সৌদি অংশের খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানোর পরও এবারের হজ প্যাকেজ ৬ লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ খরচ ৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের প্যাকেজ মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা বেশি। গত বছরের তুলনায় হজের খরচ বাড়লেও পাকিস্তানে প্যাকেজ মূল্য সাড়ে ৪ লাখ টাকার কম।

এদিকে প্যাকেজের উচ্চমূল্যের কারণে নিবন্ধনের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়িয়েও কোটা পূরণ হচ্ছে না। এখনো খালি ৮ হাজার ৫১৩টি। প্যাকেজ মূল্য কমাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।

এমন পরিস্থিতিতে হজের কোটা পূরণ করতে ভবিষ্যতে খরচ আরও বাড়বে বলে প্রচার চালাচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। গত রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও সৌদি আরবের হারাম শরিফের নিকটবর্তী বিভিন্ন হোটেল ভেঙে ফেলায় অধিক মূল্যে হোটেল ভাড়া করতে হচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে প্যাকেজ মূল্য আরও বাড়বে। তাই এ বছরই নিবন্ধিত হতে অনুরোধ জানায় মন্ত্রণালয়। এজেন্সিগুলো বলছে, সাত দফা সময় বাড়িয়েও কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পেয়ে এখন খরচ বাড়ার ‘ভয়’ দেখাচ্ছে মন্ত্রণালয়।

কোটা অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। তাঁদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন। কিন্তু এবার খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রাক্‌-নিবন্ধন করেও অনেকে হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করছেন না। কোটা অপূর্ণ থাকায় সপ্তম দফায় সময় বাড়িয়ে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৬৮৫ জন নিবন্ধন করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আশা করি কোটা পূরণ হবে। হজের বিমানভাড়া নিয়েই বেশি কথা হচ্ছে। করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক পরিস্থিতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং হজযাত্রীদের ফ্লাইট ডেডিকেটেড হওয়ায় বিমানে অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। হাব থেকেও টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে বিমান ভাড়া নির্ধারণ করার দাবি উঠেছে। তাই আগামী বছর হজ প্যাকেজ নির্ধারণের আগে ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে কথা বলব।’

কোন দেশে প্যাকেজ কত 
জানা গেছে, উপমহাদেশে হজের খরচ সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। ভারতে গত বছর এই খরচ ছিল বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৭১ টাকা। এবার হজ কমিটি অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে যাঁরা হজে যাবেন, তাঁদের খরচ হবে ৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। পাকিস্তানে গত বছরের তুলনায় খরচ বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। দেশটিতে এ বছর হজের খরচ হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৮ টাকা। মালয়েশিয়ায় যেসব পরিবারের মাসিক আয় ৯৬ হাজার টাকার কম, তাদের জন্য এ বছর হজের খরচ ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা। এর বেশি হলে দিতে হবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা।

ইন্দোনেশিয়ায় হজের খরচ গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে। তারপরও হজে যেতে খরচ হবে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ টাকা। দেশটির সরকার এ ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়। সিঙ্গাপুরেও হজের খরচ বেড়েছে। সবচেয়ে কম প্যাকেজের জন্য দিতে হবে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা।

সূত্র আরও জানায়, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে জেদ্দার দূরত্ব আকাশপথে ৭ হাজার কিলোমিটার। সৌদি এয়ারলাইনসে এর ভাড়া বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ টাকা। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে জেদ্দার দূরত্ব ৮ হাজার কিলোমিটার, বিমান ভাড়া ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা।

দেশে খরচ বেশি হওয়ার কারণ বিমান ভাড়া
হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হজ প্যাকেজ নিয়ে জনমনে অসন্তোষ আছে। খরচ বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ বিমান ভাড়া। ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে আমাদের বিমান ভাড়া বেশি। আমরা বিমান ভাড়া নির্ধারণের জন্য টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করতে বলেছিলাম। এটা করলে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ সম্ভব হতো। বিমান ভাড়া কমাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি। আশা করি, তিনি মানবিক কারণে এটা দেখবেন।’ 

অনেক এজেন্সি মালিক বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমান তাদের লোকসান পুষিয়ে নিতে এবং প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক দেখাতে প্রতিবছরই হাজিদের বিমান ভাড়া বাড়ায়। খালি ফ্লাইটের হ্যান্ডলিং খরচ কমে যায়। যখন একটি ফ্লাইট কোনো যাত্রী বা লাগেজ ছাড়া খালি আসে, তখন তেল খরচ কমে যায়। কোনো করও নেই। তাহলে দ্বিগুণ ভাড়া তারা কেন নেবে?’

শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, বিমান ২০২১ ও ২০২২ সালে করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত দেখিয়ে ভাড়া বাড়ায়। এবার কেন ভাড়া বাড়াল, সে ব্যাপারে তাদের কোনো জবাব নেই।