আজাদুর রহমান চন্দন
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর তিন দিন কার্যত সরকারশূন্য ছিল দেশ। পরে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যাশা অনুযায়ী শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকগুলো একে চিত্রিত করেছে ‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন যাত্রা’, ‘ছাত্র-জনতার স্বপ্নের যাত্রা’ হিসেবে। ৮ আগস্ট রাতে বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এক ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন উৎসবের মুহূর্তে এ স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে একটি অরাজকতা ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। অরাজকতা আমাদের শত্রু। একে দ্রুত পরাজিত করতে হবে।’
এখন দেখা যাক, কী ধরনের অরাজকতা ও ভীতির পরিবেশ তখন বিরাজ করছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরপরই লোকজন গণভবন ও জাতীয় সংসদ ভবনে ঢুকে শুধু তাণ্ডবই চালায়নি, লুটপাটও করেছে। হামলা করা হয় পুলিশ সদর দপ্তরসহ অসংখ্য থানায়। ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ভাঙচুর করার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিজয় সরণিতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি। একই রকম ঘটনা ঘটে সারা দেশেই। আক্রান্ত হয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। যশোরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচতারা হোটেলে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। সরকার পতনের পর দুদিনের সহিংসতায় দেশে দুই শতাধিক মানুষ মারা যায়। শুধু আওয়ামী লীগের লোকজনের বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হলে বিষয়টির এক রকম ব্যাখ্যা দেওয়া যেত। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মারকসহ সব ধরনের ভাস্কর্য ভাঙচুর এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দেয়।
ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেসব অন্যায়-অনাচার করেছেন, সে জন্য তাঁদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনাকে জনতার ক্ষোভের তাৎক্ষণিক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হলেও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্যসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করার কী যুক্তি থাকতে পারে? যদিও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মধ্যেও অন্যায় কিছু খুঁজে পাননি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা! বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা প্রসঙ্গে তিনি একটি বিদেশি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এর জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করুন। তিনি জাতিকে সেদিকে নিয়ে গেছেন, তাঁর পিতার ইমেজ নষ্ট করেছেন। তিনি পুরো দেশের জন্য এমন তিক্ত কিছুই করে গেছেন যে তারা (আন্দোলনকারীরা) এটা করতেও কিছু মনে করছে না। পুরো দায় এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর, যিনি পুরো দেশকে এই পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করিয়েছেন।’
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের পক্ষে থাকা দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধিরা খোঁজ নিয়ে ৫ থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে ৫৯টি জেলায় ১ হাজার ৪৯৪টি ভাস্কর্য, রিলিফ ভাস্কর্য (সিরামিক বা টেরাকোটা দিয়ে দেয়ালে খোদাই করে ফুটিয়ে তোলা অবয়ব), ম্যুরাল ও স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও উপড়ে ফেলার তথ্য পেয়েছেন। ময়মনসিংহ নগরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। ৫ আগস্ট সন্ধ্যার আগমুহূর্তে একদল লোক অটোরিকশা দিয়ে গিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙতে শুরু করে। তখন আনন্দ মিছিল থেকে ছড়িয়ে থাকা অনেক শিক্ষার্থীও এলাকায় ছিল। একই দিনে ময়মনসিংহে শশীলজের ফোয়ারার মাঝখানে থাকা গ্রিক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্যটিও ভেঙে হামলাকারীরা এর মুখাবয়ব নিয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্যটি ৭ আগস্ট দুপুরে ভাঙচুরের পর উপড়ে ফেলা হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর মেহেরপুরের মুজিবনগরেও ছাত্র-জনতা আনন্দ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। তাদের মধ্যে কিছু দুষ্কৃতকারী মুজিবনগর সরকারের শপথ নেওয়ার স্থানে নির্মিত প্রায় ৬০০ ভাস্কর্যের মধ্যে দুই শতাধিক ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। ভাস্কর্য ভাঙা ছাড়া আরও একধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ওই সময়। প্রথম আলো ৮ আগস্ট জানায়, যশোর, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীতে হিন্দুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। হামলা হয়েছে সাতক্ষীরার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছিলেন বাসিন্দারা। ৯ আগস্ট বিডিনিউজ জানায়, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় আনন্দ সিনেপ্লেক্সে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা।
এখন প্রশ্ন হলো, এসব ঘটনাকেই কি ষড়যন্ত্রকারীদের সৃষ্ট অরাজকতা ও ভীতির পরিবেশ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে? এই ষড়যন্ত্রকারী কারা, সে বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট না করলেও বিএনপির নেতৃত্বসহ কেউ কেউ এসবের জন্য আওয়ামী লীগ ও ভারতকেই দোষারোপ করেন। ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ যত অপকর্মই করুক না কেন, যে মুহূর্তে দলটির নেতা-কর্মীরা নিজেদের সহায়-সম্পদই রক্ষা করতে পারছিলেন না, সে অবস্থায় তাঁদের পক্ষে এত অরাজকতা সৃষ্টি করা কতটা সম্ভব? আর এসব ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র যদি থেকেও থাকে তাহলে কারা তাতে জড়িত, সে প্রশ্নের উত্তর জানাটাও জরুরি। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত কিছু সংবাদে চোখ বোলানো যেতে পারে।
প্রথম আলোর অনলাইনে ৮ আগস্ট প্রচারিত খবর অনুযায়ী, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বরকোটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমানসহ তিনজন শিক্ষককে কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে ৬ আগস্ট স্থানীয় এক যুবদল নেতার নেতৃত্বে একদল মানুষ কলেজে ঢুকে পাঠাগারটি ভেঙে ফেলে এবং কয়েক হাজার বই লুট করে নিয়ে যায়। পরে পাঠাগারটি ভেঙে দিয়ে সেখানে ওই যুবদল নেতা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বানাতে থাকেন। ১২ আগস্ট আজকের পত্রিকা ও প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, ৫ আগস্ট যশোরের বাঘারপাড়ায় ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। পরদিন বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উদ্দীন, তাঁর ফুপাতো ভাই বাঘারপাড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি দাউদ হোসেন, বাঘারপাড়া পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহিম এবং বিএনপির কর্মী মহাসিন আলী স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের দখল নিয়ে সেখানে দোকানঘর তোলেন। প্রথম আলোয় ১৪ আগস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার রামচন্দ্রপুর খালের উদ্ধার করা জায়গা আবার দখলে নেওয়া হয়েছে। টিনের ছাউনি ও বেড়া দিয়ে সেখানে বানানো হয়েছে দুটি ছাপড়া ঘর। একটি ছাপড়া ঘরের দরজায় ঝোলানো হয়েছে বিএনপির সাইনবোর্ড। বিবিসি নিউজ বাংলা ১৬ আগস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে কোনো একটি সরকার পরিবর্তনের পর ব্যক্তির বদল ঘটলেও দুর্নীতি, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি কিংবা দখলের যে পুরোনো ব্যবস্থা, সেটার পরিবর্তন খুব একটা হয় না। এবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও কমবেশি একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, প্রভাব খাটানো এমনকি দখলের মতো অভিযোগ উঠছে বিশেষত বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাবর রোডে বিহারি ক্যাম্পের কাছেই রাস্তা ও ফুটপাতের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছিল শ্রমিক লীগের একটি কার্যালয়। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই কার্যালয়ের দখল নিয়েছে মোহাম্মদপুর থানা যুবদল।
এত নজির সত্ত্বেও সাম্প্রতিক অরাজকতার পেছনে আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মী ও ভারতের ষড়যন্ত্র খোঁজাটা আগের ক্ষমতাসীনদের কথাবার্তার মতোই শোনাচ্ছে। আগে আওয়ামী লীগ শিক্ষার্থীদের প্রাণহানিসহ বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দুষত। এখনো আগের মতোই অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হলে সেটি ‘নতুন যাত্রা’র সঙ্গে বেমানান ঠেকে না! এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটক করার কাহিনিগুলোও হুবহু আগের মতোই।
লেখক: আজাদুর রহমান চন্দন
সাংবাদিক ও গবেষক
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর তিন দিন কার্যত সরকারশূন্য ছিল দেশ। পরে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যাশা অনুযায়ী শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকগুলো একে চিত্রিত করেছে ‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন যাত্রা’, ‘ছাত্র-জনতার স্বপ্নের যাত্রা’ হিসেবে। ৮ আগস্ট রাতে বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এক ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন উৎসবের মুহূর্তে এ স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে একটি অরাজকতা ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। অরাজকতা আমাদের শত্রু। একে দ্রুত পরাজিত করতে হবে।’
এখন দেখা যাক, কী ধরনের অরাজকতা ও ভীতির পরিবেশ তখন বিরাজ করছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরপরই লোকজন গণভবন ও জাতীয় সংসদ ভবনে ঢুকে শুধু তাণ্ডবই চালায়নি, লুটপাটও করেছে। হামলা করা হয় পুলিশ সদর দপ্তরসহ অসংখ্য থানায়। ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ভাঙচুর করার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিজয় সরণিতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি। একই রকম ঘটনা ঘটে সারা দেশেই। আক্রান্ত হয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। যশোরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচতারা হোটেলে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। সরকার পতনের পর দুদিনের সহিংসতায় দেশে দুই শতাধিক মানুষ মারা যায়। শুধু আওয়ামী লীগের লোকজনের বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হলে বিষয়টির এক রকম ব্যাখ্যা দেওয়া যেত। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মারকসহ সব ধরনের ভাস্কর্য ভাঙচুর এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দেয়।
ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেসব অন্যায়-অনাচার করেছেন, সে জন্য তাঁদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনাকে জনতার ক্ষোভের তাৎক্ষণিক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হলেও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্যসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করার কী যুক্তি থাকতে পারে? যদিও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মধ্যেও অন্যায় কিছু খুঁজে পাননি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা! বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা প্রসঙ্গে তিনি একটি বিদেশি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এর জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করুন। তিনি জাতিকে সেদিকে নিয়ে গেছেন, তাঁর পিতার ইমেজ নষ্ট করেছেন। তিনি পুরো দেশের জন্য এমন তিক্ত কিছুই করে গেছেন যে তারা (আন্দোলনকারীরা) এটা করতেও কিছু মনে করছে না। পুরো দায় এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর, যিনি পুরো দেশকে এই পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করিয়েছেন।’
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের পক্ষে থাকা দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধিরা খোঁজ নিয়ে ৫ থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে ৫৯টি জেলায় ১ হাজার ৪৯৪টি ভাস্কর্য, রিলিফ ভাস্কর্য (সিরামিক বা টেরাকোটা দিয়ে দেয়ালে খোদাই করে ফুটিয়ে তোলা অবয়ব), ম্যুরাল ও স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও উপড়ে ফেলার তথ্য পেয়েছেন। ময়মনসিংহ নগরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। ৫ আগস্ট সন্ধ্যার আগমুহূর্তে একদল লোক অটোরিকশা দিয়ে গিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙতে শুরু করে। তখন আনন্দ মিছিল থেকে ছড়িয়ে থাকা অনেক শিক্ষার্থীও এলাকায় ছিল। একই দিনে ময়মনসিংহে শশীলজের ফোয়ারার মাঝখানে থাকা গ্রিক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্যটিও ভেঙে হামলাকারীরা এর মুখাবয়ব নিয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্যটি ৭ আগস্ট দুপুরে ভাঙচুরের পর উপড়ে ফেলা হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর মেহেরপুরের মুজিবনগরেও ছাত্র-জনতা আনন্দ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। তাদের মধ্যে কিছু দুষ্কৃতকারী মুজিবনগর সরকারের শপথ নেওয়ার স্থানে নির্মিত প্রায় ৬০০ ভাস্কর্যের মধ্যে দুই শতাধিক ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। ভাস্কর্য ভাঙা ছাড়া আরও একধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ওই সময়। প্রথম আলো ৮ আগস্ট জানায়, যশোর, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীতে হিন্দুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। হামলা হয়েছে সাতক্ষীরার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছিলেন বাসিন্দারা। ৯ আগস্ট বিডিনিউজ জানায়, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় আনন্দ সিনেপ্লেক্সে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা।
এখন প্রশ্ন হলো, এসব ঘটনাকেই কি ষড়যন্ত্রকারীদের সৃষ্ট অরাজকতা ও ভীতির পরিবেশ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে? এই ষড়যন্ত্রকারী কারা, সে বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট না করলেও বিএনপির নেতৃত্বসহ কেউ কেউ এসবের জন্য আওয়ামী লীগ ও ভারতকেই দোষারোপ করেন। ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ যত অপকর্মই করুক না কেন, যে মুহূর্তে দলটির নেতা-কর্মীরা নিজেদের সহায়-সম্পদই রক্ষা করতে পারছিলেন না, সে অবস্থায় তাঁদের পক্ষে এত অরাজকতা সৃষ্টি করা কতটা সম্ভব? আর এসব ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র যদি থেকেও থাকে তাহলে কারা তাতে জড়িত, সে প্রশ্নের উত্তর জানাটাও জরুরি। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত কিছু সংবাদে চোখ বোলানো যেতে পারে।
প্রথম আলোর অনলাইনে ৮ আগস্ট প্রচারিত খবর অনুযায়ী, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বরকোটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমানসহ তিনজন শিক্ষককে কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে ৬ আগস্ট স্থানীয় এক যুবদল নেতার নেতৃত্বে একদল মানুষ কলেজে ঢুকে পাঠাগারটি ভেঙে ফেলে এবং কয়েক হাজার বই লুট করে নিয়ে যায়। পরে পাঠাগারটি ভেঙে দিয়ে সেখানে ওই যুবদল নেতা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বানাতে থাকেন। ১২ আগস্ট আজকের পত্রিকা ও প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, ৫ আগস্ট যশোরের বাঘারপাড়ায় ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। পরদিন বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উদ্দীন, তাঁর ফুপাতো ভাই বাঘারপাড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি দাউদ হোসেন, বাঘারপাড়া পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহিম এবং বিএনপির কর্মী মহাসিন আলী স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের দখল নিয়ে সেখানে দোকানঘর তোলেন। প্রথম আলোয় ১৪ আগস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার রামচন্দ্রপুর খালের উদ্ধার করা জায়গা আবার দখলে নেওয়া হয়েছে। টিনের ছাউনি ও বেড়া দিয়ে সেখানে বানানো হয়েছে দুটি ছাপড়া ঘর। একটি ছাপড়া ঘরের দরজায় ঝোলানো হয়েছে বিএনপির সাইনবোর্ড। বিবিসি নিউজ বাংলা ১৬ আগস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে কোনো একটি সরকার পরিবর্তনের পর ব্যক্তির বদল ঘটলেও দুর্নীতি, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি কিংবা দখলের যে পুরোনো ব্যবস্থা, সেটার পরিবর্তন খুব একটা হয় না। এবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও কমবেশি একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, প্রভাব খাটানো এমনকি দখলের মতো অভিযোগ উঠছে বিশেষত বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাবর রোডে বিহারি ক্যাম্পের কাছেই রাস্তা ও ফুটপাতের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছিল শ্রমিক লীগের একটি কার্যালয়। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই কার্যালয়ের দখল নিয়েছে মোহাম্মদপুর থানা যুবদল।
এত নজির সত্ত্বেও সাম্প্রতিক অরাজকতার পেছনে আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মী ও ভারতের ষড়যন্ত্র খোঁজাটা আগের ক্ষমতাসীনদের কথাবার্তার মতোই শোনাচ্ছে। আগে আওয়ামী লীগ শিক্ষার্থীদের প্রাণহানিসহ বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দুষত। এখনো আগের মতোই অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হলে সেটি ‘নতুন যাত্রা’র সঙ্গে বেমানান ঠেকে না! এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটক করার কাহিনিগুলোও হুবহু আগের মতোই।
লেখক: আজাদুর রহমান চন্দন
সাংবাদিক ও গবেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে