শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
জ্যৈষ্ঠের ঝড় হয়ে এসেছিলেন তিনি। ভাদ্রে বিদায়। প্রেমিক, মানবিক, আবেগপ্রবণ—যা-ই বলা হোক না কেন, পরিচয় তাঁর ‘বিদ্রোহী’। লোভ-লালসা-খ্যাতির কাছে মাথা নোয়াননি। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে আজীবন ছিলেন ‘চির উন্নত মম শির’। আসানসোলের দুখু মিয়া, কলকাতার নজরুল, আর আমাদের জাতীয় কবির প্রয়াণ দিবস আজ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘা তখনো শুকায়নি কলকাতায়। পাল্টে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব। রাশিয়াতে দুর্দমনীয় বলশেভিকরা। মুখে মুখে লেনিনের নাম। ভারতে ব্রিটিশ তাড়াও আন্দোলন। তুরস্কে কামাল পাশার দেশ গঠনের লড়াই। এমন পটভূমিতে নজরুল সবে সামরিক উর্দি ছেড়েছেন। বাঙালি পল্টন ছেড়ে চলে এলেন কলকাতায়। তালতলা লেনের ৩/৪ সি বাড়ির একতলা। সঙ্গী কমরেড মুজাফফর আহমদ। ২২ বছরের নজরুলের মনে এই পটপরিবর্তনের ছায়া। এই ঘরে বসেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন মুজাফফর। পরে যিনি হয়ে উঠবেন কমিউনিস্ট আন্দোলনের আলোকবর্তিকা। খালাসিদের সঙ্গে যোগাযোগ, শ্রমিক সভায় অংশগ্রহণ, শ্রমিকদের সংগঠিত করা—এসব দেখছেন নজরুল। ভেতরে-ভেতরে তৈরি হচ্ছেন তিনিও।
১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শীত। মনের আগুন যেন নিভছে না কিছুতেই। ভোররাতের ওম কাবু করতে পারেনি। মাথার ভেতরে থাকা প্রতিবাদী উচ্ছ্বাস একে একে বেরিয়ে এসেছিল পেনসিলের আঁচড়ে। নজরুল লিখতেন কলম দিয়ে দোয়াতের কালিতে ডুবিয়ে ডুবিয়ে। পাছে কোনো লাইন হারিয়ে যায়।
তাই নিলেন পেনসিল। যাতে এক টানে বের করে আনা যায় সব কথা। দোয়াতে বারবার কলম ডোবাতে গিয়ে যদি মাথার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারেন? সঙ্গী মুজাফফর আহমদের স্মৃতিচারণা। তালতলা লেনের বাড়িটির দখিন-পুবের ঘরটি তখন এক নতুন কবির জন্মদানে বিভোর।
যদিও তত দিনে নজরুল লিখে ফেলেছেন কিছু কবিতা! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন মধ্যগগনে। কলকাতার শিল্প-সাহিত্য রবীন্দ্র জমানায় ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রশংসা পাচ্ছেন, তবে নজরুলকে খুব আলাদা করে চেনা যায় না। ভোর হতেই সেই কাগজখানি দিলেন বন্ধু মুজাফফরকে। একটি কবিতা। নাম—বিদ্রোহী। সরাসরি প্রশংসার অভ্যাস নেই মুজাফফরের। তাতে কী। বাংলা সাহিত্যের রবীন্দ্র জমানায় নতুন সুর এসে টোকা দিল। সেই সুর বিদ্রোহের, নিপীড়িত মানুষের ক্ষোভের, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের।
বেলা বাড়তেই হাজির ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকার আফজালুল হক। কবিতা পড়েই নিয়ে যান কপি করে। আসেন অবিনাশ চন্দ্র ভট্টাচার্যও। নিয়ে যান এক কপি। মুজাফফর ‘কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা’য় বলছেন, ‘আমিও বাইরে চলে যাই। তারপরে বাড়িতে ফিরে আসি বারোটার কিছু আগে। আসা মাত্রই নজরুল আমায় জানাল যে, ‘অবিনাশদা (বারীন ঘোষদের বোমার মামলার সহবন্দী শ্রী অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য) এসেছিলেন। তিনি কবিতাটি শুনে বললেন, তুমি পাগল হয়েছ নজরুল, আফজালের কাগজ কখন বার হবে তার স্থিরতা নেই, কপি করে দাও, বিজলীতে ছেপে দিই আগে। তাকেও নজরুল সেই পেনসিলের লেখা হতেই কবিতাটি কপি করে দিয়েছিল।’
১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি। বৃষ্টিস্নাত কলকাতায় সাপ্তাহিক ‘বিজলী’তে বেরোল ‘বিদ্রোহী’। চাহিদা তুঙ্গে। একই সপ্তাহে দুবার ছাপতে হলো। প্রেমেন্দ্র মিত্র স্মৃতিচারণা করছেন এভাবে, ‘অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত একটি কাগজ কোথা থেকে কিনে তীব্র উত্তেজনায় তার ঘরে ঢুকে কাগজটা সামনে মেলে ধরে পড়তে বলেন। চার পয়সা দামের কাগজটি কেনার জন্য শহরে হুড়োহুড়ি পড়ে। ঘরে-বাইরে, মাঠে-ঘাটে-রাজপথে-সভায় এ কবিতা উচ্চৈঃস্বরে আবৃত্তি করা হয়।’ শুধু বিজলী নয়, পরবর্তীকালে কবিতাটি ছাপা হলো মোসলেম ভারত, প্রবাসী, ধূমকেতু ও বসুমতী-তে। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রবলয় ভেঙে আচমকা ঢুকে পড়লেন এক কবি। যুবক তরুণদের আশা, আকাঙ্ক্ষা, ব্যথা, নিরাশায় প্রাণ সঞ্চারিত হলো।
এই নব পরিচয় নিয়ে নজরুল এলেন বাংলা সাহিত্যে। তারপরে একে একে লিখছেন প্রতিবাদী কবিতা। রোষানলে পড়ছেন শাসকদের। ‘আনন্দময়ীর গান’ লিখে হলেন রাজদ্রোহী। নজরুলের কলম চলল। কি কবিতা, কি গান; উপন্যাস, গল্প, গজল, নাটক, প্রবন্ধ—সব শাখাতেই লিখলেন নজরুল। তবু প্রতিবাদী-বিদ্রোহী নাম হয়ে উঠল তাঁর মূল পরিচয়।
জানা যায়, অসুস্থ কবি যখন বাক্শক্তি হারিয়ে ফেলেন, তখন ছেলে সব্যসাচী আবৃত্তি করতেন ‘বিদ্রোহী’। কবিতাটি শুনে ভীষণভাবে উদ্বেলিত হয়ে উঠতেন কবি। যেন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্যই কলম উঠেছিল তাঁর।
জ্যৈষ্ঠের ঝড় হয়ে এসেছিলেন তিনি। ভাদ্রে বিদায়। প্রেমিক, মানবিক, আবেগপ্রবণ—যা-ই বলা হোক না কেন, পরিচয় তাঁর ‘বিদ্রোহী’। লোভ-লালসা-খ্যাতির কাছে মাথা নোয়াননি। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে আজীবন ছিলেন ‘চির উন্নত মম শির’। আসানসোলের দুখু মিয়া, কলকাতার নজরুল, আর আমাদের জাতীয় কবির প্রয়াণ দিবস আজ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘা তখনো শুকায়নি কলকাতায়। পাল্টে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব। রাশিয়াতে দুর্দমনীয় বলশেভিকরা। মুখে মুখে লেনিনের নাম। ভারতে ব্রিটিশ তাড়াও আন্দোলন। তুরস্কে কামাল পাশার দেশ গঠনের লড়াই। এমন পটভূমিতে নজরুল সবে সামরিক উর্দি ছেড়েছেন। বাঙালি পল্টন ছেড়ে চলে এলেন কলকাতায়। তালতলা লেনের ৩/৪ সি বাড়ির একতলা। সঙ্গী কমরেড মুজাফফর আহমদ। ২২ বছরের নজরুলের মনে এই পটপরিবর্তনের ছায়া। এই ঘরে বসেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন মুজাফফর। পরে যিনি হয়ে উঠবেন কমিউনিস্ট আন্দোলনের আলোকবর্তিকা। খালাসিদের সঙ্গে যোগাযোগ, শ্রমিক সভায় অংশগ্রহণ, শ্রমিকদের সংগঠিত করা—এসব দেখছেন নজরুল। ভেতরে-ভেতরে তৈরি হচ্ছেন তিনিও।
১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শীত। মনের আগুন যেন নিভছে না কিছুতেই। ভোররাতের ওম কাবু করতে পারেনি। মাথার ভেতরে থাকা প্রতিবাদী উচ্ছ্বাস একে একে বেরিয়ে এসেছিল পেনসিলের আঁচড়ে। নজরুল লিখতেন কলম দিয়ে দোয়াতের কালিতে ডুবিয়ে ডুবিয়ে। পাছে কোনো লাইন হারিয়ে যায়।
তাই নিলেন পেনসিল। যাতে এক টানে বের করে আনা যায় সব কথা। দোয়াতে বারবার কলম ডোবাতে গিয়ে যদি মাথার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারেন? সঙ্গী মুজাফফর আহমদের স্মৃতিচারণা। তালতলা লেনের বাড়িটির দখিন-পুবের ঘরটি তখন এক নতুন কবির জন্মদানে বিভোর।
যদিও তত দিনে নজরুল লিখে ফেলেছেন কিছু কবিতা! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন মধ্যগগনে। কলকাতার শিল্প-সাহিত্য রবীন্দ্র জমানায় ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রশংসা পাচ্ছেন, তবে নজরুলকে খুব আলাদা করে চেনা যায় না। ভোর হতেই সেই কাগজখানি দিলেন বন্ধু মুজাফফরকে। একটি কবিতা। নাম—বিদ্রোহী। সরাসরি প্রশংসার অভ্যাস নেই মুজাফফরের। তাতে কী। বাংলা সাহিত্যের রবীন্দ্র জমানায় নতুন সুর এসে টোকা দিল। সেই সুর বিদ্রোহের, নিপীড়িত মানুষের ক্ষোভের, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের।
বেলা বাড়তেই হাজির ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকার আফজালুল হক। কবিতা পড়েই নিয়ে যান কপি করে। আসেন অবিনাশ চন্দ্র ভট্টাচার্যও। নিয়ে যান এক কপি। মুজাফফর ‘কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা’য় বলছেন, ‘আমিও বাইরে চলে যাই। তারপরে বাড়িতে ফিরে আসি বারোটার কিছু আগে। আসা মাত্রই নজরুল আমায় জানাল যে, ‘অবিনাশদা (বারীন ঘোষদের বোমার মামলার সহবন্দী শ্রী অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য) এসেছিলেন। তিনি কবিতাটি শুনে বললেন, তুমি পাগল হয়েছ নজরুল, আফজালের কাগজ কখন বার হবে তার স্থিরতা নেই, কপি করে দাও, বিজলীতে ছেপে দিই আগে। তাকেও নজরুল সেই পেনসিলের লেখা হতেই কবিতাটি কপি করে দিয়েছিল।’
১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি। বৃষ্টিস্নাত কলকাতায় সাপ্তাহিক ‘বিজলী’তে বেরোল ‘বিদ্রোহী’। চাহিদা তুঙ্গে। একই সপ্তাহে দুবার ছাপতে হলো। প্রেমেন্দ্র মিত্র স্মৃতিচারণা করছেন এভাবে, ‘অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত একটি কাগজ কোথা থেকে কিনে তীব্র উত্তেজনায় তার ঘরে ঢুকে কাগজটা সামনে মেলে ধরে পড়তে বলেন। চার পয়সা দামের কাগজটি কেনার জন্য শহরে হুড়োহুড়ি পড়ে। ঘরে-বাইরে, মাঠে-ঘাটে-রাজপথে-সভায় এ কবিতা উচ্চৈঃস্বরে আবৃত্তি করা হয়।’ শুধু বিজলী নয়, পরবর্তীকালে কবিতাটি ছাপা হলো মোসলেম ভারত, প্রবাসী, ধূমকেতু ও বসুমতী-তে। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রবলয় ভেঙে আচমকা ঢুকে পড়লেন এক কবি। যুবক তরুণদের আশা, আকাঙ্ক্ষা, ব্যথা, নিরাশায় প্রাণ সঞ্চারিত হলো।
এই নব পরিচয় নিয়ে নজরুল এলেন বাংলা সাহিত্যে। তারপরে একে একে লিখছেন প্রতিবাদী কবিতা। রোষানলে পড়ছেন শাসকদের। ‘আনন্দময়ীর গান’ লিখে হলেন রাজদ্রোহী। নজরুলের কলম চলল। কি কবিতা, কি গান; উপন্যাস, গল্প, গজল, নাটক, প্রবন্ধ—সব শাখাতেই লিখলেন নজরুল। তবু প্রতিবাদী-বিদ্রোহী নাম হয়ে উঠল তাঁর মূল পরিচয়।
জানা যায়, অসুস্থ কবি যখন বাক্শক্তি হারিয়ে ফেলেন, তখন ছেলে সব্যসাচী আবৃত্তি করতেন ‘বিদ্রোহী’। কবিতাটি শুনে ভীষণভাবে উদ্বেলিত হয়ে উঠতেন কবি। যেন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্যই কলম উঠেছিল তাঁর।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে