হাসান মামুন
ওষুধের দাম যে দফায় দফায় বাড়ছে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। তবে বেদনার্ত হওয়ার কারণ রয়েছে। বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই এ জন্য যে, ‘অত্যাবশ্যকীয়’ বাদে আর সব ওষুধের দাম স্থির করছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোই। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তা অনুমোদন করছে মাত্র। কোম্পানির পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, তাদের চাহিদামতো দাম বাড়াতে দিচ্ছে না প্রশাসন।
এ কথা সত্য হলে বলতে হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একটা চেষ্টা অন্তত আছে! নিবন্ধের শুরুতে বেদনার্ত হওয়ার কথাও তুলেছিলাম। সেটা এ জন্য যে, দেশে অনেক দিন ধরেই চলছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এ অবস্থায় জরুরি পণ্য ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়লে নিম্ন ও স্থির আয়ের সিংহভাগ মানুষের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি হয়, তা সহজেই অনুমেয়। একই ওষুধের দাম অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিকবার বাড়ার খবরও রয়েছে। অতীতে ওষুধের দাম বাড়লেও এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বোধ হয় আর যেতে হয়নি।
দেশে এমন রোগী তো বহু, যাদের নিয়মিতভাবে কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। মাঝেমধ্যে যেসব ওষুধ কিনতে হয়, শুধু সেগুলোর দাম বাড়লেও কথা ছিল। ‘তালিকাভুক্ত’ ওষুধের দামও কিন্তু মাঝে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়। তার একটা যুক্তি ছিল যে, দীর্ঘদিন এগুলোর দাম বাড়ানো হয়নি। যে কোম্পানিগুলো সরকার-নির্ধারিত দামে এসব ওষুধ বানিয়ে বাজারে ছাড়ে, তাদের নাকি পোষাচ্ছিল না।
বেসরকারি কোম্পানির কাছে ওষুধ তো একটা ‘বাণিজ্যিক পণ্য’ই। এগুলো বিক্রি করে তাদের ন্যূনতম মুনাফা অন্তত করতে হবে। দাম বাড়ানোর সেই প্রক্রিয়া নিয়ে তাই বেশি প্রশ্ন ওঠেনি, যদিও বহুলভাবে ব্যবহৃত কিছু ওষুধের দাম এক ধাক্কায় অনেক বাড়ানো হয়েছিল।
তবে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এরপরও দফায় দফায় অন্যান্য ওষুধের দাম বাড়া অব্যাহত থাকায়। এটা কোথায় গিয়ে থামবে, তা কেউ বলতে পারছে না! খুচরা দোকানিরাও বলছেন, এভাবে ওষুধের দাম বাড়তে তারা কখনো দেখেননি। ক্রেতারা দোকানে এসে দেখছেন, চেনা ওষুধের দাম নীরবে বেড়ে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। তখন তাঁরা হয়তো কম ওষুধ বা একটা-দুইটা কম কিনে ঘরে ফিরছেন।
একই গ্রুপের দামে কম ওষুধ অনেকে কিনছেন এই অবস্থায়। ইন্টারনেটে আজকাল এ বিষয়ে সহায়তা মেলে। খুচরা বিক্রেতাদেরও কেউ কেউ ক্রেতাদের বুদ্ধি-পরামর্শ দিচ্ছেন নিশ্চয়। ওষুধের বাজারে তাঁদের একটা ভূমিকা তো রয়েছেই। এ কারণে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের প্রস্তুত করার কথাও বলা হয়। আর ‘মডেল ফার্মেসি’তে তো একজন ফার্মাসিস্ট নিয়োজিত রাখার শর্তই রয়েছে। দেশে এমন ফার্মেসি গড়ে উঠেছে অবশ্য কমই। এর সিংহভাগে যথাযথভাবে ওষুধ সংরক্ষিতও থাকছে না—বিশেষত টানা তাপপ্রবাহ চলাকালে। সেটা অবশ্য আরেক প্রসঙ্গ।
এখন দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ যদি ওষুধের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায় স্বাস্থ্যসেবায় ঢিল দিয়ে দেয়, সেটা উদ্বেগজনক। এ ক্ষেত্রে মানুষ যা ব্যয় করে, তার সিংহভাগই যায় ওষুধ কেনায়। একই সময়ে ডাক্তার দেখানো এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচও তাদের বেড়েছে।
কিছুসংখ্যক ডাক্তার অবশ্য এই দুর্দিনে ফি বাড়াননি। তবে প্যাথলজিক্যাল ল্যাবগুলো খরচ বেড়ে যাওয়ার যুক্তিতে টেস্টের রেট বাড়িয়েছে। সরকারি হাসপাতালে অবশ্য এসব ফি এখনো বাড়েনি। মাঝে কথা উঠেছিল, সরকার রাজস্ব আহরণ বাড়াতে এসব ফি কিছুটা বাড়াবে। আসছে বাজেটে কি এমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে? এসব ক্ষেত্রে ফি বরং কিছুটা কমানো প্রয়োজন। সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে ওষুধ বিতরণও জোরদার করা চাই।
ওষুধের দাম বাড়ার নিশ্চয় কারণ রয়েছে। এর প্রস্তুতকারকদের পক্ষ থেকে সেটা মাঝেমধ্যে বলা হচ্ছে বলে তা অজানাও নয়। তবে কারণগুলো বাড়িয়ে বলা হচ্ছে কি না, প্রশ্ন রয়েছে। সব কোম্পানি যে একই উৎস থেকে ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করছে আর দাম একবার বাড়লেও তা এখনো আগের স্তরেই রয়েছে, সেটা তো না-ও হতে পারে। ডলারের দাম অনেকখানি বৃদ্ধি অবশ্য একটা বড় বাস্তবতা। এ কারণে মাঝে ওষুধের কাঁচামালসহ চিকিৎসাসামগ্রীর আমদানি হ্রাসের খবর মিলছিল।
করোনা পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার পর ওষুধের বাজার আরও বড় হয়েছে বলেও খবর পাওয়া যায়। ওষুধ রপ্তানিও বেড়েছে। সে ক্ষেত্রেও দাম বেড়েছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা অবশ্য কম। ওষুধ প্রস্তুতকারকদের অভিযোগও তেমন শোনা যায় না। তবে দেশীয় বাজারে দাম বাড়িয়ে তাঁরা যে সন্তুষ্ট নন, সেটা সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে স্পষ্ট। লক্ষ করব, ওষুধের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারকে উদ্যোগী হতে বলে হাইকোর্টের রুল জারির মধ্যেও বেড়েছে আরও কিছু ওষুধের দাম।
সব ওষুধের দাম বেড়েছে, এটা অবশ্য ঠিক নয়। কত শতাংশ ওষুধের দাম এখনো বাড়েনি, সেটাও জানা দরকার। প্রস্তুতকারকেরা বলতে পারেন, সেগুলোর দাম না বাড়িয়ে তাঁদের চলছে কীভাবে? নাকি ‘পর্যায়ক্রমে’ সব ওষুধের দামই বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের?
উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার যুক্তিতে ওষুধের দাম বাড়ানোটা সহজ করতে তারা সরকারের উচ্চপর্যায়েও কথাবার্তা বলেছেন। তবে সরকার নিশ্চয় চাইবে না, সব ওষুধের দামই কোম্পানির চাহিদামতো বেড়ে যাক। তাদের দাম বাড়ানোর দাবির যৌক্তিকতা ভালোভাবে পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আছে বলে অবশ্য জানা যায় না। তাদের তো এর মান নিয়ন্ত্রণেরও দায়িত্ব রয়েছে, নাকি? দেশীয় বাজারে সরবরাহকৃত ওষুধের মানের প্রশ্নটি কিন্তু কম আলোচিত। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার সময়টায় একশ্রেণির কোম্পানি ওষুধের মানে আপস করলে কি অবাক হওয়া যাবে?
উৎপাদন ব্যয় নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কিংবা কর্মীদের বেতন-ভাতা বেড়ে ওষুধের উৎপাদন ব্যয় বাড়লে এক কথা।আর ‘ব্র্যান্ড নেইমে’ প্রেসক্রিপশন লেখা ডাক্তারদের পেছনে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যয় বাড়ায় কোম্পানির খরচ বাড়লে সেটা অন্য কথা। দুটোই হয়তো এখন একসঙ্গে বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধরনের বৃদ্ধির দায় কেন নেবে রোগীরা? সম্প্রতি আয়োজিত এক সেমিনারে তাই ‘জেনেরিক’ নামে প্রেসক্রিপশন লেখার ওপর নতুন করে জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।
কিছুসংখ্যক ন্যায়পরায়ণ ডাক্তারও আজকাল এ বিষয়ে মুখ খুলছেন। সিএমএইচসহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখা হচ্ছে বলেও জানা গেল। এ অবস্থায় সাধারণ রোগীরা অবশ্য কোন কোম্পানির ওষুধ কিনবেন, সেটা নিয়ে পড়তে পারেন জটিলতায়। তখন কোম্পানির ‘মার্কেটিং’য়ের নিরুপায় কর্মীরা এসে হয়তো ভিড় জমাবেন ওষুধের দোকানগুলোয়। কোনো ধারাতেই এর সহজ সমাধান নেই আসলে। নতুন বিধিব্যবস্থায় ওষুধ নির্বাচনে গুরুতর ভুল হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও বেশি।
ওষুধ কোম্পানিগুলোর ‘আগ্রাসী মার্কেটিং’ বন্ধের আলোচনা আরও বাড়ুক। কারণ এ-সংক্রান্ত ব্যয়টা অবধারিতভাবে গিয়ে ঢুকছে ওষুধের দামে। তবে সাম্প্রতিককালে ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ার ‘অন্যান্য কারণ’ নিশ্চয় বেশি করে রয়েছে। ডলারের দাম আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হয়েছে সম্প্রতি। পুরো বাজারভিত্তিক হলে এর দাম হয়তো আরও বাড়বে।
মাঝে শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম অনেক বাড়ানোর সময়টায় ওষুধশিল্পে ছাড় দেওয়া হয়নি। এ খাতের সিংহভাগ কাঁচামাল এখনো কেন আমদানি করতে হচ্ছে, তারও সদুত্তর নেই। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাঁচামাল দেশেই উৎপাদন করতে ২০০৮ সাল থেকে একটি ‘এপিআই শিল্পপার্ক’ চালুর অ্যাজেন্ডা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। শেষে ব্যাপারটা এসে ঠেকেছে গ্যাসে।
আবাসিকে, শিল্পে, বিদ্যুতে, সারে, এপিআইয়ে—কোথাও আমরা পর্যাপ্ত গ্যাস জোগাতে পারছি না। এত দিনে অন্তত ৫০ শতাংশ কাঁচামাল নিজেরা উৎপাদন করতে পারলেও আজ ওষুধশিল্পে ব্যয় কম রেখে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাটা জোরদার করা যেত। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে আমাদের কিন্তু কম দামে ওষুধের কাঁচামাল আমদানির সুযোগ আর থাকবে না।
তাতে সিংহভাগ ওষুধের দাম বিপুলভাবে বেড়ে গিয়ে বিপর্যয় সৃষ্টির শঙ্কার কথাও মাঝে মাঝে বলা হচ্ছে। আর এর দায় স্বভাবতই বর্তাচ্ছে সরকারের ওপর। গ্যাসের অভাবে প্লট পাওয়া সিংহভাগ ওষুধ কোম্পানি কিন্তু ওখানে এপিআই কারখানা প্রতিষ্ঠায় এখনো উদ্যোগী নয়। অগত্যা তাদের কাঁচামাল আমদানির অস্থিতিশীল বাজারের ওপরই নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় আসছে বাজেটে সরকার শুল্ক-করসহ বড় ছাড় দিতে পারে ওষুধশিল্পে। সেটা করে বিভিন্ন খাতে তাদের ব্যয় ও দামের বিষয়টি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। এমন একটি স্পর্শকাতর খাতে স্বচ্ছতা বা ন্যায্যতায় বড় ঘাটতি রয়েছে—জনমনে এই অনুভূতি যত কমে আসে ততই মঙ্গল। সুশাসনের সংকটকালেও কোনো কোনো খাতে এর অবনতি রোধ করা যে একেবারে অসম্ভব, সেটা কিন্তু বলা যায় না। এই খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা প্রথম জাতীয় ওষুধনীতি-১৯৮২ প্রবর্তিত হয়েছিল সামরিক শাসনামলে, এটাও সবশেষে স্মরণ করা যেতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ওষুধের দাম যে দফায় দফায় বাড়ছে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। তবে বেদনার্ত হওয়ার কারণ রয়েছে। বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই এ জন্য যে, ‘অত্যাবশ্যকীয়’ বাদে আর সব ওষুধের দাম স্থির করছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোই। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তা অনুমোদন করছে মাত্র। কোম্পানির পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, তাদের চাহিদামতো দাম বাড়াতে দিচ্ছে না প্রশাসন।
এ কথা সত্য হলে বলতে হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একটা চেষ্টা অন্তত আছে! নিবন্ধের শুরুতে বেদনার্ত হওয়ার কথাও তুলেছিলাম। সেটা এ জন্য যে, দেশে অনেক দিন ধরেই চলছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এ অবস্থায় জরুরি পণ্য ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়লে নিম্ন ও স্থির আয়ের সিংহভাগ মানুষের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি হয়, তা সহজেই অনুমেয়। একই ওষুধের দাম অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিকবার বাড়ার খবরও রয়েছে। অতীতে ওষুধের দাম বাড়লেও এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বোধ হয় আর যেতে হয়নি।
দেশে এমন রোগী তো বহু, যাদের নিয়মিতভাবে কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। মাঝেমধ্যে যেসব ওষুধ কিনতে হয়, শুধু সেগুলোর দাম বাড়লেও কথা ছিল। ‘তালিকাভুক্ত’ ওষুধের দামও কিন্তু মাঝে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়। তার একটা যুক্তি ছিল যে, দীর্ঘদিন এগুলোর দাম বাড়ানো হয়নি। যে কোম্পানিগুলো সরকার-নির্ধারিত দামে এসব ওষুধ বানিয়ে বাজারে ছাড়ে, তাদের নাকি পোষাচ্ছিল না।
বেসরকারি কোম্পানির কাছে ওষুধ তো একটা ‘বাণিজ্যিক পণ্য’ই। এগুলো বিক্রি করে তাদের ন্যূনতম মুনাফা অন্তত করতে হবে। দাম বাড়ানোর সেই প্রক্রিয়া নিয়ে তাই বেশি প্রশ্ন ওঠেনি, যদিও বহুলভাবে ব্যবহৃত কিছু ওষুধের দাম এক ধাক্কায় অনেক বাড়ানো হয়েছিল।
তবে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এরপরও দফায় দফায় অন্যান্য ওষুধের দাম বাড়া অব্যাহত থাকায়। এটা কোথায় গিয়ে থামবে, তা কেউ বলতে পারছে না! খুচরা দোকানিরাও বলছেন, এভাবে ওষুধের দাম বাড়তে তারা কখনো দেখেননি। ক্রেতারা দোকানে এসে দেখছেন, চেনা ওষুধের দাম নীরবে বেড়ে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। তখন তাঁরা হয়তো কম ওষুধ বা একটা-দুইটা কম কিনে ঘরে ফিরছেন।
একই গ্রুপের দামে কম ওষুধ অনেকে কিনছেন এই অবস্থায়। ইন্টারনেটে আজকাল এ বিষয়ে সহায়তা মেলে। খুচরা বিক্রেতাদেরও কেউ কেউ ক্রেতাদের বুদ্ধি-পরামর্শ দিচ্ছেন নিশ্চয়। ওষুধের বাজারে তাঁদের একটা ভূমিকা তো রয়েছেই। এ কারণে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের প্রস্তুত করার কথাও বলা হয়। আর ‘মডেল ফার্মেসি’তে তো একজন ফার্মাসিস্ট নিয়োজিত রাখার শর্তই রয়েছে। দেশে এমন ফার্মেসি গড়ে উঠেছে অবশ্য কমই। এর সিংহভাগে যথাযথভাবে ওষুধ সংরক্ষিতও থাকছে না—বিশেষত টানা তাপপ্রবাহ চলাকালে। সেটা অবশ্য আরেক প্রসঙ্গ।
এখন দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ যদি ওষুধের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায় স্বাস্থ্যসেবায় ঢিল দিয়ে দেয়, সেটা উদ্বেগজনক। এ ক্ষেত্রে মানুষ যা ব্যয় করে, তার সিংহভাগই যায় ওষুধ কেনায়। একই সময়ে ডাক্তার দেখানো এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচও তাদের বেড়েছে।
কিছুসংখ্যক ডাক্তার অবশ্য এই দুর্দিনে ফি বাড়াননি। তবে প্যাথলজিক্যাল ল্যাবগুলো খরচ বেড়ে যাওয়ার যুক্তিতে টেস্টের রেট বাড়িয়েছে। সরকারি হাসপাতালে অবশ্য এসব ফি এখনো বাড়েনি। মাঝে কথা উঠেছিল, সরকার রাজস্ব আহরণ বাড়াতে এসব ফি কিছুটা বাড়াবে। আসছে বাজেটে কি এমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে? এসব ক্ষেত্রে ফি বরং কিছুটা কমানো প্রয়োজন। সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে ওষুধ বিতরণও জোরদার করা চাই।
ওষুধের দাম বাড়ার নিশ্চয় কারণ রয়েছে। এর প্রস্তুতকারকদের পক্ষ থেকে সেটা মাঝেমধ্যে বলা হচ্ছে বলে তা অজানাও নয়। তবে কারণগুলো বাড়িয়ে বলা হচ্ছে কি না, প্রশ্ন রয়েছে। সব কোম্পানি যে একই উৎস থেকে ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করছে আর দাম একবার বাড়লেও তা এখনো আগের স্তরেই রয়েছে, সেটা তো না-ও হতে পারে। ডলারের দাম অনেকখানি বৃদ্ধি অবশ্য একটা বড় বাস্তবতা। এ কারণে মাঝে ওষুধের কাঁচামালসহ চিকিৎসাসামগ্রীর আমদানি হ্রাসের খবর মিলছিল।
করোনা পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার পর ওষুধের বাজার আরও বড় হয়েছে বলেও খবর পাওয়া যায়। ওষুধ রপ্তানিও বেড়েছে। সে ক্ষেত্রেও দাম বেড়েছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা অবশ্য কম। ওষুধ প্রস্তুতকারকদের অভিযোগও তেমন শোনা যায় না। তবে দেশীয় বাজারে দাম বাড়িয়ে তাঁরা যে সন্তুষ্ট নন, সেটা সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে স্পষ্ট। লক্ষ করব, ওষুধের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারকে উদ্যোগী হতে বলে হাইকোর্টের রুল জারির মধ্যেও বেড়েছে আরও কিছু ওষুধের দাম।
সব ওষুধের দাম বেড়েছে, এটা অবশ্য ঠিক নয়। কত শতাংশ ওষুধের দাম এখনো বাড়েনি, সেটাও জানা দরকার। প্রস্তুতকারকেরা বলতে পারেন, সেগুলোর দাম না বাড়িয়ে তাঁদের চলছে কীভাবে? নাকি ‘পর্যায়ক্রমে’ সব ওষুধের দামই বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের?
উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার যুক্তিতে ওষুধের দাম বাড়ানোটা সহজ করতে তারা সরকারের উচ্চপর্যায়েও কথাবার্তা বলেছেন। তবে সরকার নিশ্চয় চাইবে না, সব ওষুধের দামই কোম্পানির চাহিদামতো বেড়ে যাক। তাদের দাম বাড়ানোর দাবির যৌক্তিকতা ভালোভাবে পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আছে বলে অবশ্য জানা যায় না। তাদের তো এর মান নিয়ন্ত্রণেরও দায়িত্ব রয়েছে, নাকি? দেশীয় বাজারে সরবরাহকৃত ওষুধের মানের প্রশ্নটি কিন্তু কম আলোচিত। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার সময়টায় একশ্রেণির কোম্পানি ওষুধের মানে আপস করলে কি অবাক হওয়া যাবে?
উৎপাদন ব্যয় নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কিংবা কর্মীদের বেতন-ভাতা বেড়ে ওষুধের উৎপাদন ব্যয় বাড়লে এক কথা।আর ‘ব্র্যান্ড নেইমে’ প্রেসক্রিপশন লেখা ডাক্তারদের পেছনে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যয় বাড়ায় কোম্পানির খরচ বাড়লে সেটা অন্য কথা। দুটোই হয়তো এখন একসঙ্গে বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধরনের বৃদ্ধির দায় কেন নেবে রোগীরা? সম্প্রতি আয়োজিত এক সেমিনারে তাই ‘জেনেরিক’ নামে প্রেসক্রিপশন লেখার ওপর নতুন করে জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।
কিছুসংখ্যক ন্যায়পরায়ণ ডাক্তারও আজকাল এ বিষয়ে মুখ খুলছেন। সিএমএইচসহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখা হচ্ছে বলেও জানা গেল। এ অবস্থায় সাধারণ রোগীরা অবশ্য কোন কোম্পানির ওষুধ কিনবেন, সেটা নিয়ে পড়তে পারেন জটিলতায়। তখন কোম্পানির ‘মার্কেটিং’য়ের নিরুপায় কর্মীরা এসে হয়তো ভিড় জমাবেন ওষুধের দোকানগুলোয়। কোনো ধারাতেই এর সহজ সমাধান নেই আসলে। নতুন বিধিব্যবস্থায় ওষুধ নির্বাচনে গুরুতর ভুল হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও বেশি।
ওষুধ কোম্পানিগুলোর ‘আগ্রাসী মার্কেটিং’ বন্ধের আলোচনা আরও বাড়ুক। কারণ এ-সংক্রান্ত ব্যয়টা অবধারিতভাবে গিয়ে ঢুকছে ওষুধের দামে। তবে সাম্প্রতিককালে ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ার ‘অন্যান্য কারণ’ নিশ্চয় বেশি করে রয়েছে। ডলারের দাম আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হয়েছে সম্প্রতি। পুরো বাজারভিত্তিক হলে এর দাম হয়তো আরও বাড়বে।
মাঝে শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম অনেক বাড়ানোর সময়টায় ওষুধশিল্পে ছাড় দেওয়া হয়নি। এ খাতের সিংহভাগ কাঁচামাল এখনো কেন আমদানি করতে হচ্ছে, তারও সদুত্তর নেই। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাঁচামাল দেশেই উৎপাদন করতে ২০০৮ সাল থেকে একটি ‘এপিআই শিল্পপার্ক’ চালুর অ্যাজেন্ডা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। শেষে ব্যাপারটা এসে ঠেকেছে গ্যাসে।
আবাসিকে, শিল্পে, বিদ্যুতে, সারে, এপিআইয়ে—কোথাও আমরা পর্যাপ্ত গ্যাস জোগাতে পারছি না। এত দিনে অন্তত ৫০ শতাংশ কাঁচামাল নিজেরা উৎপাদন করতে পারলেও আজ ওষুধশিল্পে ব্যয় কম রেখে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাটা জোরদার করা যেত। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে আমাদের কিন্তু কম দামে ওষুধের কাঁচামাল আমদানির সুযোগ আর থাকবে না।
তাতে সিংহভাগ ওষুধের দাম বিপুলভাবে বেড়ে গিয়ে বিপর্যয় সৃষ্টির শঙ্কার কথাও মাঝে মাঝে বলা হচ্ছে। আর এর দায় স্বভাবতই বর্তাচ্ছে সরকারের ওপর। গ্যাসের অভাবে প্লট পাওয়া সিংহভাগ ওষুধ কোম্পানি কিন্তু ওখানে এপিআই কারখানা প্রতিষ্ঠায় এখনো উদ্যোগী নয়। অগত্যা তাদের কাঁচামাল আমদানির অস্থিতিশীল বাজারের ওপরই নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় আসছে বাজেটে সরকার শুল্ক-করসহ বড় ছাড় দিতে পারে ওষুধশিল্পে। সেটা করে বিভিন্ন খাতে তাদের ব্যয় ও দামের বিষয়টি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। এমন একটি স্পর্শকাতর খাতে স্বচ্ছতা বা ন্যায্যতায় বড় ঘাটতি রয়েছে—জনমনে এই অনুভূতি যত কমে আসে ততই মঙ্গল। সুশাসনের সংকটকালেও কোনো কোনো খাতে এর অবনতি রোধ করা যে একেবারে অসম্ভব, সেটা কিন্তু বলা যায় না। এই খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা প্রথম জাতীয় ওষুধনীতি-১৯৮২ প্রবর্তিত হয়েছিল সামরিক শাসনামলে, এটাও সবশেষে স্মরণ করা যেতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে