবণতা দিগন্ত ঢেকে দিচ্ছে। এই ছোট্ট আয়তনের দেশেও অনেক জায়গা অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। কুয়াকাটা সমুদ্রের পাড়েও একটা বিশাল জায়গাজুড়ে গড়ে উঠতে পারে শিল্প এলাকা। যেখানে রপ্তানিযোগ্য কারখানাগুলো অনায়াসে বিদেশে পণ্য সরবরাহের একটা সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের পাশেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করা যেতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সবকিছুর কেন্দ্র ঢাকা। অসংখ্য কলকারখানা ঢাকা কিংবা ঢাকার আশপাশে নির্মিত হয়ে একটা বড় ধরনের সামাজিক জট তৈরি করছে। ভূমিগ্রাসীরা শহরগুলোকে যেন একটা সোনার খনি হিসেবে পেয়ে গেছে।
সরকার বিভিন্ন সময়ে শুধু রাজধানীর জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা দিয়ে থাকে, কিন্তু সেগুলো প্রভাবিত করাও যেকোনো সিন্ডিকেটের পক্ষে কঠিন কাজ নয়। একদা ধানমন্ডি বসবাসের একটি আদর্শ জায়গা ছিল। পরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট, লেক, কমিউনিটি সেন্টার-স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল—এসবের ব্যবস্থা রেখেই এই আবাসিক এলাকাটি একটি সুস্থ স্থান হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু কালক্রমে এই এলাকা একটি বাণিজ্যিক স্থানে পরিণত হয়েছে। অসংখ্য রেস্তোরাঁ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-ক্লিনিকে এলাকাটি ভরে গেছে। এ বিষয়ে আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী লোকেরা তাদের স্থাপনা গুটিয়ে নেয়নি। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ও তারা অমান্য করে চলেছে।
একই ঘটনার ধারাবাহিকতা সব শহরেই। চট্টগ্রাম শহরটি আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগেও পাহাড়, সমুদ্র, বনানী মিলে একটি অসাধারণ নান্দনিক শহর হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু সেই চট্টগ্রামও কলকারখানা, অপরিকল্পিত পথঘাট এবং ম্যাচবাক্সের অ্যাপার্টমেন্টের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। একদা রেলের শহর চট্টগ্রাম এখন অটোমোবাইলের চলাচলে বিধ্বস্ত, যানজট সেখানেও নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামের পথ ধরে কক্সবাজার ছিল একটি অত্যন্ত চমৎকার প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত। সেখানেও নির্মাণের এমন তীব্র প্রতিযোগিতা যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিঃশেষ হয়ে শহরটি কংক্রিটের স্তূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমুদ্রসৈকত দখল হতে হতে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে এক আবর্জনার ভাগাড়। সেসব স্থানে আমরা যদি সৃজনশীল পথ আবিষ্কার করতে পারতাম, অবশ্যই পৃথিবীর দীর্ঘতম সাগরসৈকতকে রক্ষা করা যেত। বাণিজ্যিকীকরণের প্রভাবে তা ভেস্তে যেতে বসেছে। সেন্ট মার্টিন এতকাল নানা সামুদ্রিক উপাদানে একটি চমৎকার দ্বীপ হিসেবে মানুষকে আনন্দ-বিনোদন দিয়েছে। কিন্তু সে অবস্থা এখন আর নেই।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ইট-কংক্রিটের বিকল্প কিছু নেই। আমরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বসবাসের জন্য নানান প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি বাড়িঘর বা জাতীয় কোনো স্থাপত্যকে অনুসরণ করতে পারতাম। এর জন্য দেশের স্থপতিদের গুরুত্ব দিয়ে যদি শহর পরিকল্পনার দায়িত্ব দেওয়া হতো তাহলে বাংলাদেশ একটি জাতীয় স্থাপত্য পেত। দেশে আকাশচুম্বী অট্টালিকায় বিপণিবিতান গড়ে তোলা হচ্ছে।
মোগলরা এই ঢাকা শহরে সপ্তদশ শতাব্দীতে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্থাপত্যের উদাহরণ দিয়েছিল। ব্রিটিশের আগ্রাসী বিধ্বস্ত পরিকল্পনায় তা হারিয়ে গেছে। রাজনীতিবিদেরা এসবকে কখনোই গুরুত্ব দিতে চাননি। তাঁদের পরিকল্পনায় কোনো নতুন ভাবনা আনেননি। ফলে মানুষ একটু যে শান্তির আশায় গ্রামে যায়, সেখানেও একই প্রবণতা—দালানকোঠা। একটা সময় আসবে, এই আগ্রহও কমে যাবে। মানুষ সব জায়গায়ই শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় থাকতে থাকতে অসংস্কৃতিমান হয়ে উঠবে।
এখনো ঢাকা শহরে পয়লা বৈশাখ হয় রমনার বটমূলে, ভাগ্যিস বটমূলটি এখনো আছে। শহরের বাইরে কতগুলো বটমূল রয়েছে তার হিসাব কেউ দিতে পারবে না। এখনো বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গায় বটমূল আছে, তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব কে নেবে? সরকারের পক্ষে নেওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, সরকারি বন সংরক্ষকেরা রাজনৈতিক শক্তির প্রশ্রয়ে ধ্বংস করে ফেলেছে। নীতিনির্ধারক, প্রভাবশালী মহল এবং রাজনীতিকেরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা মানেন না। একদা সুজলা-সুফলা প্রাকৃতিক নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশকে আমরা কোথায় রেখে যাচ্ছি? সেটা ভাবার একটু অবকাশ যদি সৃষ্টি হতো, তাহলে এই মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার এগুলো অনেক আগেই নির্মিত হতে পারত।
এখনো রাস্তায় আদিম ব্যবস্থায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে, এর কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্রিটিশরা নিষ্ঠুর শোষণ করে নিজের দেশের সম্পদ বাড়িয়ে ভারতবর্ষকে দরিদ্র অবস্থায় রেখে গেল। সেই সঙ্গে রেখে গেল ধর্মের নামে দুই সহিংস জাতি। সেই দারিদ্র্য ও হিংসাকে আমরা বহন করে চলছি যুগের পর যুগ। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল একটি অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র হিসেবে। তার প্রতি সামাজিকদের যে ভূমিকা, তা-ও আমরা পালন করতে পারিনি। সামাজিকেরা বিষয়টি নিয়ে কি ভাববেন?
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে