বিভুরঞ্জন সরকার
আজ ২৪ আগস্ট। ইয়াসমিন হত্যা দিবস। ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য কিশোরী ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছিলেন। এ ঘটনায় সারা দেশ নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। পরে এ দিনটি ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে নারী অধিকার সংগঠন ও কর্মীরা পালন করে আসছেন। প্রশ্ন হলো, দেশে নারী নির্যাতন কি কমেছে? নারীর চলাচল কি নিরাপদ হয়েছে? নারীর প্রতি বৈষম্য কমেছে? কর্মক্ষেত্রে কি নারীরা হয়রানিমুক্ত হয়েছেন?
২০২০ সালে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। শাস্তি বাড়লে ধর্ষণের প্রবণতা কমবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। ধর্ষকদের কঠিন শাস্তি, অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পক্ষে যেমন মত আছে, আবার বিপক্ষেও যুক্তি আছে। শুধু আইন অপরাধ কমাতে পারে না। অপরাধ সংঘটনের বিদ্যমান কারণগুলো দূর না করলে অপরাধ অব্যাহত থাকবে বলে কেউ কেউ মনে করেন। নারী নির্যাতন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা দেশে যে একটি বড় সমস্যা হয়েই দেখা দিয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে—এটা নিয়ে খুব একটা বিতর্ক আছে বলে মনে হয় না। কীভাবে সেটা সম্ভব তা নিয়ে আছে মতভিন্নতা।
নারীকে অধস্তন হিসেবে দেখার পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি যত দিন বদল না হবে, নারীকে মানুষ হিসেবে দেখার মানসিকতা যত দিন গড়ে না উঠবে, তত দিন নারীকে অসম্মান এবং বৈষম্যের শিকার হতে হবে বলেই মনে করা হয়। নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ কুসংস্কার, পশ্চাৎপদ দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক ও ধর্মীয় রক্ষণশীলতা, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হয়েছে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী রাজনীতি। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেই নারীদের অগ্রসর হতে হচ্ছে, বিজয় ছিনিয়ে আনতে হচ্ছে। পদে পদে বাধা, তারপরও বর্তমান সরকারের কিছু নারীবান্ধব নীতি-পদক্ষেপের কারণে নারীদের অবস্থা ও অবস্থানের যখন দৃশ্যমান অগ্রগতি দেশের বাইরেও অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, প্রশংসিত হচ্ছিল, তখন নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক।
একটু নজর দিলেই দেখা যাবে, আমাদের দেশে মেয়েরা শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ব্যানবেইসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় বেশি। ১৯৯০ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত ছিল ৬৬: ৩৪। ২০০৫ সালে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যায় সমতা আসে। বর্তমানে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। উপবৃত্তি, বেতন মওকুফ, বিনা মূল্যে বই দেওয়া ইত্যাদি কারণে ছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে বলে ধারণা করা যায়। তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় কম। শিক্ষার সর্বস্তরেই নারী শিক্ষকের সংখ্যা এখনো কম। কোটার ব্যবস্থা করেও এ ক্ষেত্রে সমতা আনা যায়নি। টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক হিসাবে নারীরা বেশ পিছিয়েই আছেন।
শিক্ষার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও নারীরা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আসছেন। পারিবারিক ও সামাজিক বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে নারীরা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস যথা গার্মেন্টস, হিমায়িত চিংড়ি, চামড়া, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, চা ইত্যাদি ক্ষেত্রের মোট শ্রমিকের বেশির ভাগই নারী। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে মোট রপ্তানি আয়ের ৭৫ ভাগ উপার্জনকারী তৈরি পোশাকশিল্প খাতের শতকরা ৮০ ভাগ শ্রমিকই নারী। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রম বাজারে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলছেন নারীরা। তাঁদের অবদানে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বিদেশে কর্মরত নারীরাও বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
নারীদের এই সাফল্যের পেছনে এ দেশের নারী ও মানবাধিকারকর্মীদের নিরন্তর লড়াই-সংগ্রামের পাশাপাশি সরকার ও রাষ্ট্র অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। তারপরও বাংলাদেশের নারীদের এই জয়যাত্রা কণ্টকহীন নয়। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নানান বৈষম্য-নির্যাতনের শিকার হয়েও নারীরা বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। একটু তলিয়ে দেখলেই দেখা যাবে, এখনো এ দেশের নারীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেক উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও প্রবল পুরুষতান্ত্রিকতার বেড়াজাল থেকে তাঁরা মুক্ত হতে পারছেন না। নারীর অগ্রগতির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হলে প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো, নারীর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতন বন্ধ করা। নারী নির্যাতনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতির দিক অনেক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারী আন্দোলনের অনেক বিস্তৃতি এবং নানান পর্যায়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও নারী নির্যাতনের ঘটনা কমছে না। নিরাপত্তার অভাব নারীর স্বাভাবিক চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে, নারীকে তাঁর কর্মক্ষেত্র থেকেও পিছু হটতে বাধ্য করে। নির্যাতনের মূল কারণ কেবল ব্যক্তি হিসেবে নারীর প্রতি হীন ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই নয়; বরং নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সম্মিলিত সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে বিদ্যমান নারী-পুরুষ বৈষম্য হ্রাস ও নারী নির্যাতন দূরীকরণের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন বেসরকারি, মানবাধিকার, নারী অধিকার সংগঠন ও সুশীল সমাজের ভূমিকা রাখার অবকাশ আছে। তবে রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ও তার বাস্তবায়নের কাজটি মূলত রাজনৈতিক এবং চূড়ান্ত বিচারে রাজনৈতিক দলই কেবল এ কাজটি করতে পারে। নারী নির্যাতন রোধ এবং সমাজে বিরাজমান বৈষম্যমূলক অবস্থার পরিবর্তনে এখন সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কোনো বিকল্প নেই।
এটা মনে রাখতে হবে, নারীর রাজনৈতিক অধিকার অর্জন মানে অন্য কারও স্থান দখল নয়; বরং রাজনৈতিক জীবনে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করাটাই এখানে মূল উদ্দেশ্য। রাজনীতিতে এবং ক্ষমতাকাঠামো থেকে জনগোষ্ঠীর অর্ধেক অংশ নারীদের বাদ দিয়ে কখনো সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আর রাজনীতিতে নারীদের প্রতিনিধিত্বহীনতা বা ন্যূনতম প্রতিনিধিত্ব কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শক্তির দিক হতে পারে না।
ক্ষমতার রাজনীতির আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থেকে ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধ যারা সংঘটিত করে, তাদের সাধারণ শাস্তির আওতায় আনা যায় না। ধর্ষণ এবং হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ করে কেউ যেন রেহাই না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কার্যত বিচারহীনতার নামান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিকমতো ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া, পারিবারিক ও সামাজিক মনোভঙ্গি, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ এবং সাক্ষ্য আইনের জটিলতার কারণেও নির্যাতনের শিকার নারী ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়ে থাকেন। শুধু কঠোর শাস্তির আইন করলেই হবে না, দ্রুততম সময়ে বিচার এবং রায় কার্যকর করার নজির স্থাপন করতে হবে।
অপরাধ করে কেউ পার পাবে না—এটা কেবল মুখে বললে হবে না, সবার কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নারীর প্রতি অধিক সংবেদনশীল হতে হবে। নারী নির্যাতন বন্ধে সরকারের সদিচ্ছার বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, পুরুষদের হতে হবে মানবিক। নারীকে ভোগের বস্তু ভাবার চিরায়ত ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নারীর পোশাক, নারীর চালচলনকে যাঁরা নারীর প্রতি সহিংসতার কারণ বলে মনে করেন, তাঁরা আসলে ভেতরে-ভেতরে একটি নির্যাতক মানসিকতাই পোষণ করেন। কোনো কুযুক্তি যেন নারীর অধিকার ও মর্যাদা হরণের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত না হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সরকারের।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আজ ২৪ আগস্ট। ইয়াসমিন হত্যা দিবস। ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য কিশোরী ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছিলেন। এ ঘটনায় সারা দেশ নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। পরে এ দিনটি ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে নারী অধিকার সংগঠন ও কর্মীরা পালন করে আসছেন। প্রশ্ন হলো, দেশে নারী নির্যাতন কি কমেছে? নারীর চলাচল কি নিরাপদ হয়েছে? নারীর প্রতি বৈষম্য কমেছে? কর্মক্ষেত্রে কি নারীরা হয়রানিমুক্ত হয়েছেন?
২০২০ সালে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। শাস্তি বাড়লে ধর্ষণের প্রবণতা কমবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। ধর্ষকদের কঠিন শাস্তি, অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পক্ষে যেমন মত আছে, আবার বিপক্ষেও যুক্তি আছে। শুধু আইন অপরাধ কমাতে পারে না। অপরাধ সংঘটনের বিদ্যমান কারণগুলো দূর না করলে অপরাধ অব্যাহত থাকবে বলে কেউ কেউ মনে করেন। নারী নির্যাতন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা দেশে যে একটি বড় সমস্যা হয়েই দেখা দিয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে—এটা নিয়ে খুব একটা বিতর্ক আছে বলে মনে হয় না। কীভাবে সেটা সম্ভব তা নিয়ে আছে মতভিন্নতা।
নারীকে অধস্তন হিসেবে দেখার পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি যত দিন বদল না হবে, নারীকে মানুষ হিসেবে দেখার মানসিকতা যত দিন গড়ে না উঠবে, তত দিন নারীকে অসম্মান এবং বৈষম্যের শিকার হতে হবে বলেই মনে করা হয়। নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ কুসংস্কার, পশ্চাৎপদ দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক ও ধর্মীয় রক্ষণশীলতা, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হয়েছে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী রাজনীতি। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেই নারীদের অগ্রসর হতে হচ্ছে, বিজয় ছিনিয়ে আনতে হচ্ছে। পদে পদে বাধা, তারপরও বর্তমান সরকারের কিছু নারীবান্ধব নীতি-পদক্ষেপের কারণে নারীদের অবস্থা ও অবস্থানের যখন দৃশ্যমান অগ্রগতি দেশের বাইরেও অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, প্রশংসিত হচ্ছিল, তখন নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক।
একটু নজর দিলেই দেখা যাবে, আমাদের দেশে মেয়েরা শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ব্যানবেইসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় বেশি। ১৯৯০ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত ছিল ৬৬: ৩৪। ২০০৫ সালে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যায় সমতা আসে। বর্তমানে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। উপবৃত্তি, বেতন মওকুফ, বিনা মূল্যে বই দেওয়া ইত্যাদি কারণে ছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে বলে ধারণা করা যায়। তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় কম। শিক্ষার সর্বস্তরেই নারী শিক্ষকের সংখ্যা এখনো কম। কোটার ব্যবস্থা করেও এ ক্ষেত্রে সমতা আনা যায়নি। টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক হিসাবে নারীরা বেশ পিছিয়েই আছেন।
শিক্ষার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও নারীরা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আসছেন। পারিবারিক ও সামাজিক বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে নারীরা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস যথা গার্মেন্টস, হিমায়িত চিংড়ি, চামড়া, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, চা ইত্যাদি ক্ষেত্রের মোট শ্রমিকের বেশির ভাগই নারী। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে মোট রপ্তানি আয়ের ৭৫ ভাগ উপার্জনকারী তৈরি পোশাকশিল্প খাতের শতকরা ৮০ ভাগ শ্রমিকই নারী। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রম বাজারে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলছেন নারীরা। তাঁদের অবদানে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বিদেশে কর্মরত নারীরাও বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
নারীদের এই সাফল্যের পেছনে এ দেশের নারী ও মানবাধিকারকর্মীদের নিরন্তর লড়াই-সংগ্রামের পাশাপাশি সরকার ও রাষ্ট্র অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। তারপরও বাংলাদেশের নারীদের এই জয়যাত্রা কণ্টকহীন নয়। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নানান বৈষম্য-নির্যাতনের শিকার হয়েও নারীরা বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। একটু তলিয়ে দেখলেই দেখা যাবে, এখনো এ দেশের নারীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেক উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও প্রবল পুরুষতান্ত্রিকতার বেড়াজাল থেকে তাঁরা মুক্ত হতে পারছেন না। নারীর অগ্রগতির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হলে প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো, নারীর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতন বন্ধ করা। নারী নির্যাতনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতির দিক অনেক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারী আন্দোলনের অনেক বিস্তৃতি এবং নানান পর্যায়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও নারী নির্যাতনের ঘটনা কমছে না। নিরাপত্তার অভাব নারীর স্বাভাবিক চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে, নারীকে তাঁর কর্মক্ষেত্র থেকেও পিছু হটতে বাধ্য করে। নির্যাতনের মূল কারণ কেবল ব্যক্তি হিসেবে নারীর প্রতি হীন ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই নয়; বরং নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সম্মিলিত সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে বিদ্যমান নারী-পুরুষ বৈষম্য হ্রাস ও নারী নির্যাতন দূরীকরণের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন বেসরকারি, মানবাধিকার, নারী অধিকার সংগঠন ও সুশীল সমাজের ভূমিকা রাখার অবকাশ আছে। তবে রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ও তার বাস্তবায়নের কাজটি মূলত রাজনৈতিক এবং চূড়ান্ত বিচারে রাজনৈতিক দলই কেবল এ কাজটি করতে পারে। নারী নির্যাতন রোধ এবং সমাজে বিরাজমান বৈষম্যমূলক অবস্থার পরিবর্তনে এখন সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কোনো বিকল্প নেই।
এটা মনে রাখতে হবে, নারীর রাজনৈতিক অধিকার অর্জন মানে অন্য কারও স্থান দখল নয়; বরং রাজনৈতিক জীবনে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করাটাই এখানে মূল উদ্দেশ্য। রাজনীতিতে এবং ক্ষমতাকাঠামো থেকে জনগোষ্ঠীর অর্ধেক অংশ নারীদের বাদ দিয়ে কখনো সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আর রাজনীতিতে নারীদের প্রতিনিধিত্বহীনতা বা ন্যূনতম প্রতিনিধিত্ব কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শক্তির দিক হতে পারে না।
ক্ষমতার রাজনীতির আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থেকে ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধ যারা সংঘটিত করে, তাদের সাধারণ শাস্তির আওতায় আনা যায় না। ধর্ষণ এবং হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ করে কেউ যেন রেহাই না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কার্যত বিচারহীনতার নামান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিকমতো ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া, পারিবারিক ও সামাজিক মনোভঙ্গি, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ এবং সাক্ষ্য আইনের জটিলতার কারণেও নির্যাতনের শিকার নারী ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়ে থাকেন। শুধু কঠোর শাস্তির আইন করলেই হবে না, দ্রুততম সময়ে বিচার এবং রায় কার্যকর করার নজির স্থাপন করতে হবে।
অপরাধ করে কেউ পার পাবে না—এটা কেবল মুখে বললে হবে না, সবার কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নারীর প্রতি অধিক সংবেদনশীল হতে হবে। নারী নির্যাতন বন্ধে সরকারের সদিচ্ছার বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, পুরুষদের হতে হবে মানবিক। নারীকে ভোগের বস্তু ভাবার চিরায়ত ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নারীর পোশাক, নারীর চালচলনকে যাঁরা নারীর প্রতি সহিংসতার কারণ বলে মনে করেন, তাঁরা আসলে ভেতরে-ভেতরে একটি নির্যাতক মানসিকতাই পোষণ করেন। কোনো কুযুক্তি যেন নারীর অধিকার ও মর্যাদা হরণের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত না হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সরকারের।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে