জয়দীপ দে
১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর রানাঘাট থেকে জগতি পর্যন্ত রেললাইন চালু হওয়ার পর জল-কাদায় ডুবে থাকা পূর্ব বাংলা প্রথম দেখল রেল ইঞ্জিনের মুখ। দুটো লোহার পাতের ওপর কয়লার আগুনে কী বিপুল শক্তিতে ছোটে গাড়ি! কামরার সঙ্গে কামরা জুড়িয়ে এক বৃহৎ সরীসৃপের রূপ নিয়ে ছুটে চলে ট্রেন। অপু দুর্গারা কাশবনের ফাঁক দিয়ে অপার মুগ্ধতায় তাকিয়ে দেখে সেই ট্রেন। প্রায় ১৬০ বছর ধরে বাঙালির সেই মুগ্ধতা কাটেনি। কত গান কত গল্প কত অমর সাহিত্য রচনা রেলব্যবস্থাকে ঘিরে। রেলের পেশাজীবীরা স্বতন্ত্র একটি সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এই স্বল্প সময়ে। নদীনালায় বিচ্ছিন্ন বাংলার বিস্তীর্ণ জনপদকে রেলপথ একত্র করেছে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ পৌঁছে দিয়েছে তৃণমূলে। রেলের সঙ্গে পৌঁছেছে ডাক আর টেলিগ্রাফ। পণ্য সরবরাহ সহজ হয়ে ওঠায় অনেক দুর্ভিক্ষ ঠেকিয়ে দেওয়া গেছে রেলব্যবস্থার কারণে।
মুদ্রার ওপর পিঠে আবার অন্ধকারও রয়েছে। এই রেলের কারণে এই অঞ্চলে পানির স্বাভাবিক চলাচলের পথ বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। কমে এসেছে শস্যের উৎপাদন। ব্রিটিশ সৈন্যদল বিদ্রোহ দমনে পেয়েছে নতুন গতি। আসামে হয়েছে শ্রমিক নিগ্রহ।
এ অঞ্চলে রেলব্যবস্থার গোড়াপত্তন মূলত ইংল্যান্ডের পুঁজিপতিদের অলস পুজি খাটানোর ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য। লক্ষ্য ছিল একটাই—অধিক মুনাফা। এই রেলব্যবস্থার কারণে পাট ও চায়ের ব্যবসা সহজ হয়েছে। সস্তা পণ্য ও শ্রমিক পরিবহন সম্ভব হয়েছে। এতে শুধু ইংল্যান্ডের পুঁজিপতিরা লাভবান হয়েছে, তা কিন্তু নয়। এ অঞ্চলে পুঁজির বিকাশ ঘটেছে। স্থানীয় পুঁজিপতিরা লাভবান হয়েছে। হয়েছে শিল্পের বিকাশ।
চল্লিশের দশকে বেসরকারি রেল কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে সরকারি হতে থাকে। মাত্র দশ বছরের মাথায় পুরো রেলব্যবস্থা সরকারি হয়ে যায়। তার পর থেকে দেখা দেয় অন্য রকম সংকট। যে মুনাফার লোভে ভারতের জলাজঙ্গল কেটে বনবাদাড়ে রেললাইন পাতা, সেই মুনাফাটি ঠিকমতো আসছে না। বিশেষ করে ৪৭-এর দেশভাগের পর পাকিস্তান গভীর সংকটের মধ্যে পড়ল। বিশাল রেল নেটওয়ার্ক ও নিবিড় নজরদারির মাধ্যমে ভারতীয় রেলওয়ে কিছুটা লাভের মুখ দেখলেও পাকিস্তান রেলওয়ের জন্ম লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে।
তারপর প্রথম দিকটায় উন্নত সড়ক যোগাযোগ না থাকায় রেলের কোনো বিকল্প ছিল না। জনগণ ব্যাপক হারে ট্রেন ব্যবহার করত। ফলে লোকসান তেমন প্রকট হয়নি। দিন দিন যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের সঙ্গে রেলের ওপর নির্ভরতা কমে আসতে থাকে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন দ্রুত কমে আসায় রেলের লোকসানের বোঝা দিন দিন বেড়েই চলছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের এই লোকসানের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। একটা সময় সরকার এই রেলব্যবস্থার ওপর মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। শ্বেতহস্তীর মতো এই বিশাল ব্যবস্থা সরকারি নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। বিশেষ করে দাতা সংস্থাগুলো ছিল বেসরকারীকরণের পক্ষে।
সে সময় বলা হতো রেলওয়ে বিনিয়োগের অভাবে লোকসান করছে। সঠিক বিনিয়োগ পেলে রেলওয়ে ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু বর্তমানে অনেকাংশেই তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে গত ৫ বছরে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। বর্তমানে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান রয়েছে ৩৯টি উন্নয়ন প্রকল্প। তারপরও প্রতিবছর লোকসানের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। এভাবে বিপুল ভর্তুকি দিয়ে একটা পরিবহনব্যবস্থাকে কত দিন টিকিয়ে রাখা যাবে, সেটাও ভাববার বিষয়।
আদতে রেলওয়ে ব্যবস্থাটি অন্য যেকোনো পরিবহনব্যবস্থা থেকে ব্যয়বহুল। অন্য কোনো পরিবহন খাতে সেবাদাতা সংস্থাকে পরিচালনের সঙ্গে সঙ্গে পথ রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহন করতে হয় না। এমনকি অন্য পরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তাও রেলকে দেখতে হয়। বিভিন্ন সড়কের ওপর লেভেল গেট বসিয়ে সড়কের নিরাপত্তা বিধান করতে হয়। তাই নিরাপদ এই পরিবহনব্যবস্থা মোটেও সাশ্রয়ী নয়। কিন্তু এটিকে জনগণের কাছে সাশ্রয়ী হিসেবে পৌঁছে দিতে হয়। এর ফলেই লাভ-লোকসানের দ্বন্দ্বটা শুরু হয়। যেসব দেশে রেল খাতে যাত্রী পরিবহনে কোনো ভর্তুকি দেওয়া হয় না, সেখানেই দেখবেন সড়কপথ থেকে রেলপথের যাতায়াত খরচ বেশি।
তবে রেল পরিচালনে সৃজনশীলতা প্রয়োগ করা গেলে ভর্তুকি দিয়েও রেল লাভ করতে পারে। যার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ প্রতিবেশী দেশ ভারত। ভারতে একটি ট্রেনের টিকিটে ৫৭ শতাংশ ভর্তুকি দেয় ভারতীয় রেলওয়ে। এই টাকাটা তারা ঠিকই তুলে নেয় রেলব্যবস্থার অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে। ভারতীয় রেলওয়ে পণ্য পরিবহন থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম করপোরেশন (আইআরটিটিসি), ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (ইরকন) মতো প্রতিষ্ঠান থেকে ভারতীয় রেল বিপুল আয় করে। রেলওয়ে সম্পদের সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক ব্যবহার করছে ভারতীয় রেলওয়ে। প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশনে নিজস্ব হোটেল ও ক্যাটারিং সার্ভিস তারা পরিচালনা করছে। গড়ে তুলেছে শপিং মল। এমনকি ওয়েটিং রুমের সেবা অর্থের বিনিময়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া রেলওয়ের সম্পত্তির সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য দুটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিজেদের তথ্যপ্রযুক্তির সেবা তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকেই নেয়। এ রকম ২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ভারতীয় রেলওয়ের। এরা বাণিজ্যিকভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানকেও সেবা দেয়। আইআরটিটিসি এখন বিশেষায়িত পর্যটন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ইরকন বাংলাদেশ, ইরান ও নেপালে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ করছে। এভাবে বহুমুখী আয় থেকে রেলওয়ে লাভের মুখ দেখছে। যেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসানের বোঝা হালকা করতে সম্প্রতি পাকিস্তান তাদের সব গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন বেসরকারি কোম্পানির কাছে নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে। এর ফলে একমাত্র ট্রেন পরিচালন বাদে কোনো দায়িত্ব পালন করবে না পাকিস্তান রেলওয়ে।
আফ্রিকার দেশগুলো ইদানীং চীনের বিনিয়োগে রেলব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। তারা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক মডেল থেকে চীনের মডেলে চলে এসেছে। এতে অল্প খরচে লোকোমোটিভ ও কোচ আনা যাচ্ছে। রেল পরিচালনা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় করে দুর্নীতি ও পরিচলন ব্যয় কমিয়ে নিয়ে এসেছে দারুণভাবে। এ ছাড়া চীনের পরামর্শ ও অর্থায়নে রেলওয়ের ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে তারা। যেমন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে প্রধান রেলওয়ে স্টেশনকে ভূগর্ভে নিয়ে গিয়ে এর বিপুল ভূমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে নাইরোবি রেলওয়ে সিটি। এটি হয়ে উঠবে কেনিয়ান রেলওয়ের বিশাল আয়ের উৎস। এভাবে আফ্রিকার দেশগুলো রেল খাতে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে।
এখন বাংলাদেশের সামনে ভারত ও আফ্রিকা—দুটো মডেল দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশ চাইলে বেছে নিতে পারে কোনো একটি অপশন। অথবা নিজেই একটা মডেল দাঁড় করাতে পারে। তবে বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি ও কাঠামো নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না।
১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর রানাঘাট থেকে জগতি পর্যন্ত রেললাইন চালু হওয়ার পর জল-কাদায় ডুবে থাকা পূর্ব বাংলা প্রথম দেখল রেল ইঞ্জিনের মুখ। দুটো লোহার পাতের ওপর কয়লার আগুনে কী বিপুল শক্তিতে ছোটে গাড়ি! কামরার সঙ্গে কামরা জুড়িয়ে এক বৃহৎ সরীসৃপের রূপ নিয়ে ছুটে চলে ট্রেন। অপু দুর্গারা কাশবনের ফাঁক দিয়ে অপার মুগ্ধতায় তাকিয়ে দেখে সেই ট্রেন। প্রায় ১৬০ বছর ধরে বাঙালির সেই মুগ্ধতা কাটেনি। কত গান কত গল্প কত অমর সাহিত্য রচনা রেলব্যবস্থাকে ঘিরে। রেলের পেশাজীবীরা স্বতন্ত্র একটি সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এই স্বল্প সময়ে। নদীনালায় বিচ্ছিন্ন বাংলার বিস্তীর্ণ জনপদকে রেলপথ একত্র করেছে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ পৌঁছে দিয়েছে তৃণমূলে। রেলের সঙ্গে পৌঁছেছে ডাক আর টেলিগ্রাফ। পণ্য সরবরাহ সহজ হয়ে ওঠায় অনেক দুর্ভিক্ষ ঠেকিয়ে দেওয়া গেছে রেলব্যবস্থার কারণে।
মুদ্রার ওপর পিঠে আবার অন্ধকারও রয়েছে। এই রেলের কারণে এই অঞ্চলে পানির স্বাভাবিক চলাচলের পথ বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। কমে এসেছে শস্যের উৎপাদন। ব্রিটিশ সৈন্যদল বিদ্রোহ দমনে পেয়েছে নতুন গতি। আসামে হয়েছে শ্রমিক নিগ্রহ।
এ অঞ্চলে রেলব্যবস্থার গোড়াপত্তন মূলত ইংল্যান্ডের পুঁজিপতিদের অলস পুজি খাটানোর ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য। লক্ষ্য ছিল একটাই—অধিক মুনাফা। এই রেলব্যবস্থার কারণে পাট ও চায়ের ব্যবসা সহজ হয়েছে। সস্তা পণ্য ও শ্রমিক পরিবহন সম্ভব হয়েছে। এতে শুধু ইংল্যান্ডের পুঁজিপতিরা লাভবান হয়েছে, তা কিন্তু নয়। এ অঞ্চলে পুঁজির বিকাশ ঘটেছে। স্থানীয় পুঁজিপতিরা লাভবান হয়েছে। হয়েছে শিল্পের বিকাশ।
চল্লিশের দশকে বেসরকারি রেল কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে সরকারি হতে থাকে। মাত্র দশ বছরের মাথায় পুরো রেলব্যবস্থা সরকারি হয়ে যায়। তার পর থেকে দেখা দেয় অন্য রকম সংকট। যে মুনাফার লোভে ভারতের জলাজঙ্গল কেটে বনবাদাড়ে রেললাইন পাতা, সেই মুনাফাটি ঠিকমতো আসছে না। বিশেষ করে ৪৭-এর দেশভাগের পর পাকিস্তান গভীর সংকটের মধ্যে পড়ল। বিশাল রেল নেটওয়ার্ক ও নিবিড় নজরদারির মাধ্যমে ভারতীয় রেলওয়ে কিছুটা লাভের মুখ দেখলেও পাকিস্তান রেলওয়ের জন্ম লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে।
তারপর প্রথম দিকটায় উন্নত সড়ক যোগাযোগ না থাকায় রেলের কোনো বিকল্প ছিল না। জনগণ ব্যাপক হারে ট্রেন ব্যবহার করত। ফলে লোকসান তেমন প্রকট হয়নি। দিন দিন যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের সঙ্গে রেলের ওপর নির্ভরতা কমে আসতে থাকে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন দ্রুত কমে আসায় রেলের লোকসানের বোঝা দিন দিন বেড়েই চলছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের এই লোকসানের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। একটা সময় সরকার এই রেলব্যবস্থার ওপর মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। শ্বেতহস্তীর মতো এই বিশাল ব্যবস্থা সরকারি নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। বিশেষ করে দাতা সংস্থাগুলো ছিল বেসরকারীকরণের পক্ষে।
সে সময় বলা হতো রেলওয়ে বিনিয়োগের অভাবে লোকসান করছে। সঠিক বিনিয়োগ পেলে রেলওয়ে ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু বর্তমানে অনেকাংশেই তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে গত ৫ বছরে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। বর্তমানে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান রয়েছে ৩৯টি উন্নয়ন প্রকল্প। তারপরও প্রতিবছর লোকসানের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। এভাবে বিপুল ভর্তুকি দিয়ে একটা পরিবহনব্যবস্থাকে কত দিন টিকিয়ে রাখা যাবে, সেটাও ভাববার বিষয়।
আদতে রেলওয়ে ব্যবস্থাটি অন্য যেকোনো পরিবহনব্যবস্থা থেকে ব্যয়বহুল। অন্য কোনো পরিবহন খাতে সেবাদাতা সংস্থাকে পরিচালনের সঙ্গে সঙ্গে পথ রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহন করতে হয় না। এমনকি অন্য পরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তাও রেলকে দেখতে হয়। বিভিন্ন সড়কের ওপর লেভেল গেট বসিয়ে সড়কের নিরাপত্তা বিধান করতে হয়। তাই নিরাপদ এই পরিবহনব্যবস্থা মোটেও সাশ্রয়ী নয়। কিন্তু এটিকে জনগণের কাছে সাশ্রয়ী হিসেবে পৌঁছে দিতে হয়। এর ফলেই লাভ-লোকসানের দ্বন্দ্বটা শুরু হয়। যেসব দেশে রেল খাতে যাত্রী পরিবহনে কোনো ভর্তুকি দেওয়া হয় না, সেখানেই দেখবেন সড়কপথ থেকে রেলপথের যাতায়াত খরচ বেশি।
তবে রেল পরিচালনে সৃজনশীলতা প্রয়োগ করা গেলে ভর্তুকি দিয়েও রেল লাভ করতে পারে। যার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ প্রতিবেশী দেশ ভারত। ভারতে একটি ট্রেনের টিকিটে ৫৭ শতাংশ ভর্তুকি দেয় ভারতীয় রেলওয়ে। এই টাকাটা তারা ঠিকই তুলে নেয় রেলব্যবস্থার অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে। ভারতীয় রেলওয়ে পণ্য পরিবহন থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম করপোরেশন (আইআরটিটিসি), ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (ইরকন) মতো প্রতিষ্ঠান থেকে ভারতীয় রেল বিপুল আয় করে। রেলওয়ে সম্পদের সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক ব্যবহার করছে ভারতীয় রেলওয়ে। প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশনে নিজস্ব হোটেল ও ক্যাটারিং সার্ভিস তারা পরিচালনা করছে। গড়ে তুলেছে শপিং মল। এমনকি ওয়েটিং রুমের সেবা অর্থের বিনিময়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া রেলওয়ের সম্পত্তির সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য দুটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিজেদের তথ্যপ্রযুক্তির সেবা তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকেই নেয়। এ রকম ২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ভারতীয় রেলওয়ের। এরা বাণিজ্যিকভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানকেও সেবা দেয়। আইআরটিটিসি এখন বিশেষায়িত পর্যটন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ইরকন বাংলাদেশ, ইরান ও নেপালে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ করছে। এভাবে বহুমুখী আয় থেকে রেলওয়ে লাভের মুখ দেখছে। যেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসানের বোঝা হালকা করতে সম্প্রতি পাকিস্তান তাদের সব গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন বেসরকারি কোম্পানির কাছে নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে। এর ফলে একমাত্র ট্রেন পরিচালন বাদে কোনো দায়িত্ব পালন করবে না পাকিস্তান রেলওয়ে।
আফ্রিকার দেশগুলো ইদানীং চীনের বিনিয়োগে রেলব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। তারা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক মডেল থেকে চীনের মডেলে চলে এসেছে। এতে অল্প খরচে লোকোমোটিভ ও কোচ আনা যাচ্ছে। রেল পরিচালনা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় করে দুর্নীতি ও পরিচলন ব্যয় কমিয়ে নিয়ে এসেছে দারুণভাবে। এ ছাড়া চীনের পরামর্শ ও অর্থায়নে রেলওয়ের ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে তারা। যেমন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে প্রধান রেলওয়ে স্টেশনকে ভূগর্ভে নিয়ে গিয়ে এর বিপুল ভূমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে নাইরোবি রেলওয়ে সিটি। এটি হয়ে উঠবে কেনিয়ান রেলওয়ের বিশাল আয়ের উৎস। এভাবে আফ্রিকার দেশগুলো রেল খাতে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে।
এখন বাংলাদেশের সামনে ভারত ও আফ্রিকা—দুটো মডেল দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশ চাইলে বেছে নিতে পারে কোনো একটি অপশন। অথবা নিজেই একটা মডেল দাঁড় করাতে পারে। তবে বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি ও কাঠামো নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে