তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, ঢাকা
রাজধানীর বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লাগে সেটির নকশা অনুমোদন দিয়েছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তা মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী। বর্তমানে গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তা ২০১১ সালে নকশা অনুমোদনের সময় ছিলেন অথরাইজড অফিসার। সে সময় রাজউকের রেখাকার হিসেবে বেইলি রোড এলাকার দায়িত্বে ছিলেন মো. সেলিম বকাউল। সাততলা এই বাণিজ্যিক ভবনে ছিল না কোনো জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা। একমাত্র সিঁড়িটিও ছিল খুবই সংকীর্ণ। এমন নকশা কীভাবে অনুমোদন পেল, সেই প্রশ্ন উঠেছে এখন।
গত বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দগ্ধ ও আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। এই ঘটনার পর রাজধানীতে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোয় সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ, রাজউক ও সিটি করপোরেশন। এসব অভিযানে তিন দিনে ৮৭২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে ওই ভবনের অনুমোদন ও সেখানে রেস্তোরাঁ চালানোর অনুমতি দেওয়া কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার বিষয়টি।
ফায়ার অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল সেফটি কনসালট্যান্ট অব বাংলাদেশ, এর প্রেসিডেন্ট মো. হাসমতুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেইলি রোডের ঘটনায় বহু সংস্থার দায় রয়েছে। এখানে যিনি ভবন তৈরি করেছেন এবং যিনি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করেছেন তারাও অনেকাংশে আইন ভঙ্গ করেছেন। বাণিজ্যিক ভবন দুই তলার বেশি হলে বিধিমতে দুটি সিঁড়ি হওয়ার কথা। সেখানে তা হয়নি। একটি রেস্তোরাঁয় ৪৫০ লিটারের বেশি দাহ্য পদার্থ মজুত করা যাবে না। কিন্তু সেখানে অনেক বেশি মজুত ছিল। ফলে সব সংস্থাকেই এ জন্য দায়ী করা যায়।’
রাজধানীতে একটি স্থাপনা অনুমোদন ও সেখানে রেস্তোরাঁ করতে গেলে কমপক্ষে ১০টি সরকারি সংস্থার অনুমতি প্রয়োজন। সংস্থাগুলো হলো রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা ওয়াসা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বেইলি রোডের ভবনটিতেও এসব সংস্থার বেশির ভাগেরই অনুমোদন ছিল বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ঘটনায় সেসব অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের যেমন দায় আছে, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলতে দেওয়ায় বর্তমানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারেন না।
আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি এসব সংস্থার পক্ষে বেইলি রোড এলাকায় কমপক্ষে দুই ডজন কর্মকর্তা দায়িত্বে আছেন, যাঁদের দায়িত্ব ছিল দেখেশুনে অনুমোদন দেওয়া এবং সময়ে সময়ে পরিদর্শন করে ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। মূলত এসব কর্মকর্তার ম্যানেজ করেই চলছিল গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের রেস্তোরাঁগুলো।
একটি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করতে হলে শুধু সিটি করপোরেশন থেকেই তিন ধরনের তদারকি ও অনুমোদন প্রয়োজন হয়। বেইলি রোড এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল-১-এর আওতাধীন। বর্তমানে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে এই অঞ্চলের দায়িত্ব আছেন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। এর আগে ছিলেন মেরিনা নাজনীন নামের আরেক কর্মকর্তা। রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের দায়িত্ব ডিএসসিসির লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজারের। এ পদে ইফতেখার আহমেদ নামের একজন ১২ বছর ধরে বেইলি রোড এলাকার দায়িত্বে আছেন।
রেস্তোরাঁর জন্য সিটি করপোরেশনের আরেকটি শাখা স্বাস্থ্য বিভাগেরও অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। সেখানে দায়িত্বে আছেন সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার ফারিয়া ফয়েজ নামের একজন। এরপর যে ভবনে রেস্তোরাঁ চালু করা হচ্ছে, সেখানে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী হচ্ছে কি না, তা দেখভালের জন্য আছেন একজন স্যানিটারি পরিদর্শক। ডিএসসিসির পক্ষ থেকে বেইলি রোড এলাকায় এ দায়িত্বে আছেন মোয়াজ্জেম খান নামের একজন স্যানিটারি পরিদর্শক।
মাঠপর্যায়ে নিয়মমাফিক ট্রেড লাইসেন্স ও কর আদায় হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করে থাকেন একজন উপকর কর্মকর্তা। রাজধানীর বেইলি রোড, মগবাজার, ধানমন্ডি, পরীবাগ, তোপখানা রোড এলাকার এ দায়িত্বে আছেন ডিএসসিসির কর কর্মকর্তা আবু নাসের কচি। বেইলি রোডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা কয়েকটি সংস্থার অনুমোদন থাকলে সেখান থেকে কর আদায় করি। বাণিজ্যিক স্থাপনা হিসেবে নকশা অনুমোদন থাকার পর আমাদের ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এখানে সরকারিভাবে বলা নেই যে বাণিজ্যিক ভবন হলে রেস্তোরাঁ করা যাবে না। এমন কোনো বিধিমালা আছে কি না, তা-ও আমার জানা নেই।’
গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের নকশা অনুমোদন করেন রাজউকের তৎকালীন অথরাইজড অফিসার মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী। ভবনটির নকশা অনুমোদনের সময় রেখাকার ছিলেন মো. সেলিম বকাউল। পরে এ দায়িত্বে আসেন আরঙ্গজেব নান্নু। বর্তমানে জোন-৬-এ দায়িত্বে আছেন শুভ্র দেব নামের একজন কর্মকর্তা। কয়েক বছর ধরে ইমারত পরিদর্শকদের কাজ তদারকির জন্য প্রধান ইমারত পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্বে আছেন বাসুদেব ভট্টাচার্য নামের এক কর্মকর্তা। এ ছাড়া ভবন তদারকির কাজে আছেন সহকারী অথরাইজড অফিসার শাহনাজ খানম এবং অথরাইজড অফিসার জোটন দেবনাথ। আর তাঁদের সবাইকে তদারকি করেন জোন পরিচালক সালেহ আহমেদ জাকারিয়া নামের একজন কর্মকর্তা।
অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার ভবনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইমারত পরিদর্শক সেলিম বকাউল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মূলত নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে স্থাপনা হচ্ছে কি না, তা দেখে থাকি। পরে কারা ভবনে কী করছে বা ব্যবহার কীভাবে করছে, তা দেখি না।’
গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ডিপিডিসির একটি বাণিজ্যিক সংযোগ ছিল। এর আগে এই ভবনে ছিল আবাসিক সংযোগ। বিদ্যুতের নতুন সংযোগ প্রদানের জন্য গ্রাহকের কাছে ভবনের অকুপেন্সি সনদ বা ভবনটি ব্যবহারের অনুমতিপত্র আছে কি না, তা নিশ্চিত করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বেইলি রোডের গ্রাহকের ক্ষেত্রে ডিপিডিসি কোনো অকুপেন্সি সনদ জমা নেয়নি। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বারবার ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লা নোমানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
রাজধানীর বেইলি রোডের ওই ভবনের রেস্তোরাঁগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একটি রেস্তোরাঁয় লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্ব পরিচালকের (অপারেশন) দপ্তরের। লাইসেন্স ইস্যুর মূল কাজটি করেন সহকারী পরিচালক (ওয়্যার হাউস)। বর্তমানে এ পদে আছেন মো. আনোয়ার হোসেন। এ কর্মকর্তার পরে মাঠপর্যায়ে এ সংস্থার পক্ষে এসব বিষয় তদারকি করে থাকেন ওয়্যার হাউস পরিদর্শক পদের একজন কর্মকর্তা। বেইলি রোড এলাকায় বর্তমানে দায়িত্বে আছেন অধীর চন্দ্র নামের একজন।
বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ উঠে এসেছে। তিতাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭২ সালে হামিদা খাতুন নামের একজন নারীর নামে এই ভবনে একটি ডাবল বার্নার বা দুই চুলার আবাসিক গ্যাস-সংযোগ দেয় তিতাস। এরপর ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ভবনের মালিক একটি দুই চুলার সংযোগের বিল তিতাস গ্যাসের ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়ে আসছে। ২০১৮ সালের পর থেকে ভবনের গ্যাস-সংযোগের বিল বকেয়া রয়েছে। এরপরও সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেনি তিতাস। ভবনের ব্যবসায়ীরা জানান, ভবনে দুই চুলার সংযোগটি গোপনে ব্যবহার করতেন সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা।
বেইলি রোড তিতাস গ্যাস বিতরণ অঞ্চল দক্ষিণের আওতাধীন এলাকা। গত ৫ বছরে তিতাস গ্যাস দক্ষিণের উপমহাব্যবস্থাপকের পদে দুজন দায়িত্বে ছিলেন। তাঁরা হলেন মো. তোফাজ্জল হোসেন ও মাহাবুবর রহমান। তাঁদের মধ্যে তোফাজ্জল হোসেন বদলি হয়ে গুলশান জোনের দায়িত্ব নিয়েছেন। বর্তমানে এ পদে রয়েছেন মাহাবুবর রহমান। দায়িত্বরত ব্যক্তিদের কেউই গত ৫ বছরে আবাসিক থেকে বাণিজ্যিক ভবন হওয়া গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের গ্যাস-সংযোগটির বিষয়ে কোনো হালনাগাদ তথ্য রাখেননি। একবারও তিতাস থেকে কেউ সেখানে পরিদর্শনে যাননি।
আসনসংখ্যা ৩০টির বেশি—ঢাকায় এমন রেস্তোরাঁ পরিচালনা করতে গেলে বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ আইন, ২০১৪ অনুযায়ী ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমোদন লাগে। সেখানে থেকে প্রথমে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরে সবকিছু মনিটরিং করে লাইসেন্স দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে কাজটি করে থাকেন সহকারী কমিশনার (ব্যবসা-বাণিজ্য শাখা)। এখানে বর্তমানে দায়িত্বে আছেন মো. শোয়েব শাত-ঈল ইভান নামের একজন কর্মকর্তা। এর আগে দীর্ঘ সময় এ দায়িত্বে ছিলেন মো. জামাল হোসেন নামের একজন কর্মকর্তা। বেইলি রোডের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. শোয়েব শাত-ঈল ইভান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেইলি রোডের কোনো রেস্তোরাঁয় আমাদের অনুমোদন ছিল না। আমাদের কাছে একটিমাত্র রেস্তোরাঁ আবেদন করেছিল; কাগজপত্র ঠিক নেই, তাই অনুমোদন দিইনি।’
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, একটি রেস্তোরাঁ করতে সরকারের প্রয়োজনীয় ১২টি সংস্থার লাইসেন্স লাগে। আমাদের অনেক রেস্তোরাঁর সব লাইসেন্স রয়েছে। আবার কিছু হয়তো নেই। এ ধরনের লাইসেন্স সরবরাহ আরও সহজ করা উচিত।’
রাজধানীর বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লাগে সেটির নকশা অনুমোদন দিয়েছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তা মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী। বর্তমানে গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তা ২০১১ সালে নকশা অনুমোদনের সময় ছিলেন অথরাইজড অফিসার। সে সময় রাজউকের রেখাকার হিসেবে বেইলি রোড এলাকার দায়িত্বে ছিলেন মো. সেলিম বকাউল। সাততলা এই বাণিজ্যিক ভবনে ছিল না কোনো জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা। একমাত্র সিঁড়িটিও ছিল খুবই সংকীর্ণ। এমন নকশা কীভাবে অনুমোদন পেল, সেই প্রশ্ন উঠেছে এখন।
গত বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দগ্ধ ও আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। এই ঘটনার পর রাজধানীতে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোয় সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ, রাজউক ও সিটি করপোরেশন। এসব অভিযানে তিন দিনে ৮৭২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে ওই ভবনের অনুমোদন ও সেখানে রেস্তোরাঁ চালানোর অনুমতি দেওয়া কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার বিষয়টি।
ফায়ার অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল সেফটি কনসালট্যান্ট অব বাংলাদেশ, এর প্রেসিডেন্ট মো. হাসমতুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেইলি রোডের ঘটনায় বহু সংস্থার দায় রয়েছে। এখানে যিনি ভবন তৈরি করেছেন এবং যিনি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করেছেন তারাও অনেকাংশে আইন ভঙ্গ করেছেন। বাণিজ্যিক ভবন দুই তলার বেশি হলে বিধিমতে দুটি সিঁড়ি হওয়ার কথা। সেখানে তা হয়নি। একটি রেস্তোরাঁয় ৪৫০ লিটারের বেশি দাহ্য পদার্থ মজুত করা যাবে না। কিন্তু সেখানে অনেক বেশি মজুত ছিল। ফলে সব সংস্থাকেই এ জন্য দায়ী করা যায়।’
রাজধানীতে একটি স্থাপনা অনুমোদন ও সেখানে রেস্তোরাঁ করতে গেলে কমপক্ষে ১০টি সরকারি সংস্থার অনুমতি প্রয়োজন। সংস্থাগুলো হলো রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা ওয়াসা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বেইলি রোডের ভবনটিতেও এসব সংস্থার বেশির ভাগেরই অনুমোদন ছিল বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ঘটনায় সেসব অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের যেমন দায় আছে, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলতে দেওয়ায় বর্তমানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারেন না।
আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি এসব সংস্থার পক্ষে বেইলি রোড এলাকায় কমপক্ষে দুই ডজন কর্মকর্তা দায়িত্বে আছেন, যাঁদের দায়িত্ব ছিল দেখেশুনে অনুমোদন দেওয়া এবং সময়ে সময়ে পরিদর্শন করে ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। মূলত এসব কর্মকর্তার ম্যানেজ করেই চলছিল গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের রেস্তোরাঁগুলো।
একটি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করতে হলে শুধু সিটি করপোরেশন থেকেই তিন ধরনের তদারকি ও অনুমোদন প্রয়োজন হয়। বেইলি রোড এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল-১-এর আওতাধীন। বর্তমানে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে এই অঞ্চলের দায়িত্ব আছেন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। এর আগে ছিলেন মেরিনা নাজনীন নামের আরেক কর্মকর্তা। রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের দায়িত্ব ডিএসসিসির লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজারের। এ পদে ইফতেখার আহমেদ নামের একজন ১২ বছর ধরে বেইলি রোড এলাকার দায়িত্বে আছেন।
রেস্তোরাঁর জন্য সিটি করপোরেশনের আরেকটি শাখা স্বাস্থ্য বিভাগেরও অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। সেখানে দায়িত্বে আছেন সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার ফারিয়া ফয়েজ নামের একজন। এরপর যে ভবনে রেস্তোরাঁ চালু করা হচ্ছে, সেখানে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী হচ্ছে কি না, তা দেখভালের জন্য আছেন একজন স্যানিটারি পরিদর্শক। ডিএসসিসির পক্ষ থেকে বেইলি রোড এলাকায় এ দায়িত্বে আছেন মোয়াজ্জেম খান নামের একজন স্যানিটারি পরিদর্শক।
মাঠপর্যায়ে নিয়মমাফিক ট্রেড লাইসেন্স ও কর আদায় হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করে থাকেন একজন উপকর কর্মকর্তা। রাজধানীর বেইলি রোড, মগবাজার, ধানমন্ডি, পরীবাগ, তোপখানা রোড এলাকার এ দায়িত্বে আছেন ডিএসসিসির কর কর্মকর্তা আবু নাসের কচি। বেইলি রোডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা কয়েকটি সংস্থার অনুমোদন থাকলে সেখান থেকে কর আদায় করি। বাণিজ্যিক স্থাপনা হিসেবে নকশা অনুমোদন থাকার পর আমাদের ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এখানে সরকারিভাবে বলা নেই যে বাণিজ্যিক ভবন হলে রেস্তোরাঁ করা যাবে না। এমন কোনো বিধিমালা আছে কি না, তা-ও আমার জানা নেই।’
গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের নকশা অনুমোদন করেন রাজউকের তৎকালীন অথরাইজড অফিসার মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী। ভবনটির নকশা অনুমোদনের সময় রেখাকার ছিলেন মো. সেলিম বকাউল। পরে এ দায়িত্বে আসেন আরঙ্গজেব নান্নু। বর্তমানে জোন-৬-এ দায়িত্বে আছেন শুভ্র দেব নামের একজন কর্মকর্তা। কয়েক বছর ধরে ইমারত পরিদর্শকদের কাজ তদারকির জন্য প্রধান ইমারত পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্বে আছেন বাসুদেব ভট্টাচার্য নামের এক কর্মকর্তা। এ ছাড়া ভবন তদারকির কাজে আছেন সহকারী অথরাইজড অফিসার শাহনাজ খানম এবং অথরাইজড অফিসার জোটন দেবনাথ। আর তাঁদের সবাইকে তদারকি করেন জোন পরিচালক সালেহ আহমেদ জাকারিয়া নামের একজন কর্মকর্তা।
অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার ভবনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইমারত পরিদর্শক সেলিম বকাউল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মূলত নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে স্থাপনা হচ্ছে কি না, তা দেখে থাকি। পরে কারা ভবনে কী করছে বা ব্যবহার কীভাবে করছে, তা দেখি না।’
গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ডিপিডিসির একটি বাণিজ্যিক সংযোগ ছিল। এর আগে এই ভবনে ছিল আবাসিক সংযোগ। বিদ্যুতের নতুন সংযোগ প্রদানের জন্য গ্রাহকের কাছে ভবনের অকুপেন্সি সনদ বা ভবনটি ব্যবহারের অনুমতিপত্র আছে কি না, তা নিশ্চিত করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বেইলি রোডের গ্রাহকের ক্ষেত্রে ডিপিডিসি কোনো অকুপেন্সি সনদ জমা নেয়নি। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বারবার ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লা নোমানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
রাজধানীর বেইলি রোডের ওই ভবনের রেস্তোরাঁগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একটি রেস্তোরাঁয় লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্ব পরিচালকের (অপারেশন) দপ্তরের। লাইসেন্স ইস্যুর মূল কাজটি করেন সহকারী পরিচালক (ওয়্যার হাউস)। বর্তমানে এ পদে আছেন মো. আনোয়ার হোসেন। এ কর্মকর্তার পরে মাঠপর্যায়ে এ সংস্থার পক্ষে এসব বিষয় তদারকি করে থাকেন ওয়্যার হাউস পরিদর্শক পদের একজন কর্মকর্তা। বেইলি রোড এলাকায় বর্তমানে দায়িত্বে আছেন অধীর চন্দ্র নামের একজন।
বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ উঠে এসেছে। তিতাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭২ সালে হামিদা খাতুন নামের একজন নারীর নামে এই ভবনে একটি ডাবল বার্নার বা দুই চুলার আবাসিক গ্যাস-সংযোগ দেয় তিতাস। এরপর ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ভবনের মালিক একটি দুই চুলার সংযোগের বিল তিতাস গ্যাসের ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়ে আসছে। ২০১৮ সালের পর থেকে ভবনের গ্যাস-সংযোগের বিল বকেয়া রয়েছে। এরপরও সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেনি তিতাস। ভবনের ব্যবসায়ীরা জানান, ভবনে দুই চুলার সংযোগটি গোপনে ব্যবহার করতেন সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা।
বেইলি রোড তিতাস গ্যাস বিতরণ অঞ্চল দক্ষিণের আওতাধীন এলাকা। গত ৫ বছরে তিতাস গ্যাস দক্ষিণের উপমহাব্যবস্থাপকের পদে দুজন দায়িত্বে ছিলেন। তাঁরা হলেন মো. তোফাজ্জল হোসেন ও মাহাবুবর রহমান। তাঁদের মধ্যে তোফাজ্জল হোসেন বদলি হয়ে গুলশান জোনের দায়িত্ব নিয়েছেন। বর্তমানে এ পদে রয়েছেন মাহাবুবর রহমান। দায়িত্বরত ব্যক্তিদের কেউই গত ৫ বছরে আবাসিক থেকে বাণিজ্যিক ভবন হওয়া গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের গ্যাস-সংযোগটির বিষয়ে কোনো হালনাগাদ তথ্য রাখেননি। একবারও তিতাস থেকে কেউ সেখানে পরিদর্শনে যাননি।
আসনসংখ্যা ৩০টির বেশি—ঢাকায় এমন রেস্তোরাঁ পরিচালনা করতে গেলে বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ আইন, ২০১৪ অনুযায়ী ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমোদন লাগে। সেখানে থেকে প্রথমে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরে সবকিছু মনিটরিং করে লাইসেন্স দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে কাজটি করে থাকেন সহকারী কমিশনার (ব্যবসা-বাণিজ্য শাখা)। এখানে বর্তমানে দায়িত্বে আছেন মো. শোয়েব শাত-ঈল ইভান নামের একজন কর্মকর্তা। এর আগে দীর্ঘ সময় এ দায়িত্বে ছিলেন মো. জামাল হোসেন নামের একজন কর্মকর্তা। বেইলি রোডের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. শোয়েব শাত-ঈল ইভান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেইলি রোডের কোনো রেস্তোরাঁয় আমাদের অনুমোদন ছিল না। আমাদের কাছে একটিমাত্র রেস্তোরাঁ আবেদন করেছিল; কাগজপত্র ঠিক নেই, তাই অনুমোদন দিইনি।’
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, একটি রেস্তোরাঁ করতে সরকারের প্রয়োজনীয় ১২টি সংস্থার লাইসেন্স লাগে। আমাদের অনেক রেস্তোরাঁর সব লাইসেন্স রয়েছে। আবার কিছু হয়তো নেই। এ ধরনের লাইসেন্স সরবরাহ আরও সহজ করা উচিত।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে