মায়ের জন্য স্কুলে ৩১ বছর

মো. তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯: ০৯

নিজের প্রতিষ্ঠিত দুটি স্কুলে শিক্ষকতা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল আবদুর রশিদকে! লোকে বলে, সেগুলো ছিল কিছু মানুষের ষড়যন্ত্র। দুইবারের সে অযাচিত প্রত্যাখ্যানে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন আবদুর রশিদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ছেলে শিক্ষকতা করতে পারছে না ভেবে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন মা উমেতুন্নেছা। কিন্তু ছেলে তো দমে যাওয়ার পাত্র নন। তৃতীয়বারের মতো তিনি নিজ গ্রামে তৈরি করেন আর একটি স্কুল! সেটা ১৯৯১ সালের ঘটনা।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর দাড়িপাড়া গ্রামের মানুষ এখন স্কুলটিকে চেনে ‘রশিদ মাস্টারের পাঠশালা’ নামে।  

১৯৯১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রশিদ মাস্টারের পাঠশালায় পড়ালেখা করেছেন প্রায় ছয় হাজার শিশু ও বয়স্ক মানুষ। তাঁদের অনেকেই এখন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। স্কুলটি সরকারি এমপিওভুক্তির জন্য কোনো দিন আবেদন করেননি আবদুর রশিদ! শুধু তাই নয়, ৩১ বছর ধরে একেবারে বিনা পারিশ্রমিকে পাঠদান করে চলছেন তিনি।

মূলত মাকে সান্ত্বনা দিতে আবদুর রশিদ নিজ বাড়ির পেছনের বাঁশবাগানের মাটি সমান করে খোলা আকাশের নিচে পাটি পেতে শুরু করেছিলেন তাঁর তৃতীয় স্কুল। এত দিন পরে এখন সেখানে উঠেছে দুটি টিনের ঘর। প্রথমে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পড়ানো হতো সেখানে। তারপরে প্রাইভেটের মতো করে অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়ানো শুরু হয়। এখন রাতে, সকালে ও সন্ধ্যায় পড়ানো হয় শিশু ও বয়স্কদের। সব মিলিয়ে এখন রশিদ মাস্টারের পাঠশালায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় শ। সেখানে তাঁর ছেলে হোসেন আলী সম্রাট ও অবসরপ্রাপ্ত সাবেক স্কুলশিক্ষক সবিন্দ্র নাথ দাস মাঝেমধ্যে পাঠদান করেন।

দারিদ্র্যের কারণে আবদুর রশিদ নিজে খুব বেশি দূর লেখাপড়া করার সুযোগ পাননি। স্থানীয় সাহাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন মনাকষা হ‌ুমায়ূন রেজা স্কুলে। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর বাবা এবং ভাই অসুস্থ থাকায় বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া। চার বছর বিরতি দিয়ে তিনি আবারও ভর্তি হন আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজে। সেখান থেকে ১৯৭২ সালে এইচএসসি পাস করেন। সেখানেই আবদুর রশিদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যায়।

পরে তিনি নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন চানতারা প্রাইমারি স্কুল। সেখানে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর তাঁকে বাদ দেওয়া হয় স্কুল থেকে। এরপর মনোহরপুর এলাকায় চলে যান কৃষিকাজের সন্ধানে। কিন্তু সে কাজে মন না বসলে কিছুদিন পরে পাঁচজন ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে আবারও প্রতিষ্ঠিত করেন মনোহরপুর প্রাইমারি স্কুল। স্কুলটি দ্রুত পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু এ স্কুলের শিক্ষকতাও ছাড়তে হয় তাঁকে। এরপর তিনি তৈরি করেন তাঁর তৃতীয় স্কুলটি।

স্থানীয় সাহাপাড়া বাজারে একটি ওষুধের দোকান রয়েছে আবদুর রশিদের। সে দোকানের আয় থেকে চলে তাঁর সংসার। আট ছেলে ও এক মেয়ের সবাই বিভিন্ন পেশায় জড়িত। 
রশিদ মাস্টারের পাঠশালায় আরও ২০ থেকে ২৫ জনের সঙ্গে পড়তে আসে সাথী ও তানিসা খাতুন। তারা স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করে। দুজনেই জানিয়েছে, স্কুলটিতে বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক পড়ানো হয় একেবারে বিনি পয়সায়।

রশিদ মাস্টারের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন শিবগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল কুমার ঘোষ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

অধিকৃত অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদের সার্বভৌম মালিকানা ফিলিস্তিনিদের, জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

বিসিএস নিয়োগ: নিজেই রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্য দিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন অনেকে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত