আমীন আল রশীদ
সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা—দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন টিআইবি ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, সেখানে উঠে এসেছে এ তথ্য।
বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার পক্ষে দুর্নীতি করা সহজ, কারণ ইউনিফর্ম ও অস্ত্র প্রজাতন্ত্রের অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের চেয়ে তাদের দৃশ্যত শক্তিমান হিসেবে হাজির করে। মানুষ তাদের ভয় পায়। সমীহ করে। এই ভয় ও সমীহ কাজে লাগিয়ে অনেকেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে ওঠে। তবে তার অর্থ এই নয় যে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই দুর্নীতি করে।
টিআইবির এই প্রতিবেদন প্রকাশের বছর দুই আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে একটি খবরে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে (২০১৫-২০২০) দুর্নীতির অভিযোগে দুদক যত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, তার অর্ধেকই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী।
রাজধানীর অভিজাত গুলশান-বনানী-বারিধারার মতো এলাকায় হাজার হাজার ফ্ল্যাটের মালিক কারা, সেটির নির্মোহ অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে, এর বিরাট অংশের মালিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা—এ রকম একটি ফ্ল্যাট কিনতে যাঁদের অনেকের পাঁচ বছরের বেতন এক জায়গায় করতে হবে। প্রশ্ন হলো, তাঁরা কীভাবে কোটি কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট, বিঘার পর বিঘা জমি, রিসোর্ট, দামি গাড়ি এমনকি দেশের বাইরেও বাড়ি কেনেন? প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা টিউশন ফি দিয়ে সন্তানদের বিদেশে পড়ান কীভাবে?
গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদে অর্থবিলের ওপর আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ দাবি করেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯০ শতাংশ দুর্নীতিতে জড়িত। তিনি বলেন, কাস্টমসে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের প্রত্যেকের ঢাকা শহরে দুইটা-তিনটা বাড়ি। বন বিভাগে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের দুইটা-তিনটা করে সোনার দোকান।
সংবিধানের ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোনো ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না।’ অনুপার্জিত আয় মানে এখানে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে। এর পরের অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে: ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’
প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কত শতাংশ জনগণের সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করেন, আর কতজন সারাক্ষণ অফিসে বসে উপরি আয়ের চিন্তা করেন এবং নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন—তা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের ভাষায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯০ শতাংশই দুর্নীতিগ্রস্ত?
যদি তাই হয় তাহলে দেশটা চলছে কী করে? মাত্র ১০ শতাংশ সৎলোক কী করে ৯০ শতাংশ খারাপ লোকের সঙ্গে কাজ করেন? সুতরাং এর সঠিক পরিসংখ্যান বা অনুপাত বের করা খুব কঠিন। কেন,না ধরা পড়ার আগপর্যন্ত সবাই ফেরেশতা। সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদও শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনিও সব সময় নীতি-নৈতিকতার কথা বলতেন।
সম্প্রতি তুমুল আলোচিত ও বিতর্কিত এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমানও নাকি তাঁর সহকর্মী ও সুহৃদদের সব সময় নীতি-নৈতিকতা মেনে চলার পরামর্শ দিতেন। তার মানে এই লোকগুলোর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত না হলে তাঁরা সারা জীবনই সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে দুর্নীতিমুক্ত ভালো মানুষ হিসেবেই পরিচিত হয়ে থাকতেন। এ কারণেই এই প্রশ্ন জনমনে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে যে পুলিশ-প্রশাসনসহ দেশের অন্যান্য সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে এ রকম বেনজীর ও মতিউরের সংখ্যা কত এবং যাঁদের নাম আসছে, তাঁরা মোট দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির কত শতাংশ?
একটি দেশে কেন দুর্নীতি হয় এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কেন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে ওঠেন বা উঠতে পারেন, তার অনেকগুলো কারণ আছে। কিন্তু কারণ যা-ই থাক, দুর্নীতি প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলো কেমন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়—তার ওপর নির্ভর করে ওই দেশে দুর্নীতি কমবে, নাকি বিস্তৃত হবে।
বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় দুর্নীতি বন্ধে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় যে প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)—তারও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগে আরও চারবার দুদক তদন্ত করে দায়মুক্তি দিয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। উপরন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে কেউ কেউ চাকরি হারিয়েছেন, সেই খবরও দেশবাসীর অজানা নয়। সুতরাং ‘শর্ষের ভেতরে ভূত’ থাকলে দুর্নীতি নিয়ে বছরের পর বছর আলোচনা চলতে থাকবে; রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে এবং বক্তৃতায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলতে থাকবে—আখেরে ‘যে লাউ সেই কদু’। নতুন ইস্যু এলে বেনজীর-মতিউররা গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে হারিয়ে যাবেন।
দুদকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তারা দুর্নীতির তদন্তে ‘সিলেক্টিভ’; অর্থাৎ তারা ক্ষমতাশালী শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে কেবল মধ্যম ও নিম্ন সারির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে বা তাঁদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করে। একটি খবরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের ভাষায়: অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, দুদকের কর্মকর্তারা হয়তো একটি সীমারেখা নির্ধারণ করে নিয়েছেন, যেটার ওপরে তাঁরা যেতে চান না।
প্রশ্ন হলো, এই সীমারেখাটা কি দুদক নিজে ঠিক করেছে, নাকি রাষ্ট্রই তাকে একটা গণ্ডির ভেতরে আটকে রেখেছে? সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি করার অবাধ সুযোগ রেখে এবং তাদের দায়মুক্তির জন্য নানাবিধ আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও দলীয় ব্যবস্থা চালু রেখে, দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব শুধু এক দুদকের ওপর ছেড়ে দেওয়াটাও সমীচীন কি না, সেটিও ভেবে দেখা দরকার।
বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শতকরা কতজন লোক দুর্নীতিগ্রস্ত, তার চেয়ে বড় কথা, এখানকার সিস্টেমটাই এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে এবং চাকরিতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতির পদ্ধতি এত বেশি ত্রুটিপূর্ণ যে এখানে দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাওয়া খুবই সহজ; অর্থাৎ দুর্নীতি করা বা ঘুষ খাওয়া, সরকারি কেনাকাটায় চুরিচামারি, জনগণের অর্থে পরিচালিত প্রকল্পে হরিলুট—ইত্যাদি বন্ধের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে না পারলে ‘সরকারি কর্মচারীদের কত শতাংশ দুর্নীতিগ্রস্ত’—সেই অঙ্ক করে লাভ নেই।
‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’র মতো কিছু শুদ্ধি অভিযান, কিছু লোককে চাকরিচ্যুত করা, কিছু লোকের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার মধ্য দিয়ে জনমনে একটা আশার সঞ্চার করা যায়, দেশে একটা চাঞ্চল্য তৈরি করা যায় বটে—আখেরে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনের জন্য যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা দরকার, সে কাজটি এখনো শুরু হয়েছে বলে মনে হয় না।
সাংবাদিক ও লেখক
সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা—দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন টিআইবি ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, সেখানে উঠে এসেছে এ তথ্য।
বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার পক্ষে দুর্নীতি করা সহজ, কারণ ইউনিফর্ম ও অস্ত্র প্রজাতন্ত্রের অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের চেয়ে তাদের দৃশ্যত শক্তিমান হিসেবে হাজির করে। মানুষ তাদের ভয় পায়। সমীহ করে। এই ভয় ও সমীহ কাজে লাগিয়ে অনেকেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে ওঠে। তবে তার অর্থ এই নয় যে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই দুর্নীতি করে।
টিআইবির এই প্রতিবেদন প্রকাশের বছর দুই আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে একটি খবরে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে (২০১৫-২০২০) দুর্নীতির অভিযোগে দুদক যত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, তার অর্ধেকই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী।
রাজধানীর অভিজাত গুলশান-বনানী-বারিধারার মতো এলাকায় হাজার হাজার ফ্ল্যাটের মালিক কারা, সেটির নির্মোহ অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে, এর বিরাট অংশের মালিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা—এ রকম একটি ফ্ল্যাট কিনতে যাঁদের অনেকের পাঁচ বছরের বেতন এক জায়গায় করতে হবে। প্রশ্ন হলো, তাঁরা কীভাবে কোটি কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট, বিঘার পর বিঘা জমি, রিসোর্ট, দামি গাড়ি এমনকি দেশের বাইরেও বাড়ি কেনেন? প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা টিউশন ফি দিয়ে সন্তানদের বিদেশে পড়ান কীভাবে?
গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদে অর্থবিলের ওপর আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ দাবি করেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯০ শতাংশ দুর্নীতিতে জড়িত। তিনি বলেন, কাস্টমসে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের প্রত্যেকের ঢাকা শহরে দুইটা-তিনটা বাড়ি। বন বিভাগে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের দুইটা-তিনটা করে সোনার দোকান।
সংবিধানের ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোনো ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না।’ অনুপার্জিত আয় মানে এখানে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে। এর পরের অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে: ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’
প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কত শতাংশ জনগণের সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করেন, আর কতজন সারাক্ষণ অফিসে বসে উপরি আয়ের চিন্তা করেন এবং নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন—তা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের ভাষায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯০ শতাংশই দুর্নীতিগ্রস্ত?
যদি তাই হয় তাহলে দেশটা চলছে কী করে? মাত্র ১০ শতাংশ সৎলোক কী করে ৯০ শতাংশ খারাপ লোকের সঙ্গে কাজ করেন? সুতরাং এর সঠিক পরিসংখ্যান বা অনুপাত বের করা খুব কঠিন। কেন,না ধরা পড়ার আগপর্যন্ত সবাই ফেরেশতা। সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদও শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনিও সব সময় নীতি-নৈতিকতার কথা বলতেন।
সম্প্রতি তুমুল আলোচিত ও বিতর্কিত এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমানও নাকি তাঁর সহকর্মী ও সুহৃদদের সব সময় নীতি-নৈতিকতা মেনে চলার পরামর্শ দিতেন। তার মানে এই লোকগুলোর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত না হলে তাঁরা সারা জীবনই সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে দুর্নীতিমুক্ত ভালো মানুষ হিসেবেই পরিচিত হয়ে থাকতেন। এ কারণেই এই প্রশ্ন জনমনে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে যে পুলিশ-প্রশাসনসহ দেশের অন্যান্য সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে এ রকম বেনজীর ও মতিউরের সংখ্যা কত এবং যাঁদের নাম আসছে, তাঁরা মোট দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির কত শতাংশ?
একটি দেশে কেন দুর্নীতি হয় এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কেন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে ওঠেন বা উঠতে পারেন, তার অনেকগুলো কারণ আছে। কিন্তু কারণ যা-ই থাক, দুর্নীতি প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলো কেমন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়—তার ওপর নির্ভর করে ওই দেশে দুর্নীতি কমবে, নাকি বিস্তৃত হবে।
বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় দুর্নীতি বন্ধে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় যে প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)—তারও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগে আরও চারবার দুদক তদন্ত করে দায়মুক্তি দিয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। উপরন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে কেউ কেউ চাকরি হারিয়েছেন, সেই খবরও দেশবাসীর অজানা নয়। সুতরাং ‘শর্ষের ভেতরে ভূত’ থাকলে দুর্নীতি নিয়ে বছরের পর বছর আলোচনা চলতে থাকবে; রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে এবং বক্তৃতায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলতে থাকবে—আখেরে ‘যে লাউ সেই কদু’। নতুন ইস্যু এলে বেনজীর-মতিউররা গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে হারিয়ে যাবেন।
দুদকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তারা দুর্নীতির তদন্তে ‘সিলেক্টিভ’; অর্থাৎ তারা ক্ষমতাশালী শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে কেবল মধ্যম ও নিম্ন সারির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে বা তাঁদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করে। একটি খবরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের ভাষায়: অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, দুদকের কর্মকর্তারা হয়তো একটি সীমারেখা নির্ধারণ করে নিয়েছেন, যেটার ওপরে তাঁরা যেতে চান না।
প্রশ্ন হলো, এই সীমারেখাটা কি দুদক নিজে ঠিক করেছে, নাকি রাষ্ট্রই তাকে একটা গণ্ডির ভেতরে আটকে রেখেছে? সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি করার অবাধ সুযোগ রেখে এবং তাদের দায়মুক্তির জন্য নানাবিধ আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও দলীয় ব্যবস্থা চালু রেখে, দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব শুধু এক দুদকের ওপর ছেড়ে দেওয়াটাও সমীচীন কি না, সেটিও ভেবে দেখা দরকার।
বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শতকরা কতজন লোক দুর্নীতিগ্রস্ত, তার চেয়ে বড় কথা, এখানকার সিস্টেমটাই এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে এবং চাকরিতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতির পদ্ধতি এত বেশি ত্রুটিপূর্ণ যে এখানে দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাওয়া খুবই সহজ; অর্থাৎ দুর্নীতি করা বা ঘুষ খাওয়া, সরকারি কেনাকাটায় চুরিচামারি, জনগণের অর্থে পরিচালিত প্রকল্পে হরিলুট—ইত্যাদি বন্ধের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে না পারলে ‘সরকারি কর্মচারীদের কত শতাংশ দুর্নীতিগ্রস্ত’—সেই অঙ্ক করে লাভ নেই।
‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’র মতো কিছু শুদ্ধি অভিযান, কিছু লোককে চাকরিচ্যুত করা, কিছু লোকের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার মধ্য দিয়ে জনমনে একটা আশার সঞ্চার করা যায়, দেশে একটা চাঞ্চল্য তৈরি করা যায় বটে—আখেরে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনের জন্য যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা দরকার, সে কাজটি এখনো শুরু হয়েছে বলে মনে হয় না।
সাংবাদিক ও লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে