মাসুদ উর রহমান
শিক্ষকতা করছি প্রায় ২৫ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে নানান ধরনের, নানান চরিত্রের, অল্প, মাঝারি, তুখোড় মেধাবী বা অতি-মেধাবী শিক্ষার্থীর সংস্পর্শে এসেছি। শুরুর দিকের অনেকেই পদ-পদবিতে আমার চেয়ে অনেক এগিয়ে। হিংসা তো নয়ই বরং তাঁরা আমার অহংকারের অনুষঙ্গ। কোথায় যেন পড়েছিলাম—শিক্ষক হচ্ছেন একমাত্র পেশাজীবী, যে অন্যের সন্তানের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হন, গর্ব করেন।
আমার শিক্ষকতা-জীবনের গল্পটি খুবই নিদারুণ। কেন নিদারুণ সেই গল্প আজকের প্রসঙ্গ না। আজকের প্রসঙ্গ শিক্ষাঙ্গনের রাজনীতি নিয়ে। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেই রাজনীতির রং নীল, সাদা, গোলাপি হলেও ফল কুচকুচে কালো! ব্যতিক্রম বাদ দিলে বড় চেয়ারগুলো নীল, সাদা, গোলাপি রং নিয়ে সেই বর্ণিল শিষ্যদের করুণায় ভর করে যাঁরা বসার সুযোগ পান, তাঁরা সরকারি দলের তোষামোদি-চাটুকারি করতে করতে এমন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেন যে দিনকে ‘দিন’ বললে পাছে আবার জীবনে রাতের আঁধার নেমে আসে, সেই ভয়ে থাকেন। একসময় রূপহীন, গুণহীন কর্মে আর কদর্য আচরণে তার কুৎসিত রূপ ফুটে ওঠে। সেই বড় পদধারীরা যখন বিদায় নেন, তখন তাঁর কুকর্মের ফিরিস্তি বের হতে থাকে একে একে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ ছেড়ে যুবলীগের সভাপতি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করা শিক্ষাবিদকেও আমাদের দেখতে হয়েছে।
স্কুল-কলেজগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। যেই বর্ণিল শিষ্যদের কথা একটু আগে বললাম, তাঁদের গালভরা বুলিকে আমরা বলি ছাত্রনেতা। তাঁদের কর্মকে বলি ছাত্ররাজনীতি। কোন উদ্দেশ্যে ছাত্ররাজনীতি বেছে নিলেন, এমন প্রশ্নে একবাক্যে উত্তর—সাধারণ ছাত্রদের দাবি-দাওয়া আদায়, তাদের অধিকার রক্ষার্থে। নিকট অতীতে তাঁদের অধিকার রক্ষার কাজটি বেশি চোখে পড়েছে যখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার হয়ে মাঠে নেমেছিল।
তো শুরুতে যে কথা বলেছিলাম—২৫ বছরের শিক্ষকজীবনে আমার শুরুর দিকের অনেক ছাত্র কর্মজীবনে উচ্চ পদধারী হওয়ার মতো রাজনৈতিক নেতৃত্বে অনেকে ভালো জায়গায় পৌঁছেছেন। তাঁদের কেউ কেউ যেমন বড় ছাত্রনেতা হয়েছেন, কেউ কেউ আবার সেই ধাপ অতিক্রম করে অঙ্গ ও পেশাজীবী সংগঠনের হয়ে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কয়েক মাস আগে হাইকোর্টের রায়ে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরে আসার পর বুয়েট তো বটেই, বাকি সব মেডিকেল কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়েও যখন ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে ছিল, অন্য অনেকের মতো আমিও মতামত ব্যক্ত করা শুরু করলাম। তখন সেই তাঁদের কাউকে কাউকে মনে হচ্ছিল বেশ বিরক্ত।
কারও কারও কমেন্ট-স্ট্যাটাসে সেই বিরক্তিবোধ স্পষ্ট টের পেতে লাগলাম। রাজনীতিতে হাতপাকানো আমার খুব প্রিয় এক ছাত্র অনেকটা ক্ষোভে তাঁর ওয়ালে লিখলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাছে সুবিধা নিতে আরাম, কিন্তু রাজনীতি করা হারাম!’ এর উত্তরে আমি বলি, ‘এদেশের যেকোনো রাজনীতিককে যদি প্রশ্ন করা হয়, “রাজনীতিতে কেন এলেন”, অবশ্যম্ভাবী উত্তর—জনগণের সেবা করতে।’
এখন যিনি সেবার ব্রত নিয়ে রাজনীতিতে আসীন হয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর কাছে সেবা নিতে যাওয়াটাই কি কাঙ্ক্ষিত নয়? নাকি কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেলেও চুপ করেই থাকতে হবে? সেবার আড়ালে আর যা হয় তা হজম করতে হবে?
এটি ঠিক যে ছাত্ররাজনীতির এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে আমাদের। ফুরিয়ে যায়নি হয়তো ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তাও। তবে দেশের প্রয়োজনে সর্বাগ্রে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা যে রাখে ছাত্ররা, তার দৃষ্টান্ত ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন। পাঁচ-ছয় বছর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনেও শিক্ষার্থীরা তা দেখিয়ে দিয়েছিল। ওই আন্দোলনগুলোতে নেতৃত্ব দেওয়াদের বেশির ভাগেরই তো ছাত্ররাজনীতির অতীত অভিজ্ঞতা ছিল না। তারপরও বলা হয় আন্দোলন তিনটি একাত্তরের পর দেশের সেরা ছাত্র আন্দোলন।
আমি বলি কি, যত শুদ্ধ রাজনৈতিক চর্চাই হোক না কেন বা যত ভালো নেতৃত্বই আসুক না কেন, একাত্তরের মতো জনমত এ দেশে আর কখনোই সৃষ্টি হবে না। কেননা মানুষ এখন অনেক বেশি আত্মসচেতন। অনেক বেশি কৌশলী, সুবিধাবাদী। তারা জেনে গেছে যে রাজায় রাজায় ঝগড়া হলে প্রাণ যায় কেবল উলুখাগড়াদেরই। এ দেশে হরতাল কি আর কখনো ফিরে আসবে? আসবে না। একই কারণে আসবে না। এই যে বিএনপি বলে তাদের পক্ষে এত এত জনমত, ইদানীং বিষয়টি আমিও বুঝতে পারছি।
অ্যান্টি-আওয়ামী লীগের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিপরীতে বিএনপির এই যে বিশাল কর্মীবাহিনী—মাঠে তার প্রতিফলন আছে? এবারের ছাত্র আন্দোলনের ওপর ভর করে তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য মাঠে যে বাহিনী নামিয়েছিল, তার অধিকাংশই নাকি পেয়িং পিকেটার! সত্যিকারের নেতা-কর্মীদের সিংহভাগই মাঠে নামেননি, নামবেও না। পেয়িং পিকেটারদের লক্ষ্যই থাকে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে, লাশ ফেলে বড় অঙ্ক হাসিল করা। আর সরকার উৎখাত করতে পারলে তো কথাই নেই! রাজনীতি তথা ছাত্ররাজনীতির সুবিধাবাদিতার জন্যই বি-ছাত্রনেতারা ছিলেন আড়ালে, আর এ-ছাত্রনেতারা টিকতে না পেরে গেছেন পালিয়ে।
কাজেই যত আদর্শ আর উদ্দেশ্যের কথাই বলুক, রাস্তায় পড়ে মার খাওয়ার মতো বেকুব কর্মী আর এখন নেই। আর হবেও না। কেন হবে না তা আগেই বলেছি। কাজেই কৌশলই এখন রাজনীতির প্রধান নিয়ামক। কৌশলে যে এগিয়ে, ক্ষমতার রাজদণ্ড তারই।
দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতির নামে এখন যা হচ্ছে তাতে না শিক্ষার্থী, না অভিভাবক—অসন্তুষ্ট কিন্তু উভয় পক্ষই।
এই নিয়ে একটা ভোট হোক। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, পক্ষের ভোট ১০ শতাংশও হবে না, যদি ভোটার হন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিযোগ্য হতে হলে কী পরিমাণ মেধার দরকার হয়, কী পরিমাণ শ্রম দিতে হয় একজন অভিভাবককে, সেটি আমরা সবাই জানি। অনেকবার দেখেছি কত তুখোড় মেধাবীর স্বপ্নও ভেঙে যেতে। চেষ্টার কোনো ত্রুটি না করে, নিজের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিয়েও অনেকে সরকারি মেডিকেল বা বুয়েটে ভর্তিযোগ্য হতে পারেনি। এ দেশে ভর্তি পরীক্ষার নামে যা হয় তাকে মেধাবী বাছাই না বলে মেধাবী ছাঁটাই বলা অধিকতর যৌক্তিক!
হাজারো শিক্ষার্থী আছে যাদের মাত্র ০.২৫ নম্বর কম পাওয়ার কারণে ডাক্তারি পড়ার আজন্ম লালিত স্বপ্নকে রীতিমতো গলা টিপে মেরে ফেলতে হয়েছে। ০.২৫ নম্বর কম পেয়ে যারা চান্স পায়নি, তারা কি অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী? অবশ্যই না।
এই তাদের মধ্যেই যাদের আর্থিক সংগতি ভালো ছিল, তারা বেসরকারি মেডিকেলে পড়ে পরবর্তী সময়ে অধিকতর যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে। বুঝতেই পারছেন এত কঠিন প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করে মেডিকেল-বুয়েটে ঠাঁই করে নিতে একজন শিক্ষার্থীর, একজন অভিভাবকের কত দিন-বছরের নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টার দরকার হয়। কত ত্যাগ, কত ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেই আঙিনায় প্রবেশ করতে হয়! এতকিছুর পর যখন একজন অভিভাবকের শুধু স্বপ্ন ভঙ্গ নয়, এই অসুস্থ রাজনীতির কারণে সন্তানকেই হারাতে হয় তখন সে বাবা-মায়ের কেমন লাগে, একটু ভাবুন।
প্লিজ। মনে পড়ে গেল কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের সেই লাইন—
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে
কভু আশীবিষে দংশেনি যারে?
কাজেই ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে কথা বলার জন্য যেসব ছাত্রনেতার মনঃকষ্টের কারণ হয়েছি, এই আমি বা আমার মতো আরও অনেকে, তাঁদের আর কীই–বা করার আছে? এখন আমার বুঝ হয়েছে কেন প্রয়োজন ছাত্ররাজনীতির। আর কিছু না হোক, অন্তত ছাত্র আন্দোলন ঠেকানোর জন্যই প্রয়োজন ছাত্ররাজনীতির। এবারে কী হলো তা আর ব্যাখ্যা করার নিশ্চয়ই প্রয়োজন নেই।
এখন আমি আমার মত বদলাচ্ছি—ছাত্ররাজনীতি চলুক। তবে তাঁদের কাছে একটাই মিনতি—আপনারা ছাত্ররাজনীতিটাই করুন, শুধু কোনো মায়ের বুক খালি করার চেষ্টায় লিপ্ত হবেন না।
লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
শিক্ষকতা করছি প্রায় ২৫ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে নানান ধরনের, নানান চরিত্রের, অল্প, মাঝারি, তুখোড় মেধাবী বা অতি-মেধাবী শিক্ষার্থীর সংস্পর্শে এসেছি। শুরুর দিকের অনেকেই পদ-পদবিতে আমার চেয়ে অনেক এগিয়ে। হিংসা তো নয়ই বরং তাঁরা আমার অহংকারের অনুষঙ্গ। কোথায় যেন পড়েছিলাম—শিক্ষক হচ্ছেন একমাত্র পেশাজীবী, যে অন্যের সন্তানের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হন, গর্ব করেন।
আমার শিক্ষকতা-জীবনের গল্পটি খুবই নিদারুণ। কেন নিদারুণ সেই গল্প আজকের প্রসঙ্গ না। আজকের প্রসঙ্গ শিক্ষাঙ্গনের রাজনীতি নিয়ে। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেই রাজনীতির রং নীল, সাদা, গোলাপি হলেও ফল কুচকুচে কালো! ব্যতিক্রম বাদ দিলে বড় চেয়ারগুলো নীল, সাদা, গোলাপি রং নিয়ে সেই বর্ণিল শিষ্যদের করুণায় ভর করে যাঁরা বসার সুযোগ পান, তাঁরা সরকারি দলের তোষামোদি-চাটুকারি করতে করতে এমন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেন যে দিনকে ‘দিন’ বললে পাছে আবার জীবনে রাতের আঁধার নেমে আসে, সেই ভয়ে থাকেন। একসময় রূপহীন, গুণহীন কর্মে আর কদর্য আচরণে তার কুৎসিত রূপ ফুটে ওঠে। সেই বড় পদধারীরা যখন বিদায় নেন, তখন তাঁর কুকর্মের ফিরিস্তি বের হতে থাকে একে একে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ ছেড়ে যুবলীগের সভাপতি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করা শিক্ষাবিদকেও আমাদের দেখতে হয়েছে।
স্কুল-কলেজগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। যেই বর্ণিল শিষ্যদের কথা একটু আগে বললাম, তাঁদের গালভরা বুলিকে আমরা বলি ছাত্রনেতা। তাঁদের কর্মকে বলি ছাত্ররাজনীতি। কোন উদ্দেশ্যে ছাত্ররাজনীতি বেছে নিলেন, এমন প্রশ্নে একবাক্যে উত্তর—সাধারণ ছাত্রদের দাবি-দাওয়া আদায়, তাদের অধিকার রক্ষার্থে। নিকট অতীতে তাঁদের অধিকার রক্ষার কাজটি বেশি চোখে পড়েছে যখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার হয়ে মাঠে নেমেছিল।
তো শুরুতে যে কথা বলেছিলাম—২৫ বছরের শিক্ষকজীবনে আমার শুরুর দিকের অনেক ছাত্র কর্মজীবনে উচ্চ পদধারী হওয়ার মতো রাজনৈতিক নেতৃত্বে অনেকে ভালো জায়গায় পৌঁছেছেন। তাঁদের কেউ কেউ যেমন বড় ছাত্রনেতা হয়েছেন, কেউ কেউ আবার সেই ধাপ অতিক্রম করে অঙ্গ ও পেশাজীবী সংগঠনের হয়ে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কয়েক মাস আগে হাইকোর্টের রায়ে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরে আসার পর বুয়েট তো বটেই, বাকি সব মেডিকেল কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়েও যখন ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে ছিল, অন্য অনেকের মতো আমিও মতামত ব্যক্ত করা শুরু করলাম। তখন সেই তাঁদের কাউকে কাউকে মনে হচ্ছিল বেশ বিরক্ত।
কারও কারও কমেন্ট-স্ট্যাটাসে সেই বিরক্তিবোধ স্পষ্ট টের পেতে লাগলাম। রাজনীতিতে হাতপাকানো আমার খুব প্রিয় এক ছাত্র অনেকটা ক্ষোভে তাঁর ওয়ালে লিখলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাছে সুবিধা নিতে আরাম, কিন্তু রাজনীতি করা হারাম!’ এর উত্তরে আমি বলি, ‘এদেশের যেকোনো রাজনীতিককে যদি প্রশ্ন করা হয়, “রাজনীতিতে কেন এলেন”, অবশ্যম্ভাবী উত্তর—জনগণের সেবা করতে।’
এখন যিনি সেবার ব্রত নিয়ে রাজনীতিতে আসীন হয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর কাছে সেবা নিতে যাওয়াটাই কি কাঙ্ক্ষিত নয়? নাকি কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেলেও চুপ করেই থাকতে হবে? সেবার আড়ালে আর যা হয় তা হজম করতে হবে?
এটি ঠিক যে ছাত্ররাজনীতির এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে আমাদের। ফুরিয়ে যায়নি হয়তো ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তাও। তবে দেশের প্রয়োজনে সর্বাগ্রে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা যে রাখে ছাত্ররা, তার দৃষ্টান্ত ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন। পাঁচ-ছয় বছর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনেও শিক্ষার্থীরা তা দেখিয়ে দিয়েছিল। ওই আন্দোলনগুলোতে নেতৃত্ব দেওয়াদের বেশির ভাগেরই তো ছাত্ররাজনীতির অতীত অভিজ্ঞতা ছিল না। তারপরও বলা হয় আন্দোলন তিনটি একাত্তরের পর দেশের সেরা ছাত্র আন্দোলন।
আমি বলি কি, যত শুদ্ধ রাজনৈতিক চর্চাই হোক না কেন বা যত ভালো নেতৃত্বই আসুক না কেন, একাত্তরের মতো জনমত এ দেশে আর কখনোই সৃষ্টি হবে না। কেননা মানুষ এখন অনেক বেশি আত্মসচেতন। অনেক বেশি কৌশলী, সুবিধাবাদী। তারা জেনে গেছে যে রাজায় রাজায় ঝগড়া হলে প্রাণ যায় কেবল উলুখাগড়াদেরই। এ দেশে হরতাল কি আর কখনো ফিরে আসবে? আসবে না। একই কারণে আসবে না। এই যে বিএনপি বলে তাদের পক্ষে এত এত জনমত, ইদানীং বিষয়টি আমিও বুঝতে পারছি।
অ্যান্টি-আওয়ামী লীগের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিপরীতে বিএনপির এই যে বিশাল কর্মীবাহিনী—মাঠে তার প্রতিফলন আছে? এবারের ছাত্র আন্দোলনের ওপর ভর করে তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য মাঠে যে বাহিনী নামিয়েছিল, তার অধিকাংশই নাকি পেয়িং পিকেটার! সত্যিকারের নেতা-কর্মীদের সিংহভাগই মাঠে নামেননি, নামবেও না। পেয়িং পিকেটারদের লক্ষ্যই থাকে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে, লাশ ফেলে বড় অঙ্ক হাসিল করা। আর সরকার উৎখাত করতে পারলে তো কথাই নেই! রাজনীতি তথা ছাত্ররাজনীতির সুবিধাবাদিতার জন্যই বি-ছাত্রনেতারা ছিলেন আড়ালে, আর এ-ছাত্রনেতারা টিকতে না পেরে গেছেন পালিয়ে।
কাজেই যত আদর্শ আর উদ্দেশ্যের কথাই বলুক, রাস্তায় পড়ে মার খাওয়ার মতো বেকুব কর্মী আর এখন নেই। আর হবেও না। কেন হবে না তা আগেই বলেছি। কাজেই কৌশলই এখন রাজনীতির প্রধান নিয়ামক। কৌশলে যে এগিয়ে, ক্ষমতার রাজদণ্ড তারই।
দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতির নামে এখন যা হচ্ছে তাতে না শিক্ষার্থী, না অভিভাবক—অসন্তুষ্ট কিন্তু উভয় পক্ষই।
এই নিয়ে একটা ভোট হোক। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, পক্ষের ভোট ১০ শতাংশও হবে না, যদি ভোটার হন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিযোগ্য হতে হলে কী পরিমাণ মেধার দরকার হয়, কী পরিমাণ শ্রম দিতে হয় একজন অভিভাবককে, সেটি আমরা সবাই জানি। অনেকবার দেখেছি কত তুখোড় মেধাবীর স্বপ্নও ভেঙে যেতে। চেষ্টার কোনো ত্রুটি না করে, নিজের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিয়েও অনেকে সরকারি মেডিকেল বা বুয়েটে ভর্তিযোগ্য হতে পারেনি। এ দেশে ভর্তি পরীক্ষার নামে যা হয় তাকে মেধাবী বাছাই না বলে মেধাবী ছাঁটাই বলা অধিকতর যৌক্তিক!
হাজারো শিক্ষার্থী আছে যাদের মাত্র ০.২৫ নম্বর কম পাওয়ার কারণে ডাক্তারি পড়ার আজন্ম লালিত স্বপ্নকে রীতিমতো গলা টিপে মেরে ফেলতে হয়েছে। ০.২৫ নম্বর কম পেয়ে যারা চান্স পায়নি, তারা কি অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী? অবশ্যই না।
এই তাদের মধ্যেই যাদের আর্থিক সংগতি ভালো ছিল, তারা বেসরকারি মেডিকেলে পড়ে পরবর্তী সময়ে অধিকতর যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে। বুঝতেই পারছেন এত কঠিন প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করে মেডিকেল-বুয়েটে ঠাঁই করে নিতে একজন শিক্ষার্থীর, একজন অভিভাবকের কত দিন-বছরের নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টার দরকার হয়। কত ত্যাগ, কত ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেই আঙিনায় প্রবেশ করতে হয়! এতকিছুর পর যখন একজন অভিভাবকের শুধু স্বপ্ন ভঙ্গ নয়, এই অসুস্থ রাজনীতির কারণে সন্তানকেই হারাতে হয় তখন সে বাবা-মায়ের কেমন লাগে, একটু ভাবুন।
প্লিজ। মনে পড়ে গেল কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের সেই লাইন—
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে
কভু আশীবিষে দংশেনি যারে?
কাজেই ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে কথা বলার জন্য যেসব ছাত্রনেতার মনঃকষ্টের কারণ হয়েছি, এই আমি বা আমার মতো আরও অনেকে, তাঁদের আর কীই–বা করার আছে? এখন আমার বুঝ হয়েছে কেন প্রয়োজন ছাত্ররাজনীতির। আর কিছু না হোক, অন্তত ছাত্র আন্দোলন ঠেকানোর জন্যই প্রয়োজন ছাত্ররাজনীতির। এবারে কী হলো তা আর ব্যাখ্যা করার নিশ্চয়ই প্রয়োজন নেই।
এখন আমি আমার মত বদলাচ্ছি—ছাত্ররাজনীতি চলুক। তবে তাঁদের কাছে একটাই মিনতি—আপনারা ছাত্ররাজনীতিটাই করুন, শুধু কোনো মায়ের বুক খালি করার চেষ্টায় লিপ্ত হবেন না।
লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে