শাইখ সিরাজ
-আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ধরনটাই মূলত চাকরিমুখী। পড়াশোনা শেষে তরুণেরা ছোটেন সোনার হরিণ চাকরির পেছনে। আমাদের মা-বাবারাও সন্তানের মনে নিজেদের স্বপ্নের বীজ বপন করে দেন, লেখাপড়া শেষে ভালো একটা চাকরিই যেন জীবনের লক্ষ্য হয়ে ওঠে তাঁদের। এই চিত্রটাই বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর মাঝে দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই এই চক্র ভেঙে নতুন কিছু করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা।
তবে যাঁরা পড়াশোনা শেষে কৃষি উদ্যোক্তা হতে চেয়েছেন, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নানা রকম নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁদের। আবার কেউ কেউ দৃঢ় মনোবল নিয়ে কৃষিকে বেছে নিয়েছেন জীবিকার অবলম্বন হিসেবে। দেখেছেন সাফল্যের মুখ। নওগাঁর সোহেল রানা তেমনই একজন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিষয়ে মাস্টার্স পড়েছেন সোহেল রানা। পড়াশোনা শেষে ঢাকায় এসে দৈনিক ইত্তেফাকে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। এই পত্রিকায় আমি তখন কৃষি নিয়ে একটা পাতা সম্পাদনা করতাম। কৃষির প্রতি টান তাঁর আশৈশব। তাই পত্রিকায় প্রকাশিত কৃষি সাফল্যের সেই সব খবর এবং ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠান তাঁর ভেতরে কৃষি নিয়ে কিছু করার প্রত্যয়টিকে দৃঢ় করে তোলে। ২০১৫ সালে গ্রামে ফিরে গিয়ে ছোট ভাই আবদুল বারীকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের ৫ বিঘা জমিতে শুরু করেন সমন্বিত কৃষি খামার। শুরুতে আত্মীয়-স্বজনের অনেকে এবং এলাকাবাসী নিরুৎসাহিত করলেও একপ্রকার স্রোতের বিপরীতে সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তোলার কাজে হাত দেন। এরপর ধীরে ধীরে সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যান সোহেল। এখন প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে বিস্তৃত তাঁর কৃষি খামার।
গত মাসে নওগাঁর সাপাহারে প্রতিবেদন ধারণ করতে গিয়ে পুনরায় দেখা পেলাম সোহেল রানার। বছর চারেক আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘কৃষি দিবানিশি’ অনুষ্ঠানে তাঁর কৃষি সাফল্যের গল্প তুলে ধরেছিলাম।এই অল্প সময়ে অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর কৃষি কার্যক্রম। দেখে মুগ্ধ হতে হয়। ফল-ফসলে মাঠগুলো ভরে উঠেছে এই শিক্ষিত তরুণের হাতে। মাটির টানে নগরের আধুনিক জীবনের আহ্বান উপেক্ষা করে ফিরে এসে তিনি যে ভুল করেননি, সেটা খুব স্পষ্টতই বোঝা যায়। নিজের সাফল্যের সিঁড়ি তিনি নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন। পুরোনো ও গতানুগতিক কৃষি ব্যবস্থাপনা থেকে বের হয়ে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে পাল্টে দিয়েছেন ফসল উৎপাদনের প্রথাগত হিসাব-নিকাশ। এটিই তাঁর স্বাবলম্বী হওয়ার মূলমন্ত্র।
সমন্বিত কৃষি খামারে নানা আয়োজন। বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে আম, লিচু, লেবু আর মাল্টার বাগান। আছে ড্রাগন আর বারোমাসি আম। বারি-১ জাতের মাল্টা সোহেল রানার বাগানে বেশ ভালো ফলেছে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, দেশে মাল্টা চাষের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি মাল্টা-১ দিয়ে। পিরোজপুরের রেবুতি শিকদার থেকে চুয়াডাঙ্গার বাবুলের বিশালাকার মাল্টার বাগান, যা ছিল অনন্য সাফল্যের গল্প।
সোহেল রানার কৃষি খামারে বড় একটি অংশজুড়ে আছে ড্রাগন ফলের চাষ। সারা দেশে তরুণদের হাতে দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে ড্রাগনের চাষ। দারুণ পুষ্টিকর এই ফলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, বাড়ছে উৎপাদন। কৃষিবাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ হয়ে
উঠেছে ড্রাগন ফল। সোহেল রানাও বলছেন, ড্রাগন উৎপাদনে ভালো লাভ পাওয়া যায়।
উদ্যোক্তা সোহেল রানা অনুশীলন করছেন টারকি, দেশি মুরগি, ছাগল, কবুতর ও লাভ বার্ড লালন-পালনের। ভবিষ্যতে এসব প্রাণী ও পাখির বড় খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
কী নেই! আছে পুকুরে মাছের চাষ। কৃষির প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে তাঁর প্রচেষ্টা। ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’-এ নতুন কোনো ফল-ফসলের চাষ দেখলে ছুটে যান। বুঝে-শুনে শুরু করেন চাষাবাদ।
আগেই বলেছি, ৫ বিঘা আয়তনের পেয়ারাবাগান দিয়ে শুরু হয়েছিল উদ্যোক্তা সোহেল রানার কৃষির হাতেখড়ি। তাঁর দাবি, তাঁর পেয়ারাবাগানই পত্নীতলা ও সাপাহার এলাকার প্রথম বাণিজ্যিক বাগান। আজ তাঁর অনুসারী অনেকে। এই অঞ্চলে বাড়ছে উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের আবাদ।
শুধু ফল-ফসল আবাদেই নিজের স্বপ্নকে আটকে রাখেননি সোহেল রানা। ২০১৮ সালে সাপাহারে ৭০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’ নামে আধুনিক সমন্বিত কৃষি খামার ও অ্যাগ্রো ট্যুরিজম সেন্টার।
সোহেল রানা গড়ে তুলছেন নানা গাছের সংগ্রহ নিয়ে নিজস্ব ‘জার্মপ্লাজম সেন্টার’। তাঁর সংগ্রহে আছে নানা রকম ঔষধি গাছ। তুলসী, বাসক, নিশিন্দা, অ্যালোভেরা, কুসুম, পারুল, বিষজারণ, নিম, সোনালু, যষ্টিমধু, দইগোটা, হরীতকী, বহেড়া, আমলকী, শতমূলসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন দেশি গাছ সংরক্ষণ ছাড়াও এখানে প্রায় ৩০০ প্রজাতির গাছ আছে।
নিজেকে সমৃদ্ধ করতে তিনি যেমন নানা রকম প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন, রপ্তানি বাজারে অংশ নিতে চর্চা করছেন আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির, তেমনি তরুণদের কৃষিতে উদ্বুদ্ধ করে সাফল্য অর্জনে আয়োজন করেছেন তাঁদের জন্য প্রশিক্ষণেরও।
সোহেল জানালেন, ‘গ্লোবাল গ্যাপ’ অনুসরণ করে উৎপাদিত আম্রপালি আম গত জুন মাসে যুক্তরাজ্যে সফলভাবে রপ্তানি করেছেন। শ্রম আর সুপরিকল্পনায় আজ সোহেল রানা একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। আট বছর ধরে বরেন্দ্রর শুকনো অনুর্বর মাটিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ব্যবহার করে ফলাচ্ছেন নানা রকম ফল-ফসল। অর্জিত পুঁজি কাজে লাগিয়ে খামার সম্প্রসারণ করেছেন।
সোহেলের পরিবারের সদস্যরা প্রথমে তাঁর কৃষি উদ্যোগকে ভালোভাবে না নিলেও এখন সহযোগী হিসেবেই কাজ করছেন তাঁরা। বহু প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে যে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষিত তরুণ সোহেল রানা, তা শুধু নিজেকেই অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করেনি; বরং গোটা এলাকার অন্য তরুণদের মধ্যেও সাড়া ফেলেছেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস, নতুন নতুন প্রযুক্তি আর শিক্ষিতজনদের অংশগ্রহণে আগামী খুব অল্প সময়ে দেশের কৃষির চিত্র পাল্টে যাবে।
স্রোতের বিপরীতে হেঁটে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানোটা সহজ ব্যাপার নয়। সব প্রতিবন্ধকতা ঠেলে কৃষিতে সফলতার উদাহরণ গড়ছে আজকের তরুণ প্রজন্ম। এই আশার ঝিলিক, উজ্জ্বল আলোর ভবিষ্যৎ রচনা করবে একদিন, সুপরিকল্পিত নীতিমালা ও এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি সোহেল রানার মতো উদ্যমী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায়। আর এই তরুণদের হাতে মজবুত ভিত পাবে আগামীর কৃষি অর্থনীতি—এমনটাই প্রত্যাশা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
-আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ধরনটাই মূলত চাকরিমুখী। পড়াশোনা শেষে তরুণেরা ছোটেন সোনার হরিণ চাকরির পেছনে। আমাদের মা-বাবারাও সন্তানের মনে নিজেদের স্বপ্নের বীজ বপন করে দেন, লেখাপড়া শেষে ভালো একটা চাকরিই যেন জীবনের লক্ষ্য হয়ে ওঠে তাঁদের। এই চিত্রটাই বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর মাঝে দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই এই চক্র ভেঙে নতুন কিছু করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা।
তবে যাঁরা পড়াশোনা শেষে কৃষি উদ্যোক্তা হতে চেয়েছেন, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নানা রকম নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁদের। আবার কেউ কেউ দৃঢ় মনোবল নিয়ে কৃষিকে বেছে নিয়েছেন জীবিকার অবলম্বন হিসেবে। দেখেছেন সাফল্যের মুখ। নওগাঁর সোহেল রানা তেমনই একজন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিষয়ে মাস্টার্স পড়েছেন সোহেল রানা। পড়াশোনা শেষে ঢাকায় এসে দৈনিক ইত্তেফাকে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। এই পত্রিকায় আমি তখন কৃষি নিয়ে একটা পাতা সম্পাদনা করতাম। কৃষির প্রতি টান তাঁর আশৈশব। তাই পত্রিকায় প্রকাশিত কৃষি সাফল্যের সেই সব খবর এবং ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠান তাঁর ভেতরে কৃষি নিয়ে কিছু করার প্রত্যয়টিকে দৃঢ় করে তোলে। ২০১৫ সালে গ্রামে ফিরে গিয়ে ছোট ভাই আবদুল বারীকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের ৫ বিঘা জমিতে শুরু করেন সমন্বিত কৃষি খামার। শুরুতে আত্মীয়-স্বজনের অনেকে এবং এলাকাবাসী নিরুৎসাহিত করলেও একপ্রকার স্রোতের বিপরীতে সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তোলার কাজে হাত দেন। এরপর ধীরে ধীরে সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যান সোহেল। এখন প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে বিস্তৃত তাঁর কৃষি খামার।
গত মাসে নওগাঁর সাপাহারে প্রতিবেদন ধারণ করতে গিয়ে পুনরায় দেখা পেলাম সোহেল রানার। বছর চারেক আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘কৃষি দিবানিশি’ অনুষ্ঠানে তাঁর কৃষি সাফল্যের গল্প তুলে ধরেছিলাম।এই অল্প সময়ে অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর কৃষি কার্যক্রম। দেখে মুগ্ধ হতে হয়। ফল-ফসলে মাঠগুলো ভরে উঠেছে এই শিক্ষিত তরুণের হাতে। মাটির টানে নগরের আধুনিক জীবনের আহ্বান উপেক্ষা করে ফিরে এসে তিনি যে ভুল করেননি, সেটা খুব স্পষ্টতই বোঝা যায়। নিজের সাফল্যের সিঁড়ি তিনি নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন। পুরোনো ও গতানুগতিক কৃষি ব্যবস্থাপনা থেকে বের হয়ে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে পাল্টে দিয়েছেন ফসল উৎপাদনের প্রথাগত হিসাব-নিকাশ। এটিই তাঁর স্বাবলম্বী হওয়ার মূলমন্ত্র।
সমন্বিত কৃষি খামারে নানা আয়োজন। বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে আম, লিচু, লেবু আর মাল্টার বাগান। আছে ড্রাগন আর বারোমাসি আম। বারি-১ জাতের মাল্টা সোহেল রানার বাগানে বেশ ভালো ফলেছে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, দেশে মাল্টা চাষের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি মাল্টা-১ দিয়ে। পিরোজপুরের রেবুতি শিকদার থেকে চুয়াডাঙ্গার বাবুলের বিশালাকার মাল্টার বাগান, যা ছিল অনন্য সাফল্যের গল্প।
সোহেল রানার কৃষি খামারে বড় একটি অংশজুড়ে আছে ড্রাগন ফলের চাষ। সারা দেশে তরুণদের হাতে দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে ড্রাগনের চাষ। দারুণ পুষ্টিকর এই ফলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, বাড়ছে উৎপাদন। কৃষিবাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ হয়ে
উঠেছে ড্রাগন ফল। সোহেল রানাও বলছেন, ড্রাগন উৎপাদনে ভালো লাভ পাওয়া যায়।
উদ্যোক্তা সোহেল রানা অনুশীলন করছেন টারকি, দেশি মুরগি, ছাগল, কবুতর ও লাভ বার্ড লালন-পালনের। ভবিষ্যতে এসব প্রাণী ও পাখির বড় খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
কী নেই! আছে পুকুরে মাছের চাষ। কৃষির প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে তাঁর প্রচেষ্টা। ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’-এ নতুন কোনো ফল-ফসলের চাষ দেখলে ছুটে যান। বুঝে-শুনে শুরু করেন চাষাবাদ।
আগেই বলেছি, ৫ বিঘা আয়তনের পেয়ারাবাগান দিয়ে শুরু হয়েছিল উদ্যোক্তা সোহেল রানার কৃষির হাতেখড়ি। তাঁর দাবি, তাঁর পেয়ারাবাগানই পত্নীতলা ও সাপাহার এলাকার প্রথম বাণিজ্যিক বাগান। আজ তাঁর অনুসারী অনেকে। এই অঞ্চলে বাড়ছে উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের আবাদ।
শুধু ফল-ফসল আবাদেই নিজের স্বপ্নকে আটকে রাখেননি সোহেল রানা। ২০১৮ সালে সাপাহারে ৭০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’ নামে আধুনিক সমন্বিত কৃষি খামার ও অ্যাগ্রো ট্যুরিজম সেন্টার।
সোহেল রানা গড়ে তুলছেন নানা গাছের সংগ্রহ নিয়ে নিজস্ব ‘জার্মপ্লাজম সেন্টার’। তাঁর সংগ্রহে আছে নানা রকম ঔষধি গাছ। তুলসী, বাসক, নিশিন্দা, অ্যালোভেরা, কুসুম, পারুল, বিষজারণ, নিম, সোনালু, যষ্টিমধু, দইগোটা, হরীতকী, বহেড়া, আমলকী, শতমূলসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন দেশি গাছ সংরক্ষণ ছাড়াও এখানে প্রায় ৩০০ প্রজাতির গাছ আছে।
নিজেকে সমৃদ্ধ করতে তিনি যেমন নানা রকম প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন, রপ্তানি বাজারে অংশ নিতে চর্চা করছেন আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির, তেমনি তরুণদের কৃষিতে উদ্বুদ্ধ করে সাফল্য অর্জনে আয়োজন করেছেন তাঁদের জন্য প্রশিক্ষণেরও।
সোহেল জানালেন, ‘গ্লোবাল গ্যাপ’ অনুসরণ করে উৎপাদিত আম্রপালি আম গত জুন মাসে যুক্তরাজ্যে সফলভাবে রপ্তানি করেছেন। শ্রম আর সুপরিকল্পনায় আজ সোহেল রানা একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। আট বছর ধরে বরেন্দ্রর শুকনো অনুর্বর মাটিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ব্যবহার করে ফলাচ্ছেন নানা রকম ফল-ফসল। অর্জিত পুঁজি কাজে লাগিয়ে খামার সম্প্রসারণ করেছেন।
সোহেলের পরিবারের সদস্যরা প্রথমে তাঁর কৃষি উদ্যোগকে ভালোভাবে না নিলেও এখন সহযোগী হিসেবেই কাজ করছেন তাঁরা। বহু প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে যে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষিত তরুণ সোহেল রানা, তা শুধু নিজেকেই অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করেনি; বরং গোটা এলাকার অন্য তরুণদের মধ্যেও সাড়া ফেলেছেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস, নতুন নতুন প্রযুক্তি আর শিক্ষিতজনদের অংশগ্রহণে আগামী খুব অল্প সময়ে দেশের কৃষির চিত্র পাল্টে যাবে।
স্রোতের বিপরীতে হেঁটে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানোটা সহজ ব্যাপার নয়। সব প্রতিবন্ধকতা ঠেলে কৃষিতে সফলতার উদাহরণ গড়ছে আজকের তরুণ প্রজন্ম। এই আশার ঝিলিক, উজ্জ্বল আলোর ভবিষ্যৎ রচনা করবে একদিন, সুপরিকল্পিত নীতিমালা ও এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি সোহেল রানার মতো উদ্যমী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায়। আর এই তরুণদের হাতে মজবুত ভিত পাবে আগামীর কৃষি অর্থনীতি—এমনটাই প্রত্যাশা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
১১ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
১১ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
১১ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
১২ ঘণ্টা আগে