নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের পর আজ শনিবার খুলনায় গণসমাবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি। সমাবেশ সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে খুলনায় শুরু হয়েছে পূর্বঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট। এদিন দুপুরে হঠাৎ এল লঞ্চ ধর্মঘটেরও ঘোষণা। দূরপাল্লার বাসসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৭টি রুটে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে খুলনা থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো বাস। কোনো গণপরিবহনও ঢোকেনি খুলনায়। এতে করে দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে খুলনা। বাহন না পেয়ে পথে পথে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে যেতে গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা।
খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি এবং খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে শুক্র-শনিবার বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বাগেরহাট আন্তজেলা বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতিও দুদিনের ধর্মঘট ডাকে। কুষ্টিয়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানান, খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি এবং খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে খুলনা-যশোরগামী কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে না। সাতক্ষীরা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি জানান, খুলনার কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতাদের আহ্বানে তাঁদের বাস চলাচল বন্ধ করতে হয়েছে।
বিস্তারিত জানিয়েছেন আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা
খুলনা জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের কারণে কুষ্টিয়া থেকে ঝিনাইদহ হয়ে খুলনাগামী বাসগুলো চলাচল করছে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত। গতকাল বিভিন্ন বাস টার্মিনালে যাত্রীর চাপ অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। খুলনাগামী যাত্রীর সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। খুলনায় বাস ঢুকতে না পারায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ হয়ে যশোরে গিয়ে বাস থেকে নেমে যেতে হয়েছে তাদের। এরপর বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। খুলনাগামী যাত্রী ইশিতা বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে খুলনা যেতে হবে, তাই টার্মিনালে এলাম। কিন্তু শুনছি, যশোরে গিয়ে নেমে যেতে হবে।’ আরেক যাত্রী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্মঘট ডাকা মানেই আমাদের দুর্ভোগ। বাস মালিক সমিতি কিংবা রাজনৈতিক দল হোক বা সংগঠনই হোক, তারা ধর্মঘট ডেকে বসে থাকে। আমাদের কথা ভাবে না।’
খুলনাগামী গড়াই পরিবহনের একটি বাসের চালক তমাল ইসলাম বলেন, ‘ঝিনাইদহ থেকে যশোর পর্যন্ত যাচ্ছি। খুলনায় বিএনপির সমাবেশের জন্য ধর্মঘটের কারণে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হয়েই আবার ফিরে আসতে হবে। খুলনায় ধর্মঘটের কারণে যাত্রীসংখ্যাও অনেক কম।’
ঝিনাইদহ বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির নেতা রোকনুজ্জামান রানু বলেন, ‘ঝিনাইদহ থেকে কোনো পরিবহন ধর্মঘট নেই। তবে খুলনা মালিক সমিতি মহাসড়কে নিষিদ্ধ তিন চাকার যানবাহন চলাচল বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে সমর্থন জানিয়ে যশোর পর্যন্ত বাস চলাচল রেখেছি।’
বাগেরহাটে আওয়ামী লীগ ও সহযোগীদের মহড়া
বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, টার্মিনালে থাকা সব পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ। বাগেরহাট থেকে খুলনাগামী বাস ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো বাসই চলছে না। বাস টার্মিনালসহ আশপাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের লাঠি হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে।
বিকেলে কাপড়ের ব্যাগ ও লুঙ্গি পরে হেঁটে যেতে দেখা যায় দুই ব্যক্তিকে। কথায় কথায় তাঁরা জানান, কচুয়া উপজেলা থেকে এসেছেন। পথে দুই স্থানে বাধার মুখে পড়েছেন। রাজমিস্ত্রির কাজে যাচ্ছেন বলে পার পেয়েছেন। আসলে কোথায় যাচ্ছেন, জানতে চাইলে প্রথমে কাজের কথা বললেও কিছুক্ষণ পরে বলেন, ‘সমাবেশে যাচ্ছি’।
জনদুর্ভোগ মাগুরায়
মাগুরা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি কাজের জন্য খুলনায় যেতে বাধ্য হয়ে অনেকে এসেছেন। গন্তব্যে না যেতে পারায় হতাশায় পড়েছেন তাঁদের কেউ কেউ। নৌবাহিনীর একটি চাকরির পরীক্ষা দিতে খুলনায় যেতে বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন মাগুরা আঠারখাদা এলাকার মৃগিডাঙ্গা গ্রামের শৈশব মণ্ডল। তিনি জানান, শনিবার খুলনায় তাঁর পরীক্ষা। এ জন্য বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন, যশোরের বাস আছে, তা-ও অনিয়মিত।
এদিন মাগুরা থেকে খুলনার বাসগুলো ছেড়ে যায়নি। এমনকি নিয়মিত পরিবহন বলতেও কিছু ছিল না। এই রুটে কেন বাস বন্ধ, সে প্রশ্ন ছিল অপেক্ষমাণ অনেক যাত্রীর। কিন্তু কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি কাউন্টার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নাজমা খাতুন নামের একজন বলেন, ‘শুনেছি খুলনায় এক রাজনৈতিক দলের সমাবেশ। কিন্তু এর জন্য বাস বন্ধ কি না জানি না। আমি বাচ্চাকে নিয়ে তিন ঘণ্টা এক কাউন্টারে বসে আছি। এখন যা অবস্থা, তাতে ভেঙে ভেঙে খুলনায় যেতে হবে। ছোট বাচ্চাকে নিয়ে খুব কষ্ট হবে।’
যশোরগামী একটি বাসের কাউন্টারের মাস্টার নবাব আলী জানান, যশোর পর্যন্ত বাস যাচ্ছে। তবে খুলনায় যেতে হলে কয়েকটি বাস পাল্টাতে হবে। খুলনার বাস কেন বন্ধ, তা তিনি বলতে পারেন না।
কয়েকজন যাত্রী জানান, বাসে পুলিশের তল্লাশি চলছে। কেন এটা করা হচ্ছে, তা তাঁরা বলতে পারছেন না। তবে ওই যাত্রীদের ধারণা, যশোর কিংবা খুলনার দিকে তাঁরা যাবেন এমন সন্দেহ করা হচ্ছে।
মাগুরা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার বাদশা মিয়া জানান, ঢাকা থেকে যে পরিবহনগুলো খুলনায় যেত, সেগুলো যাচ্ছে না। আবার খুলনা থেকে কোনো পরিবহনই মাগুরা হয়ে ঢাকা যাচ্ছে না। এ জন্য আজ যাত্রীসংখ্যা খুব নগণ্য।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান বলেন, পুলিশ বিএনপির সমাবেশে যেতে কোনো বাধা দিচ্ছে না। যা হচ্ছে তা রুটিনমাফিক কাজ। এটা পুলিশ নিয়মিত করে থাকে।
গতকাল সকাল থেকে শ্যামনগর, মুন্সিগঞ্জ, বংশীপুর বাসষ্ট্যান্ডসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্বল্পসংখ্যক মানুষ ভ্যানে কিংবা বিকল্প উপায়ে নিকটস্থ গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষই যানবাহন না পেয়ে বাড়ির পথ ধরেছে।
আঞ্চলিক বাস মালিক-শ্রমিক সমিতির (কালীগঞ্জ) সভাপতি মনিরুজ্জামান জানান, বাস বন্ধের সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
সাতক্ষীরায় আটকা অনেক যাত্রী
সাতক্ষীরায় দূরদূরান্ত থেকে আসা অনেক যাত্রী আটকা পড়েন, বিশেষ করে খুলনাগামী যাত্রীরা পড়েছেন মহাসংকটে। অনেকে আবার পরীক্ষা দিতে যেতে পারছেন না পরিবহনসংকটে। অনেকেই বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে ভ্যান বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন।
যশোর পৌরসভার বাসিন্দা আকরামুল হক বলেন, তিনি সাতক্ষীরায় এসেছেন গত বৃহস্পতিবার। গতকাল বাড়িতে ফেরার জন্য তিনি সাতক্ষীরা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখেন, বাস বন্ধ। বাড়ি ফিরতে না পেরে খুবই দুর্ভোগে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সাইফুল করিম সাবু বলেন, বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে শ্রমিকেরা ধর্মঘট করেছেন। খুলনার কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতাদের আহ্বানে তাঁদের বাস চলাচল বন্ধ করতে হয়েছে। এ ছাড়া জোর করে চলাচল করতে গেলে তাঁদের ওপর হামলা ও ভাঙচুর হতে পারে, এই আশঙ্কায় তাঁরা খুলনা রুটের বাস বন্ধ রেখেছেন।
দুর্বিষহ দুর্ভোগ যশোরে
যশোর থেকে খুলনাগামী আন্তজেলা বাসসহ সব ধরনের বাস বন্ধ রেখেছেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রুটগুলোর যাত্রীবাহী বাসের শেষ গন্তব্যস্থল হলো খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল। তবে খুলনার বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে দুই দিনের ‘পরিবহন ধর্মঘটের’ কারণে খুলনার টার্মিনালগুলোতে ঢুকতে পারছে না যাত্রীবাহী বাস। ফলে এই অঞ্চলের রুটগুলোর যাত্রীবাহী বাস থেমে জড়ো হচ্ছে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। দূরদূরান্ত থেকে যাত্রীরা খুলনায় যেতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়ছে। এমনকি অনেকেই নিজ গন্তব্যে না যেতে পেরে যশোর থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। আবার অনেকেই সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যে যায়।
যশোর থেকে খুলনাগামী কোনো বাস চলেনি গতকাল সকাল থেকে; এমনকি খুলনা থেকেও কোনো বাস যশোরে ছেড়ে আসেনি। বাকি ১৯ রুটের বাস যশোর টার্মিনালে নিয়মিত আসছে এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে খুলনা ছাড়া সব রুটে ছেড়ে যায়। পরিবহনশ্রমিকেরা জানান, যশোর থেকে খুলনাগামী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর কারণ তাঁরা বলতে পারছেন না।
গতকাল দুপুরে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী যাত্রীবাহী পরিবহন যশোর বাস টার্মিনালে থেমে যাচ্ছে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই মানুষকে বাস থেকে যশোরে নামিয়ে দেওয়া হয়। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীদের। যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ইজিবাইক বা নছিমনে করে ভেঙে ভেঙে যেতে হয়।
চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের পর আজ শনিবার খুলনায় গণসমাবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি। সমাবেশ সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে খুলনায় শুরু হয়েছে পূর্বঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট। এদিন দুপুরে হঠাৎ এল লঞ্চ ধর্মঘটেরও ঘোষণা। দূরপাল্লার বাসসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৭টি রুটে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে খুলনা থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো বাস। কোনো গণপরিবহনও ঢোকেনি খুলনায়। এতে করে দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে খুলনা। বাহন না পেয়ে পথে পথে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে যেতে গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা।
খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি এবং খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে শুক্র-শনিবার বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বাগেরহাট আন্তজেলা বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতিও দুদিনের ধর্মঘট ডাকে। কুষ্টিয়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানান, খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি এবং খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে খুলনা-যশোরগামী কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে না। সাতক্ষীরা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি জানান, খুলনার কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতাদের আহ্বানে তাঁদের বাস চলাচল বন্ধ করতে হয়েছে।
বিস্তারিত জানিয়েছেন আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা
খুলনা জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের কারণে কুষ্টিয়া থেকে ঝিনাইদহ হয়ে খুলনাগামী বাসগুলো চলাচল করছে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত। গতকাল বিভিন্ন বাস টার্মিনালে যাত্রীর চাপ অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। খুলনাগামী যাত্রীর সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। খুলনায় বাস ঢুকতে না পারায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ হয়ে যশোরে গিয়ে বাস থেকে নেমে যেতে হয়েছে তাদের। এরপর বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। খুলনাগামী যাত্রী ইশিতা বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে খুলনা যেতে হবে, তাই টার্মিনালে এলাম। কিন্তু শুনছি, যশোরে গিয়ে নেমে যেতে হবে।’ আরেক যাত্রী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্মঘট ডাকা মানেই আমাদের দুর্ভোগ। বাস মালিক সমিতি কিংবা রাজনৈতিক দল হোক বা সংগঠনই হোক, তারা ধর্মঘট ডেকে বসে থাকে। আমাদের কথা ভাবে না।’
খুলনাগামী গড়াই পরিবহনের একটি বাসের চালক তমাল ইসলাম বলেন, ‘ঝিনাইদহ থেকে যশোর পর্যন্ত যাচ্ছি। খুলনায় বিএনপির সমাবেশের জন্য ধর্মঘটের কারণে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হয়েই আবার ফিরে আসতে হবে। খুলনায় ধর্মঘটের কারণে যাত্রীসংখ্যাও অনেক কম।’
ঝিনাইদহ বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির নেতা রোকনুজ্জামান রানু বলেন, ‘ঝিনাইদহ থেকে কোনো পরিবহন ধর্মঘট নেই। তবে খুলনা মালিক সমিতি মহাসড়কে নিষিদ্ধ তিন চাকার যানবাহন চলাচল বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে সমর্থন জানিয়ে যশোর পর্যন্ত বাস চলাচল রেখেছি।’
বাগেরহাটে আওয়ামী লীগ ও সহযোগীদের মহড়া
বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, টার্মিনালে থাকা সব পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ। বাগেরহাট থেকে খুলনাগামী বাস ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো বাসই চলছে না। বাস টার্মিনালসহ আশপাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের লাঠি হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে।
বিকেলে কাপড়ের ব্যাগ ও লুঙ্গি পরে হেঁটে যেতে দেখা যায় দুই ব্যক্তিকে। কথায় কথায় তাঁরা জানান, কচুয়া উপজেলা থেকে এসেছেন। পথে দুই স্থানে বাধার মুখে পড়েছেন। রাজমিস্ত্রির কাজে যাচ্ছেন বলে পার পেয়েছেন। আসলে কোথায় যাচ্ছেন, জানতে চাইলে প্রথমে কাজের কথা বললেও কিছুক্ষণ পরে বলেন, ‘সমাবেশে যাচ্ছি’।
জনদুর্ভোগ মাগুরায়
মাগুরা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি কাজের জন্য খুলনায় যেতে বাধ্য হয়ে অনেকে এসেছেন। গন্তব্যে না যেতে পারায় হতাশায় পড়েছেন তাঁদের কেউ কেউ। নৌবাহিনীর একটি চাকরির পরীক্ষা দিতে খুলনায় যেতে বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন মাগুরা আঠারখাদা এলাকার মৃগিডাঙ্গা গ্রামের শৈশব মণ্ডল। তিনি জানান, শনিবার খুলনায় তাঁর পরীক্ষা। এ জন্য বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন, যশোরের বাস আছে, তা-ও অনিয়মিত।
এদিন মাগুরা থেকে খুলনার বাসগুলো ছেড়ে যায়নি। এমনকি নিয়মিত পরিবহন বলতেও কিছু ছিল না। এই রুটে কেন বাস বন্ধ, সে প্রশ্ন ছিল অপেক্ষমাণ অনেক যাত্রীর। কিন্তু কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি কাউন্টার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নাজমা খাতুন নামের একজন বলেন, ‘শুনেছি খুলনায় এক রাজনৈতিক দলের সমাবেশ। কিন্তু এর জন্য বাস বন্ধ কি না জানি না। আমি বাচ্চাকে নিয়ে তিন ঘণ্টা এক কাউন্টারে বসে আছি। এখন যা অবস্থা, তাতে ভেঙে ভেঙে খুলনায় যেতে হবে। ছোট বাচ্চাকে নিয়ে খুব কষ্ট হবে।’
যশোরগামী একটি বাসের কাউন্টারের মাস্টার নবাব আলী জানান, যশোর পর্যন্ত বাস যাচ্ছে। তবে খুলনায় যেতে হলে কয়েকটি বাস পাল্টাতে হবে। খুলনার বাস কেন বন্ধ, তা তিনি বলতে পারেন না।
কয়েকজন যাত্রী জানান, বাসে পুলিশের তল্লাশি চলছে। কেন এটা করা হচ্ছে, তা তাঁরা বলতে পারছেন না। তবে ওই যাত্রীদের ধারণা, যশোর কিংবা খুলনার দিকে তাঁরা যাবেন এমন সন্দেহ করা হচ্ছে।
মাগুরা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার বাদশা মিয়া জানান, ঢাকা থেকে যে পরিবহনগুলো খুলনায় যেত, সেগুলো যাচ্ছে না। আবার খুলনা থেকে কোনো পরিবহনই মাগুরা হয়ে ঢাকা যাচ্ছে না। এ জন্য আজ যাত্রীসংখ্যা খুব নগণ্য।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান বলেন, পুলিশ বিএনপির সমাবেশে যেতে কোনো বাধা দিচ্ছে না। যা হচ্ছে তা রুটিনমাফিক কাজ। এটা পুলিশ নিয়মিত করে থাকে।
গতকাল সকাল থেকে শ্যামনগর, মুন্সিগঞ্জ, বংশীপুর বাসষ্ট্যান্ডসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্বল্পসংখ্যক মানুষ ভ্যানে কিংবা বিকল্প উপায়ে নিকটস্থ গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষই যানবাহন না পেয়ে বাড়ির পথ ধরেছে।
আঞ্চলিক বাস মালিক-শ্রমিক সমিতির (কালীগঞ্জ) সভাপতি মনিরুজ্জামান জানান, বাস বন্ধের সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
সাতক্ষীরায় আটকা অনেক যাত্রী
সাতক্ষীরায় দূরদূরান্ত থেকে আসা অনেক যাত্রী আটকা পড়েন, বিশেষ করে খুলনাগামী যাত্রীরা পড়েছেন মহাসংকটে। অনেকে আবার পরীক্ষা দিতে যেতে পারছেন না পরিবহনসংকটে। অনেকেই বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে ভ্যান বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন।
যশোর পৌরসভার বাসিন্দা আকরামুল হক বলেন, তিনি সাতক্ষীরায় এসেছেন গত বৃহস্পতিবার। গতকাল বাড়িতে ফেরার জন্য তিনি সাতক্ষীরা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখেন, বাস বন্ধ। বাড়ি ফিরতে না পেরে খুবই দুর্ভোগে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সাইফুল করিম সাবু বলেন, বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে শ্রমিকেরা ধর্মঘট করেছেন। খুলনার কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতাদের আহ্বানে তাঁদের বাস চলাচল বন্ধ করতে হয়েছে। এ ছাড়া জোর করে চলাচল করতে গেলে তাঁদের ওপর হামলা ও ভাঙচুর হতে পারে, এই আশঙ্কায় তাঁরা খুলনা রুটের বাস বন্ধ রেখেছেন।
দুর্বিষহ দুর্ভোগ যশোরে
যশোর থেকে খুলনাগামী আন্তজেলা বাসসহ সব ধরনের বাস বন্ধ রেখেছেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রুটগুলোর যাত্রীবাহী বাসের শেষ গন্তব্যস্থল হলো খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল। তবে খুলনার বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে দুই দিনের ‘পরিবহন ধর্মঘটের’ কারণে খুলনার টার্মিনালগুলোতে ঢুকতে পারছে না যাত্রীবাহী বাস। ফলে এই অঞ্চলের রুটগুলোর যাত্রীবাহী বাস থেমে জড়ো হচ্ছে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। দূরদূরান্ত থেকে যাত্রীরা খুলনায় যেতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়ছে। এমনকি অনেকেই নিজ গন্তব্যে না যেতে পেরে যশোর থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। আবার অনেকেই সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যে যায়।
যশোর থেকে খুলনাগামী কোনো বাস চলেনি গতকাল সকাল থেকে; এমনকি খুলনা থেকেও কোনো বাস যশোরে ছেড়ে আসেনি। বাকি ১৯ রুটের বাস যশোর টার্মিনালে নিয়মিত আসছে এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে খুলনা ছাড়া সব রুটে ছেড়ে যায়। পরিবহনশ্রমিকেরা জানান, যশোর থেকে খুলনাগামী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর কারণ তাঁরা বলতে পারছেন না।
গতকাল দুপুরে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী যাত্রীবাহী পরিবহন যশোর বাস টার্মিনালে থেমে যাচ্ছে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই মানুষকে বাস থেকে যশোরে নামিয়ে দেওয়া হয়। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীদের। যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ইজিবাইক বা নছিমনে করে ভেঙে ভেঙে যেতে হয়।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে