নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে তৈমূর আলম খন্দকারকে নিয়ে গত কয়েক দিনের গুঞ্জন অবশেষে সত্যি হলো। গতকাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন বিএনপির এই নেতা। তবে দল থেকে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এই উপদেষ্টা।

এ নিয়ে মোট চার বিএনপি নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন। কাল ১৫ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ২০ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই এবং প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৭ ডিসেম্বর। ভোট হবে ১৬ জানুয়ারি। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।

তৈমূর আলম গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেই নির্বাচনে তাঁর অবস্থান জানান দেন গণমাধ্যমের সামনে। তৈমূর আলম বলেন, ‘কেন আমি সিটি করপোরেশন মেয়র পদে নির্বাচন করব, তা নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা হচ্ছে। আমি আমার কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ থেকে এখানে নির্বাচন করতে এসেছি। যাঁরা নারায়ণগঞ্জের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত, তাঁদের অনেকেই আজ নেই, কিন্তু আমি বেঁছে আছি। আমি মনে করি শহরবাসীর স্বার্থে মানুষের পাশে দাঁড়ানো দরকার।’

তৈমূর আরও বলেন, ‘আমার মার্কা হবে জনগণ। আমার স্লোগান হবে নিজের খাইয়া তৈমূর। জনগণের নমিনেশনে আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। জনগণ কীভাবে নামে, সেটা আপনারা ক’দিন পরেই দেখতে পাবেন।’

এ সময় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) সমালোচনা করে তৈমূর বলেন, ‘ইভিএম হলো একটা চুরির বাক্স। এর মাধ্যমে চুরি করার চেষ্টা করবেন না। জনগণ যেই রায় দেয়, সেটা মেনে নিব। যদি প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন, তাহলে নারায়ণগঞ্জকে মাগুরা বানায়া দিব ইনশাআল্লাহ।’

এদিকে তৈমূর আলম নির্বাচনে অংশ নেওয়ার খবরে চিন্তার ভাঁজ তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে। প্রকাশ্যে বিষয়টি কেউ স্বীকার না করলেও দলের ভেতর থাকা আইভীবিরোধীরা তৈমূরের পক্ষে কাজ করতে পারেন, এমন শঙ্কা আছে তাঁদের। সেই শঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগের নেতারাও। তাই তাঁরা বিরোধীদের সতর্ক করে বলছেন, দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে তা দল বরদাশত করবে না।

আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তৈমূর মনোনয়ন কিনেছেন, এতে আওয়ামী লীগের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা তৈমূরকে নির্বাচনে ওয়েলকাম জানাই। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো রকম নাশকতা বা ষড়যন্ত্র যদি কেউ করতে চায়, তাহলে আমরা এর দাঁতভাঙা জবাব দিব।’

আইভীবিরোধী একটি বলয় তৈমূরকে সমর্থন দিতে পারে কী না, এমন প্রশ্নে আনিসুরের জবাব, ‘যদি কেউ ভুল পথে পা বাড়ায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

একই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আমরা কোনো প্রার্থীর জন্যই চিন্তিত নই। দলের ভেতর সাময়িক মান-অভিমান থাকলেও বিচ্যুত হওয়ার কোনো শঙ্কা আমরা দেখছি না।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে এখন পর্যন্ত তৈমূরসহ বিএনপির চার নেতা মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। বাকিরা হচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য গিয়াস উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল। তবে এর মধ্যে আলোচনায় আছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকার। ২৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে বোঝা যাবে নির্বাচনের মাঠে কে থাকছেন আর কে থাকছেন না।