জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আজ অমর একুশে। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এই দিন রক্ত ঝরেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পঞ্চম বছরে এসেই সন্দেহ, অবিশ্বাস আর শোষণ-বঞ্চনার বিষয়গুলো স্পষ্ট হতে থাকে।
যে বাঙালি অকাতরে পাকিস্তানকে স্বাগত জানিয়েছিল, তারাই তত দিনে পাকিস্তান রাষ্ট্রের আমলাতান্ত্রিক উত্তরাধিকারের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। বাঙালি তখন ধর্মের ধোয়ায় আচ্ছন্ন পথ থেকে ফিরে আসতে শুরু করে আপন সংস্কৃতির দিকে, আপন ঐতিহ্যের দিকে।
একুশ আমাদের জানিয়ে দিয়েছে, পৃথিবীর প্রতিটি ভাষাকে সমান মর্যাদা দেওয়ার সুপ্ত আকাঙ্ক্ষার বসবাস একুশের জঠরে।
বাঙালির রক্তস্নাত পথেই অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজ আলোচনা শুধু একুশের শহীদদের নিয়েই।
গুলি চলেছিল ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টার পর। প্রথম গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন রফিকউদ্দিন আহমদ। ১৭ নম্বর ব্যারাকের পাশে পায়ে চলা পথের সামনে হঠাৎ গুলি লেগে তিনি পড়ে যান। রফিকের মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল। মেডিকেল ছাত্ররা তাঁকে ধরাধরি করে প্রথমে নিয়ে যান জরুরি বিভাগে। রফিক তখন বেঁচে ছিলেন না। তাঁর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় অ্যানাটমি হলের বারান্দায়। লাশের ছবি তুলেছিলেন আমানুল হক। রফিকের আরও একটি ছবির কথা বলেছেন ডা. হুমায়ুন হাই। সম্ভবত ছবিটি তুলেছিলেন মেডিকেল কলেজের ছাত্র সিরাজ জিন্নাত। রফিকের দেহ নিয়ে জরুরি বিভাগে ছুটে গিয়েছিলেন মেডিকেল ছাত্র মশাররফ, হুমায়ুন হাই, মুর্শেদ প্রমুখ।
মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে আই কম দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন রফিক। সিঙ্গাইর থানার পরিমল গ্রামের মো. আবদুল লতিফের বড় ছেলে তিনি। শহীদ রফিককে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু কবরটি সংরক্ষণ করা হয়নি বলে সেখানে নতুন কবর হয়। অ্যানাটমি হলের বারান্দায় ছাত্ররা রফিকের লাশটি লুকিয়ে রেখেছিলেন। ভেবেছিলেন, পরদিন লাশ নিয়ে মিছিল করবেন। কিন্তু মধ্যরাতে পুলিশ এসে রফিকউদ্দিনের লাশ নিয়ে যায় এবং আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করে।
একুশের দ্বিতীয় শহীদ আবদুল জব্বার ছিলেন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের পাঁচুয়ার অধিবাসী। ২০ নম্বর ব্যারাকের হুরমত আলীর সঙ্গে সম্ভবত তিনি দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁর আত্মীয়া ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। গুলির শব্দ শুনেই হয়তো বেরিয়েছিলেন। ২০ নম্বর ব্যারাকের সামনে তাঁর তলপেটে গুলি লাগে। মেডিকেল ছাত্র ফজলে রাব্বী ও সিরাজুল হক আরও দু-তিনজন ছাত্রের সহায়তায় গুলিবিদ্ধ জব্বারকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে গিয়েছিলেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
১২ নম্বর ব্যারাকের সামনে ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন আবুল বরকত। তিনি ছিলেন মুর্শিদাবাদের। ব্যারাকে এসেছিলেন তাঁর বন্ধু মোর্শেদ নেওয়াজের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁকে ধরাধরি করে যাঁরা জরুরি বিভাগে নিয়ে যান, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মেডিকেল ছাত্র শফিকুর রহমান। বরকতের পূর্বপরিচিত মিয়া মোহনও সেখানে ছিলেন। তিনিও বরকতকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন। বরকত তখনো জীবিত ছিলেন। ৩টায় গুলিবিদ্ধ বরকততে জরুরি অপারেশন করা হলো ৪টার দিকে। এই ১ ঘণ্টা কেন অতিবাহিত হলো, তার উত্তর কারও জানা নেই। সময়মতো অপারেশন থিয়েটার সাজানো থাকলে বরকত হয়তো বেঁচে যেতেন।
সচিবালয়ের কর্মচারী সালামও সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙ্গণে তাঁর পায়ের গোড়ালিতে গুলি লেগেছিল।
হাসপাতালে তিনি ছিলেন প্রায় দেড় মাস। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান ৭ এপ্রিল।
সেদিন রাস্তার কোণে এক যুবককেও মৃত পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল বলে লেখা হয়েছে এলিস কমিশনের রিপোর্টে। একই ভাষ্য দিয়েছেন মাদ্রাসাছাত্র লোকমান আমিমি। কিন্তু ওই যুবকের পরিচয় আর পাওয়া যায়নি।
২২ ফেব্রুয়ারিও একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ শহীদদের লাশ নিয়ে যাওয়ায় ২২ ফেব্রুয়ারি গায়েবানা জানাজা পড়া হয়েছিল মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে। এরপর শোকসভা শেষে কয়েক হাজার ছাত্র-জনতার মিছিল হয়েছিল। সেদিন পুলিশের সঙ্গে ছিল ইপিআরও। সেদিন পুলিশ-ইপিআরের গুলি আর বেয়নেট চার্জে শহীদ হন শফিউর রহমান, ওহিউল্লাহ, আবদুল আউয়াল আর সিরাজউদ্দিন।
‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘রাজবন্দীদের মুক্তি চাই’; ‘সর্বস্তরে বাংলা চালু কর’—স্লোগানের পাশাপাশি একুশে থেকে নতুন আরেকটি স্লোগান যুক্ত হয়, ‘শহীদ স্মৃতি অমর হোক’।
আজ অমর একুশে। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এই দিন রক্ত ঝরেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পঞ্চম বছরে এসেই সন্দেহ, অবিশ্বাস আর শোষণ-বঞ্চনার বিষয়গুলো স্পষ্ট হতে থাকে।
যে বাঙালি অকাতরে পাকিস্তানকে স্বাগত জানিয়েছিল, তারাই তত দিনে পাকিস্তান রাষ্ট্রের আমলাতান্ত্রিক উত্তরাধিকারের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। বাঙালি তখন ধর্মের ধোয়ায় আচ্ছন্ন পথ থেকে ফিরে আসতে শুরু করে আপন সংস্কৃতির দিকে, আপন ঐতিহ্যের দিকে।
একুশ আমাদের জানিয়ে দিয়েছে, পৃথিবীর প্রতিটি ভাষাকে সমান মর্যাদা দেওয়ার সুপ্ত আকাঙ্ক্ষার বসবাস একুশের জঠরে।
বাঙালির রক্তস্নাত পথেই অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজ আলোচনা শুধু একুশের শহীদদের নিয়েই।
গুলি চলেছিল ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টার পর। প্রথম গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন রফিকউদ্দিন আহমদ। ১৭ নম্বর ব্যারাকের পাশে পায়ে চলা পথের সামনে হঠাৎ গুলি লেগে তিনি পড়ে যান। রফিকের মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল। মেডিকেল ছাত্ররা তাঁকে ধরাধরি করে প্রথমে নিয়ে যান জরুরি বিভাগে। রফিক তখন বেঁচে ছিলেন না। তাঁর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় অ্যানাটমি হলের বারান্দায়। লাশের ছবি তুলেছিলেন আমানুল হক। রফিকের আরও একটি ছবির কথা বলেছেন ডা. হুমায়ুন হাই। সম্ভবত ছবিটি তুলেছিলেন মেডিকেল কলেজের ছাত্র সিরাজ জিন্নাত। রফিকের দেহ নিয়ে জরুরি বিভাগে ছুটে গিয়েছিলেন মেডিকেল ছাত্র মশাররফ, হুমায়ুন হাই, মুর্শেদ প্রমুখ।
মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে আই কম দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন রফিক। সিঙ্গাইর থানার পরিমল গ্রামের মো. আবদুল লতিফের বড় ছেলে তিনি। শহীদ রফিককে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু কবরটি সংরক্ষণ করা হয়নি বলে সেখানে নতুন কবর হয়। অ্যানাটমি হলের বারান্দায় ছাত্ররা রফিকের লাশটি লুকিয়ে রেখেছিলেন। ভেবেছিলেন, পরদিন লাশ নিয়ে মিছিল করবেন। কিন্তু মধ্যরাতে পুলিশ এসে রফিকউদ্দিনের লাশ নিয়ে যায় এবং আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করে।
একুশের দ্বিতীয় শহীদ আবদুল জব্বার ছিলেন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের পাঁচুয়ার অধিবাসী। ২০ নম্বর ব্যারাকের হুরমত আলীর সঙ্গে সম্ভবত তিনি দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁর আত্মীয়া ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। গুলির শব্দ শুনেই হয়তো বেরিয়েছিলেন। ২০ নম্বর ব্যারাকের সামনে তাঁর তলপেটে গুলি লাগে। মেডিকেল ছাত্র ফজলে রাব্বী ও সিরাজুল হক আরও দু-তিনজন ছাত্রের সহায়তায় গুলিবিদ্ধ জব্বারকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে গিয়েছিলেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
১২ নম্বর ব্যারাকের সামনে ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন আবুল বরকত। তিনি ছিলেন মুর্শিদাবাদের। ব্যারাকে এসেছিলেন তাঁর বন্ধু মোর্শেদ নেওয়াজের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁকে ধরাধরি করে যাঁরা জরুরি বিভাগে নিয়ে যান, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মেডিকেল ছাত্র শফিকুর রহমান। বরকতের পূর্বপরিচিত মিয়া মোহনও সেখানে ছিলেন। তিনিও বরকতকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন। বরকত তখনো জীবিত ছিলেন। ৩টায় গুলিবিদ্ধ বরকততে জরুরি অপারেশন করা হলো ৪টার দিকে। এই ১ ঘণ্টা কেন অতিবাহিত হলো, তার উত্তর কারও জানা নেই। সময়মতো অপারেশন থিয়েটার সাজানো থাকলে বরকত হয়তো বেঁচে যেতেন।
সচিবালয়ের কর্মচারী সালামও সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙ্গণে তাঁর পায়ের গোড়ালিতে গুলি লেগেছিল।
হাসপাতালে তিনি ছিলেন প্রায় দেড় মাস। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান ৭ এপ্রিল।
সেদিন রাস্তার কোণে এক যুবককেও মৃত পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল বলে লেখা হয়েছে এলিস কমিশনের রিপোর্টে। একই ভাষ্য দিয়েছেন মাদ্রাসাছাত্র লোকমান আমিমি। কিন্তু ওই যুবকের পরিচয় আর পাওয়া যায়নি।
২২ ফেব্রুয়ারিও একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ শহীদদের লাশ নিয়ে যাওয়ায় ২২ ফেব্রুয়ারি গায়েবানা জানাজা পড়া হয়েছিল মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে। এরপর শোকসভা শেষে কয়েক হাজার ছাত্র-জনতার মিছিল হয়েছিল। সেদিন পুলিশের সঙ্গে ছিল ইপিআরও। সেদিন পুলিশ-ইপিআরের গুলি আর বেয়নেট চার্জে শহীদ হন শফিউর রহমান, ওহিউল্লাহ, আবদুল আউয়াল আর সিরাজউদ্দিন।
‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘রাজবন্দীদের মুক্তি চাই’; ‘সর্বস্তরে বাংলা চালু কর’—স্লোগানের পাশাপাশি একুশে থেকে নতুন আরেকটি স্লোগান যুক্ত হয়, ‘শহীদ স্মৃতি অমর হোক’।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে