হাসান মামুন
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র ও ক্ষমতাসীন দল থেকে দ্বিতীয় দফায় ‘চিরদিনের জন্য বহিষ্কৃত’ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন জিতে যেতে পারেন, এটা সম্ভবত কেউই ভাবতে পারেননি। নিবন্ধটি লেখার সময় জাতীয় দৈনিকগুলোয় তাঁর চমকপ্রদ বিজয় নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন দেখতে পাচ্ছি। এই নিবন্ধকারেরও কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। গভীর রাতে ওই সিটি নির্বাচনের ফল ঘোষণা শেষ হলে ফেসবুকে একটা মন্তব্য করেছিলাম। সেটা এখানে পুনরুল্লেখ করি। এমন লিখেছিলাম যে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার কাজে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র আলাদা করে যে ‘ভিসা নীতি’ গ্রহণের কথা প্রকাশ করে গাজীপুরে নির্বাচন শুরুর ঠিক আগের রাতে, সেটা আর মাত্র এক দিন আগে করা হলে ওখানে ভোট আরও বাড়ত এবং ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী আরও বেশি ভোটে পরাস্ত হতেন। এটা এখনো আমার ধারণা।
সংবাদপত্রে গাজীপুরের নির্বাচনের ফল নিয়ে করা বিশ্লেষণে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রভাবের বিষয়টি দেখি আরও অনেকে এনেছেন। কেউ কেউ আবার এর প্রভাব অত নেই বলতে চেয়েছেন। নানান পর্যবেক্ষণ ও মত তো থাকবেই। এগুলো অবাধে প্রচারিত হওয়াও দরকার। ফেসবুক পোস্টে আমি অবশ্য শুধু বলতে চেয়েছিলাম, আগের রাতে বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে গৃহীত ওই পদক্ষেপের খবর প্রচার হওয়ায় ভোটারদের সাহস বেড়েছে। পরে অনেকে এটাও বলছেন, নির্বাচনে অনিয়ম করলে সংশ্লিষ্টদের, এমনকি পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পেতে সমস্যা হতে পারে ভেবে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের লোকজন অন্তত ভোটের দিন নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। আমার অবশ্য এতটা মনে হয় না। এমনও মনে হয়, নানান কারণে গাজীপুর নির্বাচনকে (অংশগ্রহণমূলক করতে না পারলেও) স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করার ব্যাপারে সরকারপক্ষের একটা ইতিবাচক অবস্থান ছিল। তারা হয়তো ভেবেছিল, দল মনোনীত শক্তিশালী প্রার্থীই জয়ী হবেন। বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর আলমের অনালোচিত মা আর কী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন—এমন একটা মনোবৃত্তি হয়তো তাদের গ্রাস করেছিল। আওয়ামী লীগের প্রার্থীও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সবাইকে হালকা করে দেখছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।
নির্বাচনে এসব উপাদান তো কাজ করেই। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ঘোষণা দিয়ে এই নির্বাচন বর্জন করলেও তাদের কর্মী-সমর্থকেরা যে তৎপর ছিলেন, সেটাও বোধ হয় বিবেচনায় নেননি ক্ষমতাসীনেরা। বিএনপি আবার কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়া বেশ কজনকে একইভাবে ‘চিরতরে’ বহিষ্কার করেছিল। যদিও কাউন্সিলররা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেন না; তা সত্ত্বেও তারা এত কঠোরতা দেখিয়েছিল কেন, বোধগম্য নয়। তবে নির্বাচনে লড়ে বিএনপির বেশ কজন কিন্তু কাউন্সিলর পদে জিতে গেছেন। এখন শোনা যাচ্ছে, তাঁরা নাকি স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী জায়েদা খাতুনের পক্ষে কাজ করেছেন। দেখা যাচ্ছে, ওই সব এলাকায় বেশি ভোট পেয়ে এগিয়ে গেছেন এই প্রবীণা। বুদ্ধি করে নিজের পাশাপাশি তাঁকেও প্রার্থী করেছিলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সঠিকভাবেই আশঙ্কা করেছিলেন, তাঁর প্রার্থিতা যেভাবেই হোক বাতিল হবে। নির্বাচনী প্রচারণা পুরোদমে চলাকালে তাঁকে দুদকেও ডাকা হয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগে। এসবে দুদকের কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনও যে উল্টোভাবে প্রভাবিত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
গাজীপুর আওয়ামী লীগের পুরোনো দুর্গ বলে পরিচিত। আর সেখানে যেভাবেই হোক, নিজের জায়গা পোক্ত করে নিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। দলের উচ্চপর্যায়েও তাঁর শক্ত যোগাযোগ আছে বলে কানাঘুষা শোনা যায়। জায়েদা খাতুন সেখান থেকে প্রকাশ্য সহায়তা না পেলেও এ অবস্থায় দলীয় প্রার্থী বেশি সুবিধা করতে পারেননি বলেই ধরে নেওয়া যায়। আর এটা বলাই বাহুল্য, সরকারবিরোধী ভোট গেছে জায়েদার পক্ষে। এর একাংশ আবার পেয়েছেন হাতপাখা প্রতীকে দাঁড়ানো ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী। তিনি তৃতীয় হলেও লক্ষ করলাম, মিডিয়ায় সেটা কম প্রচারিত হয়েছে। এসব করে তো লাভ নেই, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেক দিন ধরেই উল্লেখযোগ্য ভোট পাচ্ছেন। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে চলায় তাঁরা সরকারবিরোধী ভোটারদের সমর্থন পাচ্ছেন, এটা অনেকের মত। ধর্মীয় মনোভাবের মানুষজন তাঁদের পছন্দমতো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন, এমনটাও অনেকে বলেন। কেননা অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না বলে ভোট পড়ছে অব্যাহতভাবে কম এবং বিএনপির সমর্থকেরা নাকি ভোট বর্জনই করে চলেছেন। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, গাজীপুরে সেটা হয়নি। আর আমার মত হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি গ্রহণের খবর আর মাত্র এক দিন আগে এলে তার প্রভাব পড়ত আরও বেশি এবং সরকারবিরোধীরা আরও বেশি করে ভোট দিতে আসায় জায়েদা খাতুন জয়ী হতেন বড় ব্যবধানে।
যা-ই হোক, যা হয়নি তা তো হয়নি। যা হয়েছে, তারই মূল্যায়ন করা যাবে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও নাকি এই পরাজয়ের মূল্যায়ন করবে। তবে সেটি করতে করতে আগামী মাসের মধ্যে আরও চার সিটিতে ভোট সম্পন্ন করবে নির্বাচন কমিশন। গাজীপুরের নির্বাচন তারা যেভাবে সম্পন্ন করেছে; কখনো কখনো কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে, সেই ধারা তাদের এখন অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। সরকার, নির্বাচন কমিশন ও মাঠপর্যায় পর্যন্ত প্রশাসন কী করছে, সেটা এখন আরও বেশি পর্যবেক্ষণ করবেন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র দেশের প্রতিনিধিরা। ওই সব অঞ্চলের ভোটারসহ সারা দেশের মানুষেরই আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে বাকি চারটি নির্বাচনে। মিডিয়ায়ও এগুলোর খবর আরও বেশি করে আসবে। এতে একটা প্রত্যাশার চাপ তৈরি হবে প্রধানত নির্বাচন কমিশনের ওপর। সরকার আর প্রশাসনের ওপরও। গাজীপুরের নির্বাচনের চেয়ে নেতিবাচক কিছু ঘটলে তার সমালোচনা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে এবং কোনো কোনোটা হয়তো হয়ে যাবে ইস্যু। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকার সেটা ‘অ্যাফোর্ড’ করতে পারবে কি? বিএনপি সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিয়ে এসব নির্বাচন বর্জন করছে—সন্দেহ নেই। তারা অংশ না নেওয়ায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না, সেটাও ঠিক। কিন্তু তাদের সমর্থকেরা তো এসব নির্বাচনে ঠিকই অংশ নেবেন, এমনকি এখন আরও উৎসাহী হয়ে। ভোটারদের একটা বড় অংশ আবার নতুন। অনেক দিন তাঁরা হয়তো কোনো নির্বাচনেই ভোট দিতে যেতে উৎসাহী হননি। তাঁরাও গাজীপুরের অভিজ্ঞতায় ভোটকেন্দ্রে যেতে উজ্জীবিত হবেন মনে হয়।
যত দূর জানি, বাকি সিটি নির্বাচনগুলোও ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে এবং ভোটকেন্দ্রে বসানো হবে সিসি ক্যামেরা। ভোটগ্রহণের এই নতুন ব্যবস্থাপনাও মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগে উৎসাহী করবে বলে মনে হয়। ইভিএমের কিছু টেকনিক্যাল সমস্যায় ভোটদানে দেরি হচ্ছে অবশ্য। ভোট গণনা আর ফল প্রকাশেও কিছু বিলম্ব লক্ষ করা গেছে গাজীপুরে। তাতে সন্দেহ-অবিশ্বাসও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এমন ক্ষেত্রে ফেসবুকে দ্রুত উঠে আসা মানুষের তীব্র মতামতও একটা চাপ, যা এখন আরও বেশি করে পড়বে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ওপর। সরকার তো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধন করে এটাকে ভয়ভীতিমুক্ত করে তোলার ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সুতরাং মনে হয়, নির্বাচনসহ বিভিন্ন জরুরি বিষয়ে নাগরিকদের অভিমত প্রদানের প্রবাহ আরও জোরালো হবে। বাংলাদেশের জন্য আলাদা করে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও অবারিত করতে বলা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে সরকার এখন পর্যন্ত ইতিবাচকভাবে নেওয়ার পক্ষেই কথাবার্তা বলছে। সরকার বলছে, আমরা তো ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ই করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী নিজে একাধিকবার এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। এ অবস্থায় বাকি সিটি নির্বাচনগুলো অংশগ্রহণমূলক না হলেও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার সুযোগ তো রয়েই গেছে। কোনো কোনো নির্বাচনবোদ্ধা হয়তো বলবেন, বেছে নেওয়ার মতো যথেষ্টসংখ্যক প্রার্থী না থাকলে নির্বাচন তো অর্থবহ হয় না। এ বক্তব্যে কিছু সত্যতা থাকলেও ভোটাররা কিন্তু তাঁদের অংশগ্রহণ অনেক বাড়িয়ে দেবেন চোখের সামনে থাকা প্রার্থীদের নিয়েই।
গাজীপুরে কি সেটা ঘটতে দেখা যায়নি? বরিশালেও হয়তো একই ঘটনা ঘটবে হাতপাখা মার্কার প্রার্থীকে ঘিরে। ২৭ মের আজকের পত্রিকায় ছোট্ট করে তাঁর যে সাক্ষাৎকার এসেছে, তাতে এই প্রার্থীকে বেশ আত্মপ্রত্যয়ী মনে হয়। সেখানেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর মনোনয়ন ঘিরে বড় বিভক্তি আছে স্থানীয় পর্যায়ে এবং সেটা দূরীকরণের উদ্যোগ সফল হতে দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রক্ষমতার বিশ্বস্ত সহযোগী জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও গরম কথা বলছেন। পরিস্থিতি ঘুরছে বলেই মনে হয়। এ অবস্থায় সরকারপক্ষ মাথা গরম করে কিছু করে ফেললে সেটা হিতে বিপরীত হওয়ার শঙ্কাই বেশি। সিটি নির্বাচনে যা-ই ঘটুক, তাতে তো আর সরকারের বদল ঘটবে না। সরকার থেকেই যাবে এবং সিটি নির্বাচন চলাকালেও তাকে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সার্বিক পরিস্থিতি সামলানোর কাজে মনোনিবেশ করতে হবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র ও ক্ষমতাসীন দল থেকে দ্বিতীয় দফায় ‘চিরদিনের জন্য বহিষ্কৃত’ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন জিতে যেতে পারেন, এটা সম্ভবত কেউই ভাবতে পারেননি। নিবন্ধটি লেখার সময় জাতীয় দৈনিকগুলোয় তাঁর চমকপ্রদ বিজয় নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন দেখতে পাচ্ছি। এই নিবন্ধকারেরও কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। গভীর রাতে ওই সিটি নির্বাচনের ফল ঘোষণা শেষ হলে ফেসবুকে একটা মন্তব্য করেছিলাম। সেটা এখানে পুনরুল্লেখ করি। এমন লিখেছিলাম যে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার কাজে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র আলাদা করে যে ‘ভিসা নীতি’ গ্রহণের কথা প্রকাশ করে গাজীপুরে নির্বাচন শুরুর ঠিক আগের রাতে, সেটা আর মাত্র এক দিন আগে করা হলে ওখানে ভোট আরও বাড়ত এবং ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী আরও বেশি ভোটে পরাস্ত হতেন। এটা এখনো আমার ধারণা।
সংবাদপত্রে গাজীপুরের নির্বাচনের ফল নিয়ে করা বিশ্লেষণে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রভাবের বিষয়টি দেখি আরও অনেকে এনেছেন। কেউ কেউ আবার এর প্রভাব অত নেই বলতে চেয়েছেন। নানান পর্যবেক্ষণ ও মত তো থাকবেই। এগুলো অবাধে প্রচারিত হওয়াও দরকার। ফেসবুক পোস্টে আমি অবশ্য শুধু বলতে চেয়েছিলাম, আগের রাতে বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে গৃহীত ওই পদক্ষেপের খবর প্রচার হওয়ায় ভোটারদের সাহস বেড়েছে। পরে অনেকে এটাও বলছেন, নির্বাচনে অনিয়ম করলে সংশ্লিষ্টদের, এমনকি পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পেতে সমস্যা হতে পারে ভেবে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের লোকজন অন্তত ভোটের দিন নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। আমার অবশ্য এতটা মনে হয় না। এমনও মনে হয়, নানান কারণে গাজীপুর নির্বাচনকে (অংশগ্রহণমূলক করতে না পারলেও) স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করার ব্যাপারে সরকারপক্ষের একটা ইতিবাচক অবস্থান ছিল। তারা হয়তো ভেবেছিল, দল মনোনীত শক্তিশালী প্রার্থীই জয়ী হবেন। বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর আলমের অনালোচিত মা আর কী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন—এমন একটা মনোবৃত্তি হয়তো তাদের গ্রাস করেছিল। আওয়ামী লীগের প্রার্থীও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সবাইকে হালকা করে দেখছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।
নির্বাচনে এসব উপাদান তো কাজ করেই। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ঘোষণা দিয়ে এই নির্বাচন বর্জন করলেও তাদের কর্মী-সমর্থকেরা যে তৎপর ছিলেন, সেটাও বোধ হয় বিবেচনায় নেননি ক্ষমতাসীনেরা। বিএনপি আবার কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়া বেশ কজনকে একইভাবে ‘চিরতরে’ বহিষ্কার করেছিল। যদিও কাউন্সিলররা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেন না; তা সত্ত্বেও তারা এত কঠোরতা দেখিয়েছিল কেন, বোধগম্য নয়। তবে নির্বাচনে লড়ে বিএনপির বেশ কজন কিন্তু কাউন্সিলর পদে জিতে গেছেন। এখন শোনা যাচ্ছে, তাঁরা নাকি স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী জায়েদা খাতুনের পক্ষে কাজ করেছেন। দেখা যাচ্ছে, ওই সব এলাকায় বেশি ভোট পেয়ে এগিয়ে গেছেন এই প্রবীণা। বুদ্ধি করে নিজের পাশাপাশি তাঁকেও প্রার্থী করেছিলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সঠিকভাবেই আশঙ্কা করেছিলেন, তাঁর প্রার্থিতা যেভাবেই হোক বাতিল হবে। নির্বাচনী প্রচারণা পুরোদমে চলাকালে তাঁকে দুদকেও ডাকা হয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগে। এসবে দুদকের কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনও যে উল্টোভাবে প্রভাবিত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
গাজীপুর আওয়ামী লীগের পুরোনো দুর্গ বলে পরিচিত। আর সেখানে যেভাবেই হোক, নিজের জায়গা পোক্ত করে নিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। দলের উচ্চপর্যায়েও তাঁর শক্ত যোগাযোগ আছে বলে কানাঘুষা শোনা যায়। জায়েদা খাতুন সেখান থেকে প্রকাশ্য সহায়তা না পেলেও এ অবস্থায় দলীয় প্রার্থী বেশি সুবিধা করতে পারেননি বলেই ধরে নেওয়া যায়। আর এটা বলাই বাহুল্য, সরকারবিরোধী ভোট গেছে জায়েদার পক্ষে। এর একাংশ আবার পেয়েছেন হাতপাখা প্রতীকে দাঁড়ানো ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী। তিনি তৃতীয় হলেও লক্ষ করলাম, মিডিয়ায় সেটা কম প্রচারিত হয়েছে। এসব করে তো লাভ নেই, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেক দিন ধরেই উল্লেখযোগ্য ভোট পাচ্ছেন। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে চলায় তাঁরা সরকারবিরোধী ভোটারদের সমর্থন পাচ্ছেন, এটা অনেকের মত। ধর্মীয় মনোভাবের মানুষজন তাঁদের পছন্দমতো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন, এমনটাও অনেকে বলেন। কেননা অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না বলে ভোট পড়ছে অব্যাহতভাবে কম এবং বিএনপির সমর্থকেরা নাকি ভোট বর্জনই করে চলেছেন। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, গাজীপুরে সেটা হয়নি। আর আমার মত হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি গ্রহণের খবর আর মাত্র এক দিন আগে এলে তার প্রভাব পড়ত আরও বেশি এবং সরকারবিরোধীরা আরও বেশি করে ভোট দিতে আসায় জায়েদা খাতুন জয়ী হতেন বড় ব্যবধানে।
যা-ই হোক, যা হয়নি তা তো হয়নি। যা হয়েছে, তারই মূল্যায়ন করা যাবে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও নাকি এই পরাজয়ের মূল্যায়ন করবে। তবে সেটি করতে করতে আগামী মাসের মধ্যে আরও চার সিটিতে ভোট সম্পন্ন করবে নির্বাচন কমিশন। গাজীপুরের নির্বাচন তারা যেভাবে সম্পন্ন করেছে; কখনো কখনো কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে, সেই ধারা তাদের এখন অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। সরকার, নির্বাচন কমিশন ও মাঠপর্যায় পর্যন্ত প্রশাসন কী করছে, সেটা এখন আরও বেশি পর্যবেক্ষণ করবেন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র দেশের প্রতিনিধিরা। ওই সব অঞ্চলের ভোটারসহ সারা দেশের মানুষেরই আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে বাকি চারটি নির্বাচনে। মিডিয়ায়ও এগুলোর খবর আরও বেশি করে আসবে। এতে একটা প্রত্যাশার চাপ তৈরি হবে প্রধানত নির্বাচন কমিশনের ওপর। সরকার আর প্রশাসনের ওপরও। গাজীপুরের নির্বাচনের চেয়ে নেতিবাচক কিছু ঘটলে তার সমালোচনা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে এবং কোনো কোনোটা হয়তো হয়ে যাবে ইস্যু। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকার সেটা ‘অ্যাফোর্ড’ করতে পারবে কি? বিএনপি সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিয়ে এসব নির্বাচন বর্জন করছে—সন্দেহ নেই। তারা অংশ না নেওয়ায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না, সেটাও ঠিক। কিন্তু তাদের সমর্থকেরা তো এসব নির্বাচনে ঠিকই অংশ নেবেন, এমনকি এখন আরও উৎসাহী হয়ে। ভোটারদের একটা বড় অংশ আবার নতুন। অনেক দিন তাঁরা হয়তো কোনো নির্বাচনেই ভোট দিতে যেতে উৎসাহী হননি। তাঁরাও গাজীপুরের অভিজ্ঞতায় ভোটকেন্দ্রে যেতে উজ্জীবিত হবেন মনে হয়।
যত দূর জানি, বাকি সিটি নির্বাচনগুলোও ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে এবং ভোটকেন্দ্রে বসানো হবে সিসি ক্যামেরা। ভোটগ্রহণের এই নতুন ব্যবস্থাপনাও মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগে উৎসাহী করবে বলে মনে হয়। ইভিএমের কিছু টেকনিক্যাল সমস্যায় ভোটদানে দেরি হচ্ছে অবশ্য। ভোট গণনা আর ফল প্রকাশেও কিছু বিলম্ব লক্ষ করা গেছে গাজীপুরে। তাতে সন্দেহ-অবিশ্বাসও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এমন ক্ষেত্রে ফেসবুকে দ্রুত উঠে আসা মানুষের তীব্র মতামতও একটা চাপ, যা এখন আরও বেশি করে পড়বে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ওপর। সরকার তো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধন করে এটাকে ভয়ভীতিমুক্ত করে তোলার ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সুতরাং মনে হয়, নির্বাচনসহ বিভিন্ন জরুরি বিষয়ে নাগরিকদের অভিমত প্রদানের প্রবাহ আরও জোরালো হবে। বাংলাদেশের জন্য আলাদা করে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও অবারিত করতে বলা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে সরকার এখন পর্যন্ত ইতিবাচকভাবে নেওয়ার পক্ষেই কথাবার্তা বলছে। সরকার বলছে, আমরা তো ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ই করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী নিজে একাধিকবার এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। এ অবস্থায় বাকি সিটি নির্বাচনগুলো অংশগ্রহণমূলক না হলেও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার সুযোগ তো রয়েই গেছে। কোনো কোনো নির্বাচনবোদ্ধা হয়তো বলবেন, বেছে নেওয়ার মতো যথেষ্টসংখ্যক প্রার্থী না থাকলে নির্বাচন তো অর্থবহ হয় না। এ বক্তব্যে কিছু সত্যতা থাকলেও ভোটাররা কিন্তু তাঁদের অংশগ্রহণ অনেক বাড়িয়ে দেবেন চোখের সামনে থাকা প্রার্থীদের নিয়েই।
গাজীপুরে কি সেটা ঘটতে দেখা যায়নি? বরিশালেও হয়তো একই ঘটনা ঘটবে হাতপাখা মার্কার প্রার্থীকে ঘিরে। ২৭ মের আজকের পত্রিকায় ছোট্ট করে তাঁর যে সাক্ষাৎকার এসেছে, তাতে এই প্রার্থীকে বেশ আত্মপ্রত্যয়ী মনে হয়। সেখানেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর মনোনয়ন ঘিরে বড় বিভক্তি আছে স্থানীয় পর্যায়ে এবং সেটা দূরীকরণের উদ্যোগ সফল হতে দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রক্ষমতার বিশ্বস্ত সহযোগী জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও গরম কথা বলছেন। পরিস্থিতি ঘুরছে বলেই মনে হয়। এ অবস্থায় সরকারপক্ষ মাথা গরম করে কিছু করে ফেললে সেটা হিতে বিপরীত হওয়ার শঙ্কাই বেশি। সিটি নির্বাচনে যা-ই ঘটুক, তাতে তো আর সরকারের বদল ঘটবে না। সরকার থেকেই যাবে এবং সিটি নির্বাচন চলাকালেও তাকে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সার্বিক পরিস্থিতি সামলানোর কাজে মনোনিবেশ করতে হবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে